গোখাদ্যের দাম চড়া শঙ্কায় ৩ হাজার খামারি

সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও চড়া দামে গোখাদ্য কিনে গবাদিপশু লালন পালন করলেও আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল- আজহায় সে দাম পুষিয়ে নিতে পারবে কিনা শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। তাই অনেকে গোখাদ্য হিসেবে গম ভূষি কমিয়ে দিয়ে খাদ্য ব্যায় কমাতে ও উৎপাদন খরছ কমাতে শুকনো খড় ও উন্নত জাতের ঘাস খায়িয়ে গরু মোটাতাজা করছেন। চাঁদপুরের ডেইরি খামার ৯২৫ টি এবং গরু মোটাতাজাকরণ খামার ২ হাজার ২শ’ ১১টি।

চাঁদপুর ডেইরি খামারি হাসিবুল হাসান মুন্না বলেন, খুব ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। আগে যেখানে গমের ভূষির বস্তা ১১০০ টাকা ছিলো তা এখন ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। ঘাষের উপর নির্ভর করে ত চলা যায় না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বীগুন দামে গোখাদ্য কিনে খামার পরিচালনা করতে হচ্ছে।

গতকাল ২২ জুন বুধবার জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন উপলক্ষে নিরাপদ গবাদি পশুর গোশত উৎপাদনে চাঁদপুরে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা ও চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার।

আর জেলার ৮ উপজেলায় গবাদিপশু মজুদ আছে মাত্র ২৭ হাজার ৯৬১ টি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় খামারি রয়েছে ২ হাজার ৬৩৪ জন। ২৭ হাজার ৯৬১টি গবাদিপশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১২ হাজার ৫৩টি, বলদ ৫ হাজার ৭৭৩টি, গাভি ৩ হাজার ৩৩৩টি, মহিষ ২২টি, ছাগল ৬ হাজার ১২৯টি, ভেড়া ৫৩৫টি, অন্যান্য ১১৬টি। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৪১৩ জন খামারির ২ হাজার ৪৮১টি ষাড়, ২২৭টি বলদ, ৩৫৩টি গাভী, ৫৬১টি ছাগল রয়েছে। মতলব দক্ষিণে ১২৬ জন খামারির ৫৬৬টি ষাড়, ২১২টি বলদ, ১৬৬টি গাভী, ৩৮৬টি ছাগল, ৬৪টি বলদ ও অন্যান্য ১১৬টি প্রাণী রয়েছে।

মতলব উত্তরে ২৫৯ জন খামারির ৯৩৬টি ষাড়, ৪৬৮টি বলদ, ৩৬১টি গাভী, ৩৬১টি ছাগল, ১৪৯টি ভেড়া রয়েছে। কচুয়ায় ৪১৬ জন খামারির ২ হাজার ৫২টি ষাড়, ৬১২টি বলদ, ৫০৪টি গাভি, ১ হাজার ৩৭৫টি ছাগল ও ৯৬টি ভেড়া রয়েছে। শাহরাস্তিতে ৩৭৯ জন খামারির ১ হাজার ১৪৪টি ষাড়, ৮৪৭টি বলদ, ৬৯১টি গাভী, ২২টি মহিষ, ৩৫৫টি ছাগল, ১৯৬টি ভেড়া রয়েছে।

হাজীগঞ্জে ৪০৪ জন খামারির ২ হাজার ৮৩টি ষাড়, ৩ হাজার ৫টি বলদ, ৭৩২টি গাভী, ২ হাজার ৩৯৪টি ছাগল, ৩০টি ভেড়া রয়েছে। ফরিদগঞ্জে ৩৫৭ জন খামারির ১ হাজার ৮৮১টি ষাড়, ১৫৫টি বলদ, ২৪১টি গাভী, ৩৫৩টি ছাগল রয়েছে।

হাইমচরে ২৮০ জন খামারির ৯১০টি ষাড়, ২৮৭টি বলদ, ২৮৫টি গাভি, ৩৪৪ টি ছাগল রয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের ডেইরি ফার্ম মালিক আলাউদ্দিন বেপারী বলেন, গরুগুলোকে চড়া দামের গোখাদ্য খাওয়াতে হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। বন্যা না হলে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো থাকলেও চড়া দামে খায়িয়ে পরে তা পুষিয়ে নিতে পারবো কিনা শঙ্কায় আছি। তাই সরকারকে গোখাদ্যের মূল্য নির্ধারণে আমরা আরো একটু সহনশীল হওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এসব বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ডা. জুলহাস আহমেদ বলেন, আমরা খামারিদের গোখাদ্যে গম ভূষির বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাষ চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা আমাদের তালিকার প্রায় সবারই ৫টির অধিক গবাদিপশু রয়েছে। এছাড়াও যারা ১-২টি গবাদিপশু পালন করেন তাদেরকেও একই পরামর্শ দিচ্ছি। যদি খামারিরা বাজারের গোখাদ্যে জোর কমিয়ে শুকনো খর ও উন্নতাজাতের ঘাস খাইয়ে গবাদি পশু লালন পালন করেন। তাহলে আশা করছি কোরবানি ঈদে তারা গরু বিক্রিতে করোনার ধকল সামলে উঠে সব রকমের শঙ্কা কাটাতে পারবেন।

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ , ১১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

গোখাদ্যের দাম চড়া শঙ্কায় ৩ হাজার খামারি

প্রতিনিধি, চাঁদপুর

image

চাঁদপুর : খামারে গরু পরিচর্যারত কৃষক -সংবাদ

সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও চড়া দামে গোখাদ্য কিনে গবাদিপশু লালন পালন করলেও আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল- আজহায় সে দাম পুষিয়ে নিতে পারবে কিনা শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। তাই অনেকে গোখাদ্য হিসেবে গম ভূষি কমিয়ে দিয়ে খাদ্য ব্যায় কমাতে ও উৎপাদন খরছ কমাতে শুকনো খড় ও উন্নত জাতের ঘাস খায়িয়ে গরু মোটাতাজা করছেন। চাঁদপুরের ডেইরি খামার ৯২৫ টি এবং গরু মোটাতাজাকরণ খামার ২ হাজার ২শ’ ১১টি।

চাঁদপুর ডেইরি খামারি হাসিবুল হাসান মুন্না বলেন, খুব ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। আগে যেখানে গমের ভূষির বস্তা ১১০০ টাকা ছিলো তা এখন ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। ঘাষের উপর নির্ভর করে ত চলা যায় না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বীগুন দামে গোখাদ্য কিনে খামার পরিচালনা করতে হচ্ছে।

গতকাল ২২ জুন বুধবার জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন উপলক্ষে নিরাপদ গবাদি পশুর গোশত উৎপাদনে চাঁদপুরে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা ও চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার।

আর জেলার ৮ উপজেলায় গবাদিপশু মজুদ আছে মাত্র ২৭ হাজার ৯৬১ টি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় খামারি রয়েছে ২ হাজার ৬৩৪ জন। ২৭ হাজার ৯৬১টি গবাদিপশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১২ হাজার ৫৩টি, বলদ ৫ হাজার ৭৭৩টি, গাভি ৩ হাজার ৩৩৩টি, মহিষ ২২টি, ছাগল ৬ হাজার ১২৯টি, ভেড়া ৫৩৫টি, অন্যান্য ১১৬টি। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৪১৩ জন খামারির ২ হাজার ৪৮১টি ষাড়, ২২৭টি বলদ, ৩৫৩টি গাভী, ৫৬১টি ছাগল রয়েছে। মতলব দক্ষিণে ১২৬ জন খামারির ৫৬৬টি ষাড়, ২১২টি বলদ, ১৬৬টি গাভী, ৩৮৬টি ছাগল, ৬৪টি বলদ ও অন্যান্য ১১৬টি প্রাণী রয়েছে।

মতলব উত্তরে ২৫৯ জন খামারির ৯৩৬টি ষাড়, ৪৬৮টি বলদ, ৩৬১টি গাভী, ৩৬১টি ছাগল, ১৪৯টি ভেড়া রয়েছে। কচুয়ায় ৪১৬ জন খামারির ২ হাজার ৫২টি ষাড়, ৬১২টি বলদ, ৫০৪টি গাভি, ১ হাজার ৩৭৫টি ছাগল ও ৯৬টি ভেড়া রয়েছে। শাহরাস্তিতে ৩৭৯ জন খামারির ১ হাজার ১৪৪টি ষাড়, ৮৪৭টি বলদ, ৬৯১টি গাভী, ২২টি মহিষ, ৩৫৫টি ছাগল, ১৯৬টি ভেড়া রয়েছে।

হাজীগঞ্জে ৪০৪ জন খামারির ২ হাজার ৮৩টি ষাড়, ৩ হাজার ৫টি বলদ, ৭৩২টি গাভী, ২ হাজার ৩৯৪টি ছাগল, ৩০টি ভেড়া রয়েছে। ফরিদগঞ্জে ৩৫৭ জন খামারির ১ হাজার ৮৮১টি ষাড়, ১৫৫টি বলদ, ২৪১টি গাভী, ৩৫৩টি ছাগল রয়েছে।

হাইমচরে ২৮০ জন খামারির ৯১০টি ষাড়, ২৮৭টি বলদ, ২৮৫টি গাভি, ৩৪৪ টি ছাগল রয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের ডেইরি ফার্ম মালিক আলাউদ্দিন বেপারী বলেন, গরুগুলোকে চড়া দামের গোখাদ্য খাওয়াতে হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। বন্যা না হলে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো থাকলেও চড়া দামে খায়িয়ে পরে তা পুষিয়ে নিতে পারবো কিনা শঙ্কায় আছি। তাই সরকারকে গোখাদ্যের মূল্য নির্ধারণে আমরা আরো একটু সহনশীল হওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এসব বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ডা. জুলহাস আহমেদ বলেন, আমরা খামারিদের গোখাদ্যে গম ভূষির বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাষ চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা আমাদের তালিকার প্রায় সবারই ৫টির অধিক গবাদিপশু রয়েছে। এছাড়াও যারা ১-২টি গবাদিপশু পালন করেন তাদেরকেও একই পরামর্শ দিচ্ছি। যদি খামারিরা বাজারের গোখাদ্যে জোর কমিয়ে শুকনো খর ও উন্নতাজাতের ঘাস খাইয়ে গবাদি পশু লালন পালন করেন। তাহলে আশা করছি কোরবানি ঈদে তারা গরু বিক্রিতে করোনার ধকল সামলে উঠে সব রকমের শঙ্কা কাটাতে পারবেন।