করোনা সংকটের প্রণোদনার সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি বিজিএমইএর

করোনা সংকটের মধ্যে দেয়া প্রণোদনার সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠকে সংগঠনের নেতারা এগুলোর সঙ্গে নতুন কিছু দাবিও তুলেছেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে একগুচ্ছ লিখিত দাবি তুলে ধরে।

লিখিত প্রস্তাবে সংগঠনটি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনে বৈদেশিক মুদ্রাবিধি শিথিল করে ২০২১ সালের মার্চে দেয়া সুবিধার মেয়াদ ২০২২ সালের পুরোটা সময় জুড়ে চেয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের সময় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের পাশাপাশি অনেক নীতি সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সুবিধাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রপ্তানি আয় ১২০ দিনের পরিবর্তে ২১০ দিনের মধ্যে আনা, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির দায় পরিশোধে ১৮০ দিন অতিরিক্ত সময় দেয়া, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণের মেয়াদ ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করা, ইডিএফ এর অর্থে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধে সুযোগ ইত্যাদি। এছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি হিসেবে শ্রেণীকরণ না করা ইত্যাদি।

২০২০ সালের মার্চের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দেয়া সুবিধাগুলোর মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের জুন মাসে বাড়ানো মেয়াদও শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এছাড়া ২০২১ সালে বকেয়া হওয়া ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে যান ব্যবসায়ীরা। সেই সুযোগ চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল বিশেষ বিবেচনায়। সেই সুযোগটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিজিএমইএ গভর্নরের কাছে দাবি তোলে।

একই সঙ্গে সংগঠনটি ‘এককালীন এক্সিটের’ অর্থের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানোর অনুরোধও করেছে। ২০১৯ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল ও ‘এককালীন এক্সিট’ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার মাধ্যমে পুনঃতফসিল ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়। আর এককালীন এক্সিট সুবিধাটি নিতে অর্থ পরিশোধের সময় দেয়া হয় এক বছর। গত ডিসেম্বরে সেই অর্থ পরিশোধের সময় শেষ হয়েছে অনেকের।

অপরদিকে মহামারীকালে পণ্য রপ্তানির পর অর্থ ফেরত আনার সময় বাড়িয়ে ২১০ দিন করা হলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেকে পুরো বা আংশিক আয় আনতে পারেননি অনেক রপ্তানিকারক।

লিখিত প্রস্তাবে বিজিএমইএ জানিয়েছে, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ইএক্সপিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা রয়েছে।’

এজন্য রপ্তানি আয় বকেয়া থাকলেও যেন ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান রাখে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিজিএমইএর অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, পণ্য আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে ১২০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করা এবং গ্রুপ অব কোম্পানির কোন প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের অর্থায়ন সুবিধা বন্ধ না রাখা। বন্ডেড ওয়্যার হাউজ না থাকা কোম্পানিগুলোকেও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি চেয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

করোনা সংকটের প্রণোদনার সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি বিজিএমইএর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংকটের মধ্যে দেয়া প্রণোদনার সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠকে সংগঠনের নেতারা এগুলোর সঙ্গে নতুন কিছু দাবিও তুলেছেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে একগুচ্ছ লিখিত দাবি তুলে ধরে।

লিখিত প্রস্তাবে সংগঠনটি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনে বৈদেশিক মুদ্রাবিধি শিথিল করে ২০২১ সালের মার্চে দেয়া সুবিধার মেয়াদ ২০২২ সালের পুরোটা সময় জুড়ে চেয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের সময় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের পাশাপাশি অনেক নীতি সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সুবিধাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রপ্তানি আয় ১২০ দিনের পরিবর্তে ২১০ দিনের মধ্যে আনা, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির দায় পরিশোধে ১৮০ দিন অতিরিক্ত সময় দেয়া, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণের মেয়াদ ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করা, ইডিএফ এর অর্থে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধে সুযোগ ইত্যাদি। এছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি হিসেবে শ্রেণীকরণ না করা ইত্যাদি।

২০২০ সালের মার্চের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দেয়া সুবিধাগুলোর মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের জুন মাসে বাড়ানো মেয়াদও শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এছাড়া ২০২১ সালে বকেয়া হওয়া ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে যান ব্যবসায়ীরা। সেই সুযোগ চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল বিশেষ বিবেচনায়। সেই সুযোগটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিজিএমইএ গভর্নরের কাছে দাবি তোলে।

একই সঙ্গে সংগঠনটি ‘এককালীন এক্সিটের’ অর্থের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানোর অনুরোধও করেছে। ২০১৯ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল ও ‘এককালীন এক্সিট’ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার মাধ্যমে পুনঃতফসিল ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়। আর এককালীন এক্সিট সুবিধাটি নিতে অর্থ পরিশোধের সময় দেয়া হয় এক বছর। গত ডিসেম্বরে সেই অর্থ পরিশোধের সময় শেষ হয়েছে অনেকের।

অপরদিকে মহামারীকালে পণ্য রপ্তানির পর অর্থ ফেরত আনার সময় বাড়িয়ে ২১০ দিন করা হলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেকে পুরো বা আংশিক আয় আনতে পারেননি অনেক রপ্তানিকারক।

লিখিত প্রস্তাবে বিজিএমইএ জানিয়েছে, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ইএক্সপিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা রয়েছে।’

এজন্য রপ্তানি আয় বকেয়া থাকলেও যেন ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান রাখে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিজিএমইএর অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, পণ্য আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে ১২০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন করা এবং গ্রুপ অব কোম্পানির কোন প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের অর্থায়ন সুবিধা বন্ধ না রাখা। বন্ডেড ওয়্যার হাউজ না থাকা কোম্পানিগুলোকেও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি চেয়েছে সংগঠনটি।