ইলিশের বিচরণ সুবিধায় পাইলিংয়ে বিশেষ কৌশল

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পদ্মা সেতুতে রয়েছে ২৯৪টি পাইল। পাইলিং কাজের সময় বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতে হয়েছে। যাতে ইলিশ মাছের বিচরণের কোন সমস্যা না হয়। সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল হ্যামার দিয়ে পেটানোর সময় যাতে উচ্চ শব্দ না হয়। গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কনফারেন্সে পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলাকালে ইলিশ মাছের বিচরণের দিকে খেয়াল রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল পরিবেশের বিষয়ে যাতে কোন ছাড় দেয়া না হয়। সেই সঙ্গে সার্বিক গুণগত মানের ক্ষেত্রেও কোন ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। আমরা যারা পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত তারা চেষ্টা করেছি সেটা রক্ষা করতে।’

ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যেখানে নদীর গভীরতা ৩০ ফুটের বেশি সেখানে মৎস্য মন্ত্রণালয় যদি বলে ইলিশ মাছ যাচ্ছে, তাহলে কাজ বন্ধ। আমরা তাই করেছি। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ইলিশ মাছ যাতায়াত করে। মাছ আবার ২০০ ডেসিমালের ওপরে শব্দ হলে সেদিকে আগায় না। অর্থাৎ এই শব্দে ইলিশ মাছ উল্টো দিকে চলে যায়। আর তাই পদ্মা সেতু এলাকায় এসে ইলিশ মাছ যাতে রাগ না করে সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল হ্যামার দিয়ে পেটানোর সময় যাতে উচ্চ শব্দ না হয়।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে ২৯৪টি পাইল রয়েছে। এসব পাইলের গড় গভীরতা ১২২ মিটার, যা ৪০ তলা ভবনের সমান। নদীর তলদেশের মাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় ২২টি পিয়ারেরর ৭১টি পাইলে স্কিন গ্রাউট করতে হয়েছে। পাইলের ডায়ামিটারের আয়তন তিন মিটার। পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজের জন্য মোট চারটি হাইড্রোলিক হ্যামার (হাতুড়ি) ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামারটি ব্যবহৃত হয়েছে পদ্মা সেতুতে। বড় হ্যামারটি ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন। এই হ্যামারটি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়েছিল। অন্য তিনটি হ্যামার ছিল এক হাজার, ২ হাজার ও ২ হাজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন। এর মধ্যে এক হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি শুধু প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি দুটি হ্যামার দিয়ে মূল পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দুই পারে একসঙ্গে পাইলিং করতে সমস্যা দেখা দেয়। তাই ২০১৭ সালে জুন মাসে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামারটি আনা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, মাটির নিচ থেকে পানির কিছুটা উপর স্তর পর্যন্ত পাইলের অবস্থান। কয়েকটি পাইলের ওপর একটি করে পাইল ক্যাপ বসানো হয়েছে। ওই ক্যাপের উপর সেতুর পিয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুতে মোট পিয়ার রয়েছে ৪২টি। পিয়ারের উপর এমন উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে যে, ১৮ দশমিক ৩ মিটার উচ্চতার জাহাজ অনায়াসে সেতুর নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

আর ৫ দিন

ইলিশের বিচরণ সুবিধায় পাইলিংয়ে বিশেষ কৌশল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পদ্মা সেতুতে রয়েছে ২৯৪টি পাইল। পাইলিং কাজের সময় বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতে হয়েছে। যাতে ইলিশ মাছের বিচরণের কোন সমস্যা না হয়। সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল হ্যামার দিয়ে পেটানোর সময় যাতে উচ্চ শব্দ না হয়। গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কনফারেন্সে পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলাকালে ইলিশ মাছের বিচরণের দিকে খেয়াল রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল পরিবেশের বিষয়ে যাতে কোন ছাড় দেয়া না হয়। সেই সঙ্গে সার্বিক গুণগত মানের ক্ষেত্রেও কোন ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। আমরা যারা পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত তারা চেষ্টা করেছি সেটা রক্ষা করতে।’

ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যেখানে নদীর গভীরতা ৩০ ফুটের বেশি সেখানে মৎস্য মন্ত্রণালয় যদি বলে ইলিশ মাছ যাচ্ছে, তাহলে কাজ বন্ধ। আমরা তাই করেছি। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ইলিশ মাছ যাতায়াত করে। মাছ আবার ২০০ ডেসিমালের ওপরে শব্দ হলে সেদিকে আগায় না। অর্থাৎ এই শব্দে ইলিশ মাছ উল্টো দিকে চলে যায়। আর তাই পদ্মা সেতু এলাকায় এসে ইলিশ মাছ যাতে রাগ না করে সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল হ্যামার দিয়ে পেটানোর সময় যাতে উচ্চ শব্দ না হয়।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে ২৯৪টি পাইল রয়েছে। এসব পাইলের গড় গভীরতা ১২২ মিটার, যা ৪০ তলা ভবনের সমান। নদীর তলদেশের মাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় ২২টি পিয়ারেরর ৭১টি পাইলে স্কিন গ্রাউট করতে হয়েছে। পাইলের ডায়ামিটারের আয়তন তিন মিটার। পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজের জন্য মোট চারটি হাইড্রোলিক হ্যামার (হাতুড়ি) ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামারটি ব্যবহৃত হয়েছে পদ্মা সেতুতে। বড় হ্যামারটি ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন। এই হ্যামারটি নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়েছিল। অন্য তিনটি হ্যামার ছিল এক হাজার, ২ হাজার ও ২ হাজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন। এর মধ্যে এক হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি শুধু প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি দুটি হ্যামার দিয়ে মূল পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দুই পারে একসঙ্গে পাইলিং করতে সমস্যা দেখা দেয়। তাই ২০১৭ সালে জুন মাসে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামারটি আনা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, মাটির নিচ থেকে পানির কিছুটা উপর স্তর পর্যন্ত পাইলের অবস্থান। কয়েকটি পাইলের ওপর একটি করে পাইল ক্যাপ বসানো হয়েছে। ওই ক্যাপের উপর সেতুর পিয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুতে মোট পিয়ার রয়েছে ৪২টি। পিয়ারের উপর এমন উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে যে, ১৮ দশমিক ৩ মিটার উচ্চতার জাহাজ অনায়াসে সেতুর নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।