সিলেট অঞ্চলে ২৩ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট অঞ্চলে এখনও পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। ত্রাণের হাহাকার থামছে না। দুর্ভাগের শেষ নেই। রাস্তাঘাটের হয়েছে প্রচ- ক্ষয়ক্ষতি। ব্যবসায়ীরা হয়েছেন চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ভেসে গেছে কৃষকের গবাদিপশু। এছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত বিভাগে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। তবে সিলেটের গোলাপগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু যোগ করলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩-এ। সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে সিলেটে ১২ জন, মৌলভীবাজারে তিনজন ও সুনামগঞ্জে পাঁচজন।’
গতকাল সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরে মা-ছেলের মরদেহ ভেসে ওঠে এর আগে সোমবার পর্যন্ত সিলেটের জেলা প্রশাসক একজনের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিনজনের ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করেনি প্রশাসন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দী ছিল অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে। গতকাল সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় পানিতে ভেসে আসে নাজমুন্নেসা ও তার ছেলে আবদুর রহমানের মরদেহ। তারা দরবস্ত ইউনিয়নের কলাগ্রামের বাসিন্দা।
মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত শুক্রবার নাজমুন্নেসা তার ছেলেকে নিয়ে পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মেয়ের বাড়িতেও পানি ওঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে মা-ছেলে সড়কের পাশে পানিতে তলিয়ে যান। আজকে (গতকাল) তাদের মরদেহ ভেসে উঠেছে।’
কানাইঘাটে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের ঠাকুরের ঘাঁটি এলাকার এক ব্যক্তি হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরদিন পানিতে তার লাশ পাওয়া যায়।’ শুক্রবার মরদেহ উদ্ধার হলেও এ তথ্য জানা গেছে সোমবার। তবে তার নাম জানাতে পারেননি ওসি।
এছাড়া কানাইঘাটে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর তথ্য অনেকেই প্রচার করছেন ফেইসবুকে। তবে এর সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন ওসি।
এর আগে সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘পানিতে পড়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন মারা গেছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোন তথ্য আমি পাইনি।’
ডিসি জানান, পানিতে ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে রোববার নগরের রায়নগরে নিজ বাসার সামনে মারা গেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী।
সেদিনই স্থানীয় একটি শ্মশানে টিটুর মরদেহ সৎকার করা হয় বলে জানান সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক সোমবার জানিয়েছেন, বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজন মারা যাওয়ার খবর তিনি জেনেছেন। এর মধ্যে একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও দুজন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া একজন এখনও নিখোঁজ আছেন।
তিনি জানান, এদিন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার নোয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় বন্যার পানির ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন মনির হোসেন নামে এক যুবক। গত শুক্রবার উপজেলার নলকট গ্রামের কলেজছাত্র আবদুল হাদি পানিতে তলিয়ে যায়। ওইদিনই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় আরও একজন পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন।
তবে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে আরও দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে। সেলিম বলেন, ‘আবুল কাশেম তার পরিবারের সঙ্গে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বেড়েছে জেনে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে আসেন। দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।
‘এ সময় তার ছোট চাচাতো বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি-নাতি দুজনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদি ছুরেতুন নেছার মরদেহ ভেসে ওঠে। আর রোববার সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। তাদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোন তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পানিতে তলিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফেইসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে একে গুজব বলেছেন উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যুর তথ্য পাইনি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’
গোলাপগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে সিদ্দিক আহমেদ (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বাঘা থেকে ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশু সিদ্দিক বাঘা ইউনিয়নের গন্ডামারা গ্রামের হবিব মিয়ার ছেলে। জানা যায়, রোববার এই শিশুটি সবার অগোচরে বাড়ির পাশে জমে থাকা বন্যার পানিতে পড়ে যায়। পরিবারের লোকজন ওইদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার খোঁজ পাননি। পরদিন সকালে শিশু সিদ্দিকের লাশ ভেসে উঠে।
পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ।
বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতকের ইউএনও মামুনুর রশীদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার কানাখালী রোডের আখড়া এলাকায় পীযূষ ও জাউয়া বাজার এলাকায় হানিফা বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে পানিতে তলিয়ে। তবে এই দুই ঘটনা ইউএনও নিশ্চিত করেননি।
এছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এটিও প্রশাসন নিশ্চিত করেনি।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আমরা কানাইঘাট থেকে অসুস্থ অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করেছি। তার মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মৃত্যুর কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।’
এদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের ঘরে ফেরা শুরু হয়নি। তাদের বাড়ির সামনে এখনও জমে আছে পানি। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ।
গত বুধবার থেকে সিলেট নগরে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে নগরসহ আশপাশের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্বজনদের বাসাবাড়িতে অবস্থান করে।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে সোমবার পর্যন্ত পানি বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও সড়কে অবস্থান করছিল, এর বেশ কিছু এলাকায় পানি নেমে গেছে। নগরের তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার, কুয়ারপাড়, লাল দীঘিরপাড়, শিবগঞ্জ, তেররতন, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি নেমেছে। তবে নগরের বাসিন্দারা সুপেয় পানির সংকটে আছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা ট্যাংক বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সামনে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে বৃষ্টি হয়নি। দুপুর থেকে রোদের দেখাও মিলেছে। তবে জেলায় দুটি নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে থাকলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সেখানে পানি ১৩ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। সিলেট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, সকাল ৬টায় সেখানে পানি ছিল ১১ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, সকাল ৬টায় সেখানে আগের দিনের চেয়ে পানি কিছুটা কমে ১৭ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার হয়েছে। নদীর শেওলান পয়েন্টে বিপদসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার, সকালে সেখানে পানি অবস্থান করছে ১৩ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটারে। কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কিছুটা বেড়েছে।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি কিছুটা নামলেও সেখানে নৌকা চলাচল করছে। আবার পানি কমে যাওয়ায় অনেকে নৌকাগুলো ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
শাহজালাল উপশহর এলাকায় নৌকা ট্রাকে তুলে বাঁধছিলেন নাজির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বন্যার কারণে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে তিনটি নৌকা নিয়ে এসেছিলেন। এখন পানি কমে যাওয়ায় সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে পানি বেড়ে গেলে আবার নৌকা নিয়ে আসবেন। নৌকাগুলো দিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষ সরিয়ে নেয়া এবং খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। নগরের মির্জাজাঙ্গাল ও দাড়িয়াপাড়ায়ও পানি কিছুটা কমেছে। তবে ছড়াসংলগ্ন বাসাবাড়িগুলোয় পানি এখনও রয়ে গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেগুলোয় বন্যাদুর্গত প্রায় সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের পাম্পগুলো বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি সরবরাহের ভ্রাম্যমাণ ট্যাংকের মাধ্যমে নগরের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উপজেলা নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউপির উঁচু এলাকার পানি কিছুটা কমলেও নি¤œাঞ্চল ও হাওর এলাকাসহ দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পাকা, কাঁচা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমায় বন্যার পানি খুব ধীরগতিতে নামছে। এ কারণে বন্যাকবলিত মানুষ এখনই বাড়িতে ফিরতে পারছে না। শহরের রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রায় ৭০ ভাগ বাড়িঘরে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। তাই বন্যাকবলিত মানুষ এখনই বাড়ি ফিরতে পারছে না। তবে পানি কমতে শুরু করায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে। শহরে বেশিরভাগ রাস্তাঘাট এখনও প্লাবিত। এসব সড়কের কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। মধ্যশহরের কিছু এলাকায় বাড়িঘর থেকে পানি নেমেছে। মধ্যশহর ছাড়া অন্যান্য এলাকায় এখনও নৌকা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। খাবার পানির সংকট রয়েছে সর্বত্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় একইভাবে পানি ও খাবারের সংকট আছে।
সুনামগঞ্জ : পানিবন্দী মানুষের হাহাকার, চরম বিপর্যস্ত জীবন, ঘরের ভাঙা ছাদে শিশুদের রেখে ত্রাণের সন্ধানে বাবা-মা -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩
সিলেট অঞ্চলে ২৩ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে
সুনামগঞ্জ : পানিবন্দী মানুষের হাহাকার, চরম বিপর্যস্ত জীবন, ঘরের ভাঙা ছাদে শিশুদের রেখে ত্রাণের সন্ধানে বাবা-মা -সংবাদ
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট অঞ্চলে এখনও পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। ত্রাণের হাহাকার থামছে না। দুর্ভাগের শেষ নেই। রাস্তাঘাটের হয়েছে প্রচ- ক্ষয়ক্ষতি। ব্যবসায়ীরা হয়েছেন চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ভেসে গেছে কৃষকের গবাদিপশু। এছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত বিভাগে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। তবে সিলেটের গোলাপগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু যোগ করলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩-এ। সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে সিলেটে ১২ জন, মৌলভীবাজারে তিনজন ও সুনামগঞ্জে পাঁচজন।’
গতকাল সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরে মা-ছেলের মরদেহ ভেসে ওঠে এর আগে সোমবার পর্যন্ত সিলেটের জেলা প্রশাসক একজনের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিনজনের ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করেনি প্রশাসন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দী ছিল অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে। গতকাল সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় পানিতে ভেসে আসে নাজমুন্নেসা ও তার ছেলে আবদুর রহমানের মরদেহ। তারা দরবস্ত ইউনিয়নের কলাগ্রামের বাসিন্দা।
মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত শুক্রবার নাজমুন্নেসা তার ছেলেকে নিয়ে পাশের গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মেয়ের বাড়িতেও পানি ওঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে মা-ছেলে সড়কের পাশে পানিতে তলিয়ে যান। আজকে (গতকাল) তাদের মরদেহ ভেসে উঠেছে।’
কানাইঘাটে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের ঠাকুরের ঘাঁটি এলাকার এক ব্যক্তি হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরদিন পানিতে তার লাশ পাওয়া যায়।’ শুক্রবার মরদেহ উদ্ধার হলেও এ তথ্য জানা গেছে সোমবার। তবে তার নাম জানাতে পারেননি ওসি।
এছাড়া কানাইঘাটে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর তথ্য অনেকেই প্রচার করছেন ফেইসবুকে। তবে এর সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন ওসি।
এর আগে সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘পানিতে পড়ে যাওয়া সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন মারা গেছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোন তথ্য আমি পাইনি।’
ডিসি জানান, পানিতে ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে রোববার নগরের রায়নগরে নিজ বাসার সামনে মারা গেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী।
সেদিনই স্থানীয় একটি শ্মশানে টিটুর মরদেহ সৎকার করা হয় বলে জানান সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক সোমবার জানিয়েছেন, বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজন মারা যাওয়ার খবর তিনি জেনেছেন। এর মধ্যে একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও দুজন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া পানিতে ভেসে যাওয়া একজন এখনও নিখোঁজ আছেন।
তিনি জানান, এদিন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার নোয়াপাড়া এলাকার নিজ বাসায় বন্যার পানির ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন মনির হোসেন নামে এক যুবক। গত শুক্রবার উপজেলার নলকট গ্রামের কলেজছাত্র আবদুল হাদি পানিতে তলিয়ে যায়। ওইদিনই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় আরও একজন পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন।
তবে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, পানিতে তলিয়ে উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে আরও দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামে। সেলিম বলেন, ‘আবুল কাশেম তার পরিবারের সঙ্গে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বেড়েছে জেনে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে আসেন। দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।
‘এ সময় তার ছোট চাচাতো বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি-নাতি দুজনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদি ছুরেতুন নেছার মরদেহ ভেসে ওঠে। আর রোববার সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। তাদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
তবে এ দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে কোন তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও নুসরাত। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পানিতে তলিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফেইসবুকে প্রচার হয়েছে। তবে একে গুজব বলেছেন উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যুর তথ্য পাইনি। অনেকে মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছিলেন। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’
গোলাপগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে সিদ্দিক আহমেদ (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বাঘা থেকে ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশু সিদ্দিক বাঘা ইউনিয়নের গন্ডামারা গ্রামের হবিব মিয়ার ছেলে। জানা যায়, রোববার এই শিশুটি সবার অগোচরে বাড়ির পাশে জমে থাকা বন্যার পানিতে পড়ে যায়। পরিবারের লোকজন ওইদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার খোঁজ পাননি। পরদিন সকালে শিশু সিদ্দিকের লাশ ভেসে উঠে।
পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ।
বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতকের ইউএনও মামুনুর রশীদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌরসভার কানাখালী রোডের আখড়া এলাকায় পীযূষ ও জাউয়া বাজার এলাকায় হানিফা বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে পানিতে তলিয়ে। তবে এই দুই ঘটনা ইউএনও নিশ্চিত করেননি।
এছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এটিও প্রশাসন নিশ্চিত করেনি।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আমরা কানাইঘাট থেকে অসুস্থ অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করেছি। তার মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মৃত্যুর কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।’
এদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের ঘরে ফেরা শুরু হয়নি। তাদের বাড়ির সামনে এখনও জমে আছে পানি। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ।
গত বুধবার থেকে সিলেট নগরে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে নগরসহ আশপাশের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্বজনদের বাসাবাড়িতে অবস্থান করে।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে সোমবার পর্যন্ত পানি বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও সড়কে অবস্থান করছিল, এর বেশ কিছু এলাকায় পানি নেমে গেছে। নগরের তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার, কুয়ারপাড়, লাল দীঘিরপাড়, শিবগঞ্জ, তেররতন, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি নেমেছে। তবে নগরের বাসিন্দারা সুপেয় পানির সংকটে আছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা ট্যাংক বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সামনে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে বৃষ্টি হয়নি। দুপুর থেকে রোদের দেখাও মিলেছে। তবে জেলায় দুটি নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে থাকলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সেখানে পানি ১৩ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। সিলেট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, সকাল ৬টায় সেখানে পানি ছিল ১১ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, সকাল ৬টায় সেখানে আগের দিনের চেয়ে পানি কিছুটা কমে ১৭ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার হয়েছে। নদীর শেওলান পয়েন্টে বিপদসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার, সকালে সেখানে পানি অবস্থান করছে ১৩ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটারে। কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কিছুটা বেড়েছে।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি কিছুটা নামলেও সেখানে নৌকা চলাচল করছে। আবার পানি কমে যাওয়ায় অনেকে নৌকাগুলো ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
শাহজালাল উপশহর এলাকায় নৌকা ট্রাকে তুলে বাঁধছিলেন নাজির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বন্যার কারণে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে তিনটি নৌকা নিয়ে এসেছিলেন। এখন পানি কমে যাওয়ায় সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে পানি বেড়ে গেলে আবার নৌকা নিয়ে আসবেন। নৌকাগুলো দিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষ সরিয়ে নেয়া এবং খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। নগরের মির্জাজাঙ্গাল ও দাড়িয়াপাড়ায়ও পানি কিছুটা কমেছে। তবে ছড়াসংলগ্ন বাসাবাড়িগুলোয় পানি এখনও রয়ে গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেগুলোয় বন্যাদুর্গত প্রায় সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের পাম্পগুলো বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি সরবরাহের ভ্রাম্যমাণ ট্যাংকের মাধ্যমে নগরের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উপজেলা নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউপির উঁচু এলাকার পানি কিছুটা কমলেও নি¤œাঞ্চল ও হাওর এলাকাসহ দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পাকা, কাঁচা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমায় বন্যার পানি খুব ধীরগতিতে নামছে। এ কারণে বন্যাকবলিত মানুষ এখনই বাড়িতে ফিরতে পারছে না। শহরের রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রায় ৭০ ভাগ বাড়িঘরে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। তাই বন্যাকবলিত মানুষ এখনই বাড়ি ফিরতে পারছে না। তবে পানি কমতে শুরু করায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে। শহরে বেশিরভাগ রাস্তাঘাট এখনও প্লাবিত। এসব সড়কের কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। মধ্যশহরের কিছু এলাকায় বাড়িঘর থেকে পানি নেমেছে। মধ্যশহর ছাড়া অন্যান্য এলাকায় এখনও নৌকা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। খাবার পানির সংকট রয়েছে সর্বত্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় একইভাবে পানি ও খাবারের সংকট আছে।