সালিশ নিয়ে বিবাদে ইউপি কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর : আটক ৪

বাগেরহাট জেলা সদরের কাড়াপাড়া ইউপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল দম্পতির শালিশ বৈঠক নিয়ে বিরোধে ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গত রবিবার সন্ধ্যার আগে এ সন্ত্রাসী হামলা- ভাংচুরের ঘটনা ঘঠেছে। এ সময় কর্তব্যরত গ্রাম পুলিশসহ কমপক্ষে ৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম, তার পিতা আর্মড পুলিশের এস আই ফারুক আহম্মেদ ও নাদিমের দুই ভাই মেহেদী ও ইব্রাহীমকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম ঢাকার মিরপুর স্টাফ কলেজে কর্মরত এবং তার পিতা ফারুক আহম্মেদ খুলনার খানজাহান আলী সেতু টোল প্লাজায় আর্মড পুলিশের এস আই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মেহেদী ও ইব্রাহীম দুজন-ই শিক্ষার্থী।

কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহিতুল ইসলাম পল্টন জানান, দুই বছর আগে কাড়াপাড়া গ্রামের মানিক শিকদারের মেয়ে হুমায়রা জান্নাতের সাথে একই এলাকার ফারুক আহম্মেদের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিমের বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে নাদিমের মা ইউনিয়নের পরিষদে বিরোধ মিমাংসার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে রবিবার গ্রাম্য আদালতের দিন ধার্য করা হয়। সেই অনুযায়ী এদিন বিকেলে শালিস বৈঠকের এক পর্যায়ে নাদিম উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর দিকে তেড়ে যায়। এ সময় বাধা দিলে নাদিম ও তার ভাইয়েরা মারধর শুরু করে। এতে গ্রাম পুলিশের দফাদার লুৎফর রহমান, গ্রাম পুলিশ নয়ন ও ফরহাদ এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর আহত হন। এর মধ্যে দফাদার লুৎফর এর মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নাদিমের স্ত্রী হুমায়রা জান্নাত বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ি আমার উপর নানাভাবে নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে টাকা না দেওয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমার ২২ দিনের শিশু সন্তান রয়েছে। আশা করেছিলাম সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে সুখে শান্তিতে বসবাস করব। কিন্তু শালিস বৈঠকে আমার পরিবার এমনকি স্থানীয়দের অপমান করেছে তারা। হুমায়রার পিতা মানিক শিকদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিশ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করত নাদিম ও তার পরিবার। টাকা না দেওয়ায় মেয়ের উপর প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত তারা। এমনকি অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে তার ২২দিন বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শালিস বৈঠকে এ ধরনের হামলা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। আমি এই ঘটনা সুষ্ঠ এবং কঠোর বিচার দাবি করি। ইউপি চেয়ারম্যান মোহিতুল ইসলাম পল্টন আরো বলেন আমি নিজে বাদী হয়ে পুলিশ কনস্টেবল, এসআইসহ হামলাকারী ৪ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় রবিবার রাতেই মামলা করেছি। এদিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আগে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম হামলার কথা অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে শালিসের মধ্যে হামলার ঘটনায় আমরা চারজনকে হেফাজতে নিয়েছি। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

সালিশ নিয়ে বিবাদে ইউপি কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর : আটক ৪

প্রতিনিধি, বাগেরহাট

বাগেরহাট জেলা সদরের কাড়াপাড়া ইউপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল দম্পতির শালিশ বৈঠক নিয়ে বিরোধে ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গত রবিবার সন্ধ্যার আগে এ সন্ত্রাসী হামলা- ভাংচুরের ঘটনা ঘঠেছে। এ সময় কর্তব্যরত গ্রাম পুলিশসহ কমপক্ষে ৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম, তার পিতা আর্মড পুলিশের এস আই ফারুক আহম্মেদ ও নাদিমের দুই ভাই মেহেদী ও ইব্রাহীমকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম ঢাকার মিরপুর স্টাফ কলেজে কর্মরত এবং তার পিতা ফারুক আহম্মেদ খুলনার খানজাহান আলী সেতু টোল প্লাজায় আর্মড পুলিশের এস আই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মেহেদী ও ইব্রাহীম দুজন-ই শিক্ষার্থী।

কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহিতুল ইসলাম পল্টন জানান, দুই বছর আগে কাড়াপাড়া গ্রামের মানিক শিকদারের মেয়ে হুমায়রা জান্নাতের সাথে একই এলাকার ফারুক আহম্মেদের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিমের বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে নাদিমের মা ইউনিয়নের পরিষদে বিরোধ মিমাংসার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে রবিবার গ্রাম্য আদালতের দিন ধার্য করা হয়। সেই অনুযায়ী এদিন বিকেলে শালিস বৈঠকের এক পর্যায়ে নাদিম উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর দিকে তেড়ে যায়। এ সময় বাধা দিলে নাদিম ও তার ভাইয়েরা মারধর শুরু করে। এতে গ্রাম পুলিশের দফাদার লুৎফর রহমান, গ্রাম পুলিশ নয়ন ও ফরহাদ এবং স্থানীয় জাহাঙ্গীর আহত হন। এর মধ্যে দফাদার লুৎফর এর মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নাদিমের স্ত্রী হুমায়রা জান্নাত বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ি আমার উপর নানাভাবে নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে টাকা না দেওয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমার ২২ দিনের শিশু সন্তান রয়েছে। আশা করেছিলাম সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে সুখে শান্তিতে বসবাস করব। কিন্তু শালিস বৈঠকে আমার পরিবার এমনকি স্থানীয়দের অপমান করেছে তারা। হুমায়রার পিতা মানিক শিকদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিশ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করত নাদিম ও তার পরিবার। টাকা না দেওয়ায় মেয়ের উপর প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত তারা। এমনকি অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে তার ২২দিন বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শালিস বৈঠকে এ ধরনের হামলা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। আমি এই ঘটনা সুষ্ঠ এবং কঠোর বিচার দাবি করি। ইউপি চেয়ারম্যান মোহিতুল ইসলাম পল্টন আরো বলেন আমি নিজে বাদী হয়ে পুলিশ কনস্টেবল, এসআইসহ হামলাকারী ৪ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় রবিবার রাতেই মামলা করেছি। এদিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আগে পুলিশ কনস্টেবল ফয়সাল আহম্মেদ নাদিম হামলার কথা অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে শালিসের মধ্যে হামলার ঘটনায় আমরা চারজনকে হেফাজতে নিয়েছি। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।