রেমিট্যান্স ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম

ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্সে ফের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই রেমিট্যান্স ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাকি দুই সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বাড়তে থাকবে। এভাবে বাড়তে থাকলে ধারণা করা হচ্ছে, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বাড়বে। বর্তমানে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনা রেমিট্যান্স ১৬ শতাংশের মতো কম আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম ১৬ দিনে ৯৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১১ মাসে (২০২১-এর ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৬ জুন) ২ হাজার ১৬ কোটি (২০.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো কম। তবে আগের যেকোন অর্থবছরের চেয়ে বেশ বেশি।

অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছর বা বছরে আসা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছিল ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত ৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ঈদের পরের মাসেও মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা।

প্রতি বছরই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। কিন্তু রোজার ঈদের পর মে মাসে তেমনটি হয়নি। টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে, ১৮৮ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।

এদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর। নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসের ১৬ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

রেমিট্যান্স ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্সে ফের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই রেমিট্যান্স ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাকি দুই সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বাড়তে থাকবে। এভাবে বাড়তে থাকলে ধারণা করা হচ্ছে, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বাড়বে। বর্তমানে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনা রেমিট্যান্স ১৬ শতাংশের মতো কম আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম ১৬ দিনে ৯৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১১ মাসে (২০২১-এর ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৬ জুন) ২ হাজার ১৬ কোটি (২০.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো কম। তবে আগের যেকোন অর্থবছরের চেয়ে বেশ বেশি।

অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছর বা বছরে আসা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছিল ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত ৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ঈদের পরের মাসেও মোটামুটি ভালো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা।

প্রতি বছরই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। কিন্তু রোজার ঈদের পর মে মাসে তেমনটি হয়নি। টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে, ১৮৮ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে।

এদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর। নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসের ১৬ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার।