মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ এনামুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ বিশেষ টিম গত শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করছিল। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের হত্যা করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল। বোমা পুঁতে রাখার আগে কোটালীপাড়ায় বিসিক শিল্প এলাকার সাবান ফ্যাক্টরিতে বিষ্ফোরক মজুদ ও গোপন বৈঠক করেছিল। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামি কখনো মসজিদের ইমাম, কখনো হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারসহ নানা পরিচয়ে উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব জানায়, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার অদূরে জঙ্গি এনামুল হক ওরফে এনামুল করিম তার অন্যান্য জঙ্গি সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে সমাবেশ স্থলের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে।

এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে উত্ত মামলায় আদালত অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তারকৃত শেখ এনামুল হক ওরফে শেখ এনামুল করিমসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত এনামুল বলেছে, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথ প্লট বরাদ্দ নিয়ে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালে জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে। এনামুল বিভিন্ন সময় মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক ও সমাবেশে অংশ গ্রহণ করত।

এনামুল জঙ্গি মুফতি হান্নানের পরিকল্পনায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরস্পর যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশে কোটালীপাড়ার সমাবেশ স্থলের কাছে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনানোর পরিকল্পনা করে।

এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ওই কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরকদ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কারখানায় জমা করে লোহার ড্রামের ভেতর দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে জনসভার অদূরে পুঁতে রাখে।

ওই বোমা পুঁতে রাখা ঘটনায় এনামুলের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে গ্রেপ্তারকৃত এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সে নিজের পরিচয় গোপন করে কারী না হওয়া শর্তে কারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমামতি করে।

গাজীপুরে অবস্থানকালে সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। গাজীপুরে অবস্থানকালে হোমিওপ্যাথি কলেজে ২ বছর প্রভাবষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে। একইভাবে সে নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করত।

২০১০ সালে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা আইকে হোমিও কলেজ উত্তরা নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। ২০২০ সালে আইকে হোমিও কলেজ উত্তরা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যানারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা দেয়া শুরু করে।

তার চিকিৎসায় ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় বলে সে দাবি করত। সে এইডস রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা দিতে সক্ষম বলে দাবি করত। সে সব সময় নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে চিকিৎসা দিত। এছাড়া সে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়বেটিস, মেদ, বন্ধাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনি, যৌন ও মানসিক রোগসহ নানা রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করত।

উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ এনামুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তার বয়স ৫৩ বছর। তার বাবার নামে শেখ আবদুল মজিদ।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ এনামুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ বিশেষ টিম গত শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করছিল। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের হত্যা করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল। বোমা পুঁতে রাখার আগে কোটালীপাড়ায় বিসিক শিল্প এলাকার সাবান ফ্যাক্টরিতে বিষ্ফোরক মজুদ ও গোপন বৈঠক করেছিল। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামি কখনো মসজিদের ইমাম, কখনো হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারসহ নানা পরিচয়ে উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব জানায়, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার অদূরে জঙ্গি এনামুল হক ওরফে এনামুল করিম তার অন্যান্য জঙ্গি সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে সমাবেশ স্থলের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে।

এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে উত্ত মামলায় আদালত অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তারকৃত শেখ এনামুল হক ওরফে শেখ এনামুল করিমসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত এনামুল বলেছে, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথ প্লট বরাদ্দ নিয়ে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালে জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে। এনামুল বিভিন্ন সময় মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক ও সমাবেশে অংশ গ্রহণ করত।

এনামুল জঙ্গি মুফতি হান্নানের পরিকল্পনায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরস্পর যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশে কোটালীপাড়ার সমাবেশ স্থলের কাছে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনানোর পরিকল্পনা করে।

এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ওই কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরকদ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কারখানায় জমা করে লোহার ড্রামের ভেতর দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে জনসভার অদূরে পুঁতে রাখে।

ওই বোমা পুঁতে রাখা ঘটনায় এনামুলের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে গ্রেপ্তারকৃত এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সে নিজের পরিচয় গোপন করে কারী না হওয়া শর্তে কারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমামতি করে।

গাজীপুরে অবস্থানকালে সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। গাজীপুরে অবস্থানকালে হোমিওপ্যাথি কলেজে ২ বছর প্রভাবষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে। একইভাবে সে নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করত।

২০১০ সালে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা আইকে হোমিও কলেজ উত্তরা নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। ২০২০ সালে আইকে হোমিও কলেজ উত্তরা নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যানারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা দেয়া শুরু করে।

তার চিকিৎসায় ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় বলে সে দাবি করত। সে এইডস রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা দিতে সক্ষম বলে দাবি করত। সে সব সময় নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে চিকিৎসা দিত। এছাড়া সে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়বেটিস, মেদ, বন্ধাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনি, যৌন ও মানসিক রোগসহ নানা রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করত।

উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ এনামুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তার বয়স ৫৩ বছর। তার বাবার নামে শেখ আবদুল মজিদ।