অর্থনীতিবিদদের অভিমত

প্রস্তাবিত বাজেট লিফট উৎপাদন শিল্পে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফট বা এলিভেটর পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ খাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় শিল্প-উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে লিফট আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টিকে দেশীয় শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তাসহ অর্থনীতিবিদরা। তাদের অভিমত, প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব হয়েছে।

তারা জানান, সরকারের উদ্দেশ্য স্থানীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করা। এর ফলে লিফটের মতো ভারী শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ আসবে। দেশে এ শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটবে। এতে একদিকে যেমন আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে লিফট আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে লিফটের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা লিফট শিল্পে অধিক হারে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এ খাতের উদ্যোক্তাদের যথেষ্ঠ ইতিবাচক মনে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘যেকোন দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে তাকে অবশ্যই ডোমেস্টিক উৎপাদনকে এনকারেজ করতে হবে। আপনি শুরু থেকেই যদি দেশীয় ইনফ্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিকে কম্পিটিশনের মধ্যে ছেড়ে দেন, তাহলে সে কিন্তু শুরুতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তাকে শুরুতে অনেক বেশি সুযোগ দিতে হবে এবং সে যাতে উঠে দাঁড়াতে পারে এজন্য সরকারকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

এ খাতের দেশীয় একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের দেশের জন্য বাইরে থেকে যেমন সুনাম বয়ে আনছে, তেমনিভাবে দেশের স্বনির্ভরতা বাড়াচ্ছে। আর এ স্বনির্ভরতাই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। দেশীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।’

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রস্তাাবিত বাজেটে দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেগুলো বিদেশ থেকে আনা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় কোম্পানি বা উদ্যোক্তারা সুবিধা পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- বর্ধিত হবে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখি।’

জানা গেছে, দেশে লিফটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ৭০৭ কোটি টাকার লিফট আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালে এ খাতে আমদানির পরিমাণ ৮৮৫ কোটি টাকা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমানে দেশে লিফটের বাজার ১২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এ খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি।

আমদানির মাধ্যমে লিফটের স্থানীয় চাহিদা মেটানোয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি লাভজনক হওয়ায় সেদিকেই ঝুকছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দু-একটি প্রতিষ্ঠান দেশে লিফট উৎপাদন প্লান্ট গড়ে তুলেছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত লিফট দিয়ে সব চাহিদা মেটানোর যথেষ্ঠ সক্ষমতা রয়েছে। ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে তৈরি লিফট আমদানিকৃত লিফটের চেয়ে মানে অনেক উন্নত।

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, দেশীয় শিল্প বিকাশে সরকার কর্তৃক এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। শিল্পায়নের বিকাশে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে, পাশাপাশি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বুস্ট-আপ হয়।

তার মতে এক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা যেমন বাড়ে, তেমনই দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

তাদের মতে লিফটেও একই রকম সুবিধা দেয়ায় দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় উৎপাদনে আগ্রহী হবে। ফলে এ খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে যা বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

অর্থনীতিবিদদের অভিমত

প্রস্তাবিত বাজেট লিফট উৎপাদন শিল্পে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফট বা এলিভেটর পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ খাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় শিল্প-উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে লিফট আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টিকে দেশীয় শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তাসহ অর্থনীতিবিদরা। তাদের অভিমত, প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব হয়েছে।

তারা জানান, সরকারের উদ্দেশ্য স্থানীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করা। এর ফলে লিফটের মতো ভারী শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ আসবে। দেশে এ শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটবে। এতে একদিকে যেমন আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে লিফট আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে লিফটের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা লিফট শিল্পে অধিক হারে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এ খাতের উদ্যোক্তাদের যথেষ্ঠ ইতিবাচক মনে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘যেকোন দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে তাকে অবশ্যই ডোমেস্টিক উৎপাদনকে এনকারেজ করতে হবে। আপনি শুরু থেকেই যদি দেশীয় ইনফ্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিকে কম্পিটিশনের মধ্যে ছেড়ে দেন, তাহলে সে কিন্তু শুরুতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তাকে শুরুতে অনেক বেশি সুযোগ দিতে হবে এবং সে যাতে উঠে দাঁড়াতে পারে এজন্য সরকারকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

এ খাতের দেশীয় একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের দেশের জন্য বাইরে থেকে যেমন সুনাম বয়ে আনছে, তেমনিভাবে দেশের স্বনির্ভরতা বাড়াচ্ছে। আর এ স্বনির্ভরতাই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। দেশীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।’

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রস্তাাবিত বাজেটে দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেগুলো বিদেশ থেকে আনা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় কোম্পানি বা উদ্যোক্তারা সুবিধা পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- বর্ধিত হবে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখি।’

জানা গেছে, দেশে লিফটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ৭০৭ কোটি টাকার লিফট আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালে এ খাতে আমদানির পরিমাণ ৮৮৫ কোটি টাকা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমানে দেশে লিফটের বাজার ১২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এ খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি।

আমদানির মাধ্যমে লিফটের স্থানীয় চাহিদা মেটানোয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি লাভজনক হওয়ায় সেদিকেই ঝুকছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দু-একটি প্রতিষ্ঠান দেশে লিফট উৎপাদন প্লান্ট গড়ে তুলেছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত লিফট দিয়ে সব চাহিদা মেটানোর যথেষ্ঠ সক্ষমতা রয়েছে। ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে তৈরি লিফট আমদানিকৃত লিফটের চেয়ে মানে অনেক উন্নত।

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, দেশীয় শিল্প বিকাশে সরকার কর্তৃক এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। শিল্পায়নের বিকাশে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে, পাশাপাশি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বুস্ট-আপ হয়।

তার মতে এক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা যেমন বাড়ে, তেমনই দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

তাদের মতে লিফটেও একই রকম সুবিধা দেয়ায় দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় উৎপাদনে আগ্রহী হবে। ফলে এ খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে যা বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।