৪ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি তলিয়ে গ্রাম, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি

নাসিরনগর

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নাসিরনগরে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ- নদীতে প্রায় ৪ ফুট পানি বেড়েছে। এতে করে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোনা আমন ফসলি জমি, ৫ হাজার হেক্টর পাট খেত ও মৌসুমী শাক- সবজির জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া গত শনিবার রাতে পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চানপাড়ার সঙ্গে উপজেলা সদরসহ বুড়িশ্বর ইউনিয়নের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নাসিরনগর উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভলাকুট ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, চাতলপাড় ইউনিয়নে ৭৫ হেক্টর, কুন্ডা ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, ধরমন্ডল ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর ও ফান্দাউক ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৫ হেক্টর বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। বন্যার পানিতে ওই সকল এলাকার ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান পানির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে ও আংশিক তলিয়ে গেছে আরো ২ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু কৃষকদের দাবি উপজেলার অধিকাংশ জমিই পানির নিচে।

এলাকাবাসী টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নেই বোনা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিন আগেও ওই সকল ফসলি জমিতে পানি ছিল না। বর্তমানে ধানি জমি গুলি ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে উপজেলা সদর, ভলাকুট ও ফান্দাউক ইউনিয়নের তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ঢুকে পড়ায় ওই সকল এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ধরমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বলেন, তার এলাকায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। যার সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ সরজমিনে এসব জমি পরিদর্শন করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সাঈদ তারেক বলেন, উজানের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাসিরনগরে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধানি জমির ধান পানির নীচে সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার হেক্টর ধানি জমি আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া পাট ও শাকসবজির জমি তলিয়ে গেছে ১ হাজার হেক্টর। তিনি বলেন দ্রুত পানি কমে গেলে ধানের কোন ক্ষতি হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভার প্রাপ্ত) মোনাব্বার হোসেন বলেন, নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়েছে। গত শনিবার রাতে উপজেলার হরিপুরে একটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। আমরা বন্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি কোন মানুষই আমাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।তিনি বলেন, ধানি জমি থেকে দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কেন্দুয়া

প্রতিনিধি, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় নেত্রকোনায় ১৮ শত ২০টি পুকুর ও মৎস্য খামার তলিয়ে গিয়েছে। জেলার কেন্দুয়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। ফলে পানির সঙ্গে বেরিয়ে গেছে মাছ ও পোনা। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মাছ ও পোনা পানির সঙ্গে বেরিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য চাষি ও পুকুর মালিক। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে গত রোববার( ১৯ জুন) রাতে জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা করেছি। এ তালিকায় উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি নিচু এলাকা। ঐ সব ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি পুকুর ও মৎস্য খামার মালিকদের পুকুর ও খামার পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গিয়েছে।

এছাড়া এখনও যে পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যদি কয়েক দিন অব্যাহত থাকে তাহলে হয়তো বাকি ইউনিয়নের মৎস্য চাষি ও পুকুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পরে আর একটি তালিকা করা হবে। উপজেলা বলাইশিমুল ইউনিয়নের রাজাইল গ্রামের ওলি উল্লাহ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থী জানান পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মৎস্য চাষ করেন, তার দুইটি পুকুরে আনুমানিক ৪ লাখ টাকার শিং মাছ ছিল, যা বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছে। তার মত আরো অনেক চাষির একই অবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাই তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ দিকে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ.কে.এম শাহজাহান কবির বলেন, কেন্দুয়া উপজেলায় ৫৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, ২০ হক্টর জমির আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের সবজি ও ১৩ হেক্টর জমি পাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে।

ফুলগাজী

প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীর ফুলগাজীতে ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর দুই স্থানে বেড়ি বাঁধে ভাঙন দেখা দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে দুই গ্রাম। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সোমবার (২০ জুন) সকালে নদীর উত্তর দৌলতপুর ও দরবারপুরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দরবারপুরের ভাঙনটি মেরামত করার জন্য স্থানীয়দের নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। পানি কমলে বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানগুলোর মেরামত করা হবে। অপরদিকে ভারী বর্ষণে ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়ালের ভেতর দিয়ে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে ফুলগাজী বাজার প্লাবিত, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে।

জামালপুর

প্রতিনিধি, জামালপুর

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

গত রবিবার সকাল ৯ টাশ জামালপুরের দেয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ইসলামপুর, দেয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জের নি¤œাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এছাড়াও দেয়ানগঞ্জের গুজিমারি গুচ্ছগ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওই গ্রামের লোকজন আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আশ্রয় নেয়া দুলু মিয়া বলেন-৩দিন হলো এইখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখন কবে পানি কমবো, কবে বাড়ি যাবো, জানি না। সারাটা জীবন আমাদের এই কষ্ট পোহাতে হয়।

আশ্রয় নেয়া জহুরা বেগম বলেন-এই জায়গায় আশ্রয় নেয়ার পর সরকার ১০ কেজি চাল দিছে। কিন্তু ওই চাল কি শুধু খাবো নাকি সঙ্গে কিছু রান্না করবো? সরকার কিছু নগদ টাকা দিলে ভালো হতো

দেয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা জানান- বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও বানভাসীদের সহায়তায় সবসময় তৎপর রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সরিষাবাড়ী

প্রতিনিধি, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি । উজান থেকে ধেয়ে আসা ঘোলা পানি যমুনা, ও যমুনার শাখা সুবর্ণ খালি এবং ঝিনাই নদীর পানি রাতারাতি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গিয়ে পাট , ভুট্টা ও উফসি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জনসাধারণের বাড়তি ঘরে পানি উঠে চলাচলের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানির প্রবল ¯্রাোতের তোড়ে নদীর দু,পাড় ভাংগন সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কে ধস নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে রাস্তাঘাট ভেঙে ও ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি গত রবিবার বিপদ সীমাার (দেওয়ানগঞ্জ পয়েন্টে) ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা, পোগলদিঘা ইউনিয়নের অনুরুপ, আওনা ইউনিয়নের পশ্চিমে ৭/৮টি গ্রাম ,পিংনা ইউনিয়নের প্রায় ১০/১২টি ও কামরাবাদ ইউনিয়নের ৬/৭টি গ্রাম পানিতে ডুবে গিয়ে পাট ও ভুট্টা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডা. নজরুল ইসলাম, আওনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন এবং পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক ও কামরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুস সালাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা অগ্রিম বন্যার পানিতে পিংনা ইউনিয়নের কাওয়ামারা কলনী পাড়া বেরিবাধ ভেঙ্গে গেছে, পোগলদিঘা ইউনিয়নের পশ্চিম দিয়ে মাটির বেরিবাধ হুমকির মুখে পড়েছে এ ছাড়াও পাট ও ভুট্টা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,এ পর্যন্ত ১শত ৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসাার নািিহদা ইয়াসমিন জানান, এ পর্যন্ত ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠার কারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

৪ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি তলিয়ে গ্রাম, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি

image

নাসিরনগর

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নাসিরনগরে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ- নদীতে প্রায় ৪ ফুট পানি বেড়েছে। এতে করে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোনা আমন ফসলি জমি, ৫ হাজার হেক্টর পাট খেত ও মৌসুমী শাক- সবজির জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া গত শনিবার রাতে পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চানপাড়ার সঙ্গে উপজেলা সদরসহ বুড়িশ্বর ইউনিয়নের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নাসিরনগর উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভলাকুট ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, চাতলপাড় ইউনিয়নে ৭৫ হেক্টর, কুন্ডা ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, ধরমন্ডল ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর ও ফান্দাউক ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৫ হেক্টর বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। বন্যার পানিতে ওই সকল এলাকার ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান পানির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে ও আংশিক তলিয়ে গেছে আরো ২ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু কৃষকদের দাবি উপজেলার অধিকাংশ জমিই পানির নিচে।

এলাকাবাসী টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নেই বোনা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিন আগেও ওই সকল ফসলি জমিতে পানি ছিল না। বর্তমানে ধানি জমি গুলি ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে উপজেলা সদর, ভলাকুট ও ফান্দাউক ইউনিয়নের তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ঢুকে পড়ায় ওই সকল এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ধরমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বলেন, তার এলাকায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। যার সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ সরজমিনে এসব জমি পরিদর্শন করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সাঈদ তারেক বলেন, উজানের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাসিরনগরে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বোনা আমন ধানি জমির ধান পানির নীচে সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার হেক্টর ধানি জমি আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া পাট ও শাকসবজির জমি তলিয়ে গেছে ১ হাজার হেক্টর। তিনি বলেন দ্রুত পানি কমে গেলে ধানের কোন ক্ষতি হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভার প্রাপ্ত) মোনাব্বার হোসেন বলেন, নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়েছে। গত শনিবার রাতে উপজেলার হরিপুরে একটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে। আমরা বন্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি কোন মানুষই আমাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।তিনি বলেন, ধানি জমি থেকে দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কেন্দুয়া

প্রতিনিধি, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় নেত্রকোনায় ১৮ শত ২০টি পুকুর ও মৎস্য খামার তলিয়ে গিয়েছে। জেলার কেন্দুয়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। ফলে পানির সঙ্গে বেরিয়ে গেছে মাছ ও পোনা। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মাছ ও পোনা পানির সঙ্গে বেরিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য চাষি ও পুকুর মালিক। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে গত রোববার( ১৯ জুন) রাতে জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা করেছি। এ তালিকায় উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি নিচু এলাকা। ঐ সব ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি পুকুর ও মৎস্য খামার মালিকদের পুকুর ও খামার পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গিয়েছে।

এছাড়া এখনও যে পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যদি কয়েক দিন অব্যাহত থাকে তাহলে হয়তো বাকি ইউনিয়নের মৎস্য চাষি ও পুকুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পরে আর একটি তালিকা করা হবে। উপজেলা বলাইশিমুল ইউনিয়নের রাজাইল গ্রামের ওলি উল্লাহ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থী জানান পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মৎস্য চাষ করেন, তার দুইটি পুকুরে আনুমানিক ৪ লাখ টাকার শিং মাছ ছিল, যা বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছে। তার মত আরো অনেক চাষির একই অবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাই তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ দিকে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ.কে.এম শাহজাহান কবির বলেন, কেন্দুয়া উপজেলায় ৫৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, ২০ হক্টর জমির আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের সবজি ও ১৩ হেক্টর জমি পাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে।

ফুলগাজী

প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীর ফুলগাজীতে ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর দুই স্থানে বেড়ি বাঁধে ভাঙন দেখা দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে দুই গ্রাম। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সোমবার (২০ জুন) সকালে নদীর উত্তর দৌলতপুর ও দরবারপুরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দরবারপুরের ভাঙনটি মেরামত করার জন্য স্থানীয়দের নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। পানি কমলে বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানগুলোর মেরামত করা হবে। অপরদিকে ভারী বর্ষণে ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়ালের ভেতর দিয়ে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে ফুলগাজী বাজার প্লাবিত, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে।

জামালপুর

প্রতিনিধি, জামালপুর

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

গত রবিবার সকাল ৯ টাশ জামালপুরের দেয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ইসলামপুর, দেয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জের নি¤œাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এছাড়াও দেয়ানগঞ্জের গুজিমারি গুচ্ছগ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওই গ্রামের লোকজন আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আশ্রয় নেয়া দুলু মিয়া বলেন-৩দিন হলো এইখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখন কবে পানি কমবো, কবে বাড়ি যাবো, জানি না। সারাটা জীবন আমাদের এই কষ্ট পোহাতে হয়।

আশ্রয় নেয়া জহুরা বেগম বলেন-এই জায়গায় আশ্রয় নেয়ার পর সরকার ১০ কেজি চাল দিছে। কিন্তু ওই চাল কি শুধু খাবো নাকি সঙ্গে কিছু রান্না করবো? সরকার কিছু নগদ টাকা দিলে ভালো হতো

দেয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা জানান- বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও বানভাসীদের সহায়তায় সবসময় তৎপর রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সরিষাবাড়ী

প্রতিনিধি, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি । উজান থেকে ধেয়ে আসা ঘোলা পানি যমুনা, ও যমুনার শাখা সুবর্ণ খালি এবং ঝিনাই নদীর পানি রাতারাতি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গিয়ে পাট , ভুট্টা ও উফসি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জনসাধারণের বাড়তি ঘরে পানি উঠে চলাচলের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানির প্রবল ¯্রাোতের তোড়ে নদীর দু,পাড় ভাংগন সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ সড়কে ধস নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে রাস্তাঘাট ভেঙে ও ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি গত রবিবার বিপদ সীমাার (দেওয়ানগঞ্জ পয়েন্টে) ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা, পোগলদিঘা ইউনিয়নের অনুরুপ, আওনা ইউনিয়নের পশ্চিমে ৭/৮টি গ্রাম ,পিংনা ইউনিয়নের প্রায় ১০/১২টি ও কামরাবাদ ইউনিয়নের ৬/৭টি গ্রাম পানিতে ডুবে গিয়ে পাট ও ভুট্টা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডা. নজরুল ইসলাম, আওনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন এবং পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক ও কামরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুস সালাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা অগ্রিম বন্যার পানিতে পিংনা ইউনিয়নের কাওয়ামারা কলনী পাড়া বেরিবাধ ভেঙ্গে গেছে, পোগলদিঘা ইউনিয়নের পশ্চিম দিয়ে মাটির বেরিবাধ হুমকির মুখে পড়েছে এ ছাড়াও পাট ও ভুট্টা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,এ পর্যন্ত ১শত ৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসাার নািিহদা ইয়াসমিন জানান, এ পর্যন্ত ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠার কারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।