খাদ্য ও পানীয় সংকটে ৭ জেলার বানভাসি

গাইবান্ধায় ১২৬ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

গাইবান্ধার সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ১২ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদ সীমা ছুই ছুঁই করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে ৯৬টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ৪৭ হাজার ৫৬৩ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৮৪ জন। বন্যা কবলিত ওই ৪ উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৮০ মে. টন চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে এবং নতুন করে আরও বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত ৪ উপজেলার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

লাখাইয়ে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে ব্রিজ

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বিভিন্ন ব্রিজ কালভার্ট পানির স্রোত ভেঙে পড়ছে। উপজেলার বামৈ মোড়াকরি ব্রিজ কালভার্টের সামনে আসা একাধিক নৌকা ব্রিজের খুটিতে লেগে ভেঙে যাচ্ছে। স্রোতের বেগে ধসে গেছে একটি ব্রিজ। উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়নের মোড়াকরি বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজ বন্যার পানির প্রবল স্রোতে দুপাশের মাটি সরে যাওয়ায় ধসে পড়ে।লাখাই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আলম বলেন, মুড়িয়াউক ইউনিয়ন শালদিঘা একটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। মোড়াকরি ব্রিজের ওপর দিয়ে মোড়াকারি স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ছাত্রী ও মোড়াকরি গ্রামের মানুষ বাজারে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ছিল এ ব্রিজটি। মোড়াকরি বাজারে সাথে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের লোকজনের রাস্তা। এই ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় উপজেলা সদরের সাথে মোড়াকরি গ্রামবাসীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, উপজেলার প্রকৌশলী কে প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী শাকিল আহমেদ জানান, জরুরী মাসিক সমন্বয় সভায় বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজয়নগরে ২০ গ্রাম প্লাবিত

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদী ও বিজয়নগরের কাজলা বিলের পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের ২০ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন, পত্তন ইউনিয়ন, ইছাপুরা ইউনিয়ন, চম্পকনগর ইউনিয়ন, বুধন্তি ইউনিয়ন ও হরষপুর ইউনিয়ন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিতাস নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার দত্তখোলা, এক্তারপুর, সহদেবপুর, চর-ইসলামপুর, মনিপুর, পত্তন, গোয়ালখলা, লক্ষীমোড়া, চান্দুরা, কালিসিমা, চম্পকনগরের ভাটি এলাকাসহ উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে করে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে ৬৮৭টি পরিবারের ৩৪৩৫ জন।

বানভাসি মানুষের অভিযোগ গত ১ সপ্তাহধরে তারা দুর্ভোগের শিকার হলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত তারা কোন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।

এদিকে গতকাল বুধবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এইচ. ইরফান উদ্দিন আহাম্মদ।

বন্যা কবলিত মনিপুর গ্রামের নায়েব মিয়া বলেন, বন্যার পানিতে পরিবার পরিজন, গরু-বাছুর নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। গরু রাখার কোন জায়গা নেই। অন্য এলাকায় গরু রেখে এসেছি। তিনি বলেন, এভাবে যদি পানি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের বাড়ি ছাড়া হতে হবে।

কালিসীমা গ্রামের আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, প্রতিদিনই আস্তে আস্তে পানি বাড়ছে। বাড়ির উঠানে কোমর পানি। বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাথরুম, রান্নাঘর পানির নিচে। ঘরের ভেতরে কোন রকম রান্না করে খেয়ে বেঁচে আছি। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ কোন খোঁজ নেয়নি।

উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দানা মিয়া ভূইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাইনি। এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাবির আহমেদ বলেন, বন্যায় ১৩৫ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ৪০ হেক্টরের সবজি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিতাসের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী ডুবছে রাস্তা-ফসল

প্রতিনিধি, হোমনা (কুমিল্লা)

টানা বৃষ্টি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধিতে কুমিল্লার তিতাসের ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে গোমতী নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমিসহ মাছের ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে প্রবল স্রোতে। উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কয়েকটি সংযোগ সড়ক উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিতাস-মুরাদনগর সিমানা দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকনগর, উত্তর মানিকনগর ও আফজালকান্দি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলা রক্ষার জন্য নির্মিত বেড়িবাঁধ।

এছাড়াও নদী সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১৫ হেক্টর ফসলি জমি ও ১০-১২টি মাছের ঘের বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।

এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।

কয়েকজন চাষি জানান, হঠাৎ করে গোমতীর পানি বৃদ্ধি হয়ে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে মাছের ঘের থেকে সব মাছ চলে গেছে। বলতে গেলে একেবারে নিঃস্ব ই হয়ে গেছি আমরা।

এমন দুর্যোগের খবর পেয়ে কলাকান্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকারকে সঙ্গে নিয়ে গত বুধবার (২২ জুন) দুর্যোগপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহ।

কলাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকার বলেন, গোমতীর পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের ৩-৪টি গ্রামের রাস্তাঘাট, ফসিল জমি ও মাছের কয়েকটি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতারও আমরা চেষ্টা করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ এর সরকারী নাম্বারে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি । তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ দৈনিক সংবাদকে জানান, গোমতী নদী সংলগ্ন রাস্তা তলিয়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ফসলি জমির বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে ২ টন চাউল বরাদ্দ করেছি। তালিকা করে তা পৌঁছে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সামনে আরো সহায়তার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যে সকল রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তা বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জে ৯১০৬ হেক্টর ফসল তলিয়ে

বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

ভারি বর্ষণ ও উজানে থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার অভ্যান্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে । পানি বৃদ্ধির ফলে জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে । স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চরতি বন্যায় জেলায় ৯১০৬ হেক্টর জমির পাট, তিল, কাউন, গ্রীষ্মকালীন মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সব্জি, রোপা আমন বীজতলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে । এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে । পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা কবলিত কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর এই ৫টি উপজেলার কৃষকরা। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান বন্যায় তার ৩ বিঘা জমির পাট তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পরলাম। তিনি জানান ৩ বিঘা জমি চাষ করতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল কিন্তু পানিতে ডুবে আমার সর্বনাশ হয়ে গেল। বড়পিয়ার চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান ২ বিঘা জমিতে পাট ও ৫ বিঘা জমিতে তিল ছিল বানের পানিতে সব ডুবে গেছে । আর কিছুদিন গেলেই তিল ও পাট কাটা যেত বন্যা এসে আামার সব শেষ হয়ে গেছে । কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া চরের কৃষক জেল হক জানান এ বছর ৫ বিঘা পাট, ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছিলাম বন্যায় সব ডুবে গেছে । এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ব্যপারে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোস্তম আলী জানান সদর উপজেলায় ৪৫০০ হেক্টর জমি বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কলমাকান্দায় ভেসে গেছে ২৪০০ পুকুর

প্রতিনিধি, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)

চলমান বন্যায় নেত্রকোনার জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৪০০ মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে খামারিদের অবকাঠামো গত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটির ওপরে। গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্মকর্তা তানবীর আহমেদ।

তিনি বলেন, এটি ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী। এরপর প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও সময় লাগবে। এখনও পানি কমেনি। নানান প্রজাতি বড় ও পোনা মাছে ভরা পুকুর এই বন্যায় তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এ উপজেলায় মৎস খামারিদের।ক্ষতিগ্রস্ত খামারি মুখলেছুর রহমান, মঞ্জিল খাঁ ও মৃত্যুঞ্জয় পাল জানান, আমরা চৈত্রমাসে পুকুরে পোনা ছেড়েছি এখন প্রায় ৫০০/৭০০ গ্রাম পরিমাণ বড় হয়েছিল, এই মুহূর্তে অকাল বন্যা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল, আমরা সর্বহারা হয়ে গেলাম।

ফরিদপুরে ৫৬ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার শূন্য পয়েন্ট ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার।

ক্রমাগত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর সদর উপজেলা ও চরভদ্রাসন উপজেলা দুটির চরঅধ্যুষিত ৬টি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের প্রায় ৫৬টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ দুটি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ১০০০ একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। নদীগর্ভে এ ইউনিয়নের ২২টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ১৫০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

একই উপজেলার পাশ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ১টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। নদীগর্ভ ১৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ১১০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। নদীগর্ভ বিলীন হয়েছে কয়েকটা বাড়ি। প্রায় ১০০ একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। একইভাবে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন- চর হরিরামপুর, চরঝাউকান্দা ও গাজিরটেক এ তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৪২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে পানি রয়েছে। এদিকে কোনো এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গন কবলিত হলে খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২ , ১০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলকদ ১৪৪৩

খাদ্য ও পানীয় সংকটে ৭ জেলার বানভাসি

image

গাইবান্ধা : বানের পানি ঢুকে পড়েছে সাঘাটার উল্লাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাঠদান বন্ধ -সংবাদ

গাইবান্ধায় ১২৬ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

গাইবান্ধার সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ১২ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদ সীমা ছুই ছুঁই করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে ৯৬টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ৪৭ হাজার ৫৬৩ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৮৪ জন। বন্যা কবলিত ওই ৪ উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৮০ মে. টন চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে এবং নতুন করে আরও বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত ৪ উপজেলার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

লাখাইয়ে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে ব্রিজ

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বিভিন্ন ব্রিজ কালভার্ট পানির স্রোত ভেঙে পড়ছে। উপজেলার বামৈ মোড়াকরি ব্রিজ কালভার্টের সামনে আসা একাধিক নৌকা ব্রিজের খুটিতে লেগে ভেঙে যাচ্ছে। স্রোতের বেগে ধসে গেছে একটি ব্রিজ। উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়নের মোড়াকরি বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজ বন্যার পানির প্রবল স্রোতে দুপাশের মাটি সরে যাওয়ায় ধসে পড়ে।লাখাই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আলম বলেন, মুড়িয়াউক ইউনিয়ন শালদিঘা একটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। মোড়াকরি ব্রিজের ওপর দিয়ে মোড়াকারি স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ছাত্রী ও মোড়াকরি গ্রামের মানুষ বাজারে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ছিল এ ব্রিজটি। মোড়াকরি বাজারে সাথে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের লোকজনের রাস্তা। এই ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় উপজেলা সদরের সাথে মোড়াকরি গ্রামবাসীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, উপজেলার প্রকৌশলী কে প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী শাকিল আহমেদ জানান, জরুরী মাসিক সমন্বয় সভায় বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজয়নগরে ২০ গ্রাম প্লাবিত

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদী ও বিজয়নগরের কাজলা বিলের পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের ২০ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন, পত্তন ইউনিয়ন, ইছাপুরা ইউনিয়ন, চম্পকনগর ইউনিয়ন, বুধন্তি ইউনিয়ন ও হরষপুর ইউনিয়ন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিতাস নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার দত্তখোলা, এক্তারপুর, সহদেবপুর, চর-ইসলামপুর, মনিপুর, পত্তন, গোয়ালখলা, লক্ষীমোড়া, চান্দুরা, কালিসিমা, চম্পকনগরের ভাটি এলাকাসহ উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে করে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে ৬৮৭টি পরিবারের ৩৪৩৫ জন।

বানভাসি মানুষের অভিযোগ গত ১ সপ্তাহধরে তারা দুর্ভোগের শিকার হলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত তারা কোন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।

এদিকে গতকাল বুধবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.এইচ. ইরফান উদ্দিন আহাম্মদ।

বন্যা কবলিত মনিপুর গ্রামের নায়েব মিয়া বলেন, বন্যার পানিতে পরিবার পরিজন, গরু-বাছুর নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। গরু রাখার কোন জায়গা নেই। অন্য এলাকায় গরু রেখে এসেছি। তিনি বলেন, এভাবে যদি পানি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের বাড়ি ছাড়া হতে হবে।

কালিসীমা গ্রামের আমেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, প্রতিদিনই আস্তে আস্তে পানি বাড়ছে। বাড়ির উঠানে কোমর পানি। বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাথরুম, রান্নাঘর পানির নিচে। ঘরের ভেতরে কোন রকম রান্না করে খেয়ে বেঁচে আছি। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান কেউ কোন খোঁজ নেয়নি।

উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দানা মিয়া ভূইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাইনি। এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাবির আহমেদ বলেন, বন্যায় ১৩৫ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ৪০ হেক্টরের সবজি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিতাসের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী ডুবছে রাস্তা-ফসল

প্রতিনিধি, হোমনা (কুমিল্লা)

টানা বৃষ্টি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধিতে কুমিল্লার তিতাসের ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে গোমতী নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমিসহ মাছের ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে প্রবল স্রোতে। উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কয়েকটি সংযোগ সড়ক উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিতাস-মুরাদনগর সিমানা দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকনগর, উত্তর মানিকনগর ও আফজালকান্দি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলা রক্ষার জন্য নির্মিত বেড়িবাঁধ।

এছাড়াও নদী সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১৫ হেক্টর ফসলি জমি ও ১০-১২টি মাছের ঘের বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।

এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।

কয়েকজন চাষি জানান, হঠাৎ করে গোমতীর পানি বৃদ্ধি হয়ে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে মাছের ঘের থেকে সব মাছ চলে গেছে। বলতে গেলে একেবারে নিঃস্ব ই হয়ে গেছি আমরা।

এমন দুর্যোগের খবর পেয়ে কলাকান্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকারকে সঙ্গে নিয়ে গত বুধবার (২২ জুন) দুর্যোগপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহ।

কলাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকার বলেন, গোমতীর পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের ৩-৪টি গ্রামের রাস্তাঘাট, ফসিল জমি ও মাছের কয়েকটি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতারও আমরা চেষ্টা করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ এর সরকারী নাম্বারে ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি । তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ দৈনিক সংবাদকে জানান, গোমতী নদী সংলগ্ন রাস্তা তলিয়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ফসলি জমির বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে ২ টন চাউল বরাদ্দ করেছি। তালিকা করে তা পৌঁছে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সামনে আরো সহায়তার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যে সকল রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তা বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জে ৯১০৬ হেক্টর ফসল তলিয়ে

বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

ভারি বর্ষণ ও উজানে থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার অভ্যান্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে । পানি বৃদ্ধির ফলে জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে । স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চরতি বন্যায় জেলায় ৯১০৬ হেক্টর জমির পাট, তিল, কাউন, গ্রীষ্মকালীন মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সব্জি, রোপা আমন বীজতলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে । এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে । পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা কবলিত কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর এই ৫টি উপজেলার কৃষকরা। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান বন্যায় তার ৩ বিঘা জমির পাট তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পরলাম। তিনি জানান ৩ বিঘা জমি চাষ করতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল কিন্তু পানিতে ডুবে আমার সর্বনাশ হয়ে গেল। বড়পিয়ার চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান ২ বিঘা জমিতে পাট ও ৫ বিঘা জমিতে তিল ছিল বানের পানিতে সব ডুবে গেছে । আর কিছুদিন গেলেই তিল ও পাট কাটা যেত বন্যা এসে আামার সব শেষ হয়ে গেছে । কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া চরের কৃষক জেল হক জানান এ বছর ৫ বিঘা পাট, ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছিলাম বন্যায় সব ডুবে গেছে । এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ব্যপারে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোস্তম আলী জানান সদর উপজেলায় ৪৫০০ হেক্টর জমি বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কলমাকান্দায় ভেসে গেছে ২৪০০ পুকুর

প্রতিনিধি, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)

চলমান বন্যায় নেত্রকোনার জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৪০০ মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে খামারিদের অবকাঠামো গত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটির ওপরে। গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্মকর্তা তানবীর আহমেদ।

তিনি বলেন, এটি ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী। এরপর প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও সময় লাগবে। এখনও পানি কমেনি। নানান প্রজাতি বড় ও পোনা মাছে ভরা পুকুর এই বন্যায় তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এ উপজেলায় মৎস খামারিদের।ক্ষতিগ্রস্ত খামারি মুখলেছুর রহমান, মঞ্জিল খাঁ ও মৃত্যুঞ্জয় পাল জানান, আমরা চৈত্রমাসে পুকুরে পোনা ছেড়েছি এখন প্রায় ৫০০/৭০০ গ্রাম পরিমাণ বড় হয়েছিল, এই মুহূর্তে অকাল বন্যা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল, আমরা সর্বহারা হয়ে গেলাম।

ফরিদপুরে ৫৬ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার শূন্য পয়েন্ট ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার।

ক্রমাগত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর সদর উপজেলা ও চরভদ্রাসন উপজেলা দুটির চরঅধ্যুষিত ৬টি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের প্রায় ৫৬টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ দুটি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ১০০০ একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। নদীগর্ভে এ ইউনিয়নের ২২টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ১৫০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

একই উপজেলার পাশ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ১টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। নদীগর্ভ ১৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ১১০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। নদীগর্ভ বিলীন হয়েছে কয়েকটা বাড়ি। প্রায় ১০০ একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। একইভাবে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন- চর হরিরামপুর, চরঝাউকান্দা ও গাজিরটেক এ তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ একর ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৪২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে পানি রয়েছে। এদিকে কোনো এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গন কবলিত হলে খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।