ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যার্তরা

সিলেট-সুনামগঞ্জের পানি ক্ষতচিহ্ন রেখে ধীরগতিতে নামলেও দুর্ভোগের শেষ নেই বন্যার্তদের। অপ্রতুল ত্রাণের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ভুগছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকটে। বাড়ছে পানিবহিত রোগ। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় সরকারি পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ত্রাণ সহায়তা করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরলেও বন্যার পানিতে সহায়-সম্বল হারিয়ে তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলাগুলােতে যারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভাটিপাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান বলেন, তার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, এক বস্তা চাল, শিশুর পড়াশোনার জন্য বাঁশের ছিদ্র করে ব্যাংকে রাখা জমানো টাকা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানসহ ১১ সদস্য নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই দুশ্চিন্তা এখন তার।

গোলাপগঞ্জের বাঘার শাহারুল ইসলাম বলেন, তাদের এখানে রাস্তায় এখনও হাঁটু পানি। অনেক মানুষের ঘর-বাড়ি ভেসে গেছে। তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছেন। এদিকে বিশ্বনাথ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কই ধসে, ভেঙে যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এখনও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন হাজার হাজার দুর্গত পরিবার। তবে এসব পরিবারের মানুষের কপালে একটু খাবার জুটলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে।

খাজাঞ্চি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে লামাকাজী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে রেললাইন ঝুলে আছে। ফলে শিল্পনগরী খ্যাত ছাতকের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগও রয়েছে বিচ্ছিন্ন।

এদিকে বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, সিলেট জেলা ও মহানগরে ১১৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরও ছয়জনের শরীরে শনাক্ত করা হয়েছে চর্ম রোগ। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ১৩৭টি মেডিকেল টিম মাঠে নামানো হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এই হিসাবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সিলেট অঞ্চলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শুধু আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

তাশরিফকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ

সিলেট-সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসে নজর কেড়েছেন তরুণ সংগীতশিল্পী তাশরীফ খান। ফেইসবুক লাইভে আহ্বান জানিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলেছেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে খাবার ও অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন বানভাসিদের হাতে। কিন্তু ২২ জুন সিলেটের একটি জায়গায় চা খেতে গিয়ে সেই তাশরীফই কিনা পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। খেয়েছেন ধমকও। বৃহস্পতিবার ফেইসবুক লাইভে এসে সেই ঘটনার বর্ণনা দেন তরুণ এই গায়ক। সেই লাইভের পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে তাশরীফকে ফোন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, এখন থেকে সিলেটে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে পুলিশ। পাশাপাশি যে পুলিশ সদস্য তাকে ধমক দিয়েছেন তাকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গতকাল দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানবিক তরুণ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া তাশরীফ। এই গায়ক বলেন, ‘সেই লাইভের পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে আমি ফোন পেয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, আমাদের আগামী কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। রাতেই একজন এসআই এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

তাশরীফ আরও যোগ করেন, ‘সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা এবং কোতয়ালি থানার টহল গাড়ি একটু পরপর আমাদের কাছে আসছে। আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ত্রাণের নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেদিন যে পুলিশ সদস্য আমাকে ধমক দিয়েছেন পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে খুঁজে বের করে বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ , ১১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যার্তরা

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

image

সিলেট : বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি নামার পর ধান শুকাতে ব্যস্ত কৃষক পরিবার -সংবাদ

সিলেট-সুনামগঞ্জের পানি ক্ষতচিহ্ন রেখে ধীরগতিতে নামলেও দুর্ভোগের শেষ নেই বন্যার্তদের। অপ্রতুল ত্রাণের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ভুগছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকটে। বাড়ছে পানিবহিত রোগ। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় সরকারি পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ত্রাণ সহায়তা করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরলেও বন্যার পানিতে সহায়-সম্বল হারিয়ে তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলাগুলােতে যারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভাটিপাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান বলেন, তার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, এক বস্তা চাল, শিশুর পড়াশোনার জন্য বাঁশের ছিদ্র করে ব্যাংকে রাখা জমানো টাকা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানসহ ১১ সদস্য নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই দুশ্চিন্তা এখন তার।

গোলাপগঞ্জের বাঘার শাহারুল ইসলাম বলেন, তাদের এখানে রাস্তায় এখনও হাঁটু পানি। অনেক মানুষের ঘর-বাড়ি ভেসে গেছে। তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছেন। এদিকে বিশ্বনাথ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কই ধসে, ভেঙে যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এখনও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন হাজার হাজার দুর্গত পরিবার। তবে এসব পরিবারের মানুষের কপালে একটু খাবার জুটলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে।

খাজাঞ্চি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে লামাকাজী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে রেললাইন ঝুলে আছে। ফলে শিল্পনগরী খ্যাত ছাতকের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগও রয়েছে বিচ্ছিন্ন।

এদিকে বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, সিলেট জেলা ও মহানগরে ১১৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরও ছয়জনের শরীরে শনাক্ত করা হয়েছে চর্ম রোগ। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ১৩৭টি মেডিকেল টিম মাঠে নামানো হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এই হিসাবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সিলেট অঞ্চলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শুধু আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

তাশরিফকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ

সিলেট-সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসে নজর কেড়েছেন তরুণ সংগীতশিল্পী তাশরীফ খান। ফেইসবুক লাইভে আহ্বান জানিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলেছেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে খাবার ও অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন বানভাসিদের হাতে। কিন্তু ২২ জুন সিলেটের একটি জায়গায় চা খেতে গিয়ে সেই তাশরীফই কিনা পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। খেয়েছেন ধমকও। বৃহস্পতিবার ফেইসবুক লাইভে এসে সেই ঘটনার বর্ণনা দেন তরুণ এই গায়ক। সেই লাইভের পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে তাশরীফকে ফোন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, এখন থেকে সিলেটে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে পুলিশ। পাশাপাশি যে পুলিশ সদস্য তাকে ধমক দিয়েছেন তাকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গতকাল দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানবিক তরুণ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া তাশরীফ। এই গায়ক বলেন, ‘সেই লাইভের পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে আমি ফোন পেয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, আমাদের আগামী কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। রাতেই একজন এসআই এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

তাশরীফ আরও যোগ করেন, ‘সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা এবং কোতয়ালি থানার টহল গাড়ি একটু পরপর আমাদের কাছে আসছে। আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ত্রাণের নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেদিন যে পুলিশ সদস্য আমাকে ধমক দিয়েছেন পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে খুঁজে বের করে বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’