হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

মানুষের খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। মাছ পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এর মধ্যে মলা-ঢেলা প্রভৃতি ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা মেলেনি দেশীয় মাছের। আর যেসব মাছ পাওয়া যায় তা আবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে চাষ করা। আকারে বড় হলেও ওইসব মাছের গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব । নানা কারণে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বরিশালের গৌরনদীতে যে সমস্ত এলাকা থেকে দেশীয় মাছ বেশি পাওয়া যেত ওই সমস্ত মাছের উৎসগুলো এখন বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘণবসতি, খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-ঝিল ইত্যাদি দিন দিন বেদখল ও ভরাট করে মানুষ বাড়িঘর তৈরী করছে। পাশাপাশি পুকুর-ডোবাগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে।

মাছ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ধানক্ষেতে বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরে। বিভিন্ন পুকুর ও খালের পানিতে ঔষধ ছিটানোর ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মাছের গায়ে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ। আর এ সকল রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় একটি মাছ থেকে অন্য মাছের গায়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে মাছ গুলোর বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শূণ্যের কোটায় গিয়ে পৌঁছুতে থাকে দেশীয় মাছ।

একসময় উপজেলার ভুরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, টরকী, গৌরনদী বন্দর, মাহিলাড়া, বাটাজোর, সরিকল, এলাকা থেকে প্রতিদিন দেশীয় কই, শিং, মাগুর, শৌল, গজাল, বোয়াল, টাকি, পাবদা, টেংরা, ফলি, খলিশা, ভেটকি, পাবদা, পুঁটি প্রভৃতি মাছ আসত বিভিন্ন বাজারে। ফলে মানুষের দৈনন্দিন দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ হত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। যা আছে তার আবার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমশিম খায়। চাহিদা অনুযায়ী মাছ না থাকায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় ক্রেতাদের।

দেশীয় মাছের মধ্যে শিং, মাগুর, শৌল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি মাছের চাহিদা রয়েছে প্রতিনিয়ত। আর এসকল মাছের বেশির ভাগই ডাক্তাররা রোগীদের খাবার তালিকায় দিয়ে থাকে। বাজারে মাছ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী মাছ ক্রয় করা কষ্টকর হয়ে পরে অনেক ক্রেতার। অনেক সময় দেশীয় প্রজাতির চাহিদা সম্পন্ন মাছ ক্রয় করতে পারেন না ক্রেতারা।

উপজেলার টরকী বাজার, বার্থী বাজার, মাহিলড়া বাজার, ভুরঘাটা বাজারসহ বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সামুদ্রিক ও অন্যান্য মাছের জোগান থাকলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ তুলনামূলক কম। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্পটে দেশীয় মাছ বিক্রেতাদের দেখা গেলেও তাদের মাছের পরিমাণ একেবারেই সামান্য।

এব্যাপারে টরকী বাজারে আসা ক্রেতা হান্নান সরদার জানান, দেশীয় প্রজাতির কৈ ও শিং মাছ কিনতে বাজারে এলেও যে পরিমাণ মাছ রয়েছে তা আবার দামে চড়া। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে মৎস্য অধিদপ্তর ও সচেতন মহলসহ আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। অপরদিকে মাছ বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। এখন আর কেউ ছোট মাছের দিকে নজর দেয়না। যারা মাছ চাষ করেন তারা বড় মাছের উপর নির্ভরশীল, যে কারণে দিন দিন বাজারে ছোট মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, ছোট মাছ কমে গেলে মানুষের শরীরে পুষ্টির চাহিদা ব্যাহত হবে। তাই ছোট মাছের প্রজনন ও বিচরণস্থল নির্বিঘœ রাখতে হবে। পুকুর-ডোবাগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। তাই দেশীয় মাছ রক্ষার্থে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় মাছ রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

প্রতিনিধি, গৌরনদী (বরিশাল)

image

মানুষের খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। মাছ পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এর মধ্যে মলা-ঢেলা প্রভৃতি ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা মেলেনি দেশীয় মাছের। আর যেসব মাছ পাওয়া যায় তা আবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে চাষ করা। আকারে বড় হলেও ওইসব মাছের গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব । নানা কারণে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বরিশালের গৌরনদীতে যে সমস্ত এলাকা থেকে দেশীয় মাছ বেশি পাওয়া যেত ওই সমস্ত মাছের উৎসগুলো এখন বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘণবসতি, খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-ঝিল ইত্যাদি দিন দিন বেদখল ও ভরাট করে মানুষ বাড়িঘর তৈরী করছে। পাশাপাশি পুকুর-ডোবাগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে।

মাছ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ধানক্ষেতে বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরে। বিভিন্ন পুকুর ও খালের পানিতে ঔষধ ছিটানোর ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মাছের গায়ে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ। আর এ সকল রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় একটি মাছ থেকে অন্য মাছের গায়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে মাছ গুলোর বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শূণ্যের কোটায় গিয়ে পৌঁছুতে থাকে দেশীয় মাছ।

একসময় উপজেলার ভুরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, টরকী, গৌরনদী বন্দর, মাহিলাড়া, বাটাজোর, সরিকল, এলাকা থেকে প্রতিদিন দেশীয় কই, শিং, মাগুর, শৌল, গজাল, বোয়াল, টাকি, পাবদা, টেংরা, ফলি, খলিশা, ভেটকি, পাবদা, পুঁটি প্রভৃতি মাছ আসত বিভিন্ন বাজারে। ফলে মানুষের দৈনন্দিন দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ হত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। যা আছে তার আবার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমশিম খায়। চাহিদা অনুযায়ী মাছ না থাকায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় ক্রেতাদের।

দেশীয় মাছের মধ্যে শিং, মাগুর, শৌল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি মাছের চাহিদা রয়েছে প্রতিনিয়ত। আর এসকল মাছের বেশির ভাগই ডাক্তাররা রোগীদের খাবার তালিকায় দিয়ে থাকে। বাজারে মাছ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী মাছ ক্রয় করা কষ্টকর হয়ে পরে অনেক ক্রেতার। অনেক সময় দেশীয় প্রজাতির চাহিদা সম্পন্ন মাছ ক্রয় করতে পারেন না ক্রেতারা।

উপজেলার টরকী বাজার, বার্থী বাজার, মাহিলড়া বাজার, ভুরঘাটা বাজারসহ বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সামুদ্রিক ও অন্যান্য মাছের জোগান থাকলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ তুলনামূলক কম। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্পটে দেশীয় মাছ বিক্রেতাদের দেখা গেলেও তাদের মাছের পরিমাণ একেবারেই সামান্য।

এব্যাপারে টরকী বাজারে আসা ক্রেতা হান্নান সরদার জানান, দেশীয় প্রজাতির কৈ ও শিং মাছ কিনতে বাজারে এলেও যে পরিমাণ মাছ রয়েছে তা আবার দামে চড়া। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে মৎস্য অধিদপ্তর ও সচেতন মহলসহ আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। অপরদিকে মাছ বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। এখন আর কেউ ছোট মাছের দিকে নজর দেয়না। যারা মাছ চাষ করেন তারা বড় মাছের উপর নির্ভরশীল, যে কারণে দিন দিন বাজারে ছোট মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, ছোট মাছ কমে গেলে মানুষের শরীরে পুষ্টির চাহিদা ব্যাহত হবে। তাই ছোট মাছের প্রজনন ও বিচরণস্থল নির্বিঘœ রাখতে হবে। পুকুর-ডোবাগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। তাই দেশীয় মাছ রক্ষার্থে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় মাছ রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।