আগামী ১০ দিন বন্যা পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তাতে বড় বন্যার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বন্যার পূর্বাভাসে দেশের প্রধান সব নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের উত্তর ও পূর্বঞ্চালের পাশাপাশি মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বর্তমানে বন্যাকবলিত। এছাড়া উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি জুনের শেষ পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে। একদিকে বর্ষাকাল, অন্যদিকে উজানের পানি, দুই মিলিয়ে খুব দ্রুত পানি বাড়ছে, পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এতে আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও কিছুটা খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে উজানে বৃষ্টি কমে এলে কিছু এলাকায় পানি কমতে পারে। এই বন্যা ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ভারতের মেঘালয় ও আসামে অব্যাহত বর্ষণের কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এর মধ্যেই সিলেটে কোথাও বন্যার পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে আবার কোথাও সমপরিমাণ পানি কমেছে। এই বাড়া-কমার মধ্যে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এদিকে দেশের আট বিভাগে বৃষ্টিপাত আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, আজ ও আগামীকালও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এরপর বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সারাদেশের ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম কুমার সরকার বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় আরও দুই দিন বৃষ্টি হবে। এতে ওইসব এলাকার বন্যার পানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানি আবার নিচের দিকে নামতে শুরু করলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির ঢল দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবেশ করছে। ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পাবনা বন্যাকবলিত হতে পারে। এছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানি আরও নিচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, গত তিন দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এখানে আরও বৃষ্টি হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে আরও দুই দিন অতিবৃষ্টি হতে পারে। আর এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে।
সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
আগামী ১০ দিন বন্যা পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তাতে বড় বন্যার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বন্যার পূর্বাভাসে দেশের প্রধান সব নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের উত্তর ও পূর্বঞ্চালের পাশাপাশি মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বর্তমানে বন্যাকবলিত। এছাড়া উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি জুনের শেষ পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে। একদিকে বর্ষাকাল, অন্যদিকে উজানের পানি, দুই মিলিয়ে খুব দ্রুত পানি বাড়ছে, পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এতে আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও কিছুটা খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে উজানে বৃষ্টি কমে এলে কিছু এলাকায় পানি কমতে পারে। এই বন্যা ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ভারতের মেঘালয় ও আসামে অব্যাহত বর্ষণের কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এর মধ্যেই সিলেটে কোথাও বন্যার পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে আবার কোথাও সমপরিমাণ পানি কমেছে। এই বাড়া-কমার মধ্যে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এদিকে দেশের আট বিভাগে বৃষ্টিপাত আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, আজ ও আগামীকালও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এরপর বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সারাদেশের ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম কুমার সরকার বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় আরও দুই দিন বৃষ্টি হবে। এতে ওইসব এলাকার বন্যার পানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানি আবার নিচের দিকে নামতে শুরু করলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির ঢল দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবেশ করছে। ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পাবনা বন্যাকবলিত হতে পারে। এছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানি আরও নিচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, গত তিন দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এখানে আরও বৃষ্টি হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে আরও দুই দিন অতিবৃষ্টি হতে পারে। আর এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে।