সভাপতি-প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

কেশবপুরে শতবর্ষী সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে সভাপতি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। প্রধান শিক্ষকও সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডিসহ তার পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। ফলে উভয়েরই দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

জানা গেছে, উপজেলার সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে ৫৩৭ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করে থাকে। বিদ্যালয়ে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে। বিশাল এ শিক্ষার্থীর পড়াশুনায় ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫ জন। ১১টি শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫টি। এরপরও বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কক্ষ সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি বিদ্যালয়ে আরও একটি নতুন ভবন বরাদ্দ দেয়া হয়। এরইমধ্যে গত ২৮ মার্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত হন সাতবাড়িয়া গ্রামের রাজিব চৌধুরী। বিদ্যালয় পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ে কাগজপত্রে তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম গোলাম হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, কমিটির প্রথম পরিচিতি সভায় তিনি আমার কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন। এছাড়া, ভবনের নকশা পরিবর্তনে সভাপতির স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় তার সম্মতিতে তিনি নকশায়পত্রে স্বাক্ষর করেন। এ অজুহাতে তিনি আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জের ধরে ১৫ জুন তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে আমাকেসহ প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, ভয়ভীতিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দিয়ে চলে আসেন। এরপরও তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করেন। যে কারণে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি ১৯ জুন সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। যার জিডি নং- ৮৯৩। বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বে শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশও বিঘœ হচ্ছে। এলাকাবাসি এ দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে সভাপতি রাজীব চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে সে আমার স্বাক্ষর জাল করায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এজন্যে তিনি আমার বিরুদ্ধে ভুলভাল কথা বলাসহ অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের হুমকি দেয়ার ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে উধর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

সাতবাড়িয়া প্রাথ. বিদ্যালয়

সভাপতি-প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)

কেশবপুরে শতবর্ষী সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে সভাপতি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। প্রধান শিক্ষকও সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডিসহ তার পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। ফলে উভয়েরই দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

জানা গেছে, উপজেলার সাতবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে ৫৩৭ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করে থাকে। বিদ্যালয়ে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে। বিশাল এ শিক্ষার্থীর পড়াশুনায় ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫ জন। ১১টি শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫টি। এরপরও বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কক্ষ সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি বিদ্যালয়ে আরও একটি নতুন ভবন বরাদ্দ দেয়া হয়। এরইমধ্যে গত ২৮ মার্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত হন সাতবাড়িয়া গ্রামের রাজিব চৌধুরী। বিদ্যালয় পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ে কাগজপত্রে তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম গোলাম হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, কমিটির প্রথম পরিচিতি সভায় তিনি আমার কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন। এছাড়া, ভবনের নকশা পরিবর্তনে সভাপতির স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় তার সম্মতিতে তিনি নকশায়পত্রে স্বাক্ষর করেন। এ অজুহাতে তিনি আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জের ধরে ১৫ জুন তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে আমাকেসহ প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, ভয়ভীতিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দিয়ে চলে আসেন। এরপরও তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করেন। যে কারণে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি ১৯ জুন সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। যার জিডি নং- ৮৯৩। বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বে শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশও বিঘœ হচ্ছে। এলাকাবাসি এ দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে সভাপতি রাজীব চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে সে আমার স্বাক্ষর জাল করায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এজন্যে তিনি আমার বিরুদ্ধে ভুলভাল কথা বলাসহ অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের হুমকি দেয়ার ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে উধর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।