সিডিউলের শর্ত মানছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

বিমানবন্দরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে সিলিংয়ের কাজ : দুর্ঘটনার শঙ্কা

উড়োজাহাজ যাত্রীদের বাড়তি সেবা দিতে দেশের ব্যস্ততম সৈয়দপুর বিমানবন্দর টার্মিনালে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২০০০ যাত্রী ঢাকা-সৈয়দপুর ও চট্টগ্রাম রুটে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

এবিসি বোর্ড ব্যবহার করে করা হচ্ছে ট্রাস সিলিংয়ের কাজ। এতে করে বিমানবন্দরের তাপমাত্রা সব সময় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে টার্মিনালে অবস্থান করতে পারবে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাস সিলিংয়ের কাজটি করছে মুজিব এ্যান্ড সন্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টার্মিনালের এক লাখ বর্গফুট আয়তন ঘিরে ট্রাস সিলিংয়ের কাজ চলছে। কিন্তু কাজ করা হচ্ছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিডিউলের শর্ত মোটেই মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

৪২ ফুট উঁচুতে লাগানো হচ্ছে ট্রাস সিলিংয়ের বোর্ড। শ্রমিকদের কাজ করার সুবিধার্থে লোহার এমএস পাইপ এবং প্লেন সিট দিয়ে সাটার বেঁধে কাজ করার নিয়ম। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিকন বাঁশ ও বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করছে সাটার। এ প্রতিষ্ঠানটি অধিক মুনাফা করতেই এমএস লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে বলে রয়েছে অভিযোগ। অনুসন্ধান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোহার এমএস পাইপ ও স্টিল শিট ব্যবহার করলে যেখানে খরচ হবে ১০০ টাকা, সেই কাজ বাঁশ দিয়ে করলে মাত্র ১০ টাকায় করা যাবে। সে জন্যই বাড়তি মুনাফা লুটতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোহার এমএস পাইপ এবং স্টিল শিটের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে। এতে করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র কাজ করার সাটার খাতেই অতিরিক্ত লাভ হবে কমপক্ষে এক কোটি টাকা। বিমানবন্দর টার্মিনালে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণ প্রসঙ্গে অভিযোগ করেন দেশের বিশিষ্ট আয়কর দাতা ও উড়োজাহাজ যাত্রী মশিউর রহমান মন্ডল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে করে যেকোন মুহূর্তে প্রাণহানি ঘটার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উড়োজাহাজ যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টার্মিনালে যাতায়াত করছে। তার মতে, লোহার এমএস পাইপ ও প্লেনশীট দিয়ে সাটার বেঁধে কাজ করলে পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। একই অভিযোগ করেন উড়োজাহাজ যাত্রী ইমরান হোসেন, অরুবী রাণী রায়, শফিয়ার রহমান, আনজুমান আরা, খলিলুর রহমান, এমদাদ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি।

সরেজমিনে গিয়ে সেখানে কথা হয়, লেবার সর্দার মহিন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঁশ বাঁধার সময় অনেক ঝুঁকিতেই কাজ করতে হয়। তারপরও আমাদের করার কিছু নেই। ঠিকাদার কাজ করতে যে নির্মাণ সামগ্রী দিবে তা দিয়েই কাজ করতে হবে।

কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুজিব অ্যান্ড সন্সর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিপন সাহেবের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই কাজ করতে হয়। সেখানে ইক্যুইপমেন্ট বসানোর মতো জায়গা নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁশ দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে সাবধানে কাজ করতে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সিভিল ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর হাসিবের মুঠোফোনে একাধিকার কল দেওয়া হলেও সংযোগ না মেলায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

সিডিউলের শর্ত মানছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

বিমানবন্দরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে সিলিংয়ের কাজ : দুর্ঘটনার শঙ্কা

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

image

সৈয়দপুর (নীলফামারী) : ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ট্রান্স সিলিংয়ের কাজ করা হচ্ছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর টার্মিনালের -সংবাদ

উড়োজাহাজ যাত্রীদের বাড়তি সেবা দিতে দেশের ব্যস্ততম সৈয়দপুর বিমানবন্দর টার্মিনালে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২০০০ যাত্রী ঢাকা-সৈয়দপুর ও চট্টগ্রাম রুটে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

এবিসি বোর্ড ব্যবহার করে করা হচ্ছে ট্রাস সিলিংয়ের কাজ। এতে করে বিমানবন্দরের তাপমাত্রা সব সময় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে টার্মিনালে অবস্থান করতে পারবে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাস সিলিংয়ের কাজটি করছে মুজিব এ্যান্ড সন্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টার্মিনালের এক লাখ বর্গফুট আয়তন ঘিরে ট্রাস সিলিংয়ের কাজ চলছে। কিন্তু কাজ করা হচ্ছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিডিউলের শর্ত মোটেই মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

৪২ ফুট উঁচুতে লাগানো হচ্ছে ট্রাস সিলিংয়ের বোর্ড। শ্রমিকদের কাজ করার সুবিধার্থে লোহার এমএস পাইপ এবং প্লেন সিট দিয়ে সাটার বেঁধে কাজ করার নিয়ম। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিকন বাঁশ ও বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করছে সাটার। এ প্রতিষ্ঠানটি অধিক মুনাফা করতেই এমএস লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে বলে রয়েছে অভিযোগ। অনুসন্ধান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোহার এমএস পাইপ ও স্টিল শিট ব্যবহার করলে যেখানে খরচ হবে ১০০ টাকা, সেই কাজ বাঁশ দিয়ে করলে মাত্র ১০ টাকায় করা যাবে। সে জন্যই বাড়তি মুনাফা লুটতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোহার এমএস পাইপ এবং স্টিল শিটের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে। এতে করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র কাজ করার সাটার খাতেই অতিরিক্ত লাভ হবে কমপক্ষে এক কোটি টাকা। বিমানবন্দর টার্মিনালে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণ প্রসঙ্গে অভিযোগ করেন দেশের বিশিষ্ট আয়কর দাতা ও উড়োজাহাজ যাত্রী মশিউর রহমান মন্ডল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে পরিবেশে ট্রাস সিলিং নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে করে যেকোন মুহূর্তে প্রাণহানি ঘটার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উড়োজাহাজ যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টার্মিনালে যাতায়াত করছে। তার মতে, লোহার এমএস পাইপ ও প্লেনশীট দিয়ে সাটার বেঁধে কাজ করলে পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। একই অভিযোগ করেন উড়োজাহাজ যাত্রী ইমরান হোসেন, অরুবী রাণী রায়, শফিয়ার রহমান, আনজুমান আরা, খলিলুর রহমান, এমদাদ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি।

সরেজমিনে গিয়ে সেখানে কথা হয়, লেবার সর্দার মহিন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঁশ বাঁধার সময় অনেক ঝুঁকিতেই কাজ করতে হয়। তারপরও আমাদের করার কিছু নেই। ঠিকাদার কাজ করতে যে নির্মাণ সামগ্রী দিবে তা দিয়েই কাজ করতে হবে।

কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুজিব অ্যান্ড সন্সর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিপন সাহেবের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই কাজ করতে হয়। সেখানে ইক্যুইপমেন্ট বসানোর মতো জায়গা নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁশ দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে সাবধানে কাজ করতে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সিভিল ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর হাসিবের মুঠোফোনে একাধিকার কল দেওয়া হলেও সংযোগ না মেলায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।