জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর সুপারিশ ক্যাবের

করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় জিনিসিপত্রের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় ‘অবৈধভাবে’ জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

গতকাল ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির এই দাবি করেন। তিনি বলেন, কিছু লোকের লুটপাটের স্বার্থ বাদ দিয়ে ভোক্তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্তত এই সময়ে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি। করোনা ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে কয়েক দফা জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন নতুন করে বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ভোক্তাদের। এই অবস্থায় ভোক্তাদের স্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি।’

জ্বালানি তেলের মূল্য পুনরায় অবৈধ উপায়ে বৃদ্ধি না করার’ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এম সামসুল আলম।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের পক্ষ থেকে তিনি ডিজেল, ফার্নেসওয়েল এবং কেরোসিনের দাম পবিরর্তনে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানির ভিত্তিতে বৈধভাবে বিইআরসির মাধ্যমে নিশ্চিত করাসহ চার দাবি তুলে ধরেন।

বাকি দাবিগুলো হচ্ছে, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের মাধ্যমে বিপিসির আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরল জ্বালানি ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় নিবিড় পর্যালোচনা করা। জ্বালানি খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সব লাইসেন্সধারীর পরিচালনা বোর্ড তথা প্রশাসন থেকে জ্বালানি বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করা ও এসব কর্মকর্তার মাধ্যমে লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে নেয়া আর্থিক সুবিধা অবৈধ হওয়ায় সব অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায় করা। বিইআরসি আইন লঙ্ঘন করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য নির্ধারণের অপরাধে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সচিব-সিনিয়র সচিব (ভূতপূর্বসহ) এবং বিপিসির চেয়ারম্যানদের বিইআরসি আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আনা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেলের মূল্য অবৈধ উপায়ে আবারও বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অতিসত্ত্বর সে সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে। দিনে ৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমানোর অজুহাতে তারা পরিবহনসহ ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় শত শত কোটি টাকা বাড়াবে। ফলে ভোক্তারা এখন অতিমাত্রায় আতঙ্কিত এবং দিশাহারা।

বলা হয় ‘বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সবার। ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরপেক্ষ অডিট করানোর দাবি করে আসছে। এ দাবি দাতা সংস্থারও। বিইআরসি আইনের ২২ ও ৩৪ ধারা মতে এলপিজিসহ সব পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেসওয়েল ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসির। ২৭ ধারা মতে বিপিসি বিইআরসির লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। ৩৪(৬) ধারা মতে যেকোন জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি/পরিবর্তনের প্রস্তাব লাইসেন্সধারী হিসেবে বিপিসিকে বিইআরসির কাছে পেশ করতে হবে এবং ৩৪(৪) ধারা মতে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানি দেয়ার পর বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করবে। বিইআরসির আইন অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ হওয়ায় এলপিজির মূল্য এখন বিইআরসি নির্ধারণ করে। তাতে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্সধারীরা সিলিন্ডার প্রতি কমপক্ষে গড়ে দেড়শ টাকা বেশি নিয়েছে। ভাবা যায় বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভোক্তাদের কাছ থেকে কত কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে!’

আরও বলা হয়, ‘পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা তরল জ্বালানির মূল্য বিইআরসির মাধ্যমে শুনানির ভিত্তিতে নির্ধারিত হলে জানা যেত লিটার প্রতি বাড়তি কত টাকা বিপিসি নিচ্ছে এবং ৪৩ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে কত কোটি টাকা এরই মধ্যে নিয়েছে। আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে লাইসেন্সধারীরা গ্যাসে ১১৭ শতাংশ এবং বিদ্যুতে ৬৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে। কিন্তু গণশুনানিতে প্রতীয়মান হয়, গ্যাসে ঘাটতি ১৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬২.১৩ শতাংশ। অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এমন ব্যয় যুক্ত না করা হলে গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাস পায় এবং মূল্যবৃদ্ধি হয় না। আবার অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বিদ্যুতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সে ব্যয় যুক্ত না হলে বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি থাকে না এবং মূল্যবৃদ্ধি নয়, কমে। জ্বালানি তেলকে যদি চুরি এবং অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়মুক্ত করতে হয়, তাহলে দরকার বিইআরসি আইন মতে মূল্য নির্ধারণ করা এবং সেই সঙ্গে লাইসেন্সিদের পরিচালনা বোর্ড তথা প্রশাসনকে আমলামুক্ত করা।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার ভয়ানকভাবে বিপর্যস্ত। এমন দৃষ্টান্ত কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। তাই আমরা এমন পরিস্থিতির অতি দ্রুত পরিবর্তন চাই।’

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর সুপারিশ ক্যাবের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় জিনিসিপত্রের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় ‘অবৈধভাবে’ জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

গতকাল ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির এই দাবি করেন। তিনি বলেন, কিছু লোকের লুটপাটের স্বার্থ বাদ দিয়ে ভোক্তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্তত এই সময়ে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি। করোনা ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে কয়েক দফা জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন নতুন করে বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ভোক্তাদের। এই অবস্থায় ভোক্তাদের স্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর দাবি করছি।’

জ্বালানি তেলের মূল্য পুনরায় অবৈধ উপায়ে বৃদ্ধি না করার’ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এম সামসুল আলম।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের পক্ষ থেকে তিনি ডিজেল, ফার্নেসওয়েল এবং কেরোসিনের দাম পবিরর্তনে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানির ভিত্তিতে বৈধভাবে বিইআরসির মাধ্যমে নিশ্চিত করাসহ চার দাবি তুলে ধরেন।

বাকি দাবিগুলো হচ্ছে, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের মাধ্যমে বিপিসির আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরল জ্বালানি ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় নিবিড় পর্যালোচনা করা। জ্বালানি খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সব লাইসেন্সধারীর পরিচালনা বোর্ড তথা প্রশাসন থেকে জ্বালানি বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করা ও এসব কর্মকর্তার মাধ্যমে লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে নেয়া আর্থিক সুবিধা অবৈধ হওয়ায় সব অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায় করা। বিইআরসি আইন লঙ্ঘন করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য নির্ধারণের অপরাধে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সচিব-সিনিয়র সচিব (ভূতপূর্বসহ) এবং বিপিসির চেয়ারম্যানদের বিইআরসি আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আনা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেলের মূল্য অবৈধ উপায়ে আবারও বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অতিসত্ত্বর সে সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে। দিনে ৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমানোর অজুহাতে তারা পরিবহনসহ ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় শত শত কোটি টাকা বাড়াবে। ফলে ভোক্তারা এখন অতিমাত্রায় আতঙ্কিত এবং দিশাহারা।

বলা হয় ‘বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সবার। ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরপেক্ষ অডিট করানোর দাবি করে আসছে। এ দাবি দাতা সংস্থারও। বিইআরসি আইনের ২২ ও ৩৪ ধারা মতে এলপিজিসহ সব পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেসওয়েল ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসির। ২৭ ধারা মতে বিপিসি বিইআরসির লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। ৩৪(৬) ধারা মতে যেকোন জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি/পরিবর্তনের প্রস্তাব লাইসেন্সধারী হিসেবে বিপিসিকে বিইআরসির কাছে পেশ করতে হবে এবং ৩৪(৪) ধারা মতে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানি দেয়ার পর বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করবে। বিইআরসির আইন অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ হওয়ায় এলপিজির মূল্য এখন বিইআরসি নির্ধারণ করে। তাতে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্সধারীরা সিলিন্ডার প্রতি কমপক্ষে গড়ে দেড়শ টাকা বেশি নিয়েছে। ভাবা যায় বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভোক্তাদের কাছ থেকে কত কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে!’

আরও বলা হয়, ‘পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা তরল জ্বালানির মূল্য বিইআরসির মাধ্যমে শুনানির ভিত্তিতে নির্ধারিত হলে জানা যেত লিটার প্রতি বাড়তি কত টাকা বিপিসি নিচ্ছে এবং ৪৩ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে কত কোটি টাকা এরই মধ্যে নিয়েছে। আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে লাইসেন্সধারীরা গ্যাসে ১১৭ শতাংশ এবং বিদ্যুতে ৬৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে। কিন্তু গণশুনানিতে প্রতীয়মান হয়, গ্যাসে ঘাটতি ১৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬২.১৩ শতাংশ। অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এমন ব্যয় যুক্ত না করা হলে গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাস পায় এবং মূল্যবৃদ্ধি হয় না। আবার অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বিদ্যুতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সে ব্যয় যুক্ত না হলে বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি থাকে না এবং মূল্যবৃদ্ধি নয়, কমে। জ্বালানি তেলকে যদি চুরি এবং অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়মুক্ত করতে হয়, তাহলে দরকার বিইআরসি আইন মতে মূল্য নির্ধারণ করা এবং সেই সঙ্গে লাইসেন্সিদের পরিচালনা বোর্ড তথা প্রশাসনকে আমলামুক্ত করা।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার ভয়ানকভাবে বিপর্যস্ত। এমন দৃষ্টান্ত কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। তাই আমরা এমন পরিস্থিতির অতি দ্রুত পরিবর্তন চাই।’