শেষ ঠিকানা হারাতে বসেছে আশ্রয়ণের দুইশ’ পরিবার

চরফ্যাসনে মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে আশ্রিতদের ১৭ একর জমি চিহ্নিত খাসজমির দালাল হিসেবে পরিচিত কতিপয় ব্যক্তির নামে দিয়ারা রেকর্ড দেয়া হয়েছে। ফলে ওই প্রকল্পে আশ্রীত ২শ পরিবার সরকার প্রদত্ত ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়েছে। জরিপকর্মীদের সাথে আতাঁতের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা ওই জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে আবাসন প্রকল্পের আশ্রিত পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের হুমকী দিতে শুরু করেছে। ফলে আশ্রিত দরিদ্র পরিবারগুলো হামলা মামলার সম্ভাবনার পাশাপাশি সরকার প্রদত্ত নিজেদের ঠিকানা রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। নিজেদের শেষ ঠিকানা রক্ষার দাবী নিয়ে গত রোববার দুপুরে আশ্রিত পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যরা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। জানা যায়, ২০০৬ সনে গৃহহীন দরিদ্র পরিবারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চরফ্যাসন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর গ্রামের মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শ পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়। আশ্রিত পরিবারগুলোকে ৮শতাংশ জমি বন্দোবস্তীয় কবুলিয়তসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে দরিদ্র পরিবারগুলো সরকার প্রদত্ত ওই আবাসন প্রকল্পে বসবাস করে আসছে।

মাঝের চর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা আবদুর রহিম বেপারী, জান্টু বেপারী, মো. ইসমাইল সর্দার, মো. হবি সিকদার. শফি প্যাদাসহ আশ্রিতরা জানান, ২০০৬ সনে সরকার মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শটি ঘর নির্মাণ করে ৮শতাংশ জমির দলিলসহ ঘরগুলো তাদের মতো ২শ পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই থেকে ওই জমিতে ঘরসহ তারা পরিবারসহ বসবাস করছেন। সম্প্রতি খাসজমির দালাল হিসেবে উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক ভাবে পরিচিত হালিমাবাদ গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে সিলভার হোসেন, চরফ্যাসন পৌরসভার মহিউদ্দিন ওরফে খতিয়ান মহিউদ্দিন, উত্তর মঙ্গল গ্রামের হালিমা খাতুন ওরফে বিডিপি হালিমা,মাঝের চর গ্রামের আব্দুল মালেক এবং চর টিটিয়ার নুরজাহানসহ বেশকিছু খাসজমির দালাল আবাসন প্রকল্পের বিভিন্ন দাগভূক্ত ১৭ একর জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়েছেন। দিয়ারা রেকর্ডীয় মালিক হিসেবে দাবীদার এই চক্র আশ্রিত পরিবারগুলোকে আবাসন ছেড়ে দিতে নানান উপায় চাপ প্রয়োগ এবং হুমকী ধামকি দেয়। দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে মালিকানার দাবীদার এসব খাসজমির দালালদের ওই চাপে পরে আশ্রিত পরিবারগুলো সরকার প্রদত্ত বসতবাড়ির শেষ ঠিকানা হারানো ঝুঁকিতে পরেছে। নিরুপায় পরিবারগুলোর বিপদ আচঁ করতে পেরে গত ১৬ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্যের শরনাপন্ন হন। সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিষয়টি খতিয়ে দেখে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নিদের্শ দিয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে সংসদ সদস্যের লিখিত ওই নির্দেশের কপি নিয়ে আশ্রিত পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ সদস্য উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নেন। রেকর্ড গ্রহীতা আবুল হোসেন ওরফে সিলাভার হোসেন আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার গুলোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন- জমিগুলো খাসজমি হিসেবে পড়ে থাকায় আমরা রেকর্ড নিয়েছি। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বলেছি, আদালতের মাধ্যমে তোমরা(আশ্রিত পরিবার) রেকর্ড সংশোধন করে নেও। তা না হলে আমাদের (রেকর্ডীয় মালিক) কাছ থেকে দলিল নিয়ে যাও। দলিল নেয়ার জন্য কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না।’ তবে চরফ্যাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মতিন খান বলেছেন, জরিপকালে ভুলবশতঃ চরফ্যাসনের অনেক খাসজমি কিছু কিছু ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিধিবর্হিভূত। এলাকা ভিত্তিক ব্যক্তি বিশেষের নামে রেকর্ড নেয়া সরকারী খাসজমির তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। এসব রেকর্ড বাতিল করার জন্য ৩০ ধারায় আপত্তি দিয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে ওই ইউনিয়নে জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। এজন্য এসব রেকর্ডের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নাই।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

শেষ ঠিকানা হারাতে বসেছে আশ্রয়ণের দুইশ’ পরিবার

প্রতিনিধি, চরফ্যাসন (ভোলা)

চরফ্যাসনে মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে আশ্রিতদের ১৭ একর জমি চিহ্নিত খাসজমির দালাল হিসেবে পরিচিত কতিপয় ব্যক্তির নামে দিয়ারা রেকর্ড দেয়া হয়েছে। ফলে ওই প্রকল্পে আশ্রীত ২শ পরিবার সরকার প্রদত্ত ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়েছে। জরিপকর্মীদের সাথে আতাঁতের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা ওই জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে আবাসন প্রকল্পের আশ্রিত পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের হুমকী দিতে শুরু করেছে। ফলে আশ্রিত দরিদ্র পরিবারগুলো হামলা মামলার সম্ভাবনার পাশাপাশি সরকার প্রদত্ত নিজেদের ঠিকানা রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন। নিজেদের শেষ ঠিকানা রক্ষার দাবী নিয়ে গত রোববার দুপুরে আশ্রিত পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যরা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। জানা যায়, ২০০৬ সনে গৃহহীন দরিদ্র পরিবারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চরফ্যাসন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর গ্রামের মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শ পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়। আশ্রিত পরিবারগুলোকে ৮শতাংশ জমি বন্দোবস্তীয় কবুলিয়তসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে দরিদ্র পরিবারগুলো সরকার প্রদত্ত ওই আবাসন প্রকল্পে বসবাস করে আসছে।

মাঝের চর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা আবদুর রহিম বেপারী, জান্টু বেপারী, মো. ইসমাইল সর্দার, মো. হবি সিকদার. শফি প্যাদাসহ আশ্রিতরা জানান, ২০০৬ সনে সরকার মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শটি ঘর নির্মাণ করে ৮শতাংশ জমির দলিলসহ ঘরগুলো তাদের মতো ২শ পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই থেকে ওই জমিতে ঘরসহ তারা পরিবারসহ বসবাস করছেন। সম্প্রতি খাসজমির দালাল হিসেবে উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক ভাবে পরিচিত হালিমাবাদ গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে সিলভার হোসেন, চরফ্যাসন পৌরসভার মহিউদ্দিন ওরফে খতিয়ান মহিউদ্দিন, উত্তর মঙ্গল গ্রামের হালিমা খাতুন ওরফে বিডিপি হালিমা,মাঝের চর গ্রামের আব্দুল মালেক এবং চর টিটিয়ার নুরজাহানসহ বেশকিছু খাসজমির দালাল আবাসন প্রকল্পের বিভিন্ন দাগভূক্ত ১৭ একর জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়েছেন। দিয়ারা রেকর্ডীয় মালিক হিসেবে দাবীদার এই চক্র আশ্রিত পরিবারগুলোকে আবাসন ছেড়ে দিতে নানান উপায় চাপ প্রয়োগ এবং হুমকী ধামকি দেয়। দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে মালিকানার দাবীদার এসব খাসজমির দালালদের ওই চাপে পরে আশ্রিত পরিবারগুলো সরকার প্রদত্ত বসতবাড়ির শেষ ঠিকানা হারানো ঝুঁকিতে পরেছে। নিরুপায় পরিবারগুলোর বিপদ আচঁ করতে পেরে গত ১৬ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্যের শরনাপন্ন হন। সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিষয়টি খতিয়ে দেখে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নিদের্শ দিয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে সংসদ সদস্যের লিখিত ওই নির্দেশের কপি নিয়ে আশ্রিত পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ সদস্য উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নেন। রেকর্ড গ্রহীতা আবুল হোসেন ওরফে সিলাভার হোসেন আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার গুলোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন- জমিগুলো খাসজমি হিসেবে পড়ে থাকায় আমরা রেকর্ড নিয়েছি। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বলেছি, আদালতের মাধ্যমে তোমরা(আশ্রিত পরিবার) রেকর্ড সংশোধন করে নেও। তা না হলে আমাদের (রেকর্ডীয় মালিক) কাছ থেকে দলিল নিয়ে যাও। দলিল নেয়ার জন্য কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না।’ তবে চরফ্যাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মতিন খান বলেছেন, জরিপকালে ভুলবশতঃ চরফ্যাসনের অনেক খাসজমি কিছু কিছু ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিধিবর্হিভূত। এলাকা ভিত্তিক ব্যক্তি বিশেষের নামে রেকর্ড নেয়া সরকারী খাসজমির তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। এসব রেকর্ড বাতিল করার জন্য ৩০ ধারায় আপত্তি দিয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে ওই ইউনিয়নে জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। এজন্য এসব রেকর্ডের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নাই।