মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত আট বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।

বিবিএস-এর হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক মাসে বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মে মাসে এই হার হয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত কয়েক মাসের মতো গ্রামে শহরের চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। মে মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপর থেকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক নি¤œমুখীই ছিল। ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার চড়ছে।

সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর অর্থ হলো ২০২১ সালের মে মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের মে মাসে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্য বা খাবারের জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, চলতি বছরের মে মাসে সেই খাবারের জন্য ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো মে মাসে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।

বেশ কিছুদিন ধরেই সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার বিবিএসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

গত ৩ মার্চ ‘মূল্যস্ফীতি : সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম। তাতে মার্চ মাসের বিবিএসের ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।

একই কথা বলেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত ১৬ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বাজারের যে অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’

বিবিএসের তথ্যে আরও দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এরপর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত আট বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।

বিবিএস-এর হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক মাসে বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মে মাসে এই হার হয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত কয়েক মাসের মতো গ্রামে শহরের চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। মে মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপর থেকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক নি¤œমুখীই ছিল। ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার চড়ছে।

সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর অর্থ হলো ২০২১ সালের মে মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের মে মাসে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্য বা খাবারের জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, চলতি বছরের মে মাসে সেই খাবারের জন্য ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো মে মাসে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।

বেশ কিছুদিন ধরেই সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার বিবিএসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

গত ৩ মার্চ ‘মূল্যস্ফীতি : সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম। তাতে মার্চ মাসের বিবিএসের ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।

একই কথা বলেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত ১৬ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বাজারের যে অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’

বিবিএসের তথ্যে আরও দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এরপর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।