‘বাহে পানিত আর বাঁচি না, পেটত ভাত যায় না দু’দিন থাকি’

‘গত এক সপ্তাহ থ্যাকি বানের পানিত পড়ি আছি, ক্যাও হামার খবর নেয় না, খালি শুনি শেখের বেটি ম্যালা খাবার পাঠায় কিন্তু হামার অ্যাদি মেম্বুর চেয়ারম্যান ক্যাও আইসে না। দুই দিন থ্যাকি খ্যালি শুকনা খাবার খ্যাইয়্যা জীবন পার করছি। চুলা ডুবি থাকায় ভাত রান্না করার কোন বুদ্ধি নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারি গ্রামের বৃদ্ধা ওমিছন বেওয়া। শুধু তিনিই নয়, জেলার বন্যার্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে চরাঞ্চলের যোগযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বানভাসি এলাকাগুলোতে। জেলা প্রশাসন থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা অতি নগণ্য। উজানের ঢল আর অব্যাহত বর্ষণে টইটম্বুর লালমনিরহাটের নদ-নদীর পেট। আষাঢ়ের শুরুতেই হু হু করে বাড়ছে নদীর পানি। বিপদসীমা ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের বাসিন্দারা কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত। পানি প্রবাহ বেড়ে তলিয়ে গেছে বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের বিভিন্ন উঠতি ফসল। অন্তত ৩০ হাজারের ও বেশি মানুষ হাঁটু বা কোমর পানিতে বন্দীদশায় আছেন। এসব মানুষের হাতে এখনো পৌঁছেনি কোন সহায়তা।

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি সøুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে। পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা ছাড়াও জেলার অন্যান্য নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। আর তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তিস্তা নয় ধরলাসহ জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। হাজারো বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। অনেক জায়গায় এখনো হাঁটু ও কোমর সমান পানি। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে এসব এলাকায় জিও ব্যাগ আগাম মজুদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।

প্লাবিত এসব এলাকার আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, বাঁশের সাঁকোসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিবর্ণ নদীপাড়ের মানুষদের চোখে কয়েকদিন ঘুম নেই। কখন কী হয় সে চিন্তাই এখন মনে ভর করেছে তাদের। সঙ্গে হাড়ভাঙা শ্রমের ফসলি খেত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামের কালা মামুদ বলেন, ??‘কয়দিন থাকি নদীত পানি বাড়তে আছে। তাতে ফির আইত (রাত) হইলে বৃষ্টি। হামরা বউ-ছাওয়া নিয়্যা খুব কষ্টোত আছি। কয়দিন থাকি ঠিক মতো ঘুম হওচে না। ভয় নাগে, কখন কী হয়। অ্যালাও তো হামরা হাঁটু পানিত আছি। কোন্টে কোনা রান্দিবারি খামো, সেই জায়গাও নাই। চকির ওপররোত চকি দিয়া কোনোমতে আইত কাটাওছি।’

লালমনিরহাটের বানভাসি সোহরাব, জয়নাল, টেপা মুন্সিসহ আরও বেশ কয়েকজন জানিয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে পানিবন্দী বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের নৌকায় করে উঁচু স্থানে নেয়া হয়েছে। বন্যা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। বানভাসি ফিরোজুল, রফিক ও আবদুল মতিন মিয়া। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় অন্যদের মতো চরম বিপাকে পড়েছেন তারাও। এখন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্ট ভাঙনে আতঙ্কিত এই তিন কৃষক অনেক কষ্টে তাদের বাড়িঘর উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।

কৃষক ফিরোজুল মিয়া জানান, সারাজীবন কষ্ট আর কষ্ট। নদীপাড়োত জন্ম নেয়াটাও হামার অপরাধ। সরকার চাইরোপাকে (সবখানে) উন্নয়ন করে, ‘খালি হামার তিস্তা নদীর কিছু করে না। কত দিন ধরি শুনোছি ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি হইবে। কিন্তু কামের কাম কিছুই হয় নাই। অ্যালা (এখন) ফির চীনের সাথে নাকি সরকার নদী শাসন (তিস্তা মহাপরিকল্পনা) করবে। বছরে বছরে কত কথা শুনি, হামার এত্তি কোনো কাম চোখোত পড়ে না বাহে।’

সিন্দুনা গ্রামের পানিবন্দী সামিনা বেগম, বৃদ্ধা ফাতেমা বেওয়াও ক্ষুদ্ধ তিস্তার বুকে পানি বাড়তে থাকায় টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দুর্ভোগে থাকা এই দুই নারীর মতো অন্যদেরও অভিযোগের শেষ নেই। কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী থাকা এসব মানুষ চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারছে না। তাদের অনেকেরই দু’বেলা খাবার মতো ব্যবস্থাও ফুরিয়েছে। এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান-মেম্বার কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্য সহায়তাও মেলেনি। ওই গ্রামের পানিবন্দী নাসিমা বেগম জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়ির উঠানে চলে এসছে। এখন বাড়িঘর সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তাকে নৌকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ যুদ্ধ শুধু এসব ইউনিয়নে নয়, তিস্তা-ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর দুর্যোগ-দুর্ভোগের সঙ্গে লড়াই করে এভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছেন। রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, প্রতিদিনই তার ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলে পানি বাড়ছে। মানুষ পানিবন্দী হচ্ছে। বাদামের সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী বিতরণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

লালমনিরহাটের মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানির তোড়ে অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন। গড্ডিমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, ওই ইউনিয়নের ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ধরলা বেষ্টিত কুলাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, প্রায় ৩ হাজার মানুষ পাবিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিনিও এখন পর্যন্ত কাউকে কোন খাদ্য সহায়তা দিতে পারেননি।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিস্তা-ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

‘বাহে পানিত আর বাঁচি না, পেটত ভাত যায় না দু’দিন থাকি’

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

image

‘গত এক সপ্তাহ থ্যাকি বানের পানিত পড়ি আছি, ক্যাও হামার খবর নেয় না, খালি শুনি শেখের বেটি ম্যালা খাবার পাঠায় কিন্তু হামার অ্যাদি মেম্বুর চেয়ারম্যান ক্যাও আইসে না। দুই দিন থ্যাকি খ্যালি শুকনা খাবার খ্যাইয়্যা জীবন পার করছি। চুলা ডুবি থাকায় ভাত রান্না করার কোন বুদ্ধি নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারি গ্রামের বৃদ্ধা ওমিছন বেওয়া। শুধু তিনিই নয়, জেলার বন্যার্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে চরাঞ্চলের যোগযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বানভাসি এলাকাগুলোতে। জেলা প্রশাসন থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা অতি নগণ্য। উজানের ঢল আর অব্যাহত বর্ষণে টইটম্বুর লালমনিরহাটের নদ-নদীর পেট। আষাঢ়ের শুরুতেই হু হু করে বাড়ছে নদীর পানি। বিপদসীমা ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের বাসিন্দারা কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত। পানি প্রবাহ বেড়ে তলিয়ে গেছে বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের বিভিন্ন উঠতি ফসল। অন্তত ৩০ হাজারের ও বেশি মানুষ হাঁটু বা কোমর পানিতে বন্দীদশায় আছেন। এসব মানুষের হাতে এখনো পৌঁছেনি কোন সহায়তা।

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি সøুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে। পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা ছাড়াও জেলার অন্যান্য নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। আর তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তিস্তা নয় ধরলাসহ জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। হাজারো বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। অনেক জায়গায় এখনো হাঁটু ও কোমর সমান পানি। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে এসব এলাকায় জিও ব্যাগ আগাম মজুদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।

প্লাবিত এসব এলাকার আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, বাঁশের সাঁকোসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিবর্ণ নদীপাড়ের মানুষদের চোখে কয়েকদিন ঘুম নেই। কখন কী হয় সে চিন্তাই এখন মনে ভর করেছে তাদের। সঙ্গে হাড়ভাঙা শ্রমের ফসলি খেত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামের কালা মামুদ বলেন, ??‘কয়দিন থাকি নদীত পানি বাড়তে আছে। তাতে ফির আইত (রাত) হইলে বৃষ্টি। হামরা বউ-ছাওয়া নিয়্যা খুব কষ্টোত আছি। কয়দিন থাকি ঠিক মতো ঘুম হওচে না। ভয় নাগে, কখন কী হয়। অ্যালাও তো হামরা হাঁটু পানিত আছি। কোন্টে কোনা রান্দিবারি খামো, সেই জায়গাও নাই। চকির ওপররোত চকি দিয়া কোনোমতে আইত কাটাওছি।’

লালমনিরহাটের বানভাসি সোহরাব, জয়নাল, টেপা মুন্সিসহ আরও বেশ কয়েকজন জানিয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে পানিবন্দী বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের নৌকায় করে উঁচু স্থানে নেয়া হয়েছে। বন্যা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। বানভাসি ফিরোজুল, রফিক ও আবদুল মতিন মিয়া। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় অন্যদের মতো চরম বিপাকে পড়েছেন তারাও। এখন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্ট ভাঙনে আতঙ্কিত এই তিন কৃষক অনেক কষ্টে তাদের বাড়িঘর উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।

কৃষক ফিরোজুল মিয়া জানান, সারাজীবন কষ্ট আর কষ্ট। নদীপাড়োত জন্ম নেয়াটাও হামার অপরাধ। সরকার চাইরোপাকে (সবখানে) উন্নয়ন করে, ‘খালি হামার তিস্তা নদীর কিছু করে না। কত দিন ধরি শুনোছি ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি হইবে। কিন্তু কামের কাম কিছুই হয় নাই। অ্যালা (এখন) ফির চীনের সাথে নাকি সরকার নদী শাসন (তিস্তা মহাপরিকল্পনা) করবে। বছরে বছরে কত কথা শুনি, হামার এত্তি কোনো কাম চোখোত পড়ে না বাহে।’

সিন্দুনা গ্রামের পানিবন্দী সামিনা বেগম, বৃদ্ধা ফাতেমা বেওয়াও ক্ষুদ্ধ তিস্তার বুকে পানি বাড়তে থাকায় টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দুর্ভোগে থাকা এই দুই নারীর মতো অন্যদেরও অভিযোগের শেষ নেই। কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী থাকা এসব মানুষ চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারছে না। তাদের অনেকেরই দু’বেলা খাবার মতো ব্যবস্থাও ফুরিয়েছে। এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান-মেম্বার কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্য সহায়তাও মেলেনি। ওই গ্রামের পানিবন্দী নাসিমা বেগম জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে তার বাড়ির উঠানে চলে এসছে। এখন বাড়িঘর সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তাকে নৌকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ যুদ্ধ শুধু এসব ইউনিয়নে নয়, তিস্তা-ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর দুর্যোগ-দুর্ভোগের সঙ্গে লড়াই করে এভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছেন। রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, প্রতিদিনই তার ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলে পানি বাড়ছে। মানুষ পানিবন্দী হচ্ছে। বাদামের সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী বিতরণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

লালমনিরহাটের মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানির তোড়ে অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন। গড্ডিমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, ওই ইউনিয়নের ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ধরলা বেষ্টিত কুলাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, প্রায় ৩ হাজার মানুষ পাবিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিনিও এখন পর্যন্ত কাউকে কোন খাদ্য সহায়তা দিতে পারেননি।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিস্তা-ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।