প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা

পানি কমলেও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনও বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। বন্যা এখন আরও বেশি এলাকায় বিস্তৃত হচ্ছে। পানি বাড়ছে নেত্রকোনার হাওর, নওগাঁর সব নদীতে। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুরমার পানি কমলেও সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে।

সহসাই পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ

সিলেট প্রতিনিধি জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে যায়। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘ হয়েছে। সেইসঙ্গে সহসাই পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কুমারগাঁও প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। বন্যায় প্রায় ১৪০ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান, ‘সুরমা নদীর পানি আরও কমবে।’ তবে ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে।’ এছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।

পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ

বন্যার পানিতে গত শনিবার কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শাহজালাল উপশহর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় গত তিনদিন মহানগরীসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হয়। তবে দু’দিনের মাথায় কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নেমেছে পানি। ফলে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সিলেটের বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে পুরোপুরি সচল হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর মেজর মুক্তাদীর আহমদ।

গতকাল বিকেলে কুমারগাঁওয়ে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সিলেট সেনানিবাসের মেজর খন্দকার মো. মুক্তাদীর আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

এছাড়া ব্রিফিংয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার এই বিপদে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতো তবে আমরা নগরবাসী আরেকটি মহাসংকটের মধ্যে পড়ে যেতাম। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো।

১৪০ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ক্ষতি

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী চলমান বন্যায় সিলেটে মাছ চাষে ১৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জের খামারিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পানি বাড়ছে হাওরে

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি উপজেলা কলমাকন্দার ৩৪৫টি গ্রামের সবকটিতে পানিবন্দী সাধারণ মানুষ। মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে সোমশ^রীর শাখা নদী উব্দাখালির পানি বিপদসীমার এখনও ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রোববারে তুলনায় ২৭ সেন্টিমিটার কমলেও সব এলাকার পানি নামতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। এদিকে নতুন করে বাড়ছে সদরসহ বারহাট্টার পানি। কংশ নদীর পানি গত দিনের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার কমলেও গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টিতে পানিবন্দী নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের তাতিয়র নদীপাড়ের কয়েক শতাধিক মানুষ। সব মিলিয়ে জেলায় কয়েক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে আছেন। কলমাকান্দা থেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট গ্রামীণ সড়কগুলোতেও উঠে পড়েছে পানি।

তাতিয়র ৫নং ব্লকের গ্রামপুলিশ স্বপন কুমার জানান, তার এলাকাতেই তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্য গ্রামতো আছেই।

এদিকে একই এলাকার জোগার পাড়ের ৫০টি গ্রাম সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। কারো কারো বাড়িত ১৭ দিন থেকে ২ মাসের সন্তান রয়েছে। যেসব বাচ্চারা মায়ের দুধ ছ্ড়াা বিকল্প নেই। কিন্তু গত চার দিন ধরে ওইসব এলাকায় চিড়া মুড়ি খেয়ে দিন পার করছে অর্ধশত পরিবার। এক বাড়িতে চার পাঁচ বাড়ির মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে। থাকছে গাবদিপশুর সঙ্গেই। খবর নিচ্ছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

গ্রামের ফজরু মিয়া বলেন কয়েক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, একটি বারের জন্যেও খোঁজ নিচ্ছেন না। বড় ভাইয়ের ছেলে সোহাগের ১৭ দিনের শিশু খাবার না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। কারণ তার মা চিড়া মুড়ি ছাড়া কিছু খেতে না পাওয়ায় দুধ তৈরি হচ্ছে না। অন্য উপজেলায় গরু নিয়ে যাচ্ছে নৌকায় করে।

ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানিতে ডুবে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় আরিফা আক্তার (৮) নামে

এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলীর পশ্চিম বামনা ঘোনাপাড়ার এলাকায় মুছু মুন্সির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম।

বাঘাইছড়িতে পানিবন্দী পাঁচ শতাধিক পরিবার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক পার্বত্যাঞ্চল জানান, রাঙ্গামাটির জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ২২টি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে দুুই শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ও পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নওগাঁর সবক’টি নদীর পানি বেড়েছে

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর প্রায় সবক’টি নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধান দুটি নদী ছোট যমুনা ১২২ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ডের কন্ট্রোল রুম।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম থেকে জানিয়েছে, পূর্নভবা ১৯৯ সেন্টিমিটার ও নাগর ১৮৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই নদীগুলোতে যে পরিমাণ পানি বাড়ছে, তাতে জেলার কিছু কিছু নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। হু-হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলায় সেতু পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়া নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বন্যায় ৫০টি ইউনিয়নের ২৮৪টি গ্রামের সোয়া ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বন্যায় ৬৭১টি নলকুপ ও ১৮৩টি ল্যাট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২৪ হাজার গরু, ৩১৮টি মহিষ, ১১ হাজার ছাগল ও সাড়ে ৩ হাজার ভেড়া বন্যা কবলিত হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা

সংবাদ ডেক্স

image

কুড়িগ্রাম : হাতিয়া উপজেলা ডুবে আছে বানের পানিতে, চরম র্দুভোগে মানুষ -সংবাদ

পানি কমলেও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনও বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। বন্যা এখন আরও বেশি এলাকায় বিস্তৃত হচ্ছে। পানি বাড়ছে নেত্রকোনার হাওর, নওগাঁর সব নদীতে। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুরমার পানি কমলেও সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে।

সহসাই পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ

সিলেট প্রতিনিধি জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে যায়। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘ হয়েছে। সেইসঙ্গে সহসাই পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কুমারগাঁও প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। বন্যায় প্রায় ১৪০ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান, ‘সুরমা নদীর পানি আরও কমবে।’ তবে ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে।’ এছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।

পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বিদ্যুৎ

বন্যার পানিতে গত শনিবার কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শাহজালাল উপশহর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় গত তিনদিন মহানগরীসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হয়। তবে দু’দিনের মাথায় কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নেমেছে পানি। ফলে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সিলেটের বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে পুরোপুরি সচল হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর মেজর মুক্তাদীর আহমদ।

গতকাল বিকেলে কুমারগাঁওয়ে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সিলেট সেনানিবাসের মেজর খন্দকার মো. মুক্তাদীর আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

এছাড়া ব্রিফিংয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার এই বিপদে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতো তবে আমরা নগরবাসী আরেকটি মহাসংকটের মধ্যে পড়ে যেতাম। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো।

১৪০ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ক্ষতি

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী চলমান বন্যায় সিলেটে মাছ চাষে ১৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জের খামারিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পানি বাড়ছে হাওরে

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি উপজেলা কলমাকন্দার ৩৪৫টি গ্রামের সবকটিতে পানিবন্দী সাধারণ মানুষ। মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে সোমশ^রীর শাখা নদী উব্দাখালির পানি বিপদসীমার এখনও ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রোববারে তুলনায় ২৭ সেন্টিমিটার কমলেও সব এলাকার পানি নামতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। এদিকে নতুন করে বাড়ছে সদরসহ বারহাট্টার পানি। কংশ নদীর পানি গত দিনের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার কমলেও গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টিতে পানিবন্দী নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের তাতিয়র নদীপাড়ের কয়েক শতাধিক মানুষ। সব মিলিয়ে জেলায় কয়েক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে আছেন। কলমাকান্দা থেকে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট গ্রামীণ সড়কগুলোতেও উঠে পড়েছে পানি।

তাতিয়র ৫নং ব্লকের গ্রামপুলিশ স্বপন কুমার জানান, তার এলাকাতেই তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্য গ্রামতো আছেই।

এদিকে একই এলাকার জোগার পাড়ের ৫০টি গ্রাম সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। কারো কারো বাড়িত ১৭ দিন থেকে ২ মাসের সন্তান রয়েছে। যেসব বাচ্চারা মায়ের দুধ ছ্ড়াা বিকল্প নেই। কিন্তু গত চার দিন ধরে ওইসব এলাকায় চিড়া মুড়ি খেয়ে দিন পার করছে অর্ধশত পরিবার। এক বাড়িতে চার পাঁচ বাড়ির মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে। থাকছে গাবদিপশুর সঙ্গেই। খবর নিচ্ছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

গ্রামের ফজরু মিয়া বলেন কয়েক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, একটি বারের জন্যেও খোঁজ নিচ্ছেন না। বড় ভাইয়ের ছেলে সোহাগের ১৭ দিনের শিশু খাবার না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। কারণ তার মা চিড়া মুড়ি ছাড়া কিছু খেতে না পাওয়ায় দুধ তৈরি হচ্ছে না। অন্য উপজেলায় গরু নিয়ে যাচ্ছে নৌকায় করে।

ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানিতে ডুবে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় আরিফা আক্তার (৮) নামে

এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলীর পশ্চিম বামনা ঘোনাপাড়ার এলাকায় মুছু মুন্সির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম।

বাঘাইছড়িতে পানিবন্দী পাঁচ শতাধিক পরিবার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক পার্বত্যাঞ্চল জানান, রাঙ্গামাটির জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ২২টি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে দুুই শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ও পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নওগাঁর সবক’টি নদীর পানি বেড়েছে

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর প্রায় সবক’টি নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধান দুটি নদী ছোট যমুনা ১২২ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ডের কন্ট্রোল রুম।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম থেকে জানিয়েছে, পূর্নভবা ১৯৯ সেন্টিমিটার ও নাগর ১৮৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই নদীগুলোতে যে পরিমাণ পানি বাড়ছে, তাতে জেলার কিছু কিছু নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। হু-হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলায় সেতু পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়া নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বন্যায় ৫০টি ইউনিয়নের ২৮৪টি গ্রামের সোয়া ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বন্যায় ৬৭১টি নলকুপ ও ১৮৩টি ল্যাট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২৪ হাজার গরু, ৩১৮টি মহিষ, ১১ হাজার ছাগল ও সাড়ে ৩ হাজার ভেড়া বন্যা কবলিত হয়েছে।