হেলিকপ্টার থেকে দুর্গত এলাকার চিত্র দেখে বিমর্ষ প্রধানমন্ত্রী

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তার আশ্বাস

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাদুর্গত এলাকা নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট ঘুরে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারে চড়ে খুব কাছ থেকে তিনি যখন দুর্গত এলাকাগুলো দেখছিলেন তখন তাকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এলাকাগুলো ঘুরে সিলেট সার্কিট হাউসে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠকে তিনি বানভাসিদের অভয় দিয়েছেন। বলেছেন বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করে। তাই বন্যায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একইসঙ্গে এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে যথাযথ সহায়তারও আশ্বাস দেন টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা এই সরকারপ্রধান।

গত বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা শুরু হওয়ার পর একই অবস্থা দেখা দেয় নেত্রকোনায়। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে যে, স্থানীয় প্রশাসন দুর্গত এলাকাগুলোতে গিয়ে বানভাসিদের সহায়তা করতে পারিছল না। বেগতিক অবস্থায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসও বানভাসিদের উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে। গত রোববার সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বন্যাদুর্গত সিলেট পরিদর্শন করেন। এরইমধ্যে খবর আসে প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের। এই খবর বানভাসিদের মধ্যে অনেকটা আশার আলো দেখায়। সেই আলোকে নির্ধারিত সময়েই গতকাল দুইটি হেলিকপ্টাযোগে সফরসঙ্গীদের নিয়ে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের দুর্গত এলাকা দেখার পর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান সার্কিট হাউজে। সেখানে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রশাসনকে বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। বলেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যত খাদ্য ও ওষুধ লাগে সব দেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বন্যা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বন্যার প্রস্তুতি আমাদের ছিল। আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছি খাদ্যগুমদামের ক্ষতি যেন না হয়। পাশাপাশি খাদ্য বের করার রাস্তা যেন থাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে যেসব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই চলতে হয়েছে এবং হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামোগুলো সেভাবে তৈরি করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সরকার আপনাদের পাশে আছে। সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। বন্যার কারণে অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে আমরা সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। উদ্ধার কাজ চালাতে সবাই কাজ করেছে। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীরাও নিরলস চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বন্যায় মাছচাষিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার। বন্যায় যারা কাজ করছেন তাদেরও সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। বন্যার পানিতে যাতে ঠা-া লেগে কেউ অসুস্থ না হন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ও বিরোধী দল সব অবস্থাতেই আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এবারের বন্যায় যুবলীগের এক কর্মী সবাইকে সতর্ক করে একটা ঘরে যাওয়ার পর সেখানে পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে।

বন্যার মতো প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পুরোনো দিনের সরঞ্জামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেজন্য সব সময় একটা বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রাখতে হয়। আমরা হারিকেনেরে কথা, নৌকার কথা ভুলে গেছি, তোলা চুলার কথা ভুলে গেছি। বোধ হয় এগুলো এখন আবার নতুন করে ভাবতে হবে।’

বন্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছে। অনেক জায়গায় কেউ যখন পৌঁছাতে পারেনি আমাদের নেতারা সেখানে পৌঁছে আমার কাছে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি সেনাপ্রধানকে পাঠিয়েছি, আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। যেখানে সেনাবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে সেনাবাহিনী বা যেখানে বিমানবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে তাদের পাঠিয়েছে। যারা আমার কাছে ছবি পাঠিয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, তাদের ধন্যবাদ। কারণ তা না হলে রিলিফের কাজটা অত সহজে করা যেত না।

আগে থেকেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এক-দেড় মাস আগে থেকেই সবাইকে বলতাম, এবার বড় বন্যা আসবে, সবাই প্রস্তুত থাকেন। প্রকৃতির অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। সে কারণে আমি বলেছি বড় বন্যা আসবে। বাংলাদেশে ১০-১২ বছরের মধ্যে একেকটা বড় বন্যা আসে। আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার।’

এছাড়া ‘বন্যায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে কী পেয়েছেন’ মতবিনিময়ে উপস্থিত সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফের কাছে তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘তার দলের কেউ (বন্যা উপদ্রুতদের সহযোগিতায়) আসে নাই। তার দলের সবাই ঘরে বইস্যা ফাটাইয়া ফেলতেছে। উনিই (মেয়র আরিফ) বলুক তার দলের কাছ থেকে কী পাইছেন, আমরা শুনি।’

এ সময় বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি অসহায় মানুষদের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করে সিসিক মেয়র আরিফ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উপস্থিতির পর এখানকার মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। আপনার এখানে আসার খবরের পর থেকেই মানুষ অনেক আশায় ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আসছেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই কোন ব্যবস্থা নেবেন।’ নগরীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।

সিলেট নগরীর ৮০ ভাগ বন্যাকবলিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সিলেটের মেয়র আরিফ আরও বলেন, ‘সিলেটের কয়েকটি এলাকা দিয়ে আকস্মিক পানি ঢুকে নগর ডুবে যায়। এজন্য শহর রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন। সুরমা নদীর তীরে যেসব এলাকায় উঁচু ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, সে এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। এজন্য ১৫ কিলোমিটার এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।’

তার সঙ্গে দুটি হেলিকপ্টারে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও আহমদ হোসেন ও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, এসএসএফের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, একান্ত সচিব-১, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, পিজিআরের কমান্ডার, এডিসি, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১, এসএসএফের ৪ জন, বিটিভির ক্যামেরাম্যান এবং চারজন মিডিয়া সদস্য।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

হেলিকপ্টার থেকে দুর্গত এলাকার চিত্র দেখে বিমর্ষ প্রধানমন্ত্রী

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তার আশ্বাস

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

image

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাদুর্গত এলাকা নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট ঘুরে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেলিকপ্টারে চড়ে খুব কাছ থেকে তিনি যখন দুর্গত এলাকাগুলো দেখছিলেন তখন তাকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এলাকাগুলো ঘুরে সিলেট সার্কিট হাউসে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠকে তিনি বানভাসিদের অভয় দিয়েছেন। বলেছেন বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করে। তাই বন্যায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একইসঙ্গে এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে যথাযথ সহায়তারও আশ্বাস দেন টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা এই সরকারপ্রধান।

গত বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা শুরু হওয়ার পর একই অবস্থা দেখা দেয় নেত্রকোনায়। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে যে, স্থানীয় প্রশাসন দুর্গত এলাকাগুলোতে গিয়ে বানভাসিদের সহায়তা করতে পারিছল না। বেগতিক অবস্থায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসও বানভাসিদের উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে। গত রোববার সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বন্যাদুর্গত সিলেট পরিদর্শন করেন। এরইমধ্যে খবর আসে প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের। এই খবর বানভাসিদের মধ্যে অনেকটা আশার আলো দেখায়। সেই আলোকে নির্ধারিত সময়েই গতকাল দুইটি হেলিকপ্টাযোগে সফরসঙ্গীদের নিয়ে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের দুর্গত এলাকা দেখার পর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান সার্কিট হাউজে। সেখানে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রশাসনকে বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। বলেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যত খাদ্য ও ওষুধ লাগে সব দেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বন্যা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বন্যার প্রস্তুতি আমাদের ছিল। আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছি খাদ্যগুমদামের ক্ষতি যেন না হয়। পাশাপাশি খাদ্য বের করার রাস্তা যেন থাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে যেসব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই চলতে হয়েছে এবং হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামোগুলো সেভাবে তৈরি করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সরকার আপনাদের পাশে আছে। সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। বন্যার কারণে অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে আমরা সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। উদ্ধার কাজ চালাতে সবাই কাজ করেছে। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীরাও নিরলস চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বন্যায় মাছচাষিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার। বন্যায় যারা কাজ করছেন তাদেরও সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। বন্যার পানিতে যাতে ঠা-া লেগে কেউ অসুস্থ না হন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ও বিরোধী দল সব অবস্থাতেই আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবার আগে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এবারের বন্যায় যুবলীগের এক কর্মী সবাইকে সতর্ক করে একটা ঘরে যাওয়ার পর সেখানে পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে।

বন্যার মতো প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পুরোনো দিনের সরঞ্জামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেজন্য সব সময় একটা বিকল্প ব্যবস্থা প্রত্যেকের ঘরে ঘরে রাখতে হয়। আমরা হারিকেনেরে কথা, নৌকার কথা ভুলে গেছি, তোলা চুলার কথা ভুলে গেছি। বোধ হয় এগুলো এখন আবার নতুন করে ভাবতে হবে।’

বন্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছে। অনেক জায়গায় কেউ যখন পৌঁছাতে পারেনি আমাদের নেতারা সেখানে পৌঁছে আমার কাছে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি সেনাপ্রধানকে পাঠিয়েছি, আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। যেখানে সেনাবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে সেনাবাহিনী বা যেখানে বিমানবাহিনী যেতে পারবে, সেখানে তাদের পাঠিয়েছে। যারা আমার কাছে ছবি পাঠিয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, তাদের ধন্যবাদ। কারণ তা না হলে রিলিফের কাজটা অত সহজে করা যেত না।

আগে থেকেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এক-দেড় মাস আগে থেকেই সবাইকে বলতাম, এবার বড় বন্যা আসবে, সবাই প্রস্তুত থাকেন। প্রকৃতির অবস্থা দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। সে কারণে আমি বলেছি বড় বন্যা আসবে। বাংলাদেশে ১০-১২ বছরের মধ্যে একেকটা বড় বন্যা আসে। আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার।’

এছাড়া ‘বন্যায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে কী পেয়েছেন’ মতবিনিময়ে উপস্থিত সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফের কাছে তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘তার দলের কেউ (বন্যা উপদ্রুতদের সহযোগিতায়) আসে নাই। তার দলের সবাই ঘরে বইস্যা ফাটাইয়া ফেলতেছে। উনিই (মেয়র আরিফ) বলুক তার দলের কাছ থেকে কী পাইছেন, আমরা শুনি।’

এ সময় বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি অসহায় মানুষদের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করে সিসিক মেয়র আরিফ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উপস্থিতির পর এখানকার মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। আপনার এখানে আসার খবরের পর থেকেই মানুষ অনেক আশায় ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আসছেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই কোন ব্যবস্থা নেবেন।’ নগরীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।

সিলেট নগরীর ৮০ ভাগ বন্যাকবলিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সিলেটের মেয়র আরিফ আরও বলেন, ‘সিলেটের কয়েকটি এলাকা দিয়ে আকস্মিক পানি ঢুকে নগর ডুবে যায়। এজন্য শহর রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন। সুরমা নদীর তীরে যেসব এলাকায় উঁচু ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, সে এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। এজন্য ১৫ কিলোমিটার এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।’

তার সঙ্গে দুটি হেলিকপ্টারে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও আহমদ হোসেন ও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, এসএসএফের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, একান্ত সচিব-১, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, পিজিআরের কমান্ডার, এডিসি, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১, এসএসএফের ৪ জন, বিটিভির ক্যামেরাম্যান এবং চারজন মিডিয়া সদস্য।