আবুল কাসেম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
সাতাশি.
সেই শোনাগন চলে গেলে তাঁর সম্পর্কে, হেইয়ান সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবছিলেন মুরাসাকি। তখন বাগানের দিকে চোখ গেল তাঁর। পাশের রাস্তা ধরে মিচিনাগা আসছেন। মনে হয় তাঁর এখানেই আসবেন।
বাগান থেকে একটি তাচিবানার ডাল ভাঙলেন ফুলসহ। অতঃপর মিচিনাগা গেলেন মুরাসাকির দপ্তরে। বললেন, তাচিবানা ফুলের শুভেচ্ছা তোমাকে।
আজ দেখছি প্রভু মহামন্ত্রী খোশ মেজাজে আছেন।
ঠিক ধরেছ তুমি। বলে ডালসহ ফুলগুলো তাঁর দিকে এগিয়ে দিলেন। আবার বললেন, তোমার জন্য সুখবর আছে, তবে একটা শর্ত, এ কথা কাউকে বলা যাবে না।
শর্ত রক্ষা করা যাবে কি না, এখনই অঙ্গীকার করতে পারছি না। এমন শর্ত দেবেন না, যা ভেঙে ফেলার জন্য জিহ্বা চঞ্চল হয়ে উঠবে। হেসে দিয়ে যোগ করলেন, এবারে বলুন।
তোমাকে আমার দ্বিতীয় মেয়ে কেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং করা হবে।
কেনশি তো ছোট মেয়ে, তাঁর লেডি-ইন-ওয়েটিং কেন?
সে সম্রাজ্ঞী হতে যাচ্ছে।
সম্রাট ইচিজোর সঙ্গে কি দ্বিতীয় মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন।
আরে না, সম্রাট সানজুর সঙ্গে ওর বিয়ে হচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই শানজু সম্রাট হচ্ছে। তুমি কি টের পাও না, পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এবার আমার বোন সেনশি বুঝবে কত ধানে কত চাল।
তিনিও তো সানজুর মাসি।
সম্পর্ক খুব খারাপ। কোনো প্রশ্রয় পাবে না।
আপনার জন্য তা হলে একচেটিয়া রাজত্ব। ফুলের শুভেচ্ছা আসলে আপনার প্রাপ্য। বলে তাচিবানার ডালটা মুরাসাকি মিচিনাগার হাতে তুলে দিলেন।
মিচিনাগা বুঝতে পারছেন মুরাসাকি মজা করছেন। তবু বললেন, কেন? এ ব্যবস্থায় তুমি খুশি হওনি?
হয়েছি। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।
তুমি কেনশিকে আমার বোন সেনশির মতো গড়ে তুলবে। শোশি তো সেরকম হলো না, প্রতিভা লাগে। কেনশি হবে। তাঁর বুদ্ধিমত্তায় তুমি অবাক না হয়ে পারবে না।
আরেক সেনশিকে গড়ে তুলবে কে?
বুঝলাম না।
সানজুর বেগমের নাম সেনশি না?
বেগম?
বেগম ফার্সি শব্দ। শাহনামায় আছে। অর্থ স্ত্রী।
তাঁর চিন্তা আমাদের করার দরকার নেই।
তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমাদের বর্তমান সম্রাজ্ঞীর কী হবে? তিনিও তো আপনার মেয়ে।
তাঁর কথা আর বলো না, সম্রাট সাম্রাজ্য চালায়, সম্রাটকে চালায় সম্রাজ্ঞী, অথচ সম্রাটের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, আমি অবাকই হচ্ছি। কার ওপর আমি আশা করেছিলাম, একটা বোকার হদ্দ মেয়ের ওপর?
তা ঠিক বলেছেন। আপনাকে তাঁর হতাশ করা ঠিক হয়নি। কী করবেন বলুন, ভগবান তাঁকে সে প্রতিভা দেননি। এটা অবশ্য তাঁর দোষ নয়। ভগবানই তাঁকে ঠকিয়েছেন। অবশ্য বাবার বড় মেয়ে একটু বোকাই হয়।
বাবার মেয়ে বলো না, বলো বোকা মায়ের মেয়ে। এখন বলো, কেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং হতে আপত্তি নেই তো?
একদম না। ও নিশ্চয়ই বাবার মেয়ে?
হ্যাঁ, আমার মেয়েই তো। যাক তুমি বাঁচালে।
মিচিনাগা চলে যাবার পর হন্তদন্ত হয়ে ইঝোমি শিকিবু ঢুকলেন মুরাসাকির কক্ষে। মুরাসাকি ভূত দেখার মতো আঁতকে উঠলেন, বললেন, তুমি?
হ্যাঁ আমি। সেনা অধিনায়ককে জরুরি সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়েছে বদলি করে। প্রদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছি আমরা। কিন্তু কোথায় এলাম আমি?
কেন? কী হয়েছে?
শোননি তুমি? সানজু সম্রাট হচ্ছে। এর পেছনে আছে মিচিনাগা। তাঁর নিকট সেনা অফিসারদের নিয়ে আসছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। এখানে এসে আমি এতকিছু জানলাম। এখন কী করবো আমি বলো। সানজু সম্রাট হবে, তা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাঁকে কী খুন করবো আমি?
তুমি শান্ত হও ইঝোমি।
কীভাবে শান্ত হই বলো? একটা ভ্রাতৃহন্তা হেইয়ান সম্রাজ্যের সম্রাট হবে? তা মেনে নেয়া যায়?
তদন্তে তো তা প্রমাণ হয়নি, আর তুমি তা মেনে নিয়েছিলে।
প্রদেশে গিয়ে জানতে পারি এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন মিচিনাগা। আমি তাঁদের কাউকে ক্ষমা করবো না।
তুমি উঠেছ কোথায়?
আমার বাড়িতে। এটি মিচিনাগা দিয়েছিলেন বলে থাকতে এখন ঘৃণা হচ্ছে।
সেনা অধিনায়ক, মানে তোমার স্বামী কোথায়?
সদর গেরিসনে আছে জরুরি অবস্থার মধ্যে।
তুমি আমার সঙ্গেই থাকো।
অবস্থার পরিবর্তন হলে তুমি কী করবে?
আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি, এইমাত্র শুনলাম, ভাবতে হবে।
তুমি একদম এদের সঙ্গে থাকবে না। তোমার অনেক সুনাম। তা কলঙ্কিত করতে যেয়ো না, বন্ধু। বলে হাত ধরলেন ইঝোমি।
তোমার লেখালেখির কী অবস্থা বলো?
আর লেখালেখি! কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি বুঝাতে পারবো না।
তবুও কবিতা লেখাটা ছেড়ে দিও না? এটাই তো আমাদের পরিচয়, নয় কি?
ভালোবাসার কবিতা বোধহয় আর লেখা হবে না।
বিক্ষুব্ধ শব্দবাহিনী আমার জীবনসঙ্গী হয়ে গেছে।
কবিতায় তুমি তা-ই ব্যবহার করো।
তোমার মতো যদি মনোগাতারি লিখতে পারতাম। সব লিখে যেতাম।
ইমন আপা তো লিখছেন।
তাঁর কথা আর বলো না। একজন কবি কেন এক প্রভুভক্ত হবেন? তাঁকে কি ভবিষ্যতের পাঠক ক্ষমা করবে?
তিনি তোমাকে আমাকে খুব ভালোবাসেন। তাঁকে আমাদের সহায়তা করা দরকার ইঝোমি।
তুমি ঠিক বলেছ, আমাদের চেষ্টা করা উচিত তাঁকে যাতে মিচিনাগার খপ্পর থেকে মুক্ত করা যায়। আমি আজ আসি।
ইঝোমি যেভাবে এসেছিলেন, তেমনি ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেলেন। মুরাসাকি তাঁকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। অস্ফুটে বললেন, এমন প্রতিভা বহু বছরে একবারই দেখা যায়। তাঁর সম্পূর্ণ ব্যবহার হলো না, তাই খুব দুঃখ হচ্ছে। তাঁর তীব্র ভোগাকাক্সক্ষাই তাঁর সর্বনাশ করেছে। তাতে এখন যুক্ত হয়েছে ক্রোধ এবং প্রতিশোধস্পৃহা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এসব তাঁকে কে জানে।
মুরাসাকি ভাবলেন ইমনের ওখানে যাবেন। তাঁর মনোভাবটা কী তা জানতে হবে। তাঁর মধ্যেই লেডি সাইশো এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, জানো তুমি কি হতে যাচ্ছে?
কী?
আমদের প্রিয় সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীর পতন। তাঁরা আর তাঁদের পদে থাকছেন না। আমাদের কী হবে বলতো?
নতুন কেউ হয়ত আসবেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবে।
আমি? কখনো না। সানজুর প্রিন্সেস সেনশিকে আমি সহ্যই করবো না। সে একটা ডাইনি। তোমাকেও বারণ করছি।
তুমি আমার নিকটতম বন্ধু, না করতে পারো না।
তাহলে তুমি...
আমি কি এ কথা বলেছি? আমাদের সম্রাজ্ঞীর কী অবস্থা?
একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। তাঁর বাবা এ কাজ করতে পারলেন? প্রিন্সদের জন্ম নিয়ে কত উৎসব, কত আনন্দ, বড় প্রিন্সকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা- এসব আসলে সানজুর সঙ্গে দর-কষাকষি। উদ্দেশ্য দ্বিতীয় মেয়েটাকে সানজুর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া। সফলও হচ্ছেন শুনলাম।
অন্য লেডিরা কি ভাবছেন?
আমার মতোই। তবে তাঁদের বুঝবার উপায় নেই, স্বার্থের খাতিরে সবই করতে পারে, হয়ত সেনশির সঙ্গেই কণ্ঠ মেলাবে। তুমি তোমার অবস্থান আমাকে স্পষ্ট করবে।
জানবে বন্ধু, নিশ্চিয়ই জানবে। শুনলাম মাত্র, ভাবতে দাও।
এ সময় লেডি কোশোশো তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন। বললেন, শুনেছ বোধ হয় সবকিছু।
লেডি সাইশো বললেন, সে কথাই হচ্ছিল।
কোশোশো বললেন, আমি বাড়িতে চলে যাচ্ছি। সে কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি।
বাহ! আমি তোমার সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছি কোশোশো। বললেন সাইশো। যোগ করলেন তোমার সঙ্গে আমারও চলে যাওয়া উচিত।
মুরাসাকি বললেন, ‘ভাঙলো, মিলনমেলা ভাঙলো?’
তবে আমাদের সম্রাজ্ঞীকে বিদায় দিয়ে যে যার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তোমরা আগে চলে গেলে তাঁর কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। তাঁর বিদায় বেলায় আমাদের থাকা উচিত।
সাইশো বললেন, আমি জানতাম তুমি এই প্রাসাদ, এই দরবার এবং সম্রাজ্ঞীকে খুব একটা পছন্দ কর না। এখন দেখছি...
এখনো পছন্দ করি না। তবে আমার দায়িত্বকে আমি এড়িয়ে যেতে পারি না।
থাকো তোমার দায়িত্ববোধ নিয়ে, আমরা গেলাম। বললেন সাইশো।
আটাশি.
এরা চলে গেলে মুরাসাকি ইমনের উদ্দেশ্যে বের হলেন। পথে তাঁর মনে হলো মাদাম সেনশির সঙ্গে তাঁর দেখা করা উচিত। তিনি তাঁর প্রাসাদে গেলেন। সেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং বললেন, মাদাম উজিতে চলে গেছেন আজ সকালে। মন খুব খারাপ। তাঁর মধ্যেও আপনার কথা বারবার বলছিলেন। কিছু নিয়ে যাননি প্রাসাদ থেকে, শুধু নিয়ে গেছেন আপনার ‘গেঞ্জি মনোগাতারি’। আপনাকে এই গ্রন্থটি দিতে বলেছেন। বলে ‘শাহনামাহ’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর হাতে তুলে দিলেন।
দুনিয়া ভেঙে কান্না এলো তাঁর। তিনি বসে পড়লেন। তাঁর দেখাদেখি লেডি-ইন-ওয়েটিংও কাঁদলেন। বললেন, গত রাতে সানজু এসেছিলেন। তিনিও তো তাঁরই বোনের ছেলে। অনুনয় করছিলেন তাঁকে সমর্থন দিয়ে থেকে যাবার জন্য, বলেছিলেন, এখনকার মতোই তাঁর সুযোগ-সুবিধা থাকবে। হয়ত আরও কয়েক দিন থাকতেন, সকাল হতেই চলে গেলেন। বড় বেশি নীতিবান মানুষ তিনি।
মুরাসাকির মন এত খারাপ হয়েছে যে, ইমনের দপ্তরে যেতে আর ইচ্ছে হলো না। নিজের দপ্তরে ফিরে এলেন। এসে দেখেন ইমনই এসে বসে আছেন। মুরাসাকির সঙ্গে আসা দাসীর হাতে ‘শাহনামাহ’ দেখে অবাক হলেন। বললেন, এই মহামূল্যবান মহাকাব্যটা সেনশি দেখতে দিলেন তোমাকে?
দাসীটি বলল, না, তিনি তাঁকে এটি দিয়ে গেছেন। মাদাম উজিতে চলে গেছেন।
দাসী চলে গেলে ইমন বললেন, তিনিই টিকে যাবেন, যিনি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন।
মুরাসাকির এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে ইচ্ছে হলো না। পরে আবার ইমন বললেন, প্রভু মহামন্ত্রী সম্রাটের দরবারে গেছেন, কবে কখন ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, এ নিয়ে কথা বলতে। যাবার আগে আমাকে বলে গেছেন তোমার এখানে আসতে। তিনি তোমার এখানে এসেছিলেন, যা বলে গেছেন, তা ঠিক আছে তো?
মুরাসাকি বললেন না যে, তিনি ইমনের দপ্তরের উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিলেন। বললেন, ইঝোমি এসেছিল, সে খুবই ক্ষুব্ধ। ইমন বললেন, এবার ভুল করলে সে নিজেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁর ঠাণ্ডা পানি-গরম পানি বোঝা উচিত।
হ্যাঁ, বোঝা উচিত। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন মুরাসাকি।
এখন তোমার কথা বলো।
আপনি?
আমি তো মিচিনাগার পরিবারের সঙ্গে আছি, থাকব। এদের কাছ থেকে চলে যাবার কোনো কারণ দেখি না। তুমি?
প্রধানমন্ত্রী তো বলে গেছেন দেখি। আপনি যেখানে আছেন সেখানে আমার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
আমি এটাই শুনতে চেয়েছি। রিনশি অপেক্ষা করছেন, আমি যাই। অনেক কাজ।
আপনার ব্যস্ততা সব সময়ই আছে।
এখন একটা ক্রান্তিকাল, তাকাকু, আমি আসি।
ইমন আসলে বুঝলেন না মুরাসাকি কী বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি আসলে ওদের সঙ্গে যাবার কথা বলেননি বলে বোঝাতে চেয়েছেন, ইমন ওদের সঙ্গে আছেন, কাজেই তাঁর না গেলেও অসুবিধা হবে না, ইমন সব ম্যানেজ করে নেবেন।
এদিকে সম্রাটের দরবারে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন মিচিনাগা, ক্রাউন প্রিন্স সানজু এবং তাঁদের অনুসারীরা। সম্রাট ইচিজোর পক্ষ বড়ই দুর্বল। অবশেষে স্থির হলো ১৬ জুলাই অর্থাৎ আগামী দিনই সম্রাট ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন।
সম্রাটের দরবারে যখন এই ফয়সালা হচ্ছে মুরাসাকি তখন গেলেন সম্রাজ্ঞীর দরবারে। দরবার ফাঁকা। সম্রাজ্ঞী নিজের কামরায় আছেন। সঙ্গে কয়েকজন দাসী। এরাই তাঁর বিশ্বস্ত। লেডি-ইন-ওয়েটিং এবং দরবারিদের সঙ্গে খুব একটা ভালো ব্যবহার করতেন না। সুযোগ পেয়ে সবাই এরা চলে গেছে তাঁকে একা ফেলে।
সম্রাজ্ঞী মুরাসাকিকে দেখে প্রায় কেঁদেই ফেললেন। বললেন, অবশেষে শুধু তুমিই এলে। কখনো কোনো সুবিধা নাওনি তুমি। যারা এত এত সুবিধা নিয়েছে, এরা কোথায়? এখনো তো আমি সম্রাজ্ঞী।
মুরাসাকি বললেন, থাক এসব। আমি কিছুক্ষণ থাকতে চাই আপনার সঙ্গে, কোনো অসুবিধা নেই তো, মহামান্যা?
তোমাদের মহামান্যা কি জীবিত আছে?
আমার কাছে চিরদিনই আছেন।
বসো, তুমি আমার সামনেই বসো। আমি তোমার অন্তরের ঘনিষ্ঠজন হতে চেয়েছিলাম। তুমি বুঝতে দিতে না, আজ মনে হয় পেরেছি।
এসব কথাও থাক মহামান্যা। প্রিন্সরা কোথায়?
ওরা ওদের সেবায়েতদের কাছে আছে।
না, আপনি আজ তাঁদের আপনার কাছে রাখুন।
ভালো কথা মনে করেছ, তাকাকু।
সম্রাজ্ঞী সন্তানদের তাঁর কক্ষে নিয়ে এলেন। মুরাসাকি বিশ্বস্ত দাস-দাসীদের বললেন, মহামান্যার অনুমতি ব্যতীত সম্রাট ছাড়া আর কাউকে ভেতরে আসতে দেবে না। তরবারি চালনায় দক্ষ যারা প্রিন্সদের তরবারি উঁচিয়ে রাখো, তোমরা সদা প্রস্তুত থাকো।
সম্রাজ্ঞী বললেন, কেন এমনটা করছো, তাকাকু?
অন্যদের সরিয়ে দিয়ে মুরাসাকি বললেন, ঐ দিককার খবর ভালো নয়। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমার বাবা, তাকাকু, আমার বাবা!
অস্থির হবেন না আপনি, ‘লোটাসসূত্র’ পাঠ করুন। সব বিপদ কেটে যাবে। অন্তরে শান্তি আসবে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩
আবুল কাসেম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
সাতাশি.
সেই শোনাগন চলে গেলে তাঁর সম্পর্কে, হেইয়ান সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবছিলেন মুরাসাকি। তখন বাগানের দিকে চোখ গেল তাঁর। পাশের রাস্তা ধরে মিচিনাগা আসছেন। মনে হয় তাঁর এখানেই আসবেন।
বাগান থেকে একটি তাচিবানার ডাল ভাঙলেন ফুলসহ। অতঃপর মিচিনাগা গেলেন মুরাসাকির দপ্তরে। বললেন, তাচিবানা ফুলের শুভেচ্ছা তোমাকে।
আজ দেখছি প্রভু মহামন্ত্রী খোশ মেজাজে আছেন।
ঠিক ধরেছ তুমি। বলে ডালসহ ফুলগুলো তাঁর দিকে এগিয়ে দিলেন। আবার বললেন, তোমার জন্য সুখবর আছে, তবে একটা শর্ত, এ কথা কাউকে বলা যাবে না।
শর্ত রক্ষা করা যাবে কি না, এখনই অঙ্গীকার করতে পারছি না। এমন শর্ত দেবেন না, যা ভেঙে ফেলার জন্য জিহ্বা চঞ্চল হয়ে উঠবে। হেসে দিয়ে যোগ করলেন, এবারে বলুন।
তোমাকে আমার দ্বিতীয় মেয়ে কেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং করা হবে।
কেনশি তো ছোট মেয়ে, তাঁর লেডি-ইন-ওয়েটিং কেন?
সে সম্রাজ্ঞী হতে যাচ্ছে।
সম্রাট ইচিজোর সঙ্গে কি দ্বিতীয় মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন।
আরে না, সম্রাট সানজুর সঙ্গে ওর বিয়ে হচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই শানজু সম্রাট হচ্ছে। তুমি কি টের পাও না, পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এবার আমার বোন সেনশি বুঝবে কত ধানে কত চাল।
তিনিও তো সানজুর মাসি।
সম্পর্ক খুব খারাপ। কোনো প্রশ্রয় পাবে না।
আপনার জন্য তা হলে একচেটিয়া রাজত্ব। ফুলের শুভেচ্ছা আসলে আপনার প্রাপ্য। বলে তাচিবানার ডালটা মুরাসাকি মিচিনাগার হাতে তুলে দিলেন।
মিচিনাগা বুঝতে পারছেন মুরাসাকি মজা করছেন। তবু বললেন, কেন? এ ব্যবস্থায় তুমি খুশি হওনি?
হয়েছি। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।
তুমি কেনশিকে আমার বোন সেনশির মতো গড়ে তুলবে। শোশি তো সেরকম হলো না, প্রতিভা লাগে। কেনশি হবে। তাঁর বুদ্ধিমত্তায় তুমি অবাক না হয়ে পারবে না।
আরেক সেনশিকে গড়ে তুলবে কে?
বুঝলাম না।
সানজুর বেগমের নাম সেনশি না?
বেগম?
বেগম ফার্সি শব্দ। শাহনামায় আছে। অর্থ স্ত্রী।
তাঁর চিন্তা আমাদের করার দরকার নেই।
তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমাদের বর্তমান সম্রাজ্ঞীর কী হবে? তিনিও তো আপনার মেয়ে।
তাঁর কথা আর বলো না, সম্রাট সাম্রাজ্য চালায়, সম্রাটকে চালায় সম্রাজ্ঞী, অথচ সম্রাটের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, আমি অবাকই হচ্ছি। কার ওপর আমি আশা করেছিলাম, একটা বোকার হদ্দ মেয়ের ওপর?
তা ঠিক বলেছেন। আপনাকে তাঁর হতাশ করা ঠিক হয়নি। কী করবেন বলুন, ভগবান তাঁকে সে প্রতিভা দেননি। এটা অবশ্য তাঁর দোষ নয়। ভগবানই তাঁকে ঠকিয়েছেন। অবশ্য বাবার বড় মেয়ে একটু বোকাই হয়।
বাবার মেয়ে বলো না, বলো বোকা মায়ের মেয়ে। এখন বলো, কেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং হতে আপত্তি নেই তো?
একদম না। ও নিশ্চয়ই বাবার মেয়ে?
হ্যাঁ, আমার মেয়েই তো। যাক তুমি বাঁচালে।
মিচিনাগা চলে যাবার পর হন্তদন্ত হয়ে ইঝোমি শিকিবু ঢুকলেন মুরাসাকির কক্ষে। মুরাসাকি ভূত দেখার মতো আঁতকে উঠলেন, বললেন, তুমি?
হ্যাঁ আমি। সেনা অধিনায়ককে জরুরি সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়েছে বদলি করে। প্রদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছি আমরা। কিন্তু কোথায় এলাম আমি?
কেন? কী হয়েছে?
শোননি তুমি? সানজু সম্রাট হচ্ছে। এর পেছনে আছে মিচিনাগা। তাঁর নিকট সেনা অফিসারদের নিয়ে আসছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। এখানে এসে আমি এতকিছু জানলাম। এখন কী করবো আমি বলো। সানজু সম্রাট হবে, তা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাঁকে কী খুন করবো আমি?
তুমি শান্ত হও ইঝোমি।
কীভাবে শান্ত হই বলো? একটা ভ্রাতৃহন্তা হেইয়ান সম্রাজ্যের সম্রাট হবে? তা মেনে নেয়া যায়?
তদন্তে তো তা প্রমাণ হয়নি, আর তুমি তা মেনে নিয়েছিলে।
প্রদেশে গিয়ে জানতে পারি এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন মিচিনাগা। আমি তাঁদের কাউকে ক্ষমা করবো না।
তুমি উঠেছ কোথায়?
আমার বাড়িতে। এটি মিচিনাগা দিয়েছিলেন বলে থাকতে এখন ঘৃণা হচ্ছে।
সেনা অধিনায়ক, মানে তোমার স্বামী কোথায়?
সদর গেরিসনে আছে জরুরি অবস্থার মধ্যে।
তুমি আমার সঙ্গেই থাকো।
অবস্থার পরিবর্তন হলে তুমি কী করবে?
আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি, এইমাত্র শুনলাম, ভাবতে হবে।
তুমি একদম এদের সঙ্গে থাকবে না। তোমার অনেক সুনাম। তা কলঙ্কিত করতে যেয়ো না, বন্ধু। বলে হাত ধরলেন ইঝোমি।
তোমার লেখালেখির কী অবস্থা বলো?
আর লেখালেখি! কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি বুঝাতে পারবো না।
তবুও কবিতা লেখাটা ছেড়ে দিও না? এটাই তো আমাদের পরিচয়, নয় কি?
ভালোবাসার কবিতা বোধহয় আর লেখা হবে না।
বিক্ষুব্ধ শব্দবাহিনী আমার জীবনসঙ্গী হয়ে গেছে।
কবিতায় তুমি তা-ই ব্যবহার করো।
তোমার মতো যদি মনোগাতারি লিখতে পারতাম। সব লিখে যেতাম।
ইমন আপা তো লিখছেন।
তাঁর কথা আর বলো না। একজন কবি কেন এক প্রভুভক্ত হবেন? তাঁকে কি ভবিষ্যতের পাঠক ক্ষমা করবে?
তিনি তোমাকে আমাকে খুব ভালোবাসেন। তাঁকে আমাদের সহায়তা করা দরকার ইঝোমি।
তুমি ঠিক বলেছ, আমাদের চেষ্টা করা উচিত তাঁকে যাতে মিচিনাগার খপ্পর থেকে মুক্ত করা যায়। আমি আজ আসি।
ইঝোমি যেভাবে এসেছিলেন, তেমনি ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেলেন। মুরাসাকি তাঁকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। অস্ফুটে বললেন, এমন প্রতিভা বহু বছরে একবারই দেখা যায়। তাঁর সম্পূর্ণ ব্যবহার হলো না, তাই খুব দুঃখ হচ্ছে। তাঁর তীব্র ভোগাকাক্সক্ষাই তাঁর সর্বনাশ করেছে। তাতে এখন যুক্ত হয়েছে ক্রোধ এবং প্রতিশোধস্পৃহা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এসব তাঁকে কে জানে।
মুরাসাকি ভাবলেন ইমনের ওখানে যাবেন। তাঁর মনোভাবটা কী তা জানতে হবে। তাঁর মধ্যেই লেডি সাইশো এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, জানো তুমি কি হতে যাচ্ছে?
কী?
আমদের প্রিয় সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীর পতন। তাঁরা আর তাঁদের পদে থাকছেন না। আমাদের কী হবে বলতো?
নতুন কেউ হয়ত আসবেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবে।
আমি? কখনো না। সানজুর প্রিন্সেস সেনশিকে আমি সহ্যই করবো না। সে একটা ডাইনি। তোমাকেও বারণ করছি।
তুমি আমার নিকটতম বন্ধু, না করতে পারো না।
তাহলে তুমি...
আমি কি এ কথা বলেছি? আমাদের সম্রাজ্ঞীর কী অবস্থা?
একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। তাঁর বাবা এ কাজ করতে পারলেন? প্রিন্সদের জন্ম নিয়ে কত উৎসব, কত আনন্দ, বড় প্রিন্সকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা- এসব আসলে সানজুর সঙ্গে দর-কষাকষি। উদ্দেশ্য দ্বিতীয় মেয়েটাকে সানজুর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া। সফলও হচ্ছেন শুনলাম।
অন্য লেডিরা কি ভাবছেন?
আমার মতোই। তবে তাঁদের বুঝবার উপায় নেই, স্বার্থের খাতিরে সবই করতে পারে, হয়ত সেনশির সঙ্গেই কণ্ঠ মেলাবে। তুমি তোমার অবস্থান আমাকে স্পষ্ট করবে।
জানবে বন্ধু, নিশ্চিয়ই জানবে। শুনলাম মাত্র, ভাবতে দাও।
এ সময় লেডি কোশোশো তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন। বললেন, শুনেছ বোধ হয় সবকিছু।
লেডি সাইশো বললেন, সে কথাই হচ্ছিল।
কোশোশো বললেন, আমি বাড়িতে চলে যাচ্ছি। সে কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি।
বাহ! আমি তোমার সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছি কোশোশো। বললেন সাইশো। যোগ করলেন তোমার সঙ্গে আমারও চলে যাওয়া উচিত।
মুরাসাকি বললেন, ‘ভাঙলো, মিলনমেলা ভাঙলো?’
তবে আমাদের সম্রাজ্ঞীকে বিদায় দিয়ে যে যার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তোমরা আগে চলে গেলে তাঁর কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। তাঁর বিদায় বেলায় আমাদের থাকা উচিত।
সাইশো বললেন, আমি জানতাম তুমি এই প্রাসাদ, এই দরবার এবং সম্রাজ্ঞীকে খুব একটা পছন্দ কর না। এখন দেখছি...
এখনো পছন্দ করি না। তবে আমার দায়িত্বকে আমি এড়িয়ে যেতে পারি না।
থাকো তোমার দায়িত্ববোধ নিয়ে, আমরা গেলাম। বললেন সাইশো।
আটাশি.
এরা চলে গেলে মুরাসাকি ইমনের উদ্দেশ্যে বের হলেন। পথে তাঁর মনে হলো মাদাম সেনশির সঙ্গে তাঁর দেখা করা উচিত। তিনি তাঁর প্রাসাদে গেলেন। সেনশির লেডি-ইন-ওয়েটিং বললেন, মাদাম উজিতে চলে গেছেন আজ সকালে। মন খুব খারাপ। তাঁর মধ্যেও আপনার কথা বারবার বলছিলেন। কিছু নিয়ে যাননি প্রাসাদ থেকে, শুধু নিয়ে গেছেন আপনার ‘গেঞ্জি মনোগাতারি’। আপনাকে এই গ্রন্থটি দিতে বলেছেন। বলে ‘শাহনামাহ’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর হাতে তুলে দিলেন।
দুনিয়া ভেঙে কান্না এলো তাঁর। তিনি বসে পড়লেন। তাঁর দেখাদেখি লেডি-ইন-ওয়েটিংও কাঁদলেন। বললেন, গত রাতে সানজু এসেছিলেন। তিনিও তো তাঁরই বোনের ছেলে। অনুনয় করছিলেন তাঁকে সমর্থন দিয়ে থেকে যাবার জন্য, বলেছিলেন, এখনকার মতোই তাঁর সুযোগ-সুবিধা থাকবে। হয়ত আরও কয়েক দিন থাকতেন, সকাল হতেই চলে গেলেন। বড় বেশি নীতিবান মানুষ তিনি।
মুরাসাকির মন এত খারাপ হয়েছে যে, ইমনের দপ্তরে যেতে আর ইচ্ছে হলো না। নিজের দপ্তরে ফিরে এলেন। এসে দেখেন ইমনই এসে বসে আছেন। মুরাসাকির সঙ্গে আসা দাসীর হাতে ‘শাহনামাহ’ দেখে অবাক হলেন। বললেন, এই মহামূল্যবান মহাকাব্যটা সেনশি দেখতে দিলেন তোমাকে?
দাসীটি বলল, না, তিনি তাঁকে এটি দিয়ে গেছেন। মাদাম উজিতে চলে গেছেন।
দাসী চলে গেলে ইমন বললেন, তিনিই টিকে যাবেন, যিনি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন।
মুরাসাকির এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে ইচ্ছে হলো না। পরে আবার ইমন বললেন, প্রভু মহামন্ত্রী সম্রাটের দরবারে গেছেন, কবে কখন ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, এ নিয়ে কথা বলতে। যাবার আগে আমাকে বলে গেছেন তোমার এখানে আসতে। তিনি তোমার এখানে এসেছিলেন, যা বলে গেছেন, তা ঠিক আছে তো?
মুরাসাকি বললেন না যে, তিনি ইমনের দপ্তরের উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিলেন। বললেন, ইঝোমি এসেছিল, সে খুবই ক্ষুব্ধ। ইমন বললেন, এবার ভুল করলে সে নিজেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁর ঠাণ্ডা পানি-গরম পানি বোঝা উচিত।
হ্যাঁ, বোঝা উচিত। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন মুরাসাকি।
এখন তোমার কথা বলো।
আপনি?
আমি তো মিচিনাগার পরিবারের সঙ্গে আছি, থাকব। এদের কাছ থেকে চলে যাবার কোনো কারণ দেখি না। তুমি?
প্রধানমন্ত্রী তো বলে গেছেন দেখি। আপনি যেখানে আছেন সেখানে আমার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
আমি এটাই শুনতে চেয়েছি। রিনশি অপেক্ষা করছেন, আমি যাই। অনেক কাজ।
আপনার ব্যস্ততা সব সময়ই আছে।
এখন একটা ক্রান্তিকাল, তাকাকু, আমি আসি।
ইমন আসলে বুঝলেন না মুরাসাকি কী বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি আসলে ওদের সঙ্গে যাবার কথা বলেননি বলে বোঝাতে চেয়েছেন, ইমন ওদের সঙ্গে আছেন, কাজেই তাঁর না গেলেও অসুবিধা হবে না, ইমন সব ম্যানেজ করে নেবেন।
এদিকে সম্রাটের দরবারে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন মিচিনাগা, ক্রাউন প্রিন্স সানজু এবং তাঁদের অনুসারীরা। সম্রাট ইচিজোর পক্ষ বড়ই দুর্বল। অবশেষে স্থির হলো ১৬ জুলাই অর্থাৎ আগামী দিনই সম্রাট ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন।
সম্রাটের দরবারে যখন এই ফয়সালা হচ্ছে মুরাসাকি তখন গেলেন সম্রাজ্ঞীর দরবারে। দরবার ফাঁকা। সম্রাজ্ঞী নিজের কামরায় আছেন। সঙ্গে কয়েকজন দাসী। এরাই তাঁর বিশ্বস্ত। লেডি-ইন-ওয়েটিং এবং দরবারিদের সঙ্গে খুব একটা ভালো ব্যবহার করতেন না। সুযোগ পেয়ে সবাই এরা চলে গেছে তাঁকে একা ফেলে।
সম্রাজ্ঞী মুরাসাকিকে দেখে প্রায় কেঁদেই ফেললেন। বললেন, অবশেষে শুধু তুমিই এলে। কখনো কোনো সুবিধা নাওনি তুমি। যারা এত এত সুবিধা নিয়েছে, এরা কোথায়? এখনো তো আমি সম্রাজ্ঞী।
মুরাসাকি বললেন, থাক এসব। আমি কিছুক্ষণ থাকতে চাই আপনার সঙ্গে, কোনো অসুবিধা নেই তো, মহামান্যা?
তোমাদের মহামান্যা কি জীবিত আছে?
আমার কাছে চিরদিনই আছেন।
বসো, তুমি আমার সামনেই বসো। আমি তোমার অন্তরের ঘনিষ্ঠজন হতে চেয়েছিলাম। তুমি বুঝতে দিতে না, আজ মনে হয় পেরেছি।
এসব কথাও থাক মহামান্যা। প্রিন্সরা কোথায়?
ওরা ওদের সেবায়েতদের কাছে আছে।
না, আপনি আজ তাঁদের আপনার কাছে রাখুন।
ভালো কথা মনে করেছ, তাকাকু।
সম্রাজ্ঞী সন্তানদের তাঁর কক্ষে নিয়ে এলেন। মুরাসাকি বিশ্বস্ত দাস-দাসীদের বললেন, মহামান্যার অনুমতি ব্যতীত সম্রাট ছাড়া আর কাউকে ভেতরে আসতে দেবে না। তরবারি চালনায় দক্ষ যারা প্রিন্সদের তরবারি উঁচিয়ে রাখো, তোমরা সদা প্রস্তুত থাকো।
সম্রাজ্ঞী বললেন, কেন এমনটা করছো, তাকাকু?
অন্যদের সরিয়ে দিয়ে মুরাসাকি বললেন, ঐ দিককার খবর ভালো নয়। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমার বাবা, তাকাকু, আমার বাবা!
অস্থির হবেন না আপনি, ‘লোটাসসূত্র’ পাঠ করুন। সব বিপদ কেটে যাবে। অন্তরে শান্তি আসবে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)