অন্ধ মনস্তাপ
জিললুর রহমান
দিবাবসানের ঘোলাটে আলোয়
বিষাদ বেঁধেছে বাসা,
জুনের রাত্রে আষাঢ়ে গল্প
অসংগতিতে ঠাসা।
তবু মেলাবেন কে যে মেলাবেন
ভাবসমুদ্রে ভাসি,
কাল করালের দুর্দিনে দেখি
কিছুতে মেলে না রাশি।
মাথার ওপরে জেঁকে বসে রয়
মিথোজীবিতার শাপ,
বছর জুড়েই কুঁরে কুঁরে খায়
অন্ধ মনস্তাপ।
বাতি জ্বলেছে জলে
সৈয়দ নূরুল আলম
(পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন উপলক্ষে)
তুমি এখন স্পষ্ট। তিনশ’ দশ দিন পরে তোমার আকার সুগঠিত। তুমি জলে, তোমার ওপর আকাশ। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ। সাদা-কালোর মিশেল, বিকেলের স্বচ্ছ আলো নিভে, মেঘে ঢেকে যায় তোমার মুখ। কালো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি ধুইয়ে দেয় তোমার ঠোঁটের মেরুন লিপস্টিক, এখন তোমার অন্য আদল, তোমাকে দেখে কবি চিৎকার দেয়। ঢেউয়ে নৌকা নাচে, কবিও নাচে। নেচে নেচে বলে, তুমি বাংলার মুখ, শত সহস্র মানুষের সুখ। চোখ ঈশারায় ডাকার পরে, ছুটতে ছুটতে, ধরতে যেয়ে কবি হোঁচট খায়, জ্যোৎস্নাতাকে আড়াল করে। আটপোড়ে, এলোমেলো ভাবনাগুলো থমকে যায় পদ্মার জলে। জলে ভেজা নরম ঠোঁটে, ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খায় কাতল মাছে। মধ্যরাতে পুরুষ মেঘ বড্ড বেশি ভাব করে, কাতুকুতু দিয়ে মেঘ প্রেমিকার জল ভাঙে। চাঁদ ঘুমিয়ে থাকে মেঘ চাঁদরের তলে। কথারা আটকে যায় মতিঝিলের জ্যামে।
জেগেছে কাঁপন
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
আমার মনে হচ্ছে- যার চোখ নেই- ভীষণ অন্ধ
সেও এই পদ্মাসেতু দেখার জন্যে মরিয়া।
যার পা নেই- দূরত্ব মাড়াবার সাহস হারিয়ে গেছে
সেও আজ উঠে দাঁড়িয়েছে খাড়া।
বহু দিন উটের পিঠ পাহাড় সেও আজ করে নড়াচড়া।
বহু দিনের জরাজীর্ণ, ঘুমকাতর আলসেমি ভাঙ্গে আড়মোড়া
আমার মনে হচ্ছে- সূক্ষ্মতায় জেগেছে কাঁপন
বৃহত্বে জেগেছে কথন।
অভিমানী পাহাড়ের মৌনতা
রিক্তা রিচি
কি পাগল ছিলাম তখন!
মনে হতো তুই ছাড়া আমার কিচ্ছু নেই।
ঘুম নেই, খাওয়া নেই, গোসল নেই।
যেন আমার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র পৃথিবী তুই।
মনে হতো তোকে ছাড়া আমার সমস্ত কিছু মিথ্যে।
তাই বারংবার তোর কাছে গিয়েছি,
হাতজোড় করে বলেছি
‘আমাকে গ্রহণ কর’ ‘আমাকে স্বীকৃতি দে’।
রাত দুপুরে তোকে না দেখলেই
বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠত,
একটিবার তোকে গভীরভাবে
জড়িয়ে ধরার সুযোগ খুঁজতাম বারংবার!
বারংবার তোকে নিজের করে পাওয়ার অসম্ভব চেষ্টা করতাম।
মনে হতো যেকোনো মূল্যে তোকেই আমার চাই!
তুই ছাড়া পৃথিবীতে আমার প্রিয় কেউ নেই!
আর তুই ডাস্টবিনের আবর্জনা ভেবে
আমাকে হাজার বার ফিরিয়ে দিয়েছিস
আমার প্রেম, পাগলামি, হৃদয়ের অব্যক্ত শত শত
কথাগুলোকে তোর কাছে ডাস্ট অ্যালার্জি মনে হতো।
বারংবার বলেছি, আয় সমঝোতা করি। সন্ধি করি।
এসব কথাগুলোকে থোড়াই কেয়ার করতি।
চলে গেলি
ছয় বছরের স্মৃতি হত্যা করে বিদায় নিলি...।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখ
আজ আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চোখের জল মুছিস
তোর হৃদয়টা কাল বৈশাখী ঝড় কিংবা কেপটাউনের দাবানলে
কখনো ক্ষতবিক্ষত হয়। কখনো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আর এখন আমি দেখেও না দেখার ভান করে
তোকে ফিরিয়ে দেই বারংবার!
কান্নার সমুদ্র আমার অভিমানী পাহাড়ের মৌনতাকেÑ
ভাঙতে পারে না।
এই বুঝি প্রকৃতির প্রতিশোধ!
ধ্রুব সত্যের গান
কুসুম তাহেরা
সুনসান নির্জনতা... প্রকৃতির খেয়াল
কিছু আটপৌরে ব্যস্ততা... মানুষের দেয়াল
হাহাকার খাঁ খাঁ চৈত্রের দুপুর
তুমিহীন শূন্যতার বিষাদ সিন্ধুর সুর
চলে যাওয়াই প্রস্থান হয় না
অনন্তকাল ধরে
রয়ে যায় ভালোবাসা অমাবস্যার সুরে।
তুমি ভীষণ প্রয়োজন
প্রভাত আলোর জীবনগতি
বুকের পাঁজর গেঁথেছে তোমার ছবি!
প্রয়োজনতম, হাসি-কান্নার, ঘুম-জাগরণের
আপন তুমি
বিষণ্ণ রাতের একাকী ভাবনায়
কামনায় তুমি!
মনে ও মগজে শরীরের ভাঁজে
জাগানিয়া শিহরন
আমার জীবন তোমার জীবনের
ধ্রুব সত্যের গান!
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩
অন্ধ মনস্তাপ
জিললুর রহমান
দিবাবসানের ঘোলাটে আলোয়
বিষাদ বেঁধেছে বাসা,
জুনের রাত্রে আষাঢ়ে গল্প
অসংগতিতে ঠাসা।
তবু মেলাবেন কে যে মেলাবেন
ভাবসমুদ্রে ভাসি,
কাল করালের দুর্দিনে দেখি
কিছুতে মেলে না রাশি।
মাথার ওপরে জেঁকে বসে রয়
মিথোজীবিতার শাপ,
বছর জুড়েই কুঁরে কুঁরে খায়
অন্ধ মনস্তাপ।
বাতি জ্বলেছে জলে
সৈয়দ নূরুল আলম
(পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন উপলক্ষে)
তুমি এখন স্পষ্ট। তিনশ’ দশ দিন পরে তোমার আকার সুগঠিত। তুমি জলে, তোমার ওপর আকাশ। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ। সাদা-কালোর মিশেল, বিকেলের স্বচ্ছ আলো নিভে, মেঘে ঢেকে যায় তোমার মুখ। কালো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি ধুইয়ে দেয় তোমার ঠোঁটের মেরুন লিপস্টিক, এখন তোমার অন্য আদল, তোমাকে দেখে কবি চিৎকার দেয়। ঢেউয়ে নৌকা নাচে, কবিও নাচে। নেচে নেচে বলে, তুমি বাংলার মুখ, শত সহস্র মানুষের সুখ। চোখ ঈশারায় ডাকার পরে, ছুটতে ছুটতে, ধরতে যেয়ে কবি হোঁচট খায়, জ্যোৎস্নাতাকে আড়াল করে। আটপোড়ে, এলোমেলো ভাবনাগুলো থমকে যায় পদ্মার জলে। জলে ভেজা নরম ঠোঁটে, ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খায় কাতল মাছে। মধ্যরাতে পুরুষ মেঘ বড্ড বেশি ভাব করে, কাতুকুতু দিয়ে মেঘ প্রেমিকার জল ভাঙে। চাঁদ ঘুমিয়ে থাকে মেঘ চাঁদরের তলে। কথারা আটকে যায় মতিঝিলের জ্যামে।
জেগেছে কাঁপন
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
আমার মনে হচ্ছে- যার চোখ নেই- ভীষণ অন্ধ
সেও এই পদ্মাসেতু দেখার জন্যে মরিয়া।
যার পা নেই- দূরত্ব মাড়াবার সাহস হারিয়ে গেছে
সেও আজ উঠে দাঁড়িয়েছে খাড়া।
বহু দিন উটের পিঠ পাহাড় সেও আজ করে নড়াচড়া।
বহু দিনের জরাজীর্ণ, ঘুমকাতর আলসেমি ভাঙ্গে আড়মোড়া
আমার মনে হচ্ছে- সূক্ষ্মতায় জেগেছে কাঁপন
বৃহত্বে জেগেছে কথন।
অভিমানী পাহাড়ের মৌনতা
রিক্তা রিচি
কি পাগল ছিলাম তখন!
মনে হতো তুই ছাড়া আমার কিচ্ছু নেই।
ঘুম নেই, খাওয়া নেই, গোসল নেই।
যেন আমার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র পৃথিবী তুই।
মনে হতো তোকে ছাড়া আমার সমস্ত কিছু মিথ্যে।
তাই বারংবার তোর কাছে গিয়েছি,
হাতজোড় করে বলেছি
‘আমাকে গ্রহণ কর’ ‘আমাকে স্বীকৃতি দে’।
রাত দুপুরে তোকে না দেখলেই
বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠত,
একটিবার তোকে গভীরভাবে
জড়িয়ে ধরার সুযোগ খুঁজতাম বারংবার!
বারংবার তোকে নিজের করে পাওয়ার অসম্ভব চেষ্টা করতাম।
মনে হতো যেকোনো মূল্যে তোকেই আমার চাই!
তুই ছাড়া পৃথিবীতে আমার প্রিয় কেউ নেই!
আর তুই ডাস্টবিনের আবর্জনা ভেবে
আমাকে হাজার বার ফিরিয়ে দিয়েছিস
আমার প্রেম, পাগলামি, হৃদয়ের অব্যক্ত শত শত
কথাগুলোকে তোর কাছে ডাস্ট অ্যালার্জি মনে হতো।
বারংবার বলেছি, আয় সমঝোতা করি। সন্ধি করি।
এসব কথাগুলোকে থোড়াই কেয়ার করতি।
চলে গেলি
ছয় বছরের স্মৃতি হত্যা করে বিদায় নিলি...।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখ
আজ আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চোখের জল মুছিস
তোর হৃদয়টা কাল বৈশাখী ঝড় কিংবা কেপটাউনের দাবানলে
কখনো ক্ষতবিক্ষত হয়। কখনো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আর এখন আমি দেখেও না দেখার ভান করে
তোকে ফিরিয়ে দেই বারংবার!
কান্নার সমুদ্র আমার অভিমানী পাহাড়ের মৌনতাকেÑ
ভাঙতে পারে না।
এই বুঝি প্রকৃতির প্রতিশোধ!
ধ্রুব সত্যের গান
কুসুম তাহেরা
সুনসান নির্জনতা... প্রকৃতির খেয়াল
কিছু আটপৌরে ব্যস্ততা... মানুষের দেয়াল
হাহাকার খাঁ খাঁ চৈত্রের দুপুর
তুমিহীন শূন্যতার বিষাদ সিন্ধুর সুর
চলে যাওয়াই প্রস্থান হয় না
অনন্তকাল ধরে
রয়ে যায় ভালোবাসা অমাবস্যার সুরে।
তুমি ভীষণ প্রয়োজন
প্রভাত আলোর জীবনগতি
বুকের পাঁজর গেঁথেছে তোমার ছবি!
প্রয়োজনতম, হাসি-কান্নার, ঘুম-জাগরণের
আপন তুমি
বিষণ্ণ রাতের একাকী ভাবনায়
কামনায় তুমি!
মনে ও মগজে শরীরের ভাঁজে
জাগানিয়া শিহরন
আমার জীবন তোমার জীবনের
ধ্রুব সত্যের গান!