এটা সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ : বসুনিয়া

পদ্মা সেতু নির্মাণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিছুদিন পরপরই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ভাবতে হয়েছে নতুন করে। তারপরও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় এ কাজ করা গেছে, তাকে সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ বলে বলছেন পদ্মা সেতু তৈরিতে সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া।

বেশি বৃষ্টি হলে দেশের অন্য নদীর তুলনায় পদ্মায় স্রোত ও ঘনত্ব বেড়ে যায়। পলি জমে অনেক বেশি। সে কারণে নৌযান চলতে যাতে সমস্যা না হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান শামীম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেন, ‘এক বছরে ২৫-৩০ ফুট পলি জমে পদ্মায়। দুই তলার সমান পলি জমে গেলে বড় নৌকা যাবে কী করে? সেজন্য পানি থেকে ৭০ ফুট উঁচুতে সেতু করা হয়েছে।’

দুই পারে দুটি পিয়ার (খুঁটি)ও সেতুর নিচে নদীতে ৪০টি পিয়ার বসানো হয়েছে। সেতুকে টেকসই করতে নদীর অংশের খুঁটির নিচে চীন থেকে আনা তিন মিটার ব্যাসার্ধের ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত ইস্পাতের পাইল বসানো হয়েছে। যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও মোটা পাইল বলে জানান বসুনিয়া।

‘এটা করতে আমাদের এক বছরের চেয়ে সময় বেশি লেগেছিল। কাজটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেতুর মাওয়া অংশে পানির গভীরতা বেশি থাকায় পাইল বসাতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে এক জায়গায় দেখলাম পাইলের মাথায় মাটি ভালো না। মাটি একটু দুর্বল। ওই মাটির মধ্যে ক্লে আছে। এই ক্লে লেয়ার পার করে দিতে হবে, নইলে ক্লে লেয়ারের তিন মিটার ওপরে পাইল ছাড়তে হবে। তিন মিটার উপরে ছাড়তে হলে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরা তখন ৬টার জায়গায় ৭টা পাইলে গেলাম। জাপানের দু’জন সয়েল এক্সপার্টসহ আরও কয়েকজন দেখলাম। পরে ২২টা পিয়ারে ৭টা করে পাইল দেয়া হয়েছে।’

‘টেকনিক্যাল ভিউ থেকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল’ বলেও জানান তিনি। শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘পাইলগুলো করার পরে ওয়েল্ডিংয়ে কোন ক্র্যাক আছে কি-না সেটার জন্য এক্সরে করতে হয়। সেটা করা হয়েছে। তৈরির পর গুণগত মান আবার যাচাই করা হয়েছে। কোথাও কোন গাফিলতির স্কোপ নেই। চীনারা কাজ পেয়ে জানায়, স্টিল দিয়ে কাজ করবে না। স্টিলের প্লেট কেটে কেটে করবে। সবকিছু চীনে হবে, সেখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল হবে।’

এই সেতু নির্মাণ কাজে বেগ পেতে হলেও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কাজ করায় সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের এই এমিরেটাস অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘নদীশাসনে বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, যা করেছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের নামে অনেক অভিযোগ আসল। আমরা ক্রসচেক করে দেখলাম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নদীশাসনে তাদের অভিজ্ঞতা ভালো। তিনটা কোম্পানি বিট করল, তারা প্রথম হলো। আমরা তাদেরকেই কাজ দিলাম।’

সেতুতে যে ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোথাও ব্যবহার হয়নি। এসব বিয়ারিং ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুকে টিকিয়ে রাখবে। সেতুর সব উপকরণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘চীনে এর কোয়ালিটি টেস্টের সময় ফুল স্কেলে লোড দেয়ার পরে এখানে ভূমিকম্প দেখানো হয়। অনেকখানি নড়ে আবার জায়গায় চলে আসল। বিয়ারিং খুলে দেখা হলো ভেতরে কোন ফাটল, স্ক্র্যাচ নেই। তিনবার করা হলো এমন। তারপরও আমরা সেটা আমেরিকায় পাঠিয়ে টেস্ট করাই।’

পদ্মা সেতুর খুঁটিতে ফেরির ধাক্কার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই পিয়ারের মাঝে পরিষ্কার সাড়ে ৪০০ ফুট জায়গা আছে। ফেরির প্রস্থ ৫০ ফুট। তাহলে ধাক্কা লাগবে কেন? কোণায় না লেগে যদি পেটে সরাসরি লাগত, তখন ফেরিটা উল্টে যেত। পিয়ার তো ফেরির চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী। পিয়ারের কিছু হবে না।’

সেতুতে ব্যবহৃত উপকরণ সর্ম্পকে তিনি জানান, সেতুতে প্রায় ৩ লাখ টন রড, আড়াই লাখ টন সিমেন্ট, সাড়ে ৩ লাখ টন বালু, প্রায় ২ হাজার ১০০ টন বিটুমিন লেগেছে। এসব উপকরণ দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০টির বেশি দেশের জনবল, যন্ত্র ও উপকরণ ব্যবহার হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাড়ে ৩ হাজার টন ওজনের হ্যামার এই সেতুতে ব্যবহার হয়েছে। ক্রেন ৪ হাজার টনের। সেতুতে ব্যবহার করা কংক্রিটের কিছু পাথর দেশ থেকে নেয়া হয়েছে। বেশিরভাগই আনা হয়েছে ভারত, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করে তারপর কাজ করা হয়েছে। চীন থেকে বিশেষ কিছু রড আনা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে অ্যালুমিনিয়াম নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, স্টিলের কোথাও মরিচা ধরল কি-না, এগুলো সব দেখা হবে। কোন সময় কী মেইনটেনেন্স করা হবে, তা একেবারে বিস্তারিতভাবে দিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রেগুলার মেইনটেন্সের জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শামীম জেড বসুনিয়া আরও জানান, পদ্মার উপর সড়কপথ তৈরি হয়ে গেলেও রেলযাত্রার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। প্রকল্পের কাজ শেষে আগামী বছর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আসবে পদ্মা বহুমুখী সেতু। পুরো কাঠামোকে টেকসই রাখতে ছোট ছোট বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

পদ্মার বুকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতু নিয়ে আলোচনা চলছে অন্তত দুই দশক ধরে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই সে সময়ের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তির বিষয় ছিল, আর্থিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। এখানে প্রধানমন্ত্রী তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে এটি সুরাহা করলেন।’

পদ্মায় যে সেতু দুই পারকে বাঁধলো, তার নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা আর কারিগরি চ্যালেঞ্জ সামলাতে গিয়ে বিশ্বের সামনে বেশ কিছু নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

ভূ-প্রাকৃতিক কারণে খরস্রোতা পদ্মার নদীর দুই পারকে একসঙ্গে বাঁধার চ্যালেঞ্চ মোকাবিলা করে নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে, কারিগরি চ্যালেঞ্জ সামলিয়ে গোটা বিশ্বের সামনে বেশ কিছু নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া নিজেদের অর্থ এবং ব্যবস্থাপনায় ‘জটিল’ এই প্রকল্পের কাজ হওয়ায় ভবিষ্যতে বড় নির্মাণযজ্ঞ সামলানো সহজ হবে বলে মনে করেন এই এমিরেটাস অধ্যাপক।

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ , ১১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

এটা সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ : বসুনিয়া

শাফিউল ইমরান

পদ্মা সেতু নির্মাণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিছুদিন পরপরই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ভাবতে হয়েছে নতুন করে। তারপরও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় এ কাজ করা গেছে, তাকে সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ বলে বলছেন পদ্মা সেতু তৈরিতে সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া।

বেশি বৃষ্টি হলে দেশের অন্য নদীর তুলনায় পদ্মায় স্রোত ও ঘনত্ব বেড়ে যায়। পলি জমে অনেক বেশি। সে কারণে নৌযান চলতে যাতে সমস্যা না হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান শামীম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেন, ‘এক বছরে ২৫-৩০ ফুট পলি জমে পদ্মায়। দুই তলার সমান পলি জমে গেলে বড় নৌকা যাবে কী করে? সেজন্য পানি থেকে ৭০ ফুট উঁচুতে সেতু করা হয়েছে।’

দুই পারে দুটি পিয়ার (খুঁটি)ও সেতুর নিচে নদীতে ৪০টি পিয়ার বসানো হয়েছে। সেতুকে টেকসই করতে নদীর অংশের খুঁটির নিচে চীন থেকে আনা তিন মিটার ব্যাসার্ধের ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত ইস্পাতের পাইল বসানো হয়েছে। যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও মোটা পাইল বলে জানান বসুনিয়া।

‘এটা করতে আমাদের এক বছরের চেয়ে সময় বেশি লেগেছিল। কাজটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেতুর মাওয়া অংশে পানির গভীরতা বেশি থাকায় পাইল বসাতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে এক জায়গায় দেখলাম পাইলের মাথায় মাটি ভালো না। মাটি একটু দুর্বল। ওই মাটির মধ্যে ক্লে আছে। এই ক্লে লেয়ার পার করে দিতে হবে, নইলে ক্লে লেয়ারের তিন মিটার ওপরে পাইল ছাড়তে হবে। তিন মিটার উপরে ছাড়তে হলে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরা তখন ৬টার জায়গায় ৭টা পাইলে গেলাম। জাপানের দু’জন সয়েল এক্সপার্টসহ আরও কয়েকজন দেখলাম। পরে ২২টা পিয়ারে ৭টা করে পাইল দেয়া হয়েছে।’

‘টেকনিক্যাল ভিউ থেকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল’ বলেও জানান তিনি। শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘পাইলগুলো করার পরে ওয়েল্ডিংয়ে কোন ক্র্যাক আছে কি-না সেটার জন্য এক্সরে করতে হয়। সেটা করা হয়েছে। তৈরির পর গুণগত মান আবার যাচাই করা হয়েছে। কোথাও কোন গাফিলতির স্কোপ নেই। চীনারা কাজ পেয়ে জানায়, স্টিল দিয়ে কাজ করবে না। স্টিলের প্লেট কেটে কেটে করবে। সবকিছু চীনে হবে, সেখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল হবে।’

এই সেতু নির্মাণ কাজে বেগ পেতে হলেও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কাজ করায় সক্ষমতা ও সাহস দেখানোর বড় সুযোগ বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের এই এমিরেটাস অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘নদীশাসনে বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, যা করেছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের নামে অনেক অভিযোগ আসল। আমরা ক্রসচেক করে দেখলাম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নদীশাসনে তাদের অভিজ্ঞতা ভালো। তিনটা কোম্পানি বিট করল, তারা প্রথম হলো। আমরা তাদেরকেই কাজ দিলাম।’

সেতুতে যে ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোথাও ব্যবহার হয়নি। এসব বিয়ারিং ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুকে টিকিয়ে রাখবে। সেতুর সব উপকরণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘চীনে এর কোয়ালিটি টেস্টের সময় ফুল স্কেলে লোড দেয়ার পরে এখানে ভূমিকম্প দেখানো হয়। অনেকখানি নড়ে আবার জায়গায় চলে আসল। বিয়ারিং খুলে দেখা হলো ভেতরে কোন ফাটল, স্ক্র্যাচ নেই। তিনবার করা হলো এমন। তারপরও আমরা সেটা আমেরিকায় পাঠিয়ে টেস্ট করাই।’

পদ্মা সেতুর খুঁটিতে ফেরির ধাক্কার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই পিয়ারের মাঝে পরিষ্কার সাড়ে ৪০০ ফুট জায়গা আছে। ফেরির প্রস্থ ৫০ ফুট। তাহলে ধাক্কা লাগবে কেন? কোণায় না লেগে যদি পেটে সরাসরি লাগত, তখন ফেরিটা উল্টে যেত। পিয়ার তো ফেরির চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী। পিয়ারের কিছু হবে না।’

সেতুতে ব্যবহৃত উপকরণ সর্ম্পকে তিনি জানান, সেতুতে প্রায় ৩ লাখ টন রড, আড়াই লাখ টন সিমেন্ট, সাড়ে ৩ লাখ টন বালু, প্রায় ২ হাজার ১০০ টন বিটুমিন লেগেছে। এসব উপকরণ দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০টির বেশি দেশের জনবল, যন্ত্র ও উপকরণ ব্যবহার হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাড়ে ৩ হাজার টন ওজনের হ্যামার এই সেতুতে ব্যবহার হয়েছে। ক্রেন ৪ হাজার টনের। সেতুতে ব্যবহার করা কংক্রিটের কিছু পাথর দেশ থেকে নেয়া হয়েছে। বেশিরভাগই আনা হয়েছে ভারত, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করে তারপর কাজ করা হয়েছে। চীন থেকে বিশেষ কিছু রড আনা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে অ্যালুমিনিয়াম নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, স্টিলের কোথাও মরিচা ধরল কি-না, এগুলো সব দেখা হবে। কোন সময় কী মেইনটেনেন্স করা হবে, তা একেবারে বিস্তারিতভাবে দিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রেগুলার মেইনটেন্সের জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শামীম জেড বসুনিয়া আরও জানান, পদ্মার উপর সড়কপথ তৈরি হয়ে গেলেও রেলযাত্রার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। প্রকল্পের কাজ শেষে আগামী বছর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আসবে পদ্মা বহুমুখী সেতু। পুরো কাঠামোকে টেকসই রাখতে ছোট ছোট বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

পদ্মার বুকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতু নিয়ে আলোচনা চলছে অন্তত দুই দশক ধরে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই সে সময়ের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অধ্যাপক বসুনিয়া বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তির বিষয় ছিল, আর্থিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। এখানে প্রধানমন্ত্রী তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে এটি সুরাহা করলেন।’

পদ্মায় যে সেতু দুই পারকে বাঁধলো, তার নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা আর কারিগরি চ্যালেঞ্জ সামলাতে গিয়ে বিশ্বের সামনে বেশ কিছু নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

ভূ-প্রাকৃতিক কারণে খরস্রোতা পদ্মার নদীর দুই পারকে একসঙ্গে বাঁধার চ্যালেঞ্চ মোকাবিলা করে নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে, কারিগরি চ্যালেঞ্জ সামলিয়ে গোটা বিশ্বের সামনে বেশ কিছু নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া নিজেদের অর্থ এবং ব্যবস্থাপনায় ‘জটিল’ এই প্রকল্পের কাজ হওয়ায় ভবিষ্যতে বড় নির্মাণযজ্ঞ সামলানো সহজ হবে বলে মনে করেন এই এমিরেটাস অধ্যাপক।