বন্যার পানি সরাতে রাস্তা কাটা হয়েছে, আরও কাটা হবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

বৃষ্টি ও উজানের পানির চাপে ঢাকাসহ দেশের মধ্যস্থল প্লাবিত হতে পারে। যেকোন খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তাই দুযোর্গের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য এক যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পানির চাপ কমাতে সড়ক কেটে ফেলার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যাতে সরে যেতে পারে এজন্য কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।’

গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে তৃতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা কখনো কখনো দুর্যোগ মোকাবেলা করি। এবারও আমাদের কিছু কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে এবং প্লাবিত হওয়ার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের পাশে সর্বাত্মকভাবে অবস্থান করছেন।’

ঢাকা প্লাবিত হলে প্রস্তুতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘১০০ অথবা ১১০ বছরে হয়ত এমন দুর্যোগ আসে। এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময় এমন দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। দুর্যোগের জন্য সব সময় প্রস্তুতি থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা মোকাবিলায় যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।’

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে আকস্মিক বন্যার বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা কী পর্যায়ে যাবে সেটার পূর্বাভাস কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্বাভাস দেয় তারা বলেছে, একটা আগাম সতর্কতা আছে। তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে সেটি বলা হয়নি।’

ঢাকায় ১৯৮৮ সালের মতো বন্যা হতে পারে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা হবে, কিন্তু কতটুকু হবে সেটির পূর্বাভাস কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। ১৯৯৮ সালের বন্যাকে আমরা মোকাবিলা করেছি, আগেও বহুবার মোকাবিলা করেছি। ১৯৯৮ সালে বলা হয়েছিল ২ কোটি মানুষ মারা যাবে, কিন্তু একজনও মারা যায়নি। সে সময় মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। যেখানে যা করা দরকার সেটি করা হচ্ছে। তবে যেকোন খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অপ্রস্তুত থাকা উচিত না। আমরা সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ হচ্ছে

জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। তা নিরসনের জন্য ঢাকায় যতগুলো খাল আছে সেগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি, অনেকগুলো হস্তান্তরও করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য চার হাজার কোটি টাকার বেশি একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।’

এ পর্যন্ত কয়টি খাল উদ্ধার করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনে মোট ২৬টি খাল হস্তান্তর করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সাড়ে ৬ একর জমি দখলমুক্ত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ২৫ একর দখলমুক্ত করেছে। এ কাজগুলো চলমান আছে। খাল হস্তান্তরের সুফল আমরা ইতোমধ্যে ভোগ করছি। যদিও এসব খালের অনেক অংশ অনেকে দখল করে নিয়েছে, যা দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন।’

সিঙ্গাপুর ও নিউ ইয়র্ক শহরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে সবাইকে মোবাইলে দেখিয়েছি, সিঙ্গাপুর কীভাবে পুরো প্লাবিত হয়েছে, সেখানে গাড়িগুলো নৌকার মতো ভাসছিল। এরকম পরিস্থিতি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। নিউ ইয়র্কে দেখেছি, সাবওয়েতে পানি ঢুকে গেছে। সমস্ত নিউইয়র্ক কিন্তু প্লাবিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিষয়ে তো কেউই প্রস্তুত থাকে না। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত

বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিষয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে উদ্যোগ নেই। এবারও সেটি করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি উভয় মেয়র নিয়ে রেখেছেন। যেসব কীটনাশক, ওষুধ, যন্ত্রপাতি দরকার তা তাদের কাছে মজুদ আছে।’

শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে এ বছর এখনও কেউ মারা যাননি। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে কোন মৃত্যু নাই। তবে ডেঙ্গুতে ভারতে একজন, ফিলিপাইনে ৩১ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ২২৯ জন, মালয়েশিয়ায় ৭ জন মারা গেছেন। এসব দেশ থেকে আমরা ভালো আছি। আমরা কিন্তু প্রস্তুত আছি। মানুষকে সচেতন করতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ , ৬ আষাড় ১৪২৮ ২০ জিলকদ ১৪৪৩

বন্যার পানি সরাতে রাস্তা কাটা হয়েছে, আরও কাটা হবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃষ্টি ও উজানের পানির চাপে ঢাকাসহ দেশের মধ্যস্থল প্লাবিত হতে পারে। যেকোন খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তাই দুযোর্গের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য এক যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পানির চাপ কমাতে সড়ক কেটে ফেলার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যাতে সরে যেতে পারে এজন্য কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।’

গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে তৃতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা কখনো কখনো দুর্যোগ মোকাবেলা করি। এবারও আমাদের কিছু কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে এবং প্লাবিত হওয়ার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের পাশে সর্বাত্মকভাবে অবস্থান করছেন।’

ঢাকা প্লাবিত হলে প্রস্তুতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘১০০ অথবা ১১০ বছরে হয়ত এমন দুর্যোগ আসে। এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময় এমন দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। দুর্যোগের জন্য সব সময় প্রস্তুতি থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা মোকাবিলায় যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।’

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে আকস্মিক বন্যার বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা কী পর্যায়ে যাবে সেটার পূর্বাভাস কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্বাভাস দেয় তারা বলেছে, একটা আগাম সতর্কতা আছে। তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে সেটি বলা হয়নি।’

ঢাকায় ১৯৮৮ সালের মতো বন্যা হতে পারে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা হবে, কিন্তু কতটুকু হবে সেটির পূর্বাভাস কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। ১৯৯৮ সালের বন্যাকে আমরা মোকাবিলা করেছি, আগেও বহুবার মোকাবিলা করেছি। ১৯৯৮ সালে বলা হয়েছিল ২ কোটি মানুষ মারা যাবে, কিন্তু একজনও মারা যায়নি। সে সময় মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। যেখানে যা করা দরকার সেটি করা হচ্ছে। তবে যেকোন খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অপ্রস্তুত থাকা উচিত না। আমরা সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ হচ্ছে

জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। তা নিরসনের জন্য ঢাকায় যতগুলো খাল আছে সেগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি, অনেকগুলো হস্তান্তরও করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য চার হাজার কোটি টাকার বেশি একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।’

এ পর্যন্ত কয়টি খাল উদ্ধার করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনে মোট ২৬টি খাল হস্তান্তর করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সাড়ে ৬ একর জমি দখলমুক্ত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ২৫ একর দখলমুক্ত করেছে। এ কাজগুলো চলমান আছে। খাল হস্তান্তরের সুফল আমরা ইতোমধ্যে ভোগ করছি। যদিও এসব খালের অনেক অংশ অনেকে দখল করে নিয়েছে, যা দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন।’

সিঙ্গাপুর ও নিউ ইয়র্ক শহরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে সবাইকে মোবাইলে দেখিয়েছি, সিঙ্গাপুর কীভাবে পুরো প্লাবিত হয়েছে, সেখানে গাড়িগুলো নৌকার মতো ভাসছিল। এরকম পরিস্থিতি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। নিউ ইয়র্কে দেখেছি, সাবওয়েতে পানি ঢুকে গেছে। সমস্ত নিউইয়র্ক কিন্তু প্লাবিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিষয়ে তো কেউই প্রস্তুত থাকে না। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত

বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিষয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে উদ্যোগ নেই। এবারও সেটি করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি উভয় মেয়র নিয়ে রেখেছেন। যেসব কীটনাশক, ওষুধ, যন্ত্রপাতি দরকার তা তাদের কাছে মজুদ আছে।’

শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে এ বছর এখনও কেউ মারা যাননি। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে কোন মৃত্যু নাই। তবে ডেঙ্গুতে ভারতে একজন, ফিলিপাইনে ৩১ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ২২৯ জন, মালয়েশিয়ায় ৭ জন মারা গেছেন। এসব দেশ থেকে আমরা ভালো আছি। আমরা কিন্তু প্রস্তুত আছি। মানুষকে সচেতন করতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।