চাই টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনা

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সেখানে বন্যা কেন ভয়াবহ আকার ধারণ করল তার কারণ খুঁজছেন অনেকে। প্রতিবেশী দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিই কি এর একমাত্র কারণ নাকি এর পেছনে নিজেদেরও কোন দায় আছে সেই প্রশ্ন উঠেছে।

ভাটির দেশে বন্যা হবে সেটা স্বাভাবিক। এটা বাংলাদেশের চিরচেনা এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে বন্যা শুধু আমাদের জন্য দুঃখ-কষ্টই বয়ে আনে না। এর সঙ্গে আসা পলিমাটি কৃষিজমিকে উর্বর করে, তাতে ফসলের ফলন বাড়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে বন্যা মোকাবিলায় আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত কিনা। শুধু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করলে আর বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ করলেই দায় মিটে যায় না বলে আমরা মনে করি। বন্যা ব্যবস্থাপনায় আরো অনেক করণীয় আছে। সবচেয়ে জরুরি করণীয়টা হচ্ছে, বন্যার পানিকে সাগরে পৌঁছার সুব্যবস্থা রাখা। এজন্য নদ-নদী, হাওর, বিলসহ সবধরনের জলাশয়কে প্রস্তুত রাখা।

সমস্যা হচ্ছে, জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এমনকি নদ-নদী পর্যন্ত দখল হয়ে যাচ্ছে। এখনো যেসব নদ-নদী টিকে আছে সেগুলোর গভীরতা কমছে। পলি পড়ে যেমন এর গভীরতা কমে। আবার মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকা-ের কারণেও সেটা কমে। নানাভাবে মানুষ নদ-নদী ভরাট ও দখল করছে।

অভিযোগ উঠেছে, নদ-নদী ও হাওরে সরকার অনেক অপরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। বন্যার পানি কীভাবে নামবে সেটা বিবেচনায় না নিয়েই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এসব বাঁধ ফসল রক্ষা করতে পারছে না বরং বন্যার পানি ব্যবস্থাপনায় বিঘœ ঘটাচ্ছে। এসব কারণে সিলেট অঞ্চলে এবার বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

সিলেটে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের কুফল সরকারও বুঝতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই চলতে হবে। অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে। তিনি নদ-নদীর গভীরতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্টরা তার কথার মর্ম উপলব্ধি করবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

বন্যা আগামীতেও হবে। এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নদ-নদীকে বাদ দিয়ে বন্যা ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২ , ৯ আষাড় ১৪২৮ ২৩ জিলকদ ১৪৪৩

চাই টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনা

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সেখানে বন্যা কেন ভয়াবহ আকার ধারণ করল তার কারণ খুঁজছেন অনেকে। প্রতিবেশী দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিই কি এর একমাত্র কারণ নাকি এর পেছনে নিজেদেরও কোন দায় আছে সেই প্রশ্ন উঠেছে।

ভাটির দেশে বন্যা হবে সেটা স্বাভাবিক। এটা বাংলাদেশের চিরচেনা এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে বন্যা শুধু আমাদের জন্য দুঃখ-কষ্টই বয়ে আনে না। এর সঙ্গে আসা পলিমাটি কৃষিজমিকে উর্বর করে, তাতে ফসলের ফলন বাড়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে বন্যা মোকাবিলায় আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত কিনা। শুধু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করলে আর বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ করলেই দায় মিটে যায় না বলে আমরা মনে করি। বন্যা ব্যবস্থাপনায় আরো অনেক করণীয় আছে। সবচেয়ে জরুরি করণীয়টা হচ্ছে, বন্যার পানিকে সাগরে পৌঁছার সুব্যবস্থা রাখা। এজন্য নদ-নদী, হাওর, বিলসহ সবধরনের জলাশয়কে প্রস্তুত রাখা।

সমস্যা হচ্ছে, জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এমনকি নদ-নদী পর্যন্ত দখল হয়ে যাচ্ছে। এখনো যেসব নদ-নদী টিকে আছে সেগুলোর গভীরতা কমছে। পলি পড়ে যেমন এর গভীরতা কমে। আবার মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকা-ের কারণেও সেটা কমে। নানাভাবে মানুষ নদ-নদী ভরাট ও দখল করছে।

অভিযোগ উঠেছে, নদ-নদী ও হাওরে সরকার অনেক অপরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। বন্যার পানি কীভাবে নামবে সেটা বিবেচনায় না নিয়েই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এসব বাঁধ ফসল রক্ষা করতে পারছে না বরং বন্যার পানি ব্যবস্থাপনায় বিঘœ ঘটাচ্ছে। এসব কারণে সিলেট অঞ্চলে এবার বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

সিলেটে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের কুফল সরকারও বুঝতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই চলতে হবে। অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে। তিনি নদ-নদীর গভীরতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্টরা তার কথার মর্ম উপলব্ধি করবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

বন্যা আগামীতেও হবে। এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নদ-নদীকে বাদ দিয়ে বন্যা ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে না।