রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা, মামলা করবে স্বজনরা

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক অলিয়ার রহমান আকন্দ আত্মহত্যা করেনি তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হলে হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নিহত অলিয়ার আকন্দের স্ত্রী আফরোজা বেগম দুই সন্তান মেয়ে লাবিবা রহমান ও ছেলে শুশফিক রহমানকে নিয়ে বগুড়া থেকে সরাসরি নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় এলাকায় অবস্থিত জেলা ও বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

নিহত অলিয়ার রহমানের স্ত্রী আফরোজা বেগম অভিযোগ করেন, রংপুর জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি চক্র দুর্নীতি লুটপাট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। উনি বাধা দেয়ার ছিল তার মৃত্যুর কারণ বলে জানান তিনি। তার স্বামীর খুনিরা অফিসেই বহাল তবিয়তে আছে, তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে, কারা কারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল কারা নির্দেশ দিয়েছে সব রহস্যের সমাধান হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারে হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে।

স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, নিহত অলিয়ার রহমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন কোরআন তিলাওয়াত করতেন এমন মানুষ কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। প্রতিদিন রাতে ভিডিও কলে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। সন্তানদের লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন।

স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, নিহত অলিয়ার রহমান আকন্দ অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি চাকরি জীবনে এক পয়সাও ঘুষ খাননি, অবৈধ কোন টাকা উপার্জন করেননি। বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তা জানতেন। শুধুমাত্র সততা আর কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য জীবনে তিনি কোথাও বেশিদিন চাকরি করতে পারেননি। দুর্নীতি করতেন না কাউকে দুর্নীতি করতেও দিতেন না।

নিহত অলিয়ার রহমানের মেয়ে লাবিবা রহমান বগুড়া আজিজুল হক কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাথরুমে গোসল করা ঝরনার মধ্যে কিভাবে একটা মানুষ গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এটা পাগলও বিশ্বাস করবে না। তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। ছেলে বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, আমার বাবাকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই খুনিদের ফাঁসি চাই।

এদিকে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলিয়ার রহমান নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা থেকে এসেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জসীম উদ্দিন। তিনি জানান, এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এবং ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মারুফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি মাহফুজার রহমান ওসি (তদন্ত) হোসেন আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপপুলিশ কশিশনার মারুফুল ইসলাম বলেন, আমরা অফিসিয়াল পারিবারিকসহ সব বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। স্বজনরা জানিয়েছেন তারা হত্যামামলা দায়ের করবেন।

বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩

স্বজনদের অভিযোগ

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা, মামলা করবে স্বজনরা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক অলিয়ার রহমান আকন্দ আত্মহত্যা করেনি তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হলে হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নিহত অলিয়ার আকন্দের স্ত্রী আফরোজা বেগম দুই সন্তান মেয়ে লাবিবা রহমান ও ছেলে শুশফিক রহমানকে নিয়ে বগুড়া থেকে সরাসরি নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় এলাকায় অবস্থিত জেলা ও বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

নিহত অলিয়ার রহমানের স্ত্রী আফরোজা বেগম অভিযোগ করেন, রংপুর জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি চক্র দুর্নীতি লুটপাট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। উনি বাধা দেয়ার ছিল তার মৃত্যুর কারণ বলে জানান তিনি। তার স্বামীর খুনিরা অফিসেই বহাল তবিয়তে আছে, তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে, কারা কারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল কারা নির্দেশ দিয়েছে সব রহস্যের সমাধান হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারে হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে।

স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, নিহত অলিয়ার রহমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন কোরআন তিলাওয়াত করতেন এমন মানুষ কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। প্রতিদিন রাতে ভিডিও কলে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। সন্তানদের লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন।

স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, নিহত অলিয়ার রহমান আকন্দ অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি চাকরি জীবনে এক পয়সাও ঘুষ খাননি, অবৈধ কোন টাকা উপার্জন করেননি। বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তা জানতেন। শুধুমাত্র সততা আর কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য জীবনে তিনি কোথাও বেশিদিন চাকরি করতে পারেননি। দুর্নীতি করতেন না কাউকে দুর্নীতি করতেও দিতেন না।

নিহত অলিয়ার রহমানের মেয়ে লাবিবা রহমান বগুড়া আজিজুল হক কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাথরুমে গোসল করা ঝরনার মধ্যে কিভাবে একটা মানুষ গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এটা পাগলও বিশ্বাস করবে না। তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। ছেলে বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, আমার বাবাকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই খুনিদের ফাঁসি চাই।

এদিকে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলিয়ার রহমান নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা থেকে এসেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জসীম উদ্দিন। তিনি জানান, এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এবং ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মারুফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি মাহফুজার রহমান ওসি (তদন্ত) হোসেন আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপপুলিশ কশিশনার মারুফুল ইসলাম বলেন, আমরা অফিসিয়াল পারিবারিকসহ সব বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। স্বজনরা জানিয়েছেন তারা হত্যামামলা দায়ের করবেন।