সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আইনের খসড়া অনুমোদন

‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকরা এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে। এর বেশি বয়সীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আলোচনা করেছে মন্ত্রিসভা। তবে ৬০ বছরের পর থেকে এ পেনশন কার্যকর হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

পেনশনের জন্য মাসে কত টাকা জমা রাখতে হবে এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়ামের বিষয়টি পরে বিধিমালায় নির্ধারিত হবে। আইনের মধ্যে প্রিমিয়াম মেনশন করা হবে না। বিধি (রুল) দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। কারণ আজকে দুই হাজার টাকা ঠিক করা হলো, ২০ বছর পর দুই হাজার টাকার তো ভ্যালু থাকবে না।’

যাদের প্রিমিয়াম দেয়ার সামর্থ্য নেই তারা এই পেনশনের সুবিধা পাবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আছে। সেটা রুলের মধ্যে থাকবে। ধরেন, সেফটিনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাদের হেল্প করা হয় ওটা থেকে রুলের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।’

তিনি জানান, একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চারজন সদস্য নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।

৬০ বছর থেকে আমৃত্যু একজন ব্যক্তি এই পেনশন সুবিধা পাবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ যদি ৭৫ বছর বয়সের আগে মারা যান, তবে তার নমিনিকে তার বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা দেয়া হবে। যেমন- পেনশন সুবিধা পাওয়া কেউ ৬৫ বছরে মারা গেলে তার নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ আরও দশ বছর পেনশন সুবিধা পাবেন। আর কেউ ৭০ বছর বয়সে মারা গেলে তার নমিনি আরও পাঁচ বছর পেনশন সুবিধা পাবেন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রকে (এনআইডি) ভিত্তি ধরে ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সী সবাই অংশ নিতে পারবে। প্রবাসী কর্মীরাও এটাতে চাঁদা দিয়ে অংশ নিতে পারবে। কমপক্ষে ১০ বছর প্রিমিয়াম দিতে হবে।’

সরকার জনগণের বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্যজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততা এবং দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি পেনশন এবং সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে আইন উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান সচিব।

টাকা জমা দেয়া শুরু করে ৫০ বছরের আগে কেউ মারা গেলে সে ক্ষেত্রে-এই টাকা কে পাবে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ মারা গেলে তার জমা করা টাকা মুনাফসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। যেমন- ১৮ বছর থেকে টাকা জমা শুরু করে ৩০ বছরে কেউ মারা গেলে, আগের ১২ বছরের পুরো টাকা তার নমিনিকে মুনাফাসহ দিয়ে দেয়া হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে প্রায় ১৪/১৫টা দেশের অভিজ্ঞতা নেয়া হয়েছে। অনেক দেশেই আছে, সেগুলো ‘স্টাডি’ করা হয়েছে। ‘হাই-লেবেল’ কমিটি কাজ করেছে।

গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন চালু করবে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে নির্ভরশীল মানুষের বর্তমান হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০৫০ সালে ২৪ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে ৫৮ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। এর মধ্যে সরকারি চাকরি করছেন মাত্র ১৪ লাখ মানুষ। এসব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পেনশন সুবিধা রয়েছে।

বাকি ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশিরভাগ মানুষ বেসরকারি খাত, কৃষি, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশায় জড়িত। এই মানুষদের পেনশনের আওতায় আনতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও খবর
পদ্মা সেতু : ভাবতে গেলে তিনটি শব্দ ভেসে উঠে সাহস, সংকল্প ও সমৃদ্ধি
বিএনপি নেতারা বন্যার্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন : তথ্যমন্ত্রী
করোনা : শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়ালো, মৃত্যু ১
অবৈধভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে সরকার
সুফিয়া কামাল ছিলেন নারীমুক্তিকে মানবমুক্তি হিসেবে দেখার মন্ত্রে দীক্ষিত
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলা, গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ ১৫, গ্রেপ্তার ৮
মাদ্রাসার ভেতর হাত-পা চেপে ধরে সাত বছরের ছাত্রকে জবাই
হবিগঞ্জে বন্যার্তদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় চাকরিচ্যুত ৮
তারেকের দুই বন্ধুসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
আলোচিত স্বপ্ন-পদ্মা-সেতু পেল প্রধানমন্ত্রীর উপহার
জাতীয় স্লোগানে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ যুক্ত চেয়ে আইনি নোটিশ
‘আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাম-পেশা পরিবর্তন করে ৩১ বছর আত্মগোপনে

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আইনের খসড়া অনুমোদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকরা এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে। এর বেশি বয়সীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আলোচনা করেছে মন্ত্রিসভা। তবে ৬০ বছরের পর থেকে এ পেনশন কার্যকর হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

পেনশনের জন্য মাসে কত টাকা জমা রাখতে হবে এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়ামের বিষয়টি পরে বিধিমালায় নির্ধারিত হবে। আইনের মধ্যে প্রিমিয়াম মেনশন করা হবে না। বিধি (রুল) দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। কারণ আজকে দুই হাজার টাকা ঠিক করা হলো, ২০ বছর পর দুই হাজার টাকার তো ভ্যালু থাকবে না।’

যাদের প্রিমিয়াম দেয়ার সামর্থ্য নেই তারা এই পেনশনের সুবিধা পাবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আছে। সেটা রুলের মধ্যে থাকবে। ধরেন, সেফটিনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাদের হেল্প করা হয় ওটা থেকে রুলের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।’

তিনি জানান, একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চারজন সদস্য নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।

৬০ বছর থেকে আমৃত্যু একজন ব্যক্তি এই পেনশন সুবিধা পাবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ যদি ৭৫ বছর বয়সের আগে মারা যান, তবে তার নমিনিকে তার বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা দেয়া হবে। যেমন- পেনশন সুবিধা পাওয়া কেউ ৬৫ বছরে মারা গেলে তার নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ আরও দশ বছর পেনশন সুবিধা পাবেন। আর কেউ ৭০ বছর বয়সে মারা গেলে তার নমিনি আরও পাঁচ বছর পেনশন সুবিধা পাবেন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রকে (এনআইডি) ভিত্তি ধরে ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সী সবাই অংশ নিতে পারবে। প্রবাসী কর্মীরাও এটাতে চাঁদা দিয়ে অংশ নিতে পারবে। কমপক্ষে ১০ বছর প্রিমিয়াম দিতে হবে।’

সরকার জনগণের বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্যজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততা এবং দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি পেনশন এবং সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে আইন উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান সচিব।

টাকা জমা দেয়া শুরু করে ৫০ বছরের আগে কেউ মারা গেলে সে ক্ষেত্রে-এই টাকা কে পাবে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ মারা গেলে তার জমা করা টাকা মুনাফসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। যেমন- ১৮ বছর থেকে টাকা জমা শুরু করে ৩০ বছরে কেউ মারা গেলে, আগের ১২ বছরের পুরো টাকা তার নমিনিকে মুনাফাসহ দিয়ে দেয়া হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে প্রায় ১৪/১৫টা দেশের অভিজ্ঞতা নেয়া হয়েছে। অনেক দেশেই আছে, সেগুলো ‘স্টাডি’ করা হয়েছে। ‘হাই-লেবেল’ কমিটি কাজ করেছে।

গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন চালু করবে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে নির্ভরশীল মানুষের বর্তমান হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০৫০ সালে ২৪ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে ৫৮ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। এর মধ্যে সরকারি চাকরি করছেন মাত্র ১৪ লাখ মানুষ। এসব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পেনশন সুবিধা রয়েছে।

বাকি ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশিরভাগ মানুষ বেসরকারি খাত, কৃষি, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশায় জড়িত। এই মানুষদের পেনশনের আওতায় আনতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।