বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের দিকে জোর কৃষিমন্ত্রীর

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের সমস্যা হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এ থেকে বাঁচতে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো নতুন জাতের খাদ্য-শস্যের জাতের উদ্ভাবন করার ওপর জোর দিতে হবে।

গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আঞ্চলিক আন্তঃসরকার সংস্থা সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাইট্রোজেন দূষণ নীতি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় আলোচকরা এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বাররোপ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা এ অঞ্চলে নাইট্রোজেন দূষণের ওপর বিদ্যমান নীতির ওপর একটি আঞ্চলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের সঙ্গে অ্যাডাপ্ট (মানিয়ে নেয়া) করতে হবে। সেটি আমাদের জন্য খুবই ইম্পর্ট্যান্ট (গুরুত্বপূর্ণ)।’

পরিবেশ বির্পজয় হলে ধান পানির নিচে চলে যাবে, লবণাক্ততা বাড়বে, খরা বাড়বে। এগুলোর জন্য স্ট্রেস রেসিস্ট্যান্ট ধানের জাত, বিভিন্ন ফসলের জাত আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

জমিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতির বিপদ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘নাইট্রোজেন ৬০-৭০% লস হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু তাড়াতাড়ি উড়ে যায় বাতাসে। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে। এফিসিয়েন্সি লেভেল বাংলাদেশে খুব-ই কম। মাত্র ৩০-৩৫%। আমরা চাচ্ছি যে এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় এবং এর জন্য রিজিওনাল কোঅপারেশন খুবই ইম্পর্ট্যান্ট এবং আমি মনে করি সাসেপের সদস্য মেম্বার কান্ট্রিরা সবাই মিলে একটা ভালো পলিসি নেবে। যাতে করে নাইট্রোজেন ইফিশিয়েন্সি আমরা বাড়াতে পারি।’

কৃষি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের প্রধান জীবিকা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা খুবই ‘চ্যালেঞ্জিং’।’

উপমহাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিতে টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনার বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসংহতভাবে কাজ করার ‘এখনই সময়’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং অন্যান্য দেশ পরিবেশের প্রতি ‘কমিটেড’ মন্তব্য করে আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তো এক্সট্রিমলি ভালনারেবল টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ। কাজেই আমাদেরকে সঠিক পথ গ্রহণ করতে হবে।’

ওই অনুষ্ঠানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দেখে সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়ার কথাজানান মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘এখন কোন মেজর ফসল নাই। তবে বাংলাদেশে এই সময়ে তো বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাহলে আমনের একটাই (সম্ভাবনা) রয়েছে ক্ষতি হওয়ার। তারপর আউশও ক্ষতি হচ্ছে। এগুলা দেখে আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি।’

বাংলাদেশের প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ দূষণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাইট্রোজ দূষণের বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে বিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকদের সম্মিলিত কাজে ওপর গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের মহাপরিচালক ড. মাসুমুর রহমান বলেন ‘নাট্রোজেন দূষণ মোকাবেলায় প্রমাণ-ভিত্তিক নীতিমালা তৈরির জন্য দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটি।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার জেফারি হানান, ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজির অধ্যাপক মার্ক সুটন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ।

বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে এরমধ্যে সংক্রমণ ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ধরণে পরিবর্তন আসবে, তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা বাড়বে, জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়-কালবৈশাখী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে সরাসরি জখমের সংখ্যাও বাড়বে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের দিকে জোর কৃষিমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের সমস্যা হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এ থেকে বাঁচতে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো নতুন জাতের খাদ্য-শস্যের জাতের উদ্ভাবন করার ওপর জোর দিতে হবে।

গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আঞ্চলিক আন্তঃসরকার সংস্থা সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাইট্রোজেন দূষণ নীতি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় আলোচকরা এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বাররোপ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা এ অঞ্চলে নাইট্রোজেন দূষণের ওপর বিদ্যমান নীতির ওপর একটি আঞ্চলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের সঙ্গে অ্যাডাপ্ট (মানিয়ে নেয়া) করতে হবে। সেটি আমাদের জন্য খুবই ইম্পর্ট্যান্ট (গুরুত্বপূর্ণ)।’

পরিবেশ বির্পজয় হলে ধান পানির নিচে চলে যাবে, লবণাক্ততা বাড়বে, খরা বাড়বে। এগুলোর জন্য স্ট্রেস রেসিস্ট্যান্ট ধানের জাত, বিভিন্ন ফসলের জাত আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

জমিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতির বিপদ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘নাইট্রোজেন ৬০-৭০% লস হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু তাড়াতাড়ি উড়ে যায় বাতাসে। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে। এফিসিয়েন্সি লেভেল বাংলাদেশে খুব-ই কম। মাত্র ৩০-৩৫%। আমরা চাচ্ছি যে এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় এবং এর জন্য রিজিওনাল কোঅপারেশন খুবই ইম্পর্ট্যান্ট এবং আমি মনে করি সাসেপের সদস্য মেম্বার কান্ট্রিরা সবাই মিলে একটা ভালো পলিসি নেবে। যাতে করে নাইট্রোজেন ইফিশিয়েন্সি আমরা বাড়াতে পারি।’

কৃষি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের প্রধান জীবিকা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা খুবই ‘চ্যালেঞ্জিং’।’

উপমহাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিতে টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনার বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসংহতভাবে কাজ করার ‘এখনই সময়’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং অন্যান্য দেশ পরিবেশের প্রতি ‘কমিটেড’ মন্তব্য করে আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তো এক্সট্রিমলি ভালনারেবল টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ। কাজেই আমাদেরকে সঠিক পথ গ্রহণ করতে হবে।’

ওই অনুষ্ঠানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দেখে সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচি নেয়ার কথাজানান মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘এখন কোন মেজর ফসল নাই। তবে বাংলাদেশে এই সময়ে তো বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাহলে আমনের একটাই (সম্ভাবনা) রয়েছে ক্ষতি হওয়ার। তারপর আউশও ক্ষতি হচ্ছে। এগুলা দেখে আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি।’

বাংলাদেশের প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ দূষণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাইট্রোজ দূষণের বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে বিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকদের সম্মিলিত কাজে ওপর গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের মহাপরিচালক ড. মাসুমুর রহমান বলেন ‘নাট্রোজেন দূষণ মোকাবেলায় প্রমাণ-ভিত্তিক নীতিমালা তৈরির জন্য দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটি।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার জেফারি হানান, ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজির অধ্যাপক মার্ক সুটন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ।

বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে এরমধ্যে সংক্রমণ ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ধরণে পরিবর্তন আসবে, তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা বাড়বে, জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়-কালবৈশাখী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে সরাসরি জখমের সংখ্যাও বাড়বে।