নেত্রকোনায় চরম দুর্ভোগে পানিবন্দী মানুষ

ঢলের পানি বিছানা যেন ছুঁই ছুঁই। এমন অবস্থায় গত ক’দিন ধরেই চৌকির ওপর চৌকি দিয়ে দিনানিপাত করছেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দাসহ বন্যাকবলিত ১০ উপজেলার পানিবন্দী মানুষ। পানিতে পড়ে মৃত্যুর ভয়ে শিশুদের কোলে কোলেই রাখতে হয় দিনভর। কারো কারো কোন রকম একবেলা খাওয়া হলেও কেউ কেউ চিড়া মুড়িতেই সীমাবদ্ধ। নেই বিদ্যুৎ সরবারাহ। কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও পানিতে ভরে আছে। গতকাল বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন। তারমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা। যার ৮টি ইউনিয়নের ৩৪৫টি গ্রামের প্রায় সবগুলোই। এদিকে পাশর্^বর্তী দুর্গাপুর উপজেলারও চিত্রও অনেকটা একই রকম। এছাড়া নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী, আটপাড়া ও মোহনগঞ্জসহ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেলেও বেশিরভাগ মানুষই পানির ওপর নিজ বাড়িতেই রয়েছেন বন্দীদশায়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশু নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন চিড়া মুড়িতে। বারহাট্টার অতিথপুর উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার। আশ্রয়ণে থাকা সবুজ মিয়া, আজিজ মিয়া, মনোয়ারা বেগমসহ সবার বাড়িতেই পানি থাকায় বাধ্য হয়েই এখানে এসেছেন। দুদিনে খাবার খেয়েছেন মাত্র দু’বেলা। পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে কেন্দ্রগুলোতে। এমন অবস্থা প্রায় সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের। আবার অনেকে দুদিন ধরেই রয়েছেন না খেয়ে। বারহাট্টা সদরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সারাদিনে একবার খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গৃহপালিত পশুগুলোও ভুগছে খাদ্যাভাবে। নিজেরা কোনরকম পানির ওপর ভর করে থাকলেও বৃষ্টিতে পশুদের রাখছেন সড়ক বিদ্যালয় রেল স্টেশনসহ উঁচু এলাকায়। সুপেয় পানি না থাকায় বাধ্য হয়েই ময়লা পানি পান করছেন পানিবন্দী মানুষেরা। তাদের অভিযোগ নির্বাচন আসলেই জনপ্রতিনিধেদের দেখা মেলে। কষ্টের দিনে তারা পাচ্ছেন না তেমন কাউকেই। হাওরঞ্চলে খালিয়াজুরী উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে উদ্ধার কাজে সহায়তায় নেমেছে সেনাবাহিনী।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

নেত্রকোনায় চরম দুর্ভোগে পানিবন্দী মানুষ

প্রতিনিধি, নেত্রকোনা

ঢলের পানি বিছানা যেন ছুঁই ছুঁই। এমন অবস্থায় গত ক’দিন ধরেই চৌকির ওপর চৌকি দিয়ে দিনানিপাত করছেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দাসহ বন্যাকবলিত ১০ উপজেলার পানিবন্দী মানুষ। পানিতে পড়ে মৃত্যুর ভয়ে শিশুদের কোলে কোলেই রাখতে হয় দিনভর। কারো কারো কোন রকম একবেলা খাওয়া হলেও কেউ কেউ চিড়া মুড়িতেই সীমাবদ্ধ। নেই বিদ্যুৎ সরবারাহ। কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও পানিতে ভরে আছে। গতকাল বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন। তারমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা। যার ৮টি ইউনিয়নের ৩৪৫টি গ্রামের প্রায় সবগুলোই। এদিকে পাশর্^বর্তী দুর্গাপুর উপজেলারও চিত্রও অনেকটা একই রকম। এছাড়া নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী, আটপাড়া ও মোহনগঞ্জসহ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেলেও বেশিরভাগ মানুষই পানির ওপর নিজ বাড়িতেই রয়েছেন বন্দীদশায়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশু নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন চিড়া মুড়িতে। বারহাট্টার অতিথপুর উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার। আশ্রয়ণে থাকা সবুজ মিয়া, আজিজ মিয়া, মনোয়ারা বেগমসহ সবার বাড়িতেই পানি থাকায় বাধ্য হয়েই এখানে এসেছেন। দুদিনে খাবার খেয়েছেন মাত্র দু’বেলা। পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে কেন্দ্রগুলোতে। এমন অবস্থা প্রায় সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের। আবার অনেকে দুদিন ধরেই রয়েছেন না খেয়ে। বারহাট্টা সদরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সারাদিনে একবার খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গৃহপালিত পশুগুলোও ভুগছে খাদ্যাভাবে। নিজেরা কোনরকম পানির ওপর ভর করে থাকলেও বৃষ্টিতে পশুদের রাখছেন সড়ক বিদ্যালয় রেল স্টেশনসহ উঁচু এলাকায়। সুপেয় পানি না থাকায় বাধ্য হয়েই ময়লা পানি পান করছেন পানিবন্দী মানুষেরা। তাদের অভিযোগ নির্বাচন আসলেই জনপ্রতিনিধেদের দেখা মেলে। কষ্টের দিনে তারা পাচ্ছেন না তেমন কাউকেই। হাওরঞ্চলে খালিয়াজুরী উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে উদ্ধার কাজে সহায়তায় নেমেছে সেনাবাহিনী।