বন্যা : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ

দেলোয়ার জাহিদ

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের একটি ঐতিহ্যগত প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতি আছে, যা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম যার ওপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এ বছর পরিস্থিতির ক্রমাবনতি শংকিত উপদ্রুত অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। সরকার বিপদ শনাক্তকরণ এবং প্রশমনসহ সম্প্রদায়ের প্রস্তুতি এবং সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার প্রচেষ্টাকে সংগঠিত করতে ব্যস্ত। সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি চ্যালেঞ্জের মুখে, এর কারণ হলো এ সমস্যার ব্যাপকতা। দুর্গত অঞ্চলগুলোতে জরুরি অবস্থাকালীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, পানিবন্দী মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ ছাপিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে দুর্গত মানুষ। নারী, শিশু ও বয়স্করা নানা অসুখ, বিসুখ এ আক্রান্ত, নেই প্রযাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা, নেই বিশুদ্ব পানের পানির সরবরাহ।

দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল বন্যাকবলিত। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি। ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের দেশে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। মঙ্গল ও বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমতে শুরু করবে। তবে ওই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে।

অনেক নদীর দেশ বাংলাদেশএ ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত অনেক শাখা নদীতে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের অববাহিকার অংশ হওয়ার কারণে এবং গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারের কম উচ্চতায়, বাংলাদেশ নিকটবর্তী পাহাড় থেকে জলের ঝলকানি, উজান থেকে আসা জলপ্রবাহ এবং স্থানীয়ভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখোমুখি হয়। ড্রেনেজ সমস্যার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় । বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এরূপ সমস্যার সম্মুখীন হয়।

সিলেটে স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয়কর অবস্থায় দূর্গত এলাকার মানুষ। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে মানুষ, যতদূর চোখ যায় অথৈ পানি আর পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই মোবাইল সংযোগ, নেই খাবার, নেই পানীয় জল, নেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে এলাকার সব নিম্নাঞ্চল, বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধরত মানুষ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রথমেই পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালাতে হবে। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে আটকে পড়া মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হবে। তাদের শুকনো খাবার যেমন চিড়া, গুড়, বনরুটি, বিস্কুটসহ বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এ ধরনের বন্যা হয় যদিও এবারের বন্যার ব্যাপকতা শত বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। উচিত, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্বভাবে জাতীয় এ সংকটের মোকাবেলা করা. আমরা প্রত্যাশা করি সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন ও এনজিওগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসবে।

[লেখক : কানাডা নিবাসী]

মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২ , ৭ আষাড় ১৪২৮ ২১ জিলকদ ১৪৪৩

বন্যা : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ

দেলোয়ার জাহিদ

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের একটি ঐতিহ্যগত প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতি আছে, যা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম যার ওপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এ বছর পরিস্থিতির ক্রমাবনতি শংকিত উপদ্রুত অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। সরকার বিপদ শনাক্তকরণ এবং প্রশমনসহ সম্প্রদায়ের প্রস্তুতি এবং সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার প্রচেষ্টাকে সংগঠিত করতে ব্যস্ত। সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি চ্যালেঞ্জের মুখে, এর কারণ হলো এ সমস্যার ব্যাপকতা। দুর্গত অঞ্চলগুলোতে জরুরি অবস্থাকালীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, পানিবন্দী মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ ছাপিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে দুর্গত মানুষ। নারী, শিশু ও বয়স্করা নানা অসুখ, বিসুখ এ আক্রান্ত, নেই প্রযাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা, নেই বিশুদ্ব পানের পানির সরবরাহ।

দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল বন্যাকবলিত। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি। ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের দেশে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। মঙ্গল ও বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমতে শুরু করবে। তবে ওই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে।

অনেক নদীর দেশ বাংলাদেশএ ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত অনেক শাখা নদীতে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের অববাহিকার অংশ হওয়ার কারণে এবং গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারের কম উচ্চতায়, বাংলাদেশ নিকটবর্তী পাহাড় থেকে জলের ঝলকানি, উজান থেকে আসা জলপ্রবাহ এবং স্থানীয়ভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখোমুখি হয়। ড্রেনেজ সমস্যার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় । বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এরূপ সমস্যার সম্মুখীন হয়।

সিলেটে স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয়কর অবস্থায় দূর্গত এলাকার মানুষ। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে মানুষ, যতদূর চোখ যায় অথৈ পানি আর পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই মোবাইল সংযোগ, নেই খাবার, নেই পানীয় জল, নেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে এলাকার সব নিম্নাঞ্চল, বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধরত মানুষ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রথমেই পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালাতে হবে। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে আটকে পড়া মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হবে। তাদের শুকনো খাবার যেমন চিড়া, গুড়, বনরুটি, বিস্কুটসহ বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এ ধরনের বন্যা হয় যদিও এবারের বন্যার ব্যাপকতা শত বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। উচিত, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্বভাবে জাতীয় এ সংকটের মোকাবেলা করা. আমরা প্রত্যাশা করি সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন ও এনজিওগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসবে।

[লেখক : কানাডা নিবাসী]