দ্বিতীয় টেস্টে শুরু আজ

আত্মবিশ্বাসের খোঁজে টাইগাররা

নিউজিল্যান্ড সফরে একটা টেস্ট ম্যাচে জয়ের বাইরে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্য একেবারে তলানিতে। দলের এই ব্যর্থতার মূল কারণ টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। হারতে হারতে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটাও নেমেছে তলানিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় সেন্ট লুসিয়ায় ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার সময়ে টাইগারদের মূল লক্ষ্যটাই হবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার, সেই সঙ্গে থাকবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য।

সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারি বাংলাদেশের ৭ উইকেটে পরাজয়ের পেছনে ছিল টাইগার ব্যাটিং লাইন আপের চরম ব্যর্থতা। মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া টাইগারদের প্রথম ইনিংসে অর্ধেক রানই ছিল তৃতীয় বারের মতো টেস্ট দলের নেতৃত্ব পাওয়া অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ওই ম্যাচে মাত্র ৪৫ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা।

টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করার কোন উপায়ই যেন খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫টি টেস্টে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা নিয়মিতভাবেই বজায় রেখেছে। সেটি হয় প্রথম ইনিংসে, না হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। ফলে পরাজয়ের লজ্জা মাথা পেতে নিতে হয়েছে দলটিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুই দফা ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটেছে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম টেস্টে ৫৩ ও দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।

এদিকে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের ভালো ব্যাটিং চাপে ফেলে দিয়েছিল সফরকারিদের। শেষ পর্যন্ত ড্র হয় ম্যাচটি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেই টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ২৪ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচেও পরাজিত হলে বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে শততম পরাজয়ের স্বাদ পাবে।

টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর এ পর্যন্ত ১৩৩টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১৬টি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের পরাজয় ৯৯টি ম্যাচে। বাকি ১৮টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। অধিকাংশ ড্র’ই বৃষ্টির কল্যাণে।

তবে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু সেন্ট লুসিয়া এমন একটি স্থান, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিল ম্যাচটি।

২০০৪ সালের স্মরনীয় ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তেই নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্রয়ের মাধ্যমে হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিক ক্যারিবীয়ানরা।

এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নটিই অনুরাগিদের এই ম্যাচের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের বিপর্যয়ের মাসুল দেয়ার পরও সেখানে কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। বিশেষ করে পেসারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। টপ অর্ডারে এক অথবা দুইজন ব্যাটার দাঁড়িয়ে যেতে পারলে ম্যাচটি হয়তোবা জিততেও পারতো বাংলাদেশ।

সুতরাং প্রথম টেস্টের পর সাকিবের দেয়া ইঙ্গিতটিই হবে প্রথম ও প্রধান বিষয়। সাকিব বলেছেন, নিজেদেরকে আরও ভালোভাবে মেলে ধরতে হবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলাটা কোনভাবেই ভালো কিছু নয়। প্রথম ওই সেশনটিই আমাদের একেবারেই শেষ করে দিয়েছে। আমরা এতো বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলাম যেখান থেকে বোলারদের আর কিছু করার ছিল না। অথচ বোলাররা সবাই আন্তরকিতার সঙ্গে বল করে গেছেন।

এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তন্মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। হেরেছে ১৩টি ম্যাচে। বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

এদিকে টাইগার ব্যাটিং লাইন আপে বড় চিন্তা মোমিনুল হকের ব্যাটিং। নির্ভরযোগ্য ওই ব্যাটার টানা নয় ইনিংসে দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই ইনিংস থেকে তার সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে শুন্য ও ৪ রান। মোমিনুল ইচ্ছে করলে বিরতি নিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাকিব। তবে সাকিবের ধারণার সঙ্গে একমত হয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সাবেক অধিনায়ককে আসন্ন ম্যাচের বাইরে রাখবেন কিনা সেটি এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।

ইতোমধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডের জন্য ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ও পেসার শরিফুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যানেজমেন্ট চাইলে সিরিজের দ্বিতীয় ও গুরুত্বপুর্ন ফাইনাল ম্যাচে পরিবর্তন এনে একাদশ সাজাতে পারবে। তবে একটা পরিবর্তন মোটামুটি নিশ্চিত। তা হলো নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় এনামুল হক বিজয়ের একাদশে ঠাঁই পাওয়া।

শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২ , ১০ আষাড় ১৪২৮ ২৪ জিলকদ ১৪৪৩

দ্বিতীয় টেস্টে শুরু আজ

আত্মবিশ্বাসের খোঁজে টাইগাররা

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

নিউজিল্যান্ড সফরে একটা টেস্ট ম্যাচে জয়ের বাইরে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্য একেবারে তলানিতে। দলের এই ব্যর্থতার মূল কারণ টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। হারতে হারতে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটাও নেমেছে তলানিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় সেন্ট লুসিয়ায় ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার সময়ে টাইগারদের মূল লক্ষ্যটাই হবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার, সেই সঙ্গে থাকবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য।

সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারি বাংলাদেশের ৭ উইকেটে পরাজয়ের পেছনে ছিল টাইগার ব্যাটিং লাইন আপের চরম ব্যর্থতা। মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া টাইগারদের প্রথম ইনিংসে অর্ধেক রানই ছিল তৃতীয় বারের মতো টেস্ট দলের নেতৃত্ব পাওয়া অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ওই ম্যাচে মাত্র ৪৫ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা।

টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করার কোন উপায়ই যেন খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫টি টেস্টে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা নিয়মিতভাবেই বজায় রেখেছে। সেটি হয় প্রথম ইনিংসে, না হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। ফলে পরাজয়ের লজ্জা মাথা পেতে নিতে হয়েছে দলটিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুই দফা ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটেছে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম টেস্টে ৫৩ ও দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।

এদিকে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের ভালো ব্যাটিং চাপে ফেলে দিয়েছিল সফরকারিদের। শেষ পর্যন্ত ড্র হয় ম্যাচটি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেই টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ২৪ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচেও পরাজিত হলে বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে শততম পরাজয়ের স্বাদ পাবে।

টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর এ পর্যন্ত ১৩৩টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১৬টি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের পরাজয় ৯৯টি ম্যাচে। বাকি ১৮টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। অধিকাংশ ড্র’ই বৃষ্টির কল্যাণে।

তবে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু সেন্ট লুসিয়া এমন একটি স্থান, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিল ম্যাচটি।

২০০৪ সালের স্মরনীয় ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তেই নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্রয়ের মাধ্যমে হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিক ক্যারিবীয়ানরা।

এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নটিই অনুরাগিদের এই ম্যাচের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের বিপর্যয়ের মাসুল দেয়ার পরও সেখানে কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। বিশেষ করে পেসারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। টপ অর্ডারে এক অথবা দুইজন ব্যাটার দাঁড়িয়ে যেতে পারলে ম্যাচটি হয়তোবা জিততেও পারতো বাংলাদেশ।

সুতরাং প্রথম টেস্টের পর সাকিবের দেয়া ইঙ্গিতটিই হবে প্রথম ও প্রধান বিষয়। সাকিব বলেছেন, নিজেদেরকে আরও ভালোভাবে মেলে ধরতে হবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলাটা কোনভাবেই ভালো কিছু নয়। প্রথম ওই সেশনটিই আমাদের একেবারেই শেষ করে দিয়েছে। আমরা এতো বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলাম যেখান থেকে বোলারদের আর কিছু করার ছিল না। অথচ বোলাররা সবাই আন্তরকিতার সঙ্গে বল করে গেছেন।

এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তন্মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। হেরেছে ১৩টি ম্যাচে। বাকি দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

এদিকে টাইগার ব্যাটিং লাইন আপে বড় চিন্তা মোমিনুল হকের ব্যাটিং। নির্ভরযোগ্য ওই ব্যাটার টানা নয় ইনিংসে দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই ইনিংস থেকে তার সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে শুন্য ও ৪ রান। মোমিনুল ইচ্ছে করলে বিরতি নিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাকিব। তবে সাকিবের ধারণার সঙ্গে একমত হয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সাবেক অধিনায়ককে আসন্ন ম্যাচের বাইরে রাখবেন কিনা সেটি এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।

ইতোমধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডের জন্য ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ও পেসার শরিফুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যানেজমেন্ট চাইলে সিরিজের দ্বিতীয় ও গুরুত্বপুর্ন ফাইনাল ম্যাচে পরিবর্তন এনে একাদশ সাজাতে পারবে। তবে একটা পরিবর্তন মোটামুটি নিশ্চিত। তা হলো নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় এনামুল হক বিজয়ের একাদশে ঠাঁই পাওয়া।