বিয়ের চাপ দেয়ায় তরুণীকে হত্যা তরুণ গ্রেপ্তার

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ডিভোর্সী তরুণীকে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যার ৪ দিন পর অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেন জীবনকে গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাত হোসেন জীবন (২৪) সোনাইমুড়ী উপজেলার পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক শামছুল আলম দিলসাদের ছেলে।

গতকাল রোববার সকালে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি সবজি ক্ষেত থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চুরি, মোবাইল ও ওড়না উদ্ধার করে। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ি থেকে পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।

দুপুর পৌনে ১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ভিকটিম ফেরদাউস পাখির ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে ৩ বৎসর সংসার করার পর স্বামীর সাথে তার ছাড়াাছাড়ি হয়ে যায়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার জান্নাত নামে একটি ৬ বছরের জান্নাত নামের কন্যা সন্তান রয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ভিকটিমের পুনরায় অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ২য় বিয়ে হয়। ৬ মাস পর ২য় স্বামীর সাথে ছাগড়াছড়ি হয়। এরপর চলতি বছরের ২৯ মে জীবনের সঙ্গে ভিকটিমের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পরিচয় হয়। তারপর হতে দুইজনের মাঝে মাঝে কথা হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তাদের মধ্যে একবার দৈহিক সম্পর্ক হয়। আসামি জীবন বিবাহিত ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে ভিকটিম কিছুই জানত না। পরবর্তীতে আসামি বিবাহিত জেনে ভিকটিম আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আসামি তাকে এড়িয়ে যায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার ১৫ জুন পরস্পর যোগাযোগ করে সোনাইমুড়াীর পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজী বাড়ির সংলগ্ন সবজি ক্ষেতের দক্ষিণ পাশে নির্জন স্থানে যায়। সেখানে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামি তার নিকটে থাকা ছোরা বের করে প্রথমে ভিকটিমের গলায় পোচ দেয়। এতে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আসামি ভিকটিমের গলায় উপর্যুপরি ধারালো ছোরা দিয়ে জবাই করে হাত ও পায়ের রগ গোলাকৃতিভাবে কেটে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামি এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

জানা যায়, এ হত্যাকা-ের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম দেওটি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর নবী, স্বপন ও সেনবাগ উপজেলার মনির ও আবু সুফিয়ানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতম্বপুর গ্রামের দিলসাদের ছেলে ও নিহত নারীর পরকিয়া প্রেমিক জীবনকে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে আটক করা হয়।

পরে তার জবানবন্দীর ভিত্তিতে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জান্নাতুল তার বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার কোনো খোঁজ পায়নি।

পরে বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি উঁচু সবজি ক্ষেত থেকে পাখির গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাখির ভাই বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

বিয়ের চাপ দেয়ায় তরুণীকে হত্যা তরুণ গ্রেপ্তার

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ডিভোর্সী তরুণীকে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যার ৪ দিন পর অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেন জীবনকে গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাত হোসেন জীবন (২৪) সোনাইমুড়ী উপজেলার পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক শামছুল আলম দিলসাদের ছেলে।

গতকাল রোববার সকালে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি সবজি ক্ষেত থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চুরি, মোবাইল ও ওড়না উদ্ধার করে। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ি থেকে পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।

দুপুর পৌনে ১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ভিকটিম ফেরদাউস পাখির ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে ৩ বৎসর সংসার করার পর স্বামীর সাথে তার ছাড়াাছাড়ি হয়ে যায়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার জান্নাত নামে একটি ৬ বছরের জান্নাত নামের কন্যা সন্তান রয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ভিকটিমের পুনরায় অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ২য় বিয়ে হয়। ৬ মাস পর ২য় স্বামীর সাথে ছাগড়াছড়ি হয়। এরপর চলতি বছরের ২৯ মে জীবনের সঙ্গে ভিকটিমের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পরিচয় হয়। তারপর হতে দুইজনের মাঝে মাঝে কথা হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তাদের মধ্যে একবার দৈহিক সম্পর্ক হয়। আসামি জীবন বিবাহিত ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে ভিকটিম কিছুই জানত না। পরবর্তীতে আসামি বিবাহিত জেনে ভিকটিম আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আসামি তাকে এড়িয়ে যায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার ১৫ জুন পরস্পর যোগাযোগ করে সোনাইমুড়াীর পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজী বাড়ির সংলগ্ন সবজি ক্ষেতের দক্ষিণ পাশে নির্জন স্থানে যায়। সেখানে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামি তার নিকটে থাকা ছোরা বের করে প্রথমে ভিকটিমের গলায় পোচ দেয়। এতে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আসামি ভিকটিমের গলায় উপর্যুপরি ধারালো ছোরা দিয়ে জবাই করে হাত ও পায়ের রগ গোলাকৃতিভাবে কেটে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামি এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

জানা যায়, এ হত্যাকা-ের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম দেওটি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর নবী, স্বপন ও সেনবাগ উপজেলার মনির ও আবু সুফিয়ানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতম্বপুর গ্রামের দিলসাদের ছেলে ও নিহত নারীর পরকিয়া প্রেমিক জীবনকে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে আটক করা হয়।

পরে তার জবানবন্দীর ভিত্তিতে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জান্নাতুল তার বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার কোনো খোঁজ পায়নি।

পরে বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি উঁচু সবজি ক্ষেত থেকে পাখির গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাখির ভাই বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।