দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ থেকে আম রফতানি হচ্ছে বিদেশে। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’-এর মাধ্যমে চাষ করা ১ মেট্রিক টন ‘আম্রপালি’ আম ইংল্যান্ডে রপ্তানির উদ্দেশে গত সোমবার ২০ জুন সন্ধ্যায় সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ থেকে নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল মঙ্গলবার ২১ জুন দুপুরে আমের চালান বিমানে ইংল্যান্ডে যায়। সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’- এর মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড আম রফতানি করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, বিদেশে নিরাপদ আম রপ্তানি করার লক্ষ্যে নওগাঁয় ৮০ জন চাষিকে ‘উত্তম কৃষি চর্চার (গ্যাপ)’ মাধ্যমে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরমধ্যে বেশকিছু চাষির সঙ্গে রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর চুক্তি হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আম চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে সোহেল রানা নামের একজন চাষি তার বাগান থেকে আজ বিদেশে আম্রপালি আম পাঠাচ্ছেন। এটি চলতি বছর নওগাঁ থেকে বিদেশে আম রপ্তানির প্রথম চালান।
বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে তিনি একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত বছর থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফুড এ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তিনি আম চাষ করছেন।
সোহেল রানা বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য তাঁর বাগানে এ বছর আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন, বারি আম-৪ ও মিয়াজাকি জাতের গাছের আমে ফ্রট ব্যাগিং করেছেন। কারণ, রোগবালাইমুক্ত আমই বিদেশে যায়। এরপরও যেসব আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে, সেগুলো ঢাকাতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমে কোন রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর তা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, ইংল্যান্ড ছাড়াও ফিনল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কাতার, ওমান, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, সৌদিসহ ১০ টি দেশে আম পাঠানোর অর্ডার তিনি পেয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার ৮০ জন আমচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব চাষির বাগানে ৯০ লাখ আমে ফ্রট ব্যাগিং করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় চাষ হওয়া অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘সাপাহারের আম যাচ্ছে বিদেশে। এটা খুবই খুশির খবর। সোহেল রানার মাধ্যমে বিদেশে এ অঞ্চল থেকে আম পাঠানো শুরু হলো। আশা করি, তাঁর দেখাদেখি ভবিষ্যতে অন্য চাষিরাও বিদেশে আম পাঠাতে উৎসাহী হবেন। বিদেশে আম রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’ আম রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং হাউস না থাকা একটি বড় সমস্যা। এছাড়া বর্তমানে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে আমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমে রোগবালাই থাকলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এসব সুবিধা স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা হলে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষিদের আরও সুবিধা হতো।’
নওগাঁ : লন্ডনে পাঠানোর উদ্দেশে প্যাকেট করা হচ্ছে আম্রপালি -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩
প্রতিনিধি, নওগাঁ
নওগাঁ : লন্ডনে পাঠানোর উদ্দেশে প্যাকেট করা হচ্ছে আম্রপালি -সংবাদ
দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ থেকে আম রফতানি হচ্ছে বিদেশে। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’-এর মাধ্যমে চাষ করা ১ মেট্রিক টন ‘আম্রপালি’ আম ইংল্যান্ডে রপ্তানির উদ্দেশে গত সোমবার ২০ জুন সন্ধ্যায় সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ থেকে নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল মঙ্গলবার ২১ জুন দুপুরে আমের চালান বিমানে ইংল্যান্ডে যায়। সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’- এর মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড আম রফতানি করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, বিদেশে নিরাপদ আম রপ্তানি করার লক্ষ্যে নওগাঁয় ৮০ জন চাষিকে ‘উত্তম কৃষি চর্চার (গ্যাপ)’ মাধ্যমে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরমধ্যে বেশকিছু চাষির সঙ্গে রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর চুক্তি হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আম চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে সোহেল রানা নামের একজন চাষি তার বাগান থেকে আজ বিদেশে আম্রপালি আম পাঠাচ্ছেন। এটি চলতি বছর নওগাঁ থেকে বিদেশে আম রপ্তানির প্রথম চালান।
বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে তিনি একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত বছর থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফুড এ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তিনি আম চাষ করছেন।
সোহেল রানা বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য তাঁর বাগানে এ বছর আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কাটিমন, বারি আম-৪ ও মিয়াজাকি জাতের গাছের আমে ফ্রট ব্যাগিং করেছেন। কারণ, রোগবালাইমুক্ত আমই বিদেশে যায়। এরপরও যেসব আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে, সেগুলো ঢাকাতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমে কোন রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর তা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, ইংল্যান্ড ছাড়াও ফিনল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কাতার, ওমান, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, সৌদিসহ ১০ টি দেশে আম পাঠানোর অর্ডার তিনি পেয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার ৮০ জন আমচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব চাষির বাগানে ৯০ লাখ আমে ফ্রট ব্যাগিং করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় চাষ হওয়া অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘সাপাহারের আম যাচ্ছে বিদেশে। এটা খুবই খুশির খবর। সোহেল রানার মাধ্যমে বিদেশে এ অঞ্চল থেকে আম পাঠানো শুরু হলো। আশা করি, তাঁর দেখাদেখি ভবিষ্যতে অন্য চাষিরাও বিদেশে আম পাঠাতে উৎসাহী হবেন। বিদেশে আম রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।’ আম রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং হাউস না থাকা একটি বড় সমস্যা। এছাড়া বর্তমানে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে আমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমে রোগবালাই থাকলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এসব সুবিধা স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা হলে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষিদের আরও সুবিধা হতো।’