করোনা সংক্রমণ আরও কিছুদিন বাড়বে

দেশে করোনা সংক্রমণ হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত মাসের শেষের দিকে দেশে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশেরও নিচে ছিল। মৃত্যুও শূন্যের ঘরে ছিল।

চলতি মাসের শুরু থেকে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, সংক্রমণ হয়তো আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ বাড়বে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি ঘটবে না। সম্প্রতি যাদের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার নেই বললেই চলে। সবাই টিকা নিয়েছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে সম্প্রতি শনাক্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খুব একটা গুরুতর হচ্ছে না। কোভিড ইউনিটগুলো ফাঁকা রয়েছে। তাছাড়া সারাবিশে^ই করোনা মহামারী এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন, করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের কম থাকলে সেটাকে ‘নিরাপদ’ সীমা বলা যায়। পাঁচ শতাংশের ওপরে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। এর ভিত্তিতেই করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ কতটা কী দেয়া দরকার তা ঠিক করা হয়।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘সংক্রমণ আরও এক-দেড় সপ্তাহ বাড়তে থাকবে। সবমিলিয়ে আরও এক-দেড় মাস এই পরিস্থিতি সামলাতে হবে। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ক্ষয়-ক্ষতি হয়তো তেমন হবে না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা তেমন ক্ষয়-ক্ষতি আশা করি না; কারণ যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তারা হয়তো টিকা নিয়েছেন অথবা সংক্রমিত হয়েছেন। দুটোই গুরুতর রুটস (মূল রোগ) থেকে সুরক্ষা দেয়; তবে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে না।’

করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর পরামর্শ দিয়ে আইইডিসিআরের সাবেক এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংক্রমিত হলে গুরুতর অসুস্থতা না হলেও কোভিড-পরবর্তী জটিলতা কিন্তু হচ্ছে। কাজেই সংক্রমণটা এড়াতে হবে। সুস্থভাবে বাঁচতে হবে।’

একদিনে শনাক্তের হার ১১ শতাংশ

দীর্ঘদিন দেশে করোনায় মৃত্যু ছিল না। তবে টানা দ্বিতীয় দিন করোনায় মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে মোট ২৯ হাজার ১৩৩ জনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ মে করোনায় সবশেষ একজনের মৃত্যুর পর টানা ২০ দিন মৃত্যু ছিল না। পর গত সোমবার ও গতকাল দুইজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৭৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জনে। ১৭ ফেব্রুয়ারির পর দৈনিক শনাক্তের হারও ছাড়িয়েছে ১১ শতাংশ। এদিন নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ০৩ শতাংশ। অথচ গত মাসের শেষের দিকেও শনাক্তের হার এক শনাক্তের কম ছিল। যদিও মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

একদিনে শনাক্ত ৮৭৪ রোগীর মধ্যে ৭৯০ জন ঢাকা মহানগরসহ জেলার বাসিন্দা। শনাক্ত রোগীর মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ৮৪ জন। এ নিয়ে মোট ?সুস্থ হওয়া রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৩ জনে।

ওমিক্রণের উপধরন শনাক্ত

দেশে গতকাল করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বা উপধরন শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক। নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টটির নাম দেয়া হয়েছে বিএ.৪/৫ (ইঅ.৪/৫)।

বাংলাদেশি দুজনের শরীরে উপধরন শনাক্ত হয়েছে; যাদের একজনের বয়স ৪৪ বছর এবং অন্যজনের ৭৯ বছর।

ওমিক্রণের উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একজন করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতালে এবং একজন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

যবিপ্রবিতে ওমিক্রনের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

যশোর অফিস জানায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে জিনোম সিকোয়েন্সে বাংলাদেশি দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট ইঅ.৪/৫ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক যশোরের দু’জন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিন) জিনোম সিকুয়েন্সের মাধ্যমে করোনার নতুন এই উপধরনটি শনাক্ত করে। যবিপ্রবির গবেষকরা জানান, এই সাবভ্যারিন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি কম। এছাড়া করোনার বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী কেউ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে তাদে হাসপাতালে না গেলেও চলবে।

যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানায়, আক্রান্ত দু’জন ব্যক্তিই পুরুষ। যাদের একজনের বয়স ৪৪ এবং আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। আক্রান্ত ব্যক্তির একজন করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং অন্যজন বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের শরীরে জ¦র, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকরা ধারণা করছেন।

গবেষক দলটি আরও জানায়, ইঅ৪/৫ সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এই সাবভ্যারিয়েন্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এছাড়া এই সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। ওমিক্রনের এই দুটি সাবভ্যারিয়েন্ট জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে। গত মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।

এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিককালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিরাও এই সাবভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগামী দিনে এই সাবভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য সাবভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

করোনার এই নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সাবভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এজন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে এবং এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের কাজ জিনোম সেন্টারে অব্যাহত থাকবে। ইতোপূর্বে জিনোম সেন্টারে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণও শনাক্ত করা হয়।

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে করেনার নতুন এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মো. আল-ইমরান, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর ইসলাম, ড. সেলিনা আক্তার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ এস এম রুবাইয়াতুল আলম, মো. সাজিদ হাসান, জিনোম সেন্টারের গবেষণা সহকারী প্রশান্ত কুমার দাস, রাসেল পারভেজ প্রমুখ।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

করোনা সংক্রমণ আরও কিছুদিন বাড়বে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশে করোনা সংক্রমণ হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত মাসের শেষের দিকে দেশে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশেরও নিচে ছিল। মৃত্যুও শূন্যের ঘরে ছিল।

চলতি মাসের শুরু থেকে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, সংক্রমণ হয়তো আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ বাড়বে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি ঘটবে না। সম্প্রতি যাদের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার নেই বললেই চলে। সবাই টিকা নিয়েছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে সম্প্রতি শনাক্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খুব একটা গুরুতর হচ্ছে না। কোভিড ইউনিটগুলো ফাঁকা রয়েছে। তাছাড়া সারাবিশে^ই করোনা মহামারী এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন, করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের কম থাকলে সেটাকে ‘নিরাপদ’ সীমা বলা যায়। পাঁচ শতাংশের ওপরে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। এর ভিত্তিতেই করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ কতটা কী দেয়া দরকার তা ঠিক করা হয়।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘সংক্রমণ আরও এক-দেড় সপ্তাহ বাড়তে থাকবে। সবমিলিয়ে আরও এক-দেড় মাস এই পরিস্থিতি সামলাতে হবে। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ক্ষয়-ক্ষতি হয়তো তেমন হবে না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা তেমন ক্ষয়-ক্ষতি আশা করি না; কারণ যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তারা হয়তো টিকা নিয়েছেন অথবা সংক্রমিত হয়েছেন। দুটোই গুরুতর রুটস (মূল রোগ) থেকে সুরক্ষা দেয়; তবে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে না।’

করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর পরামর্শ দিয়ে আইইডিসিআরের সাবেক এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংক্রমিত হলে গুরুতর অসুস্থতা না হলেও কোভিড-পরবর্তী জটিলতা কিন্তু হচ্ছে। কাজেই সংক্রমণটা এড়াতে হবে। সুস্থভাবে বাঁচতে হবে।’

একদিনে শনাক্তের হার ১১ শতাংশ

দীর্ঘদিন দেশে করোনায় মৃত্যু ছিল না। তবে টানা দ্বিতীয় দিন করোনায় মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে মোট ২৯ হাজার ১৩৩ জনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ মে করোনায় সবশেষ একজনের মৃত্যুর পর টানা ২০ দিন মৃত্যু ছিল না। পর গত সোমবার ও গতকাল দুইজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৭৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জনে। ১৭ ফেব্রুয়ারির পর দৈনিক শনাক্তের হারও ছাড়িয়েছে ১১ শতাংশ। এদিন নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ০৩ শতাংশ। অথচ গত মাসের শেষের দিকেও শনাক্তের হার এক শনাক্তের কম ছিল। যদিও মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

একদিনে শনাক্ত ৮৭৪ রোগীর মধ্যে ৭৯০ জন ঢাকা মহানগরসহ জেলার বাসিন্দা। শনাক্ত রোগীর মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ৮৪ জন। এ নিয়ে মোট ?সুস্থ হওয়া রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৩ জনে।

ওমিক্রণের উপধরন শনাক্ত

দেশে গতকাল করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বা উপধরন শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক। নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টটির নাম দেয়া হয়েছে বিএ.৪/৫ (ইঅ.৪/৫)।

বাংলাদেশি দুজনের শরীরে উপধরন শনাক্ত হয়েছে; যাদের একজনের বয়স ৪৪ বছর এবং অন্যজনের ৭৯ বছর।

ওমিক্রণের উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একজন করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতালে এবং একজন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

যবিপ্রবিতে ওমিক্রনের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

যশোর অফিস জানায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে জিনোম সিকোয়েন্সে বাংলাদেশি দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট ইঅ.৪/৫ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক যশোরের দু’জন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিন) জিনোম সিকুয়েন্সের মাধ্যমে করোনার নতুন এই উপধরনটি শনাক্ত করে। যবিপ্রবির গবেষকরা জানান, এই সাবভ্যারিন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি কম। এছাড়া করোনার বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী কেউ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে তাদে হাসপাতালে না গেলেও চলবে।

যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানায়, আক্রান্ত দু’জন ব্যক্তিই পুরুষ। যাদের একজনের বয়স ৪৪ এবং আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। আক্রান্ত ব্যক্তির একজন করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং অন্যজন বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের শরীরে জ¦র, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকরা ধারণা করছেন।

গবেষক দলটি আরও জানায়, ইঅ৪/৫ সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এই সাবভ্যারিয়েন্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এছাড়া এই সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। ওমিক্রনের এই দুটি সাবভ্যারিয়েন্ট জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে। গত মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।

এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিককালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিরাও এই সাবভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগামী দিনে এই সাবভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য সাবভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

করোনার এই নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সাবভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এজন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে এবং এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের কাজ জিনোম সেন্টারে অব্যাহত থাকবে। ইতোপূর্বে জিনোম সেন্টারে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণও শনাক্ত করা হয়।

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে করেনার নতুন এই সাবভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মো. আল-ইমরান, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর ইসলাম, ড. সেলিনা আক্তার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ এস এম রুবাইয়াতুল আলম, মো. সাজিদ হাসান, জিনোম সেন্টারের গবেষণা সহকারী প্রশান্ত কুমার দাস, রাসেল পারভেজ প্রমুখ।