দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও বানবাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। তবে পানি বাড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায়। বন্যাদুর্গত এলাকায় তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

ছাতকে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি, জানানসুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি ১৫৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা-কার্গো লোডিং আনলোডিং বন্ধ রয়েছে। বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সারা উপজেলা ছিল বিদ্যুৎ ও নেটওর্য়াকবিহীন। বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্য সংকটে বানভাসি মানুষের আর্তনাদে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। পানিবন্দী লোকজন একটু ত্রাণের আশায় প্রহর গুনছেন। জানা গেছে, সরকারিÑবেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সেটি অপ্রতুল। পানিবন্দী লোকজন জানান, ঘরে রান্না করার মতো সুযোগ নেই। চুলা পানির নিচে আর লাকড়ি হলো ভিজা। খাবার তৈরি করতে না পেরে খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা।

অনেকেই হাঁস, মুরগী ও গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। গতকাল থেকে শহরে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সংযোগ চালু করা হয়। শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। রাত হলেই ডাকাতরা বাসাবাড়িতে ইঞ্জিন নৌকায় করে হানা দিচ্ছে। কৃষকের গবাদিপশু পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। একদিকে বন্যার পানিতে হিমশিম আরেকদিকে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে পানিবন্দী লোকজন। নৌ টহল জোরদার করতে থানা পুলিশের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বানভাসি লোকজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কৈতক হাসপাতাল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে থানা। বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা সেবা।

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ‘গত চারদিনে ২ বেলা চিড়া মুড়ি খেয়ে বাইচা আছি। খিদার যন্ত্রণা ছেলে মেয়েগো সয্য হচ্ছে না। নেই বিশুদ্ধ পানি। ঘরে ভিতর পানি থাকায় রান্না নেই।’-কথাগুলো বলছিলেন খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আনোয়ার। ঘরে পানি উঠায় গবাদি পশুগুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ইসাপুর গ্রামের হাসেম উদ্দিন, কোথাও বেঁধে রাখার জায়গাটুকুও পাচ্ছেন না তারা। সড়কের পাশে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এখানকার হাওরাঞ্চলের মানুষের।

নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে। জেলার ১০টি উপজেলাতে এখানও পানিবন্দী ৫ লক্ষাধিক মানুষ। চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে বানভাসি মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক আশ্রায়ণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন কেন্দ্রগুলোতে। খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

আরও চারটি উপজেলায় বন্যাকবলিতদের চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় বানভাসিদের সহযোগীতায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হচ্ছে চিকিৎস্যা, বিতরণ করা হচ্ছে ওষুধ, জানান ১৯ পদাধিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী। হাওরাঞ্চল ছাড়ারও আরও দুটি উপজেলায় সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ, জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি। এ পর্যন্ত জেলার ৭৪টি ইউনিয়নে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন কাটছে লাখ লাখ মানুষের।

নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যেই উপজেলার ১ হাজার ৫শ’ পরিবারের প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার আধা-পাকা সড়ক। ইতোমধ্যেই পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে উপজেলার প্রায় ৭শ’ পুকুরের মাছ। সাড়ে ৪ হাজার রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি অনাহারে বানভাসিরা

রংপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবশেক জানান, তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন তিস্তা নদীবেষ্টিত ৬টি ইউনিয়নের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার আদেশনামা জারি করে পানিবন্দী মানুষকে সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে গত সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত মাইকযোগে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী মানুষ ও তাদের গরু ছাগলসহ মালামাল নিয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লা হাদী জানিয়েছেন তার ইউনিয়নের চর ইছলী, জয়রাম ওঝা, বিনবিনার চরসহ চরাঞ্চলের গ্রামগুলো ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ায় সব আদিবাসীকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের আরও ১০টিসহ ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছে।

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে বন্যা পারস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পরছে। এতে করে বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় আমন বীজতলা, আউস ধান, পাট, সবজি, মরিচ, তিল ও ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট

সংবাদ ডেস্ক

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও বানবাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। তবে পানি বাড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায়। বন্যাদুর্গত এলাকায় তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

ছাতকে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি, জানানসুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি ১৫৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা-কার্গো লোডিং আনলোডিং বন্ধ রয়েছে। বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সারা উপজেলা ছিল বিদ্যুৎ ও নেটওর্য়াকবিহীন। বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্য সংকটে বানভাসি মানুষের আর্তনাদে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। পানিবন্দী লোকজন একটু ত্রাণের আশায় প্রহর গুনছেন। জানা গেছে, সরকারিÑবেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সেটি অপ্রতুল। পানিবন্দী লোকজন জানান, ঘরে রান্না করার মতো সুযোগ নেই। চুলা পানির নিচে আর লাকড়ি হলো ভিজা। খাবার তৈরি করতে না পেরে খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা।

অনেকেই হাঁস, মুরগী ও গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। গতকাল থেকে শহরে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সংযোগ চালু করা হয়। শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। রাত হলেই ডাকাতরা বাসাবাড়িতে ইঞ্জিন নৌকায় করে হানা দিচ্ছে। কৃষকের গবাদিপশু পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। একদিকে বন্যার পানিতে হিমশিম আরেকদিকে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে পানিবন্দী লোকজন। নৌ টহল জোরদার করতে থানা পুলিশের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বানভাসি লোকজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কৈতক হাসপাতাল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে থানা। বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা সেবা।

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ‘গত চারদিনে ২ বেলা চিড়া মুড়ি খেয়ে বাইচা আছি। খিদার যন্ত্রণা ছেলে মেয়েগো সয্য হচ্ছে না। নেই বিশুদ্ধ পানি। ঘরে ভিতর পানি থাকায় রান্না নেই।’-কথাগুলো বলছিলেন খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আনোয়ার। ঘরে পানি উঠায় গবাদি পশুগুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ইসাপুর গ্রামের হাসেম উদ্দিন, কোথাও বেঁধে রাখার জায়গাটুকুও পাচ্ছেন না তারা। সড়কের পাশে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এখানকার হাওরাঞ্চলের মানুষের।

নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে। জেলার ১০টি উপজেলাতে এখানও পানিবন্দী ৫ লক্ষাধিক মানুষ। চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে বানভাসি মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক আশ্রায়ণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন কেন্দ্রগুলোতে। খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

আরও চারটি উপজেলায় বন্যাকবলিতদের চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় বানভাসিদের সহযোগীতায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হচ্ছে চিকিৎস্যা, বিতরণ করা হচ্ছে ওষুধ, জানান ১৯ পদাধিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী। হাওরাঞ্চল ছাড়ারও আরও দুটি উপজেলায় সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ, জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি। এ পর্যন্ত জেলার ৭৪টি ইউনিয়নে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিন কাটছে লাখ লাখ মানুষের।

নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যেই উপজেলার ১ হাজার ৫শ’ পরিবারের প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার আধা-পাকা সড়ক। ইতোমধ্যেই পানির তোড়ে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে উপজেলার প্রায় ৭শ’ পুকুরের মাছ। সাড়ে ৪ হাজার রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি অনাহারে বানভাসিরা

রংপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবশেক জানান, তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন তিস্তা নদীবেষ্টিত ৬টি ইউনিয়নের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার আদেশনামা জারি করে পানিবন্দী মানুষকে সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে গত সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত মাইকযোগে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী মানুষ ও তাদের গরু ছাগলসহ মালামাল নিয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লা হাদী জানিয়েছেন তার ইউনিয়নের চর ইছলী, জয়রাম ওঝা, বিনবিনার চরসহ চরাঞ্চলের গ্রামগুলো ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ায় সব আদিবাসীকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের আরও ১০টিসহ ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছে।

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে বন্যা পারস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পরছে। এতে করে বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় আমন বীজতলা, আউস ধান, পাট, সবজি, মরিচ, তিল ও ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে।