আরও বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সিলেটসহ আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এতে সন্তুষ্ট না থেকে দেশে আরও বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন দেখছি, তাতে একেবারে অসম্ভব কিছু না যে, পরে আবার এ রকম হতে পারে। আসামে ম্যাসিভ বন্যা হয়েছে, কিন্তু আসামের পানিটা ওইভাবে আসেনি, যেভাবে মেঘালায়ের (ভারত) পানিটা আসছে।’

ভারতের আসাম রাজ্যের পানি বাংলাদেশে আসা শুরু হলে সিলেট অঞ্চলের জেলাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই জেলার জেলা প্রশাসকদের বলে দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে আসামের পানিটা আসলে তোমরা রেডি থাকবা।’

এবারের বন্যায় সিলেট অঞ্চলে যে পানি এসেছে সেটা মেঘালয় দিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেঘালয় দিয়ে আসার কারণে একটা ‘স্পেসিফিক জোনে’ পানি বেশি ছিল। আসাম ও ত্রিপুরাতেও কিছু বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সেটার ‘ইম্প্যাক্ট’ ঠিক দেশে যেভাবে পড়েনি।

সিলেটে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে-ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে আমরা কেউ যেন সন্তুষ্ট না থাকি। পানি এসে দ্রুত চলে গেছে বলে এটা মনে করার কারণ নেই যে পানি আর আসবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি দেখতে সিলেট যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সবাইকে বসে কর্মপরিকল্পনা করার জন্য বলা হয়েছে।’

বন্যা মোকাবিলায় ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এরপর যদি বন্যা হয়, ভাসমান বীজতলা এগুলো করার জন্য যাতে প্রস্তুতি নেয়া হয়।’

এবারের বন্যায় যেভাবে পানি এসেছে তাতে গত ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এভাবে পানি ঢোকেনি জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যে পানিটা এসেছে সেটা ম্যানেজ করা টাফ। পানিটা এমনভাবে এসেছে যে কাউকে সুযোগ দেয়নি। আমাদের সৌভাগ্য যে শুরু থেকেই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করায় বড় ধরনের দুর্যোগ আমাদের হয়নি।’

চারপাশে দেয়াল দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরের ‘সাড়ে ৭ হাজার খাদ্য থাকা খাদ্যগুদাম রক্ষা’ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটা গুদামে সার ছিল, সেটাও রক্ষা করা হয়েছে।

সিলেটের বন্যা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সিলেটের বন্যায় সবচেয়ে প্রশংসার বিষয় হলো- আমি বহু বন্যা হ্যান্ডেল করেছি। মানুষ যে এত ধৈর্য ধরছে এটা সবচেয়ে বড় প্রশংসার বিষয়। মানুষ কোথাও ক্ষুব্ধ হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রয়োজন হলে রাস্তাগুলো কেটে দিতে হবে কিন্তু দেখা গেছে রাস্তার পাসপোর্ট ৫-৬ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তাই রাস্তা কাটার প্রয়োজন নেই।’

ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে গত কয়েকদিন ধরে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাবে সিলেটসহ আশপাশের অঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। বন্যায় সিলেটের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৫০ লাখের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

আরও বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সিলেটসহ আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এতে সন্তুষ্ট না থেকে দেশে আরও বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন দেখছি, তাতে একেবারে অসম্ভব কিছু না যে, পরে আবার এ রকম হতে পারে। আসামে ম্যাসিভ বন্যা হয়েছে, কিন্তু আসামের পানিটা ওইভাবে আসেনি, যেভাবে মেঘালায়ের (ভারত) পানিটা আসছে।’

ভারতের আসাম রাজ্যের পানি বাংলাদেশে আসা শুরু হলে সিলেট অঞ্চলের জেলাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই জেলার জেলা প্রশাসকদের বলে দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে আসামের পানিটা আসলে তোমরা রেডি থাকবা।’

এবারের বন্যায় সিলেট অঞ্চলে যে পানি এসেছে সেটা মেঘালয় দিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেঘালয় দিয়ে আসার কারণে একটা ‘স্পেসিফিক জোনে’ পানি বেশি ছিল। আসাম ও ত্রিপুরাতেও কিছু বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সেটার ‘ইম্প্যাক্ট’ ঠিক দেশে যেভাবে পড়েনি।

সিলেটে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে-ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে আমরা কেউ যেন সন্তুষ্ট না থাকি। পানি এসে দ্রুত চলে গেছে বলে এটা মনে করার কারণ নেই যে পানি আর আসবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি দেখতে সিলেট যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সবাইকে বসে কর্মপরিকল্পনা করার জন্য বলা হয়েছে।’

বন্যা মোকাবিলায় ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এরপর যদি বন্যা হয়, ভাসমান বীজতলা এগুলো করার জন্য যাতে প্রস্তুতি নেয়া হয়।’

এবারের বন্যায় যেভাবে পানি এসেছে তাতে গত ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এভাবে পানি ঢোকেনি জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যে পানিটা এসেছে সেটা ম্যানেজ করা টাফ। পানিটা এমনভাবে এসেছে যে কাউকে সুযোগ দেয়নি। আমাদের সৌভাগ্য যে শুরু থেকেই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করায় বড় ধরনের দুর্যোগ আমাদের হয়নি।’

চারপাশে দেয়াল দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরের ‘সাড়ে ৭ হাজার খাদ্য থাকা খাদ্যগুদাম রক্ষা’ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটা গুদামে সার ছিল, সেটাও রক্ষা করা হয়েছে।

সিলেটের বন্যা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সিলেটের বন্যায় সবচেয়ে প্রশংসার বিষয় হলো- আমি বহু বন্যা হ্যান্ডেল করেছি। মানুষ যে এত ধৈর্য ধরছে এটা সবচেয়ে বড় প্রশংসার বিষয়। মানুষ কোথাও ক্ষুব্ধ হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রয়োজন হলে রাস্তাগুলো কেটে দিতে হবে কিন্তু দেখা গেছে রাস্তার পাসপোর্ট ৫-৬ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তাই রাস্তা কাটার প্রয়োজন নেই।’

ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে গত কয়েকদিন ধরে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাবে সিলেটসহ আশপাশের অঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। বন্যায় সিলেটের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৫০ লাখের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।