১০০ বছরের জন্য করা হয়েছে পদ্মা সেতুর নদীশাসন

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে সেতুর উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেতু উদ্বোধন হলেও কিছু কাজ বাকি থাকবে নদী শাসনের। পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। এ পর্যন্ত ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে নদী শাসনের। বর্ষার সময় নদী শাসনের কাজে একটু সমস্যা হয়। তাই আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাকি কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শারফুল ইসলাম সরকার সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তের ১২ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ১২০০ মিটার কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র ৮০০ মিটার কাজ বাকি আছে। তবে সেতু চালু হলেও নদী শাসনের কারণে কোন সমস্যা হবে না। বর্ষার সময় নদী শাসন কাজে একটু সমস্যা হয়।’ তাই বাকি কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগে শেষ হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা নদী দুই পাড়ে ১৪ কিলোমিটার অংশে নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদীশাসন চুক্তি এটি। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। নদী শাসন কাজে সর্বোচ্চ এক টন ওজনের পাথর ও ৮০০ কেজি ওজনের জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ রয়েছে। এই কাজে এক কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ দরকার হবে। নদী শাসনে ড্রেজিয়ের গভীরতা ২৮ মিটার। সর্বমোট ১০ কোটি ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। নদী শাসন কাজে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর। ২০২৩ সালে ৩০ জুন এর কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে নদী শাসনের কাজের ফলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। নদী শাসনের ফলে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়ে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের বাসিন্দা সুরুজ মিয়া সংবাদকে বলেন, সেতু নির্মাণের ফলে পদ্মা নদী আর আগের মতো নেই। বর্ষা এলেই মনে নদী ভাঙনের আতঙ্ক জাগত। বহু বছর ধরেই পদ্মার গ্রাসে একটু করে বিলীন হয়েছে তাদের গ্রাম। নদী শাসনের পর সেই ভয় আর নেই তাদের মনে। নদী শাসনের পর কর্দমাক্ত, বালুময় পাড় এখন শান বাঁধানো ঘাটের রূপ নিয়েছে। ফলে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ গোসলের জন্য ছুটে আসেন নদীর পাড়ে। অবগাহন করতে ঝাঁপ দেন প্রমত্তা পদ্মার পানিতে।’

নাওডোবা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নদী শাসনের পর থেকে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনে নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই পদ্মা সেতু দেখতে আসেন। খুব কাছ থেকে সেতু দেখেন। পাশাপাশি পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। সেতুর নিচ দিয়ে খানিকটা এগোলে মঙ্গলমাঝির ঘাট। যেখানে এখন একটি ফেরিঘাট করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের পূর্ব পাশ এটি। এখানেও পুরোদমে এগিয়েছে নদী শাসনের কাজ।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

আর ৩ দিন

১০০ বছরের জন্য করা হয়েছে পদ্মা সেতুর নদীশাসন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে সেতুর উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেতু উদ্বোধন হলেও কিছু কাজ বাকি থাকবে নদী শাসনের। পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। এ পর্যন্ত ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে নদী শাসনের। বর্ষার সময় নদী শাসনের কাজে একটু সমস্যা হয়। তাই আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাকি কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শারফুল ইসলাম সরকার সংবাদকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তের ১২ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ১২০০ মিটার কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র ৮০০ মিটার কাজ বাকি আছে। তবে সেতু চালু হলেও নদী শাসনের কারণে কোন সমস্যা হবে না। বর্ষার সময় নদী শাসন কাজে একটু সমস্যা হয়।’ তাই বাকি কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগে শেষ হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা নদী দুই পাড়ে ১৪ কিলোমিটার অংশে নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নদীশাসন চুক্তি এটি। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। নদী শাসন কাজে সর্বোচ্চ এক টন ওজনের পাথর ও ৮০০ কেজি ওজনের জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ রয়েছে। এই কাজে এক কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ দরকার হবে। নদী শাসনে ড্রেজিয়ের গভীরতা ২৮ মিটার। সর্বমোট ১০ কোটি ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। নদী শাসন কাজে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর। ২০২৩ সালে ৩০ জুন এর কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে নদী শাসনের কাজের ফলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। নদী শাসনের ফলে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়ে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের বাসিন্দা সুরুজ মিয়া সংবাদকে বলেন, সেতু নির্মাণের ফলে পদ্মা নদী আর আগের মতো নেই। বর্ষা এলেই মনে নদী ভাঙনের আতঙ্ক জাগত। বহু বছর ধরেই পদ্মার গ্রাসে একটু করে বিলীন হয়েছে তাদের গ্রাম। নদী শাসনের পর সেই ভয় আর নেই তাদের মনে। নদী শাসনের পর কর্দমাক্ত, বালুময় পাড় এখন শান বাঁধানো ঘাটের রূপ নিয়েছে। ফলে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ গোসলের জন্য ছুটে আসেন নদীর পাড়ে। অবগাহন করতে ঝাঁপ দেন প্রমত্তা পদ্মার পানিতে।’

নাওডোবা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নদী শাসনের পর থেকে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনে নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই পদ্মা সেতু দেখতে আসেন। খুব কাছ থেকে সেতু দেখেন। পাশাপাশি পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। সেতুর নিচ দিয়ে খানিকটা এগোলে মঙ্গলমাঝির ঘাট। যেখানে এখন একটি ফেরিঘাট করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের পূর্ব পাশ এটি। এখানেও পুরোদমে এগিয়েছে নদী শাসনের কাজ।