‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, মোকাবিলার প্রস্তুতিও আছে’

সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে এবার বন্যা পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ রূপ নিলেও, তা মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে অকল্পনীয় বন্যা হয়েছে। সিলেট বিভাগের উজানে ভারতের মেঘালয় এবং আসামে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতল ভূমি সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। এ অঞ্চলের হাওর এবং নদীগুলোর স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ এবং বহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলোর নেই।’

বন্যার পানি ফুলে-ফেঁপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার এবং ত্রাণকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। কোন সময় ক্ষেপণ না করে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনীকে নিয়োজিত করেছি।’

বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছি। তাদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।’

স্বাভাবিক বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি সরকারের সব সময়ই থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাক্সিক্ষত। বন্যা আমাদের জানমালের যেমন ক্ষতি করে, তেমনটি এর উপকারিতাও আছে। আমাদের পলিমাটির স্তর বৃদ্ধি করে। কৃষিজমিকে ঊর্বর এবং সতেজ করে। ময়লা-আবর্জনা-জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। নদীমাতৃক দেশ আমাদের, বন্যা নিয়ে বসবাস করতে হবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকিটা আমাদের থাকে, পানিটা নেমে আসবে দক্ষিণ অঞ্চলে। সেজন্য আগাম প্রস্তুতি আমাদের আছে।’

তবে এবারের বন্যা স্মরণকালের ভয়াবহতম উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিগত একশ’-সোয়াশ’ বছরের মধ্যে এমন প্রলয়ঙ্কারী বন্যা এই এলাকায় হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কোন সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছিলাম, পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে, প্রয়োজনে রাস্তা যেন কেটে দেয়। এটাও আমাদের একটা শিক্ষা, কোন জায়গা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে, কারণ আমাদের এখানে তো বন্যা আসবেই। সেটা চিহ্নিত করে রাখতে বলেছি, সেখানে ব্রিজ কালভার্ট এমনভাবে করে দেব, যাতে পানি জমা থাকতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক দিন এরকম বন্যা হয়নি, আবার বন্যা আসলো। সেইভাবে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।’ বন্যার পর কৃষক যেন কৃষিকাজ করতে পারে, সেজন্য বীজ, সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জনান প্রধানমন্ত্রী।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে জানিয়ে কষ্ট করে যারা বন্যার মধ্যে কাজ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান। বন্যা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, মোকাবিলার প্রস্তুতিও আছে’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে এবার বন্যা পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ রূপ নিলেও, তা মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে অকল্পনীয় বন্যা হয়েছে। সিলেট বিভাগের উজানে ভারতের মেঘালয় এবং আসামে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতল ভূমি সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। এ অঞ্চলের হাওর এবং নদীগুলোর স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ এবং বহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলোর নেই।’

বন্যার পানি ফুলে-ফেঁপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার এবং ত্রাণকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। কোন সময় ক্ষেপণ না করে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনীকে নিয়োজিত করেছি।’

বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছি। তাদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।’

স্বাভাবিক বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি সরকারের সব সময়ই থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাক্সিক্ষত। বন্যা আমাদের জানমালের যেমন ক্ষতি করে, তেমনটি এর উপকারিতাও আছে। আমাদের পলিমাটির স্তর বৃদ্ধি করে। কৃষিজমিকে ঊর্বর এবং সতেজ করে। ময়লা-আবর্জনা-জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। নদীমাতৃক দেশ আমাদের, বন্যা নিয়ে বসবাস করতে হবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকিটা আমাদের থাকে, পানিটা নেমে আসবে দক্ষিণ অঞ্চলে। সেজন্য আগাম প্রস্তুতি আমাদের আছে।’

তবে এবারের বন্যা স্মরণকালের ভয়াবহতম উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিগত একশ’-সোয়াশ’ বছরের মধ্যে এমন প্রলয়ঙ্কারী বন্যা এই এলাকায় হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কোন সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছিলাম, পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে, প্রয়োজনে রাস্তা যেন কেটে দেয়। এটাও আমাদের একটা শিক্ষা, কোন জায়গা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে, কারণ আমাদের এখানে তো বন্যা আসবেই। সেটা চিহ্নিত করে রাখতে বলেছি, সেখানে ব্রিজ কালভার্ট এমনভাবে করে দেব, যাতে পানি জমা থাকতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক দিন এরকম বন্যা হয়নি, আবার বন্যা আসলো। সেইভাবে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।’ বন্যার পর কৃষক যেন কৃষিকাজ করতে পারে, সেজন্য বীজ, সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জনান প্রধানমন্ত্রী।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে জানিয়ে কষ্ট করে যারা বন্যার মধ্যে কাজ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান। বন্যা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।