আফগানিস্তানের দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বলছেন তাদের কাছে খাবার নেই, আশ্রয় নেই। কিন্তু সেখানে সম্ভাব্য কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকতিকা প্রদেশ। সেখানে ঘুরে দেখেছেন বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি প্রতিনিধি। সেখানকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা উঠে এসেছে তার প্রতিবেদনে।
আফগান ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করে রসদ সরবরাহ করলেও এটি বড় ধরনের একটি সংকট যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ সংকট আগে থেকেই দেশটিতে বিদ্যমান থাকা ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। এখানে অসহায় অবস্থায় পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো জাতিসংঘ সম্ভাব্য কলেরা প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে। কেরমানি পাকতিকা প্রদেশের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে জানাচ্ছেন, অনেক মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি-ঘরে খোঁজ করছেন তাদের নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কি না। আঘা জান নামে এক ব্যক্তি তার ভেঙে যাওয়া বাড়ির আবর্জনা সরিয়ে দেখছেন সেখানে কিছু আছে কি না। তার চোখে পানি। তিনি বলেন, এটি আমার ছেলের জুতা। জুতার ওপরের ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বলেন, তার তিনটা শিশু সন্তান এবং দুইজন স্ত্রী সবাই নিহত হয়েছেন কারণ ওই রাতে তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। যখন ভূমিকম্পটি হয় তখন আঘা জান দৌড়ে যান ঘরের মধ্যে, কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার কিছুই করার ছিল না। আমি আমার চাচাতো ভাই-বোনদের ডাকতে গিয়েছিলাম সাহায্য করার জন্য কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বের করতে সক্ষম হলাম ততক্ষণে সবাই মারা গেছে।’
আঘা জানের বাড়ি বারমাল জেলায়। পাকতিকা প্রদেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে এই জেলা অন্যতম। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন তিন হাজারের মতো মানুষ।
বারমালার এই স্থান থেকে সবচেয়ে কাছের বড় শহরের দূরত্ব তিন ঘণ্টার মতো। রাস্তা ধূলায় ভরা। আর প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার ফলে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষকে তালেবানের সেনাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এখানকার বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িঘর মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি। এবং সেগুলো ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবার স্বজন হারানোর শোকে বিহ্বল। হাবিব গুল নামের আরেকজন ব্যক্তি পাকিস্তানের করাচির বর্ডারের কাছে দিনমজুরের কাজ করেন। এই ভূমিকম্পের কথা শুনে তখন ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু এসে দেখেন তার ২০ জন আত্মীয় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন পৃথক পৃথক ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে কার নাম বলবো? আমার অনেক আত্মীয় নিহত হয়েছে। তিন বোন, বোনের সন্তানেরা, আমার সন্তান আরও ছোট শিশুরা মারা গেছে।’
প্রত্যেক গ্রামবাসী তাদের ক্ষয়ক্ষতি কি পরিমাণ হয়েছে সেটা দেখাচ্ছেন। কারণ তারা আশা করছেন এর ফলে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের নাম যোগ করা হবে। হাবিব গুল বিবিসিকে বলেছেন, ‘যদি বিশ্ববাসী আমাদের দিকে ভাইয়ের চোখ দিয়ে দেখে এবং সাহায্য করে, এখানে আমরা আমাদের জমিতে থেকে যেতে পারি। যদি তারা সাহায্য না করে তাহলে আমরা এই স্থান থেকে চলে যাবো।’
আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে কিন্তু সেগুলোতে এখন আর আহতদের বহন করা হচ্ছে না। বরং সেখানে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে। তালেবানের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এখন শত শত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ঘর প্রয়োজন। আঘা জান এবং তার বেঁচে যাওয়া একজন ছেলে মাটিতে খুঁটি পুঁতে তার ওপরে একটা ছাউনি দিয়ে বসে আছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁবুর নিচে বসবাস করছে। আফগান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো এখন ক্ষয়ক্ষতির কি পরিমাণ হয়েছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখছে। এদিকে, দুর্যোগকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে দেশটির তালেবান সরকার। তালেবানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডের এক মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মুয়াবিয়া জানান, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে কেউ আর আটকে নেই।
শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ , ১১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩
আফগানিস্তানের দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বলছেন তাদের কাছে খাবার নেই, আশ্রয় নেই। কিন্তু সেখানে সম্ভাব্য কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকতিকা প্রদেশ। সেখানে ঘুরে দেখেছেন বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি প্রতিনিধি। সেখানকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা উঠে এসেছে তার প্রতিবেদনে।
আফগান ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করে রসদ সরবরাহ করলেও এটি বড় ধরনের একটি সংকট যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ সংকট আগে থেকেই দেশটিতে বিদ্যমান থাকা ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। এখানে অসহায় অবস্থায় পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো জাতিসংঘ সম্ভাব্য কলেরা প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে। কেরমানি পাকতিকা প্রদেশের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে জানাচ্ছেন, অনেক মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি-ঘরে খোঁজ করছেন তাদের নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কি না। আঘা জান নামে এক ব্যক্তি তার ভেঙে যাওয়া বাড়ির আবর্জনা সরিয়ে দেখছেন সেখানে কিছু আছে কি না। তার চোখে পানি। তিনি বলেন, এটি আমার ছেলের জুতা। জুতার ওপরের ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বলেন, তার তিনটা শিশু সন্তান এবং দুইজন স্ত্রী সবাই নিহত হয়েছেন কারণ ওই রাতে তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। যখন ভূমিকম্পটি হয় তখন আঘা জান দৌড়ে যান ঘরের মধ্যে, কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার কিছুই করার ছিল না। আমি আমার চাচাতো ভাই-বোনদের ডাকতে গিয়েছিলাম সাহায্য করার জন্য কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বের করতে সক্ষম হলাম ততক্ষণে সবাই মারা গেছে।’
আঘা জানের বাড়ি বারমাল জেলায়। পাকতিকা প্রদেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে এই জেলা অন্যতম। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন তিন হাজারের মতো মানুষ।
বারমালার এই স্থান থেকে সবচেয়ে কাছের বড় শহরের দূরত্ব তিন ঘণ্টার মতো। রাস্তা ধূলায় ভরা। আর প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার ফলে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষকে তালেবানের সেনাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এখানকার বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িঘর মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি। এবং সেগুলো ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবার স্বজন হারানোর শোকে বিহ্বল। হাবিব গুল নামের আরেকজন ব্যক্তি পাকিস্তানের করাচির বর্ডারের কাছে দিনমজুরের কাজ করেন। এই ভূমিকম্পের কথা শুনে তখন ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু এসে দেখেন তার ২০ জন আত্মীয় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন পৃথক পৃথক ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে কার নাম বলবো? আমার অনেক আত্মীয় নিহত হয়েছে। তিন বোন, বোনের সন্তানেরা, আমার সন্তান আরও ছোট শিশুরা মারা গেছে।’
প্রত্যেক গ্রামবাসী তাদের ক্ষয়ক্ষতি কি পরিমাণ হয়েছে সেটা দেখাচ্ছেন। কারণ তারা আশা করছেন এর ফলে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের নাম যোগ করা হবে। হাবিব গুল বিবিসিকে বলেছেন, ‘যদি বিশ্ববাসী আমাদের দিকে ভাইয়ের চোখ দিয়ে দেখে এবং সাহায্য করে, এখানে আমরা আমাদের জমিতে থেকে যেতে পারি। যদি তারা সাহায্য না করে তাহলে আমরা এই স্থান থেকে চলে যাবো।’
আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে কিন্তু সেগুলোতে এখন আর আহতদের বহন করা হচ্ছে না। বরং সেখানে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে। তালেবানের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এখন শত শত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ঘর প্রয়োজন। আঘা জান এবং তার বেঁচে যাওয়া একজন ছেলে মাটিতে খুঁটি পুঁতে তার ওপরে একটা ছাউনি দিয়ে বসে আছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁবুর নিচে বসবাস করছে। আফগান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো এখন ক্ষয়ক্ষতির কি পরিমাণ হয়েছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখছে। এদিকে, দুর্যোগকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে দেশটির তালেবান সরকার। তালেবানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডের এক মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মুয়াবিয়া জানান, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে কেউ আর আটকে নেই।