টাঙ্গাইলের তিন উপজেলায় ব্যাপক নদীভাঙন

উজানে পাহাড়ি ঢলের কারণে এ বছর বর্ষার শুরুতেই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুধু সদর উপজেলার চরপৌলীতে গত কয়েক দিনের ব্যবধানের এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙ্গনের ফলে ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি নদীতে গেছে। গত দুই দিনেই তিন শতাধিক ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও সারা বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে সেতু রক্ষা গাইড বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ধ্বসে গিয়ে নদীতে দেবে গেছে। ফলে গাইড বাঁধের আশপাশে থাকা ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয় ও মৌসুমী বালু খেকোরা কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে যমুনা ও নিউ ধলেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বাংলা ড্রেজারসহ বিভিন্ন ধরনের পন্থায় বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে করে নদীর তলদেশ খালি হওয়ায় প্রভাব পড়ছে বাঁধের ওপর। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ের দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া, আলীপুর উত্তরপাড়া গাইড বাঁধের কয়েকটি স্থানে ব্লকগুলো ধসে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ধস রোধে জিও ব্যাগ ফেলছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বুড়িগঙ্গা খনন প্রকল্পে সারি সারি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গাইড বাঁধের কাছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতা বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার বসিয়ে বালু আনলোড করার কারণে ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় তলদেশ খালি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্লকগুলো নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর দেড় কিলোমিটার ভাটিতে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখে (অফটেকে) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চারটি পৃথক লটে ২৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় ১৫৩০ মিটার গাইড বাঁধ (অফ টেক বাঁধাই) নির্মাণ করে। যমুনার মাঝ বরাবর নতুন চর জেগে উঠায় পানির তীব্র ¯্রােতের ফলে গাইড বাঁধের ১ নম্বর লটের বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। অফটেকের ভাটিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে আলীপুর, হাট আলীপুর, ভৈরব বাড়ি, চরপৌলী ও উত্তর চরপৌলী গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে ওই সব এলাকার ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। যমুনার ডান তীরে পাউবো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করায় এবং যমুনার মাঝখানে নতুন চর জেগে উঠার কারণে বাম তীরে পানির তীব্র চাপের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

যমুনায় পানি বাড়ার সময় এবং পানি কমার সময় প্রতিবছরওই সব এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সেই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এ বছর বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ ঘর বাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক দিনের মধ্যেই ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক বছর এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে (ভাঙনের সময়) জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপরও ভাঙনের ফলে নদীর সীমানা গত বছরের চেয়ে আড়াইশ’ মিটার পূর্ব দিকে সরে এসেছে। এখন হাট আলীপুর মসজিদ, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও হাট আলীপুর বাজার এবং চরপৌলী মিন্টু মেমোরিয়াল হাই স্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যমুনা বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় হাতেম আলী বলেন, আমরা বছর বছর ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়। এ বছরও ঘর বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা গাইড বাঁধ চাই ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই। শামীম মিয়া জানান, আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা যমুনার নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই। সরকারের কাছে দাবি আমাদের ভাঙন থেকে রক্ষা করুক।

এদিকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষাসহ যমুনা নদীর তীরে ভাঙন প্রতিরোধে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কয়েক গ্রামের মানুষ। গত শনিবার দুপুরে এলাকায় নদীর তীরে যমুনা নদীর পূর্বপাড় ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি এ মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

যমুনা ও ধলেশ্বরীতে পানি বৃদ্ধি

টাঙ্গাইলের তিন উপজেলায় ব্যাপক নদীভাঙন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

উজানে পাহাড়ি ঢলের কারণে এ বছর বর্ষার শুরুতেই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুধু সদর উপজেলার চরপৌলীতে গত কয়েক দিনের ব্যবধানের এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙ্গনের ফলে ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি নদীতে গেছে। গত দুই দিনেই তিন শতাধিক ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও সারা বছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে সেতু রক্ষা গাইড বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ধ্বসে গিয়ে নদীতে দেবে গেছে। ফলে গাইড বাঁধের আশপাশে থাকা ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয় ও মৌসুমী বালু খেকোরা কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে যমুনা ও নিউ ধলেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বাংলা ড্রেজারসহ বিভিন্ন ধরনের পন্থায় বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে করে নদীর তলদেশ খালি হওয়ায় প্রভাব পড়ছে বাঁধের ওপর। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ের দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া, আলীপুর উত্তরপাড়া গাইড বাঁধের কয়েকটি স্থানে ব্লকগুলো ধসে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ধস রোধে জিও ব্যাগ ফেলছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বুড়িগঙ্গা খনন প্রকল্পে সারি সারি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গাইড বাঁধের কাছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতা বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার বসিয়ে বালু আনলোড করার কারণে ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় তলদেশ খালি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্লকগুলো নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর দেড় কিলোমিটার ভাটিতে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখে (অফটেকে) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চারটি পৃথক লটে ২৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় ১৫৩০ মিটার গাইড বাঁধ (অফ টেক বাঁধাই) নির্মাণ করে। যমুনার মাঝ বরাবর নতুন চর জেগে উঠায় পানির তীব্র ¯্রােতের ফলে গাইড বাঁধের ১ নম্বর লটের বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। অফটেকের ভাটিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে আলীপুর, হাট আলীপুর, ভৈরব বাড়ি, চরপৌলী ও উত্তর চরপৌলী গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে ওই সব এলাকার ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। যমুনার ডান তীরে পাউবো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করায় এবং যমুনার মাঝখানে নতুন চর জেগে উঠার কারণে বাম তীরে পানির তীব্র চাপের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

যমুনায় পানি বাড়ার সময় এবং পানি কমার সময় প্রতিবছরওই সব এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সেই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এ বছর বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ ঘর বাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক দিনের মধ্যেই ৫’শ শতাধিক ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক বছর এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে (ভাঙনের সময়) জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপরও ভাঙনের ফলে নদীর সীমানা গত বছরের চেয়ে আড়াইশ’ মিটার পূর্ব দিকে সরে এসেছে। এখন হাট আলীপুর মসজিদ, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও হাট আলীপুর বাজার এবং চরপৌলী মিন্টু মেমোরিয়াল হাই স্কুল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যমুনা বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় হাতেম আলী বলেন, আমরা বছর বছর ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়। এ বছরও ঘর বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা গাইড বাঁধ চাই ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই। শামীম মিয়া জানান, আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা যমুনার নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই। সরকারের কাছে দাবি আমাদের ভাঙন থেকে রক্ষা করুক।

এদিকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষাসহ যমুনা নদীর তীরে ভাঙন প্রতিরোধে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কয়েক গ্রামের মানুষ। গত শনিবার দুপুরে এলাকায় নদীর তীরে যমুনা নদীর পূর্বপাড় ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি এ মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।