শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টকে রাষ্ট্রপতির ওপর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংবিধানের ২১তম সংশোধনী পাস করেছে। এ সংশোধনীর ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজপাকসের একচ্ছত্র ক্ষমতা অনেকটাই কমে আসবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
২১তম সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত সংবিধানের ২০-এ ধারাটি বাতিল করা হবে, যা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পার্লামেন্টের ওপর শক্তিশালী করে রেখেছিল। এ সংশোধনীর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হ্রাস পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
২০২০ সালের আগস্টে সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবার। সংবিধান সশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের মূল পদে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের ওপর পার্লামেন্টকে শক্তিশালী করার জন্য ২০১৫ সালে ১৯তম সংশোধনী পাস করেছিলেন। সেটি বাতিল করে সংবিধানের ২০তম ধারায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
পর্যটন ও ভূমি মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো এক টুইটে লেখেন, ২১তম সংশোধনী সোমবার মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে এবং শীঘ্রই তা পার্লামেন্ট পেশ করা হবে। ২১তম সংশোধনীর অন্যতম লক্ষ্য দ্বৈত নাগরিকদের পাবলিক অফিসে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখা।
ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পোডুজানা পেরামুনা পার্টির একটি অংশ বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান না করে নতুন সংশোধনী আনার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সংবিধানের ২১তম সংশোধনীর পক্ষে শক্ত ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, ঋণে জর্জরিত দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি প্রেসিডেন্টের সীমাহীন ক্ষমতাকে রোধ করে পার্লামেন্টের ভূমিকা বাড়াতে সহায়ক হবে। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
মূলত গত ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়ই রনিল বিক্রমাসিংহে গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে এ সংস্কারের ব্যাপারে একটি চুক্তি করেন।
শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাল আইএমএফ প্রতিনিধি দল
এদিকে, পেট্রল ও ডিজেলের মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ফের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এই পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
শ্রীলঙ্কাকে নতুন ঋণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেই কলম্বো এসেছে প্রতিনিধি দলটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যদি আলোচনা সফল হয়, সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই নিয়ে ১৭ বার ঋণ দেয়া হবে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছে শ্রীলঙ্কা। সীমাহীন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও করোনা মহামারী এই সংকটের প্রধান কারণ। বিদেশি ম্দ্রুার রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
এর মধ্যে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এছাড়া পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস কিনতে লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা ঘোষণা দেয়, বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেওয়া ১ হাজার ২০০ ডলারের ঋণ আর পরিশোধ করতে পারবে সরকার। সেই ঘোষণার পর এই প্রথম আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছিলেন দেশে যে পরিমাণ পেট্রল ও ডিজেলের মজুত রয়েছে, তাতে বড়জোর ৫ দিন কোনোভাবে চলা যাবে।
সেই হিসেবে বর্তমানে দেশটির জ্বালানি শেষের পথে। গত রোববার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ পাম্প। বর্তমানে অল্প যে কয়েকটিতে পেট্রল-ডিজেল মিলছে, আর সেইসব পাম্পের সামনে ব্যাপক ভিড় শুরু হয়েছে। এই ভিড় সামলাতে প্রতিটি পাম্পে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে, জ্বলানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত রোববার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এই দিন দেশটির বিভিন্ন এলাকাসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী।
অবশ্য গত সোমবার সকালেই তাদের উঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশ সদস্যদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষত বাহিনী তৎপর থাকবে।
শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকারা বলেন, জ্বালানি কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেট্রল ও ডিজেল ক্রয় করতে ৯ কোটি ডলার ছাড় দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে ১২ হাজার ৩০০ টন পেট্রল ও ৪ হাজার টন ডিজেল কেনা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই পেট্রল ও শুক্রবার ডিজেলের চালান কলম্বোর বন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে সাংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টকে রাষ্ট্রপতির ওপর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংবিধানের ২১তম সংশোধনী পাস করেছে। এ সংশোধনীর ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজপাকসের একচ্ছত্র ক্ষমতা অনেকটাই কমে আসবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
২১তম সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত সংবিধানের ২০-এ ধারাটি বাতিল করা হবে, যা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পার্লামেন্টের ওপর শক্তিশালী করে রেখেছিল। এ সংশোধনীর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হ্রাস পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
২০২০ সালের আগস্টে সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবার। সংবিধান সশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের মূল পদে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের ওপর পার্লামেন্টকে শক্তিশালী করার জন্য ২০১৫ সালে ১৯তম সংশোধনী পাস করেছিলেন। সেটি বাতিল করে সংবিধানের ২০তম ধারায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
পর্যটন ও ভূমি মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো এক টুইটে লেখেন, ২১তম সংশোধনী সোমবার মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে এবং শীঘ্রই তা পার্লামেন্ট পেশ করা হবে। ২১তম সংশোধনীর অন্যতম লক্ষ্য দ্বৈত নাগরিকদের পাবলিক অফিসে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখা।
ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পোডুজানা পেরামুনা পার্টির একটি অংশ বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান না করে নতুন সংশোধনী আনার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সংবিধানের ২১তম সংশোধনীর পক্ষে শক্ত ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, ঋণে জর্জরিত দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি প্রেসিডেন্টের সীমাহীন ক্ষমতাকে রোধ করে পার্লামেন্টের ভূমিকা বাড়াতে সহায়ক হবে। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
মূলত গত ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার সময়ই রনিল বিক্রমাসিংহে গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে এ সংস্কারের ব্যাপারে একটি চুক্তি করেন।
শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাল আইএমএফ প্রতিনিধি দল
এদিকে, পেট্রল ও ডিজেলের মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ফের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এই পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
শ্রীলঙ্কাকে নতুন ঋণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেই কলম্বো এসেছে প্রতিনিধি দলটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যদি আলোচনা সফল হয়, সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই নিয়ে ১৭ বার ঋণ দেয়া হবে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছে শ্রীলঙ্কা। সীমাহীন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও করোনা মহামারী এই সংকটের প্রধান কারণ। বিদেশি ম্দ্রুার রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
এর মধ্যে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এছাড়া পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস কিনতে লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা ঘোষণা দেয়, বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেওয়া ১ হাজার ২০০ ডলারের ঋণ আর পরিশোধ করতে পারবে সরকার। সেই ঘোষণার পর এই প্রথম আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছিলেন দেশে যে পরিমাণ পেট্রল ও ডিজেলের মজুত রয়েছে, তাতে বড়জোর ৫ দিন কোনোভাবে চলা যাবে।
সেই হিসেবে বর্তমানে দেশটির জ্বালানি শেষের পথে। গত রোববার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ পাম্প। বর্তমানে অল্প যে কয়েকটিতে পেট্রল-ডিজেল মিলছে, আর সেইসব পাম্পের সামনে ব্যাপক ভিড় শুরু হয়েছে। এই ভিড় সামলাতে প্রতিটি পাম্পে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে, জ্বলানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত রোববার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এই দিন দেশটির বিভিন্ন এলাকাসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী।
অবশ্য গত সোমবার সকালেই তাদের উঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশ সদস্যদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষত বাহিনী তৎপর থাকবে।
শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকারা বলেন, জ্বালানি কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেট্রল ও ডিজেল ক্রয় করতে ৯ কোটি ডলার ছাড় দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে ১২ হাজার ৩০০ টন পেট্রল ও ৪ হাজার টন ডিজেল কেনা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই পেট্রল ও শুক্রবার ডিজেলের চালান কলম্বোর বন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে সাংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।