ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমিনরহাটে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুনে। এদিকে পানির তীব্র স্রোতে গত ৩ দিনে তিস্তা- ধরলা অববাহিকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন বাঁধে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। হাতিবান্ধার গড্ডিমারি গ্রামের বৃদ্ধ আমির আলী বলেন, চোখের পলকে তিস্তায় ভেসে গেল আমার ঘরবাড়ি। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। একই কথা বললেন, চর সির্ন্দুনার মনির, সাহানুর, শাহা আলী, হাসিমসহ বেশ কয়েকজন। তিস্তার তীব্র স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের বসতবাড়ি।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের ১নং, ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের চর সিন্দুর্না এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ৩ দিনে প্রায় ৫০টি পরিবার নদীগর্ভে চলে গেছে। উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের জরিনা খাতুন (৪০) জানান, তিস্তার পানি এসে ঘরবাড়ির সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
কিছু মালামাল আটক করে নৌকায় করে এপারে নিয়ে এসেছি। মুরগি ছাগল সবকিছুই ভেসে গেছে। জায়গা-জমি নাই। স্থানীয় হাটখোলায় বাজারে মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান নদীভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ৩ দিনে তিস্তা-ধরলায় ৫৪৩টি ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফালানো হচ্ছে। অন্যদিকে পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট।
গতকাল বিকেলে জেলার হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২.৮৪ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক (৫২.৬০) সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মে. টন চাল, ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্য বরাদ্দ হয়েছে তা বিতরণ কার্যক্রম শেষের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, পানি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার, ২২ জুন ২০২২ , ৮ আষাড় ১৪২৮ ২২ জিলকদ ১৪৪৩
মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট
ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমিনরহাটে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুনে। এদিকে পানির তীব্র স্রোতে গত ৩ দিনে তিস্তা- ধরলা অববাহিকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন বাঁধে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। হাতিবান্ধার গড্ডিমারি গ্রামের বৃদ্ধ আমির আলী বলেন, চোখের পলকে তিস্তায় ভেসে গেল আমার ঘরবাড়ি। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। একই কথা বললেন, চর সির্ন্দুনার মনির, সাহানুর, শাহা আলী, হাসিমসহ বেশ কয়েকজন। তিস্তার তীব্র স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের বসতবাড়ি।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের ১নং, ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের চর সিন্দুর্না এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ৩ দিনে প্রায় ৫০টি পরিবার নদীগর্ভে চলে গেছে। উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের জরিনা খাতুন (৪০) জানান, তিস্তার পানি এসে ঘরবাড়ির সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
কিছু মালামাল আটক করে নৌকায় করে এপারে নিয়ে এসেছি। মুরগি ছাগল সবকিছুই ভেসে গেছে। জায়গা-জমি নাই। স্থানীয় হাটখোলায় বাজারে মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান নদীভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ৩ দিনে তিস্তা-ধরলায় ৫৪৩টি ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফালানো হচ্ছে। অন্যদিকে পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট।
গতকাল বিকেলে জেলার হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২.৮৪ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক (৫২.৬০) সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মে. টন চাল, ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্য বরাদ্দ হয়েছে তা বিতরণ কার্যক্রম শেষের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, পানি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে।