কমছে পানি, খাবারের সংকট

ভয়াবহ দুর্যোগ-দুর্ভোগ মেকাবিলা করতে হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের মানুষকে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এখনও প্লাবিত সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চল। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টাগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে উদ্ধার করলেও চরম সংকটে বানভাসি মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোত স্থান নেই, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব, বাসাবাড়িতে দুর্গন্ধ এমন পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষকে। গত শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও নগরসহ সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্লাবিত এলাকাগুলোর অনেক স্থানে এখনও নিজ গৃহে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। তার মধ্যে অনেকের ভাগ্যে শুকনো খাবারও জুটছে না। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হলেও সেক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। হাতেগোনা দু’একজন কাউন্সিলর ছাড়া কাউকেই খোঁজ নিতে দেখা যায়নি আশ্রয়কেন্দ্রের বানভাসিদের। এরই মধ্যে এই দুর্যোগে একটি মহল আবার ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষের মধ্যে। এরইমধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কয়েকটি এলাকা।

কমছে পানি

গত শনিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পানি কমেছে নগরীর আশপাশের এলাকায়। টানা বৃষ্টি আর উজানি ঢলে ইতোমধ্যে সিলেটের সব অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত। পানিবন্দী থেকে জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

গতকাল সকালেও সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় পানি এক থেকে দেড় হাত কমেছে। আগের তুলনায় এক থেকে দেড় হাত পানি কমায় বাসা-বাড়িতে একটু স্বস্তি ও আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষ।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুব কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আমরা রেকর্ড করতে পারিনি। বৃষ্টির পরিমাণ নি¤œ পর্যায়ে থাকলে তা রেকর্ড করা সম্ভব হয় না। সোমবার থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও তুলনামূলক কমে যাবে। সেই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট

গত বুধবার থেকে সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যেও পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিকেও তারা সেই অর্থে পাশে পাচ্ছে না। যেখানকার খবর পাওয়া যায়, সেখানেই ত্রাণ নেই। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে দুর্গত মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিদ্যুৎহীন হয়েও অনেকে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত পুরো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে।

শুক্রবার থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বা পানীয় জলের তীব্র সংকট।

সিটি করপোরেশন স্থানীয় কাউন্সিলরদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের দেখা নেই। শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ সিসিকও।

তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু। এই কাউন্সিলের উদ্যোগে লামাবাজার ও মির্জাজাঙ্গাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। নগরীতে আশ্রয়কেন্দ্র খুললেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। নগরীর মীরাবাজারে কিশোরী মোহন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন বন্যার্ত উঠৈছেন। এখানেও খাদ্য সংকট রয়েছে।

এ তো নগরের অবস্থা, এর বাইরে উপজেলা গুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একাধিক বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। এ দুটি উপজেলার শতভাগ বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেকে অনিরাপদ জেনেও বাড়ি ও গবাদিপশুর মায়ায় পানিবন্দী হয়েই দিন কাটাচ্ছেন।

কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, অনেকের ঘরে কোমর থেকে গলা সমান পানি। ফলে জীবন বাঁচাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তারা। তবে এখানে এসেও পড়েছে আরেক ভোগান্তিতে। স্থানের তুলনায় এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বেশি। গবাদি পশুপাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে একই কক্ষে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিরা শুক্রবার রাত কাটিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এমনকি খাবারও পাচ্ছে না অনেকে, ফলে খাবার না পেয়ে অভুক্ত অবস্থাতেই আছে তারা।

রেল যোগাযোগ শুরু

সিলেট থেকে ঢাকায় ফের রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে স্টেশনে বন্যার পানি উঠায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়। রেল যোগাযোগ চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ পর্যন্ত বেশ কয়েক জায়গায় রেললাইনে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যে কারণে সিলেট রেলস্টেশন থেকে রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টেশন থেকে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। গতকাল রেললাইন থেকে পানি সরে যাওয়ায় দুপুর থেকে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।

এর আগে স্টেশনে বন্যার পানি ওঠায় শনিবার সিলেট স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বুধবার থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকেল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। এতে রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেল থেকে তিন দিনের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বন্ধ হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা। গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বন্যার কারণে শুক্রবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শনিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, শনিবার সকালের পর থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পানি দেখা দেয়। ক্যাম্পাসের আশপাশের সড়কেও একইভাবে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গুজব ছড়িয়ে ডাকাত আতঙ্ক

শনিবার মধ্যরাতে ডাকাতের আক্রমণের গুজবে সয়লাব হয় সামাজিক মাধ্যম। নগরের অনেক এলাকার মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করার কথাও জানা যায়। তবে ডাকাতের আক্রমণের এই তথ্য গুজব বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার মধ্যরাতে নগরে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নগরে বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইকে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত প্রবেশের কথা জানিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে বলা হয়। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে এ গুজব।

সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমরা খবর পেয়ে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করি। এ ধরনের গুজব কাউকে না ছড়ানোর অনুরোধ জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণে এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমারএমপির চেয়ারম্যান সুশান্ত দাস গুপ্ত। তিনি বলেন, আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর মানুষ সবসময়ই ফায়দা লুটতে চেষ্টা করে। বন্যার সময়েও এ ধরনের গুজব আমরা লক্ষ্য করছি। কেউ ডাকাতির প্রমাণ দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তিনি।

সুনামগঞ্জ : বন্যার পানি নেমে যাওয়া শুরু করলেও সুনামগঞ্জ সদরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। শহরবাসীর জন্য খাবার সংকুলান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল সিলেট থেকে একটি লঞ্চযোগে বন্যার্তদের জন্য খাবার নিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ।

খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবারসহ রয়েছে বোতলজাত পানি ও সবজি। গতকাল দুপুর ১টার দিকে সুরমা নদীর তীরে ক্বিন ব্রিজের নিচে লঞ্চ নোঙর করে মালামাল বোঝাই করতে দেখা গেছে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যদের। সেখানে উপস্থিত থাকা জেলা পুলিশের কার্যালয়ের ওসি নাজিম উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ শহরে খাদ্য সংকট থাকায় সিলেট থেকে খাদ্য নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, বন্যার্তসহ প্রত্যেক মানুষ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছেন। জেলা পুলিশ বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

মৌলভীবাজার : জেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ৩০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ইতোমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। গতকাল জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এ তথ্য জানান। মনু, ধলাইসহ বেশকিছু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলাÑ বড়লেখা, জুড়ী, সদর, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

কুলাউড়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গ্রামগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর-৭টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : গত দুই দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে উজানের ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানিয়েছেন, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় পানি উঠার পর দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং দেয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। তবে পানি আরও বাড়লে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের ‘প্রস্তুতি’ আছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বাঁধ উপচে এবং আজমিরীগঞ্জ রাস্তা ভেঙে পানি লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। আজমিরীগঞ্জের পৌর এলাকার আদর্শনগর, জয়নগর, শরীফনগর এলাকায় অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া নতুন বাড়ি, ফিরোজপুর, পাহাড়পুর, কাকাইলছেও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও মারকুলি এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি উঠেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

image

সিলেট : বন্যার পানিতে চারিদিকে থই থই। ঘরে খাবার-আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়েছে। এখন খাওয়ার মতো কিছুই ঘরে নেই। স্রোতে কাঁচা ঘরের বেড়াও নষ্ট হয়েছে। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। কোথায় যাবেন বন্যা দুর্গতরা। কোথায় পাবেন খাবারের সন্ধান -সংবাদ

আরও খবর
ইলিশের বিচরণ সুবিধায় পাইলিংয়ে বিশেষ কৌশল
আরও বড় বন্যার আশঙ্কা
‘বাহে পানিত আর বাঁচি না, পেটত ভাত যায় না দু’দিন থাকি’
নেত্রকোনায় চরম দুর্ভোগে পানিবন্দী মানুষ

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

কমছে পানি, খাবারের সংকট

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

image

সিলেট : বন্যার পানিতে চারিদিকে থই থই। ঘরে খাবার-আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়েছে। এখন খাওয়ার মতো কিছুই ঘরে নেই। স্রোতে কাঁচা ঘরের বেড়াও নষ্ট হয়েছে। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। কোথায় যাবেন বন্যা দুর্গতরা। কোথায় পাবেন খাবারের সন্ধান -সংবাদ

ভয়াবহ দুর্যোগ-দুর্ভোগ মেকাবিলা করতে হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের মানুষকে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এখনও প্লাবিত সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চল। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টাগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে উদ্ধার করলেও চরম সংকটে বানভাসি মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোত স্থান নেই, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব, বাসাবাড়িতে দুর্গন্ধ এমন পরিস্থিতির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষকে। গত শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও নগরসহ সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্লাবিত এলাকাগুলোর অনেক স্থানে এখনও নিজ গৃহে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। তার মধ্যে অনেকের ভাগ্যে শুকনো খাবারও জুটছে না। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হলেও সেক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। হাতেগোনা দু’একজন কাউন্সিলর ছাড়া কাউকেই খোঁজ নিতে দেখা যায়নি আশ্রয়কেন্দ্রের বানভাসিদের। এরই মধ্যে এই দুর্যোগে একটি মহল আবার ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষের মধ্যে। এরইমধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কয়েকটি এলাকা।

কমছে পানি

গত শনিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পানি কমেছে নগরীর আশপাশের এলাকায়। টানা বৃষ্টি আর উজানি ঢলে ইতোমধ্যে সিলেটের সব অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত। পানিবন্দী থেকে জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

গতকাল সকালেও সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় পানি এক থেকে দেড় হাত কমেছে। আগের তুলনায় এক থেকে দেড় হাত পানি কমায় বাসা-বাড়িতে একটু স্বস্তি ও আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষ।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুব কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আমরা রেকর্ড করতে পারিনি। বৃষ্টির পরিমাণ নি¤œ পর্যায়ে থাকলে তা রেকর্ড করা সম্ভব হয় না। সোমবার থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও তুলনামূলক কমে যাবে। সেই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট

গত বুধবার থেকে সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যেও পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিকেও তারা সেই অর্থে পাশে পাচ্ছে না। যেখানকার খবর পাওয়া যায়, সেখানেই ত্রাণ নেই। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে দুর্গত মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিদ্যুৎহীন হয়েও অনেকে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত পুরো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে।

শুক্রবার থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বা পানীয় জলের তীব্র সংকট।

সিটি করপোরেশন স্থানীয় কাউন্সিলরদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের দেখা নেই। শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ সিসিকও।

তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু। এই কাউন্সিলের উদ্যোগে লামাবাজার ও মির্জাজাঙ্গাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। নগরীতে আশ্রয়কেন্দ্র খুললেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। নগরীর মীরাবাজারে কিশোরী মোহন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন বন্যার্ত উঠৈছেন। এখানেও খাদ্য সংকট রয়েছে।

এ তো নগরের অবস্থা, এর বাইরে উপজেলা গুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একাধিক বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। এ দুটি উপজেলার শতভাগ বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেকে অনিরাপদ জেনেও বাড়ি ও গবাদিপশুর মায়ায় পানিবন্দী হয়েই দিন কাটাচ্ছেন।

কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, অনেকের ঘরে কোমর থেকে গলা সমান পানি। ফলে জীবন বাঁচাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তারা। তবে এখানে এসেও পড়েছে আরেক ভোগান্তিতে। স্থানের তুলনায় এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বেশি। গবাদি পশুপাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে একই কক্ষে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিরা শুক্রবার রাত কাটিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এমনকি খাবারও পাচ্ছে না অনেকে, ফলে খাবার না পেয়ে অভুক্ত অবস্থাতেই আছে তারা।

রেল যোগাযোগ শুরু

সিলেট থেকে ঢাকায় ফের রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে স্টেশনে বন্যার পানি উঠায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়। রেল যোগাযোগ চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ পর্যন্ত বেশ কয়েক জায়গায় রেললাইনে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যে কারণে সিলেট রেলস্টেশন থেকে রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টেশন থেকে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। গতকাল রেললাইন থেকে পানি সরে যাওয়ায় দুপুর থেকে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।

এর আগে স্টেশনে বন্যার পানি ওঠায় শনিবার সিলেট স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বুধবার থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকেল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। এতে রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেল থেকে তিন দিনের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বন্ধ হলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা। গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বন্যার কারণে শুক্রবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শনিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, শনিবার সকালের পর থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পানি দেখা দেয়। ক্যাম্পাসের আশপাশের সড়কেও একইভাবে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গুজব ছড়িয়ে ডাকাত আতঙ্ক

শনিবার মধ্যরাতে ডাকাতের আক্রমণের গুজবে সয়লাব হয় সামাজিক মাধ্যম। নগরের অনেক এলাকার মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করার কথাও জানা যায়। তবে ডাকাতের আক্রমণের এই তথ্য গুজব বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার মধ্যরাতে নগরে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নগরে বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইকে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত প্রবেশের কথা জানিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে বলা হয়। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে এ গুজব।

সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমরা খবর পেয়ে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করি। এ ধরনের গুজব কাউকে না ছড়ানোর অনুরোধ জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণে এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমারএমপির চেয়ারম্যান সুশান্ত দাস গুপ্ত। তিনি বলেন, আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর মানুষ সবসময়ই ফায়দা লুটতে চেষ্টা করে। বন্যার সময়েও এ ধরনের গুজব আমরা লক্ষ্য করছি। কেউ ডাকাতির প্রমাণ দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তিনি।

সুনামগঞ্জ : বন্যার পানি নেমে যাওয়া শুরু করলেও সুনামগঞ্জ সদরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। শহরবাসীর জন্য খাবার সংকুলান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল সিলেট থেকে একটি লঞ্চযোগে বন্যার্তদের জন্য খাবার নিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ।

খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবারসহ রয়েছে বোতলজাত পানি ও সবজি। গতকাল দুপুর ১টার দিকে সুরমা নদীর তীরে ক্বিন ব্রিজের নিচে লঞ্চ নোঙর করে মালামাল বোঝাই করতে দেখা গেছে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যদের। সেখানে উপস্থিত থাকা জেলা পুলিশের কার্যালয়ের ওসি নাজিম উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ শহরে খাদ্য সংকট থাকায় সিলেট থেকে খাদ্য নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, বন্যার্তসহ প্রত্যেক মানুষ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছেন। জেলা পুলিশ বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

মৌলভীবাজার : জেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ৩০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ইতোমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। গতকাল জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এ তথ্য জানান। মনু, ধলাইসহ বেশকিছু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলাÑ বড়লেখা, জুড়ী, সদর, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

কুলাউড়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গ্রামগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর-৭টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : গত দুই দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে উজানের ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানিয়েছেন, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় পানি উঠার পর দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং দেয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। তবে পানি আরও বাড়লে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের ‘প্রস্তুতি’ আছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বাঁধ উপচে এবং আজমিরীগঞ্জ রাস্তা ভেঙে পানি লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। আজমিরীগঞ্জের পৌর এলাকার আদর্শনগর, জয়নগর, শরীফনগর এলাকায় অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া নতুন বাড়ি, ফিরোজপুর, পাহাড়পুর, কাকাইলছেও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও মারকুলি এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি উঠেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।