মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাম-পেশা পরিবর্তন করে ৩১ বছর আত্মগোপনে

মানিকগঞ্জে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওছারকে ৩১ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত রোববার রাতে গুলশান থানার বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। গতকাল র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৩১ বছর আত্মগোপনে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওসারকে গত রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪ এর একটি দল। ভিকটিম আজাহার (৪০) ও গ্রেপ্তার কাওছার (৬৩) মানিকগঞ্জের চর হিজুলো গ্রামের বাসিন্দা। তারা এলাকায় একসঙ্গে ইরি ধানের খেতে পানি সেচ দিত। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। একে অপরের বাড়িতে তাদের অবাধে যাতায়াতে ছিল। এরই মধ্যে ভিকটিমের বিবাহিত বোন অবলার সঙ্গে কাওছারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ভিকটিম ও কাওছারের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের ১৪ জুন আজাহারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কাওছার ও তার সহযোগীরা। একই দিনে ভিকটিমের ভাই কাওছারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় মানিকগঞ্জ থানায়। মামলা হওয়ার পর কাওছারসহ আরও কয়েকজন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর দুই মাস হাজতবাসের পর ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় কাওছার। এরই মধ্যে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় কাওছারকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

অন্য আসামি ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা পাঁচ বছর সাজাভোগের পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে বর্তমান আদালতের নির্দেশে জামিনে আছে। আর মো. কাওছার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুই মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই গত ৩১ বছর পলাতক ছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে কাওছার আর মানিকগঞ্জে যায়নি।

৩১ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন কাওছার।

মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কাওছার মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ৩১ বছর ধরে আসামি মো. কাওছার নাম পরিবর্তন করে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পূবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক, স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে। পরে সে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালায় এবং বর্তমানে সে প্রাইভেটকারের চালক হিসেবে আত্মগোপনে থেকে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

নতুন নামে এনআইডি তৈরি

কাওছার পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য মো. ইমরান মাহামুদ নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা- শাহিন মাহামুদ, সাং- নান্দুয়াইন, থানা- গাজীপুর, জেলা- গাজীপুরকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে।

আরও খবর
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আইনের খসড়া অনুমোদন
পদ্মা সেতু : ভাবতে গেলে তিনটি শব্দ ভেসে উঠে সাহস, সংকল্প ও সমৃদ্ধি
বিএনপি নেতারা বন্যার্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন : তথ্যমন্ত্রী
করোনা : শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়ালো, মৃত্যু ১
অবৈধভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে সরকার
সুফিয়া কামাল ছিলেন নারীমুক্তিকে মানবমুক্তি হিসেবে দেখার মন্ত্রে দীক্ষিত
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলা, গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ ১৫, গ্রেপ্তার ৮
মাদ্রাসার ভেতর হাত-পা চেপে ধরে সাত বছরের ছাত্রকে জবাই
হবিগঞ্জে বন্যার্তদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় চাকরিচ্যুত ৮
তারেকের দুই বন্ধুসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
আলোচিত স্বপ্ন-পদ্মা-সেতু পেল প্রধানমন্ত্রীর উপহার
জাতীয় স্লোগানে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ যুক্ত চেয়ে আইনি নোটিশ
‘আমারে ফাঁসি দিয়া আসামিগো মুক্তি দিক’

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাম-পেশা পরিবর্তন করে ৩১ বছর আত্মগোপনে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মানিকগঞ্জে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওছারকে ৩১ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত রোববার রাতে গুলশান থানার বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। গতকাল র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৩১ বছর আত্মগোপনে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওসারকে গত রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪ এর একটি দল। ভিকটিম আজাহার (৪০) ও গ্রেপ্তার কাওছার (৬৩) মানিকগঞ্জের চর হিজুলো গ্রামের বাসিন্দা। তারা এলাকায় একসঙ্গে ইরি ধানের খেতে পানি সেচ দিত। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। একে অপরের বাড়িতে তাদের অবাধে যাতায়াতে ছিল। এরই মধ্যে ভিকটিমের বিবাহিত বোন অবলার সঙ্গে কাওছারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ভিকটিম ও কাওছারের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের ১৪ জুন আজাহারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কাওছার ও তার সহযোগীরা। একই দিনে ভিকটিমের ভাই কাওছারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় মানিকগঞ্জ থানায়। মামলা হওয়ার পর কাওছারসহ আরও কয়েকজন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর দুই মাস হাজতবাসের পর ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় কাওছার। এরই মধ্যে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় কাওছারকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

অন্য আসামি ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা পাঁচ বছর সাজাভোগের পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে বর্তমান আদালতের নির্দেশে জামিনে আছে। আর মো. কাওছার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুই মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই গত ৩১ বছর পলাতক ছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে কাওছার আর মানিকগঞ্জে যায়নি।

৩১ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন কাওছার।

মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কাওছার মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ৩১ বছর ধরে আসামি মো. কাওছার নাম পরিবর্তন করে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পূবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক, স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে। পরে সে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালায় এবং বর্তমানে সে প্রাইভেটকারের চালক হিসেবে আত্মগোপনে থেকে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

নতুন নামে এনআইডি তৈরি

কাওছার পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য মো. ইমরান মাহামুদ নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা- শাহিন মাহামুদ, সাং- নান্দুয়াইন, থানা- গাজীপুর, জেলা- গাজীপুরকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে।