পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানালো বিশ্বব্যাংক

অর্থায়ন করবে বলে কথা দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পেছন থেকে সরে যাওয়া বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গতকাল পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন এই অভিনন্দন জানান। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য ‘বিশাল অর্জন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পুরো বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় বিশ্বব্যাংক আনন্দিত। এ জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক অভিনন্দন জানাচ্ছে। সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখানে সেটাই উদযাপন করতে এসেছি। এ সেতু নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ খুবই গর্বিত। একই সঙ্গে আমরাও গর্বিত। সেটাই আসল কথা। আমরা এখন সামনে তাকাতে চাই। কীভাবে এ সেতু মানুষের কাজে আসবে সেটা দেখতে মুখিয়ে আছি। সবাই এটা নিয়ে আনন্দিত। এ কারণেই আমরা সবাই এখানে এসেছি।’

সেতুুর গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমরা এই সেতুর গুরুত্ব বুঝতে পারি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ?ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে। পদ্মা সেতুর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভ্রমণের সময় কমে আসবে। কম সময়ে কৃষক তার খামারে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে পারবেন। সবমিলে পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে, দারিদ্র্যও কমিয়ে আনবে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন উদ্যোগ নেয়, তখন ঋণচুক্তি করা হয় দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবির সঙ্গে। ২০১১ সালের এপ্রিলে ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প করতে ঋণচুক্তি করে সরকার। এর মধ্যে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের।

তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ হয়েছে - এমন একটি অভিযোগ তোলে দাতা সংস্থাটি। বলা হয়, এই দুর্নীতিচেষ্টায় লাভালিন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা জড়িত।

সে সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে তদন্ত করেন। তারা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ব্যবস্থায় রাজি হয়নি।

যদিও সে সময়ের সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। সরে যান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তবে তার পদত্যাগেও বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ফেরেনি।

ওই বছরের জুনেই প্রকল্প থেকে সরে যায় দাতা সংস্থাটি। পরে জাইকা, এডিবি, আইডিবি সরে দাঁড়ালে প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।

এই ঘটনায় কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেতুর কাজ শুরুর দুই বছর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার আদালত রায় দেয় পদ্মা সেতুতে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ বায়বীয়, গালগপ্প।

সে সময় কানাডার পত্রিকা টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, রায়ের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না। কানাডার সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক ইয়ান নর্দেইমার এ রায় দেন।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে টেম্বন বলেন, ‘এ সেতুর কারণে বাণিজ্য বাড়বে। এছাড়াও সেতুটি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরও অনেক সুবিধা নিয়ে আসবে যা দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংক ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী। আমরা বাংলাদেশকে সবসময় সমর্থন করে এসেছি। ২০১১ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক ২২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে, তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২ , ১২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানালো বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

অর্থায়ন করবে বলে কথা দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পেছন থেকে সরে যাওয়া বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গতকাল পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন এই অভিনন্দন জানান। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য ‘বিশাল অর্জন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পুরো বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় বিশ্বব্যাংক আনন্দিত। এ জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক অভিনন্দন জানাচ্ছে। সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখানে সেটাই উদযাপন করতে এসেছি। এ সেতু নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ খুবই গর্বিত। একই সঙ্গে আমরাও গর্বিত। সেটাই আসল কথা। আমরা এখন সামনে তাকাতে চাই। কীভাবে এ সেতু মানুষের কাজে আসবে সেটা দেখতে মুখিয়ে আছি। সবাই এটা নিয়ে আনন্দিত। এ কারণেই আমরা সবাই এখানে এসেছি।’

সেতুুর গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমরা এই সেতুর গুরুত্ব বুঝতে পারি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ?ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে। পদ্মা সেতুর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভ্রমণের সময় কমে আসবে। কম সময়ে কৃষক তার খামারে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে পারবেন। সবমিলে পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে, দারিদ্র্যও কমিয়ে আনবে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন উদ্যোগ নেয়, তখন ঋণচুক্তি করা হয় দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবির সঙ্গে। ২০১১ সালের এপ্রিলে ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প করতে ঋণচুক্তি করে সরকার। এর মধ্যে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের।

তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ হয়েছে - এমন একটি অভিযোগ তোলে দাতা সংস্থাটি। বলা হয়, এই দুর্নীতিচেষ্টায় লাভালিন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা জড়িত।

সে সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে তদন্ত করেন। তারা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ব্যবস্থায় রাজি হয়নি।

যদিও সে সময়ের সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। সরে যান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তবে তার পদত্যাগেও বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ফেরেনি।

ওই বছরের জুনেই প্রকল্প থেকে সরে যায় দাতা সংস্থাটি। পরে জাইকা, এডিবি, আইডিবি সরে দাঁড়ালে প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।

এই ঘটনায় কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেতুর কাজ শুরুর দুই বছর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার আদালত রায় দেয় পদ্মা সেতুতে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ বায়বীয়, গালগপ্প।

সে সময় কানাডার পত্রিকা টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, রায়ের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না। কানাডার সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক ইয়ান নর্দেইমার এ রায় দেন।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে টেম্বন বলেন, ‘এ সেতুর কারণে বাণিজ্য বাড়বে। এছাড়াও সেতুটি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরও অনেক সুবিধা নিয়ে আসবে যা দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংক ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী। আমরা বাংলাদেশকে সবসময় সমর্থন করে এসেছি। ২০১১ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক ২২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে, তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’