৪ জেলায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ

বাড়ছে পদ্মার

পানি, বাড়ছে ভাঙন

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এর ফলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পানি বাড়ায় ডুবতে শুরু করেছে চরাঞ্চল। উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে।

নদী ভাঙনের ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে সাঁড়ায় লালনশাহ সেতু রক্ষাবাঁধ ও নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধটি। সাঁড়ার থানাপাড়া ও ব্লকপাড়ায় বাঁধের সামনের জমি ভাঙতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাঁধের সামনের ১০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। সাঁড়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া ব্লকপাড়া গ্রামের হজরত আলী বলেন, সাঁড়ার এই নদীরপাড়ে কয়েক মাস আগে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন ফের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদী ভাঙতে ভাঙতে বাঁধের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে নদীরক্ষা বাঁধেও ভাঙন দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমরা আতঙ্কে আছি। সাঁড়া থানাপাড়া এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, নদীর পানি বাড়ছে দেখে আমাদের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমনতিই নদীতে আমাদের বসতবাড়ি-জমিজমা হারিয়েছি।

এখন বাঁধের পাশে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় বাড়ি করে আছি। বাঁধের সামনে জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীকে তো বিশ্বাস করা যায় না। যদি তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে তো আমাদের বাড়িঘরও ভেঙে যাবে।

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, সাঁড়ার ব্লকপাড়া ও থানাপাড়ায় এর আগে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তিন দফায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন দিয়ে নদী এলাকার খোঁজ-খবর রাখতে বলেছেন। গতকাল বিকালে আমি সরোজমিনে নিজে নদী এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং এলাকার বাসিন্দাদের এ বিষয়ে জানিয়েছি, কোনো সমস্যা দেখা দিবে তারা যেন আমাকে দ্রুত জানায়। আমাদের কৃষকরা প্রতিদিনই খুঁটি দিয়ে পানি পরিমাপ করে থাকেন। গতকালের চেয়ে আজ (বুধবার) প্রায় ২০ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। তীব্র ভাঙন দেখা দিলে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জে

বিশুদ্ধ পানি

জ্বালানি সংকট

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার পুঠিযাবাড়ি, চরমালশাপাড়া কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের চররামগাঁতী, পাইকপাড়া, মোড়গ্রাম, সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর, পূর্ব বাঐতারা সহ বাঁধ অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা এসব অঞ্চলে এখন দেখা দিয়েছে পানীয় জল ও তীব্র জ্বালনি সংকট এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়াও কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল রয়েছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার অভ্যন্তরীণ করোতোয়া,ফুলজোড়,ইছামতি,বড়ালসহ বিভিন্ন নদ-নদী খাল বিলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে তিল, কাউন,বাদাম, পাট ও সব্জিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালি, শাহজাদপুর, বেলকুচি উপজেলায় বানভাসি মানুষের মাঝে চাউল,নগদ অর্থ শুখনা খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এখনও ৭৭১ মেট্র্রিক টন চাউল ১৩ লক্ষ ৮ হাজার ৫শত টাকা বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য মজুদ আছে।

এ সকল ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের জন্য বন্যায় স্ব স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে । এছাড়াও তিনি জানান, ১০ হাজার প্যাকেট শুখনা খাবার এবং ১ হাজার বান্ডিল ঠেউ টিনের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রনালয়কে অভিহিত করা হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে

উন্নতি দীঘিনালায় অপরিবর্তিত

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দীঘিনালায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বিশেষ করে দীঘিনালার ছোট মেরুং ও কবাখালী এলাকায় কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ৪৫টি পরিবার।

উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন এলাকায় বেইলি ব্রিজ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কবাখালী এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দীঘিনালা-সাজেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের ছোট মেরুং, বেতছড়ি ও হাজাছড়াসহ ২০টি গ্রামের ১ হাজারের বেশি পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৪৮টি পরিবার।

পানিবন্দী পরিবারের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন। তিনি মঙ্গলবার সকালে পারিবারিকভাবে ৪৮টি পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন। গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে মাইনী নদীর উজানের ঢলে এসব গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থামলেও আকাশ মেঘলা। আবারও নামতে পারে বৃষ্টি।

মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের বিভিন্ন সেতু ও পয়েন্ট ডুবে গিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মেরুং বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন হাট বাজারে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে হাট বাজার। চিটাগাং পাড়ার বাসিন্দা রুমা বেগম জানান, বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তারা স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

দীঘিনালা বাস টার্মিনালের শান্তি পরিবহন কাউন্টারের লাইনম্যান মিন্টু চৌধুরী জানান, রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে লংগদু থেকে ছেড়ে আসা শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা আসতে পারেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

ভারি বর্ষণে

কুষ্টিয়া শহরে

হাঁটুপানি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুষ্টিয়া

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টিতে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় সব সড়কে হাঁটু পানি জমে গেছে। এক কথায় বলতে গেলে ডুবে গেছে কুষ্টিয়া শহর। শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট, জজ কোর্ট, জেলা পরিষদ, কুষ্টিয়া টিএন্ডটিসহ প্রায় সকল অফিসে হাঁটু পানি জমেছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কুষ্টিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে এক শ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কৃষি আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কুমারখালী, কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, কুষ্টিয়া জেলায় একমাত্র কুমারখালী ছাড়া অন্য কোথাও বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেই। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কুমারখালী উপজেলায় ১৪ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তিনি বলেন, ৮৯ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হলে আমরা সেটিকে ভারি বৃষ্টিপাত হিসেবে গণ্য করি। তাঁর মতে, সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় কুষ্টিয়া শহরে প্রায় ১শ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবং এটি এ বছরের একটানা বৃষ্টিপাতের সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাঁটু পানির মধ্যেই আইনজীবীদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতে দেখা গেছে। শহরের অধিকাংশ সড়কে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

৪ জেলায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ

image

বাড়ছে পদ্মার

পানি, বাড়ছে ভাঙন

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এর ফলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পানি বাড়ায় ডুবতে শুরু করেছে চরাঞ্চল। উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে।

নদী ভাঙনের ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে সাঁড়ায় লালনশাহ সেতু রক্ষাবাঁধ ও নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধটি। সাঁড়ার থানাপাড়া ও ব্লকপাড়ায় বাঁধের সামনের জমি ভাঙতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাঁধের সামনের ১০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। সাঁড়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া ব্লকপাড়া গ্রামের হজরত আলী বলেন, সাঁড়ার এই নদীরপাড়ে কয়েক মাস আগে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন ফের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদী ভাঙতে ভাঙতে বাঁধের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে নদীরক্ষা বাঁধেও ভাঙন দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমরা আতঙ্কে আছি। সাঁড়া থানাপাড়া এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, নদীর পানি বাড়ছে দেখে আমাদের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমনতিই নদীতে আমাদের বসতবাড়ি-জমিজমা হারিয়েছি।

এখন বাঁধের পাশে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় বাড়ি করে আছি। বাঁধের সামনে জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীকে তো বিশ্বাস করা যায় না। যদি তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে তো আমাদের বাড়িঘরও ভেঙে যাবে।

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, সাঁড়ার ব্লকপাড়া ও থানাপাড়ায় এর আগে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তিন দফায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন দিয়ে নদী এলাকার খোঁজ-খবর রাখতে বলেছেন। গতকাল বিকালে আমি সরোজমিনে নিজে নদী এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং এলাকার বাসিন্দাদের এ বিষয়ে জানিয়েছি, কোনো সমস্যা দেখা দিবে তারা যেন আমাকে দ্রুত জানায়। আমাদের কৃষকরা প্রতিদিনই খুঁটি দিয়ে পানি পরিমাপ করে থাকেন। গতকালের চেয়ে আজ (বুধবার) প্রায় ২০ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। তীব্র ভাঙন দেখা দিলে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জে

বিশুদ্ধ পানি

জ্বালানি সংকট

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার পুঠিযাবাড়ি, চরমালশাপাড়া কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের চররামগাঁতী, পাইকপাড়া, মোড়গ্রাম, সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর, পূর্ব বাঐতারা সহ বাঁধ অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা এসব অঞ্চলে এখন দেখা দিয়েছে পানীয় জল ও তীব্র জ্বালনি সংকট এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়াও কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল রয়েছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার অভ্যন্তরীণ করোতোয়া,ফুলজোড়,ইছামতি,বড়ালসহ বিভিন্ন নদ-নদী খাল বিলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে তিল, কাউন,বাদাম, পাট ও সব্জিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালি, শাহজাদপুর, বেলকুচি উপজেলায় বানভাসি মানুষের মাঝে চাউল,নগদ অর্থ শুখনা খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এখনও ৭৭১ মেট্র্রিক টন চাউল ১৩ লক্ষ ৮ হাজার ৫শত টাকা বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য মজুদ আছে।

এ সকল ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের জন্য বন্যায় স্ব স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে । এছাড়াও তিনি জানান, ১০ হাজার প্যাকেট শুখনা খাবার এবং ১ হাজার বান্ডিল ঠেউ টিনের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রনালয়কে অভিহিত করা হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে

উন্নতি দীঘিনালায় অপরিবর্তিত

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দীঘিনালায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বিশেষ করে দীঘিনালার ছোট মেরুং ও কবাখালী এলাকায় কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ৪৫টি পরিবার।

উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন এলাকায় বেইলি ব্রিজ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কবাখালী এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দীঘিনালা-সাজেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের ছোট মেরুং, বেতছড়ি ও হাজাছড়াসহ ২০টি গ্রামের ১ হাজারের বেশি পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। মেরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৪৮টি পরিবার।

পানিবন্দী পরিবারের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন। তিনি মঙ্গলবার সকালে পারিবারিকভাবে ৪৮টি পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন। গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে মাইনী নদীর উজানের ঢলে এসব গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থামলেও আকাশ মেঘলা। আবারও নামতে পারে বৃষ্টি।

মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের বিভিন্ন সেতু ও পয়েন্ট ডুবে গিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মেরুং বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন হাট বাজারে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে হাট বাজার। চিটাগাং পাড়ার বাসিন্দা রুমা বেগম জানান, বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তারা স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

দীঘিনালা বাস টার্মিনালের শান্তি পরিবহন কাউন্টারের লাইনম্যান মিন্টু চৌধুরী জানান, রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে লংগদু থেকে ছেড়ে আসা শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা আসতে পারেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

ভারি বর্ষণে

কুষ্টিয়া শহরে

হাঁটুপানি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুষ্টিয়া

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টিতে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় সব সড়কে হাঁটু পানি জমে গেছে। এক কথায় বলতে গেলে ডুবে গেছে কুষ্টিয়া শহর। শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট, জজ কোর্ট, জেলা পরিষদ, কুষ্টিয়া টিএন্ডটিসহ প্রায় সকল অফিসে হাঁটু পানি জমেছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কুষ্টিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে এক শ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কৃষি আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কুমারখালী, কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, কুষ্টিয়া জেলায় একমাত্র কুমারখালী ছাড়া অন্য কোথাও বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেই। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কুমারখালী উপজেলায় ১৪ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তিনি বলেন, ৮৯ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হলে আমরা সেটিকে ভারি বৃষ্টিপাত হিসেবে গণ্য করি। তাঁর মতে, সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় কুষ্টিয়া শহরে প্রায় ১শ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবং এটি এ বছরের একটানা বৃষ্টিপাতের সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাঁটু পানির মধ্যেই আইনজীবীদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতে দেখা গেছে। শহরের অধিকাংশ সড়কে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।