‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী?’

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ‘গৌরব ও অহংকার’ বাংলাদেশ অর্জন করেছে, তা সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ৩ দিন আগে গতকাল নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল পদ্মা সেতু।

এ সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিক্রিয়া কী? তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বরং বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এটা (ঋণ বন্ধ) ঘটেছিল বলেই আমরা এটা (পদ্মা সেতু) করতে পেরেছি। আমাদের একটা ধারণা ছিল, আমরা নিজেদের টাকায়, নিজেরা কিছু করতে পারি না। একটা পরমুখাপেক্ষিতা, দৈন্যতা ছিল। (বিশ্বব্যাংক ফিরিয়ে দেয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু বানিয়ে) আমাদের সেই ধারণা বদলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। একটা কথা আছে, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? পদ্মা সেতুর ঋণটা আসলে কেন বন্ধ হয়েছিল? আমাদের ঘরের (দেশের) কিছু লোকের জন্যই কিন্তু।’

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।’২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এই সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদেরও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেল সংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিন গুণ অর্থ দেয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যায়। নদীশাসনে নতুন করে এক দশমিক ৩ কিলোমিটার যুক্ত হয়। সব মিলে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে যায়। নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। সব মিলে পদ্ম সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সহ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া নদীশাসনে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৯১ লাখ, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৫ লাখ, পুনর্বাসনে এক হাজার ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ দেশের মানুষের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের একটি এমডি পদ একজনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কী করে! ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে; এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।’

ড. ইউনূস একটি ব্যাংকের এমডি হয়ে একটি ফাউন্ডেশনে কীভাবে এত ডলার অনুদান দিল সেই প্রশ্ন তুলে গণমাধ্যমকে তা তদন্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে যদি কোন তথ্য লাগে তিনি তার জোগান দেবেন বলেও জানান। তিনি নিজে এটা করতে গেলে ‘প্রতিহিংসা’র প্রশ্ন আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও তথ্য আছে। কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন চেকে কত টাকা সরালো, সেইসব তথ্যও আছে। বের করেন না। সব আমরা বলবো কেন? আপনারা একটু খুঁজে বের করেন। তারপরে যদি কিছু লাগে জোগান দিব।’

পদ্মা সেতুর যারা বিরোধিতা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’

এছাড়া পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের বিবেকের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলবো না।’

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী?’

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ‘গৌরব ও অহংকার’ বাংলাদেশ অর্জন করেছে, তা সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ৩ দিন আগে গতকাল নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল পদ্মা সেতু।

এ সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিক্রিয়া কী? তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বরং বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এটা (ঋণ বন্ধ) ঘটেছিল বলেই আমরা এটা (পদ্মা সেতু) করতে পেরেছি। আমাদের একটা ধারণা ছিল, আমরা নিজেদের টাকায়, নিজেরা কিছু করতে পারি না। একটা পরমুখাপেক্ষিতা, দৈন্যতা ছিল। (বিশ্বব্যাংক ফিরিয়ে দেয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু বানিয়ে) আমাদের সেই ধারণা বদলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। একটা কথা আছে, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? পদ্মা সেতুর ঋণটা আসলে কেন বন্ধ হয়েছিল? আমাদের ঘরের (দেশের) কিছু লোকের জন্যই কিন্তু।’

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।’২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এই সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদেরও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেল সংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিন গুণ অর্থ দেয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যায়। নদীশাসনে নতুন করে এক দশমিক ৩ কিলোমিটার যুক্ত হয়। সব মিলে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে যায়। নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। সব মিলে পদ্ম সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সহ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া নদীশাসনে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৯১ লাখ, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৫ লাখ, পুনর্বাসনে এক হাজার ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ দেশের মানুষের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের একটি এমডি পদ একজনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কী করে! ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে; এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।’

ড. ইউনূস একটি ব্যাংকের এমডি হয়ে একটি ফাউন্ডেশনে কীভাবে এত ডলার অনুদান দিল সেই প্রশ্ন তুলে গণমাধ্যমকে তা তদন্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে যদি কোন তথ্য লাগে তিনি তার জোগান দেবেন বলেও জানান। তিনি নিজে এটা করতে গেলে ‘প্রতিহিংসা’র প্রশ্ন আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও তথ্য আছে। কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন চেকে কত টাকা সরালো, সেইসব তথ্যও আছে। বের করেন না। সব আমরা বলবো কেন? আপনারা একটু খুঁজে বের করেন। তারপরে যদি কিছু লাগে জোগান দিব।’

পদ্মা সেতুর যারা বিরোধিতা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’

এছাড়া পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের বিবেকের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলবো না।’