বর্ণিল উৎসবে খুলল সম্ভাবনার দক্ষিণ দুয়ার

‘এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট-স্টিল-লোহা, কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের মর্যাদার প্রতীক’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অবশেষে দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হলো। খুলে গেলো নতুন দুয়ার। উন্মোচিত হলো নতুন দিগন্তের দ্বার। স্বপ্নের বাস্তবধারা সংযুক্ত করেছে প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার।

গতকাল পদ্মার বুকে নির্মিত সবচেয়ে বড় অবকাঠামো ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এদিন বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুইচ টিপে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধেই পদ্মা সেতুতে ‘দুর্নীতির পরিকল্পনার’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদাতারা প্রকল্প থেকে সড়ে দাড়িয়েছিল।

যে কারণে ওই সময় স্বপদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন আবুল হোসেন। ড. মশিউর রহমানকেও তার পদ থেকে সড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেতু সচিবকে জেলেও যেতে হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কোন প্রমাণ মেলেনি। সেতু উদ্বোধনকালে তাদের সবাইকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। এ সময় কুশল বিনিময় করে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বক্তব্যেও সেই সময়ে কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোন ষড়যন্ত্র হয়নি। আর এ কারণেই এই সেতু নির্মাণে আমার জেদ চাপে। সকলেই যখন হতাশ, তখন আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই। শুধু তাই নয়, এ সেতু নির্মাণে বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেই।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই ঘোষণার পর আপনারা দেখেছেন, কিছু কিছু মানুষ কীভাবে নানা নৈরাশাবাদী এবং হতাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা বলেছেন। নিজেদের টাকায় এই সেতু তৈরি করলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অগ্রগতি স্থবির হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন তারা।’

উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। উদ্বোধনের আগে সেখানে প্রথমে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি। পদ্মা সেতু তাই আত্মমর্যাদা ও বাঙালির সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও। বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। আমি তাদের স্যালুট জানাই।’

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টার পরপরই অনুষ্ঠানস্থলে পেঁৗঁছান প্রধানমন্ত্রী। সুধী সমাবেশে সরকারের মন্ত্রী, স্পিকার, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। এতে সভাপতির বক্তব্য দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নের নির্মাণ হওয়ায় দেশবাসীর পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে জড়িত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যসহ যারা ‘দুর্নীতির অভিযোগের’ কারণে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমাবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমি ও পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত থিম সং পরিবেশন করা হয়। চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সুধী সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেট, স্মারক ব্যাংক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খামের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই আনন্দের দিনে কারও প্রতি ঘৃণা নয়, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়। শুধু দেশবাসীর প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনারা পাশে ছিলেন বলেই আমি সাহস পেয়েছি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি শুধু প্রার্থনা করব, ষড়যন্ত্রকারীদের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। সাধারণ জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন তারা আর কোনদিন ছিনিমিনি না খেলতে পারে।’

সুধী সমাবেশ শেষে করে মাওয়া প্রান্তের সেতুর ফলকের স্থানের দিকে অগ্রসর হন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম যাত্রী হিসেবে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে নিজ হাতে পদ্মা সেতুর টোল দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সেতু পারাপারে তার গাড়িবহরে ১৮টি গাড়ির জন্য ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দেন। এর মধ্যে নিজের গাড়ির জন্য টোল দেন ৭৫০ টাকা।

এরপর দুপুর ১২টার একটু আগে সেতুর ফলক উন্মোচনের পাশাপাশি ফলকের স্থানে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ম্যুরাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আকাশে রঙিন ধোঁয়া ওড়ানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। উপস্থিত সবাই হাততালি দেন।

উদ্বোধনকালে পদ্মা সেতু নিয়ে গর্বিত উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও দেখা গেছে হাসিখুশি। উদ্বোধনের ঐতিহাসিক দিনের এই মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকন্যা। সেজন্যই উদ্বোধনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে সেলফি তোলেন পুতুল।

এ সময় দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর ফোনে ভিডিও কল আসে। মা-মেয়েকে ভিডিওকলে কথা বলতেও দেখা যায়। ভিডিওকলে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা আবেগাপ্লুত হোন। এ সময় মেয়ে পুতুল তাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ছিল মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতিকে ডিজিটাল ফর্মে আটকে রাখতে।

উদ্বোধনস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী থেকে মেয়েকে নিয়ে একটু দূরে সরে যান প্রধানমন্ত্রী। মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেন। এরপর সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক ছবি তুলে দেন। একপর্যায়ে পাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকেও ফোনে তোলা ছবি দেখান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। সেতুর মাঝ পথে গিয়েও থেমে যায় গাড়িবহর। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সেখানে নেমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই শুরু হয় বিমানবাহিনীর জমকালো প্রদর্শনী।

সেখানে দাঁড়িয়ে ১৪ মিনিট বিমানবাহিনীর জমকালো ডিসপ্লে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে সায়েম ওয়াজেদ পুতুলকেও ক্যামেরা হাতে প্রর্দশনীর বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করতে দেখা যায়। শুরুতেই লাল-সবুজের পতাকা উড়ে পদ্মার আকাশে। বিমানবাহিনীর ৩১টি বিমান ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে এই ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।

বিমান বাহিনীর মহড়ার বহরে শুরুতেই ছিল লাল সুবুজের পতাকা। যা জানান দেয় বাঙালির আত্মমর্যাদা, সক্ষমতার। পাঁচটি হেলিকপ্টারের দ্বিতীয়টিতে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত পতাকা। অসীম আকাশে পাখা মেলে জানান দিয়ে গেল দাবিয়ে রাখা অসম্ভব অদম্য বাঙালিকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যার দৃঢ়তায় স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু, বিমানবাহিনীর এই মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর তৃতীয় হেলিকপ্টারে ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার।

চতুর্থ ও পঞ্চম হেলিকপ্টার বহন করে স্বপ্নজয় ও জাতীয় স্লোগান জয়বাংলা সংবলিত ব্যানার। যেন কোটি বাঙালিকে আরেকটিবার ডাক দিয়ে গেল সম্মিলিত বিজয় উল্লাসে সামিল হওয়ার। নীল আকাশে লাল সবুজের আবিরে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলাদেশের পতাকার অবয়ব। এক পর্যায়ে হাজির হয় যুদ্ধ বিমান। গর্জন তুলে জানান দেয় ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে যাওয়ার। পদ্মার আকাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অ্যারোবেটি ডিসপ্লেটি ও ফ্লাই পাস মন্ত্রমুগ্ধ করে অপেক্ষমান পদ্মাপারের মানুষকে। এ সময় নদীতে নৌবাহিনীও ছিল।

প্রদর্শনীতে অংশ নেয় বিমানবাহিনীর দুটি করে মিগ-২৯, এফটি-৭ বিজি বা এফ-৭ এমবি এফ-৭ বিজিআই-এর সমন্বয়ে দেখানো হয় স্মোক পাস। ফ্লাই পাস্ট (এফপি) প্রদর্শন করে তিনটি এফ-৭ বিজিআই বা বিজি, একটি সি-১৩০ জে ও পাঁচটি কে-৮ ডব্লিউর সমন্বয়ে স্মোক পাস, তিনটি এল-৪১০ ও পাঁচটি গ্রোব-১২০ টিপির সমন্বয়ে ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়া পাঁচটি এমআই-১৭/১৭১-এর মাধ্যমে পতাকা প্রদর্শন ও একটি বেল-২১২ এর মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ প্রদর্শনীতে শেকুল মেন্যুভার প্রদর্শনের জন্য দুটি কে-৮ ডব্লিউ, ভিক্সেন ব্রেক প্রদর্শনের জন্য পাঁচটি কে-৮ ডব্লিউ ও লো লেভেল অ্যারোবেটিক্স (এলএল ডিসপ্লে) প্রদর্শনের জন্য একটি মিগ-২৯ অংশ নেয়।

১২টা ১২ মিনিট থেকে ১২টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত আকাশে বর্ণিল মহড়া দেখে পরে আবার রওনা হোন প্রধানমন্ত্রী। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে তার গাড়িবহর পৌঁছানোর পর ১২টা ৩৬ মিনিটে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানেও আকাশে রঙিন ধোঁয়া ওড়ানো হয়। মোনাজাত করা হয়। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপরই বহুল প্রতিক্ষিত স্বপ্নের পদ্ম সেতু উদ্বোধনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। যারফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আজ থেকে সেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন, ‘এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যের এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।’

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২ , ১২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

বর্ণিল উৎসবে খুলল সম্ভাবনার দক্ষিণ দুয়ার

image

প্রধানমন্ত্রী গতকাল মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধন শেষে সমাবেশে আসা জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান -সংবাদ

‘এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট-স্টিল-লোহা, কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের মর্যাদার প্রতীক’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অবশেষে দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হলো। খুলে গেলো নতুন দুয়ার। উন্মোচিত হলো নতুন দিগন্তের দ্বার। স্বপ্নের বাস্তবধারা সংযুক্ত করেছে প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার।

গতকাল পদ্মার বুকে নির্মিত সবচেয়ে বড় অবকাঠামো ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এদিন বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুইচ টিপে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধেই পদ্মা সেতুতে ‘দুর্নীতির পরিকল্পনার’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদাতারা প্রকল্প থেকে সড়ে দাড়িয়েছিল।

যে কারণে ওই সময় স্বপদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন আবুল হোসেন। ড. মশিউর রহমানকেও তার পদ থেকে সড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেতু সচিবকে জেলেও যেতে হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কোন প্রমাণ মেলেনি। সেতু উদ্বোধনকালে তাদের সবাইকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। এ সময় কুশল বিনিময় করে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বক্তব্যেও সেই সময়ে কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোন ষড়যন্ত্র হয়নি। আর এ কারণেই এই সেতু নির্মাণে আমার জেদ চাপে। সকলেই যখন হতাশ, তখন আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই। শুধু তাই নয়, এ সেতু নির্মাণে বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেই।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই ঘোষণার পর আপনারা দেখেছেন, কিছু কিছু মানুষ কীভাবে নানা নৈরাশাবাদী এবং হতাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা বলেছেন। নিজেদের টাকায় এই সেতু তৈরি করলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অগ্রগতি স্থবির হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন তারা।’

উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। উদ্বোধনের আগে সেখানে প্রথমে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি। পদ্মা সেতু তাই আত্মমর্যাদা ও বাঙালির সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও। বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। আমি তাদের স্যালুট জানাই।’

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টার পরপরই অনুষ্ঠানস্থলে পেঁৗঁছান প্রধানমন্ত্রী। সুধী সমাবেশে সরকারের মন্ত্রী, স্পিকার, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। এতে সভাপতির বক্তব্য দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নের নির্মাণ হওয়ায় দেশবাসীর পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে জড়িত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যসহ যারা ‘দুর্নীতির অভিযোগের’ কারণে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমাবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমি ও পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত থিম সং পরিবেশন করা হয়। চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সুধী সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেট, স্মারক ব্যাংক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খামের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই আনন্দের দিনে কারও প্রতি ঘৃণা নয়, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়। শুধু দেশবাসীর প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনারা পাশে ছিলেন বলেই আমি সাহস পেয়েছি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি শুধু প্রার্থনা করব, ষড়যন্ত্রকারীদের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। সাধারণ জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন তারা আর কোনদিন ছিনিমিনি না খেলতে পারে।’

সুধী সমাবেশ শেষে করে মাওয়া প্রান্তের সেতুর ফলকের স্থানের দিকে অগ্রসর হন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম যাত্রী হিসেবে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে নিজ হাতে পদ্মা সেতুর টোল দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সেতু পারাপারে তার গাড়িবহরে ১৮টি গাড়ির জন্য ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দেন। এর মধ্যে নিজের গাড়ির জন্য টোল দেন ৭৫০ টাকা।

এরপর দুপুর ১২টার একটু আগে সেতুর ফলক উন্মোচনের পাশাপাশি ফলকের স্থানে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ম্যুরাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আকাশে রঙিন ধোঁয়া ওড়ানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। উপস্থিত সবাই হাততালি দেন।

উদ্বোধনকালে পদ্মা সেতু নিয়ে গর্বিত উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও দেখা গেছে হাসিখুশি। উদ্বোধনের ঐতিহাসিক দিনের এই মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকন্যা। সেজন্যই উদ্বোধনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে সেলফি তোলেন পুতুল।

এ সময় দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর ফোনে ভিডিও কল আসে। মা-মেয়েকে ভিডিওকলে কথা বলতেও দেখা যায়। ভিডিওকলে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা আবেগাপ্লুত হোন। এ সময় মেয়ে পুতুল তাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ছিল মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতিকে ডিজিটাল ফর্মে আটকে রাখতে।

উদ্বোধনস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী থেকে মেয়েকে নিয়ে একটু দূরে সরে যান প্রধানমন্ত্রী। মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেন। এরপর সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক ছবি তুলে দেন। একপর্যায়ে পাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকেও ফোনে তোলা ছবি দেখান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। সেতুর মাঝ পথে গিয়েও থেমে যায় গাড়িবহর। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সেখানে নেমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই শুরু হয় বিমানবাহিনীর জমকালো প্রদর্শনী।

সেখানে দাঁড়িয়ে ১৪ মিনিট বিমানবাহিনীর জমকালো ডিসপ্লে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে সায়েম ওয়াজেদ পুতুলকেও ক্যামেরা হাতে প্রর্দশনীর বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করতে দেখা যায়। শুরুতেই লাল-সবুজের পতাকা উড়ে পদ্মার আকাশে। বিমানবাহিনীর ৩১টি বিমান ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে এই ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।

বিমান বাহিনীর মহড়ার বহরে শুরুতেই ছিল লাল সুবুজের পতাকা। যা জানান দেয় বাঙালির আত্মমর্যাদা, সক্ষমতার। পাঁচটি হেলিকপ্টারের দ্বিতীয়টিতে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত পতাকা। অসীম আকাশে পাখা মেলে জানান দিয়ে গেল দাবিয়ে রাখা অসম্ভব অদম্য বাঙালিকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যার দৃঢ়তায় স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু, বিমানবাহিনীর এই মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর তৃতীয় হেলিকপ্টারে ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার।

চতুর্থ ও পঞ্চম হেলিকপ্টার বহন করে স্বপ্নজয় ও জাতীয় স্লোগান জয়বাংলা সংবলিত ব্যানার। যেন কোটি বাঙালিকে আরেকটিবার ডাক দিয়ে গেল সম্মিলিত বিজয় উল্লাসে সামিল হওয়ার। নীল আকাশে লাল সবুজের আবিরে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলাদেশের পতাকার অবয়ব। এক পর্যায়ে হাজির হয় যুদ্ধ বিমান। গর্জন তুলে জানান দেয় ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে যাওয়ার। পদ্মার আকাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অ্যারোবেটি ডিসপ্লেটি ও ফ্লাই পাস মন্ত্রমুগ্ধ করে অপেক্ষমান পদ্মাপারের মানুষকে। এ সময় নদীতে নৌবাহিনীও ছিল।

প্রদর্শনীতে অংশ নেয় বিমানবাহিনীর দুটি করে মিগ-২৯, এফটি-৭ বিজি বা এফ-৭ এমবি এফ-৭ বিজিআই-এর সমন্বয়ে দেখানো হয় স্মোক পাস। ফ্লাই পাস্ট (এফপি) প্রদর্শন করে তিনটি এফ-৭ বিজিআই বা বিজি, একটি সি-১৩০ জে ও পাঁচটি কে-৮ ডব্লিউর সমন্বয়ে স্মোক পাস, তিনটি এল-৪১০ ও পাঁচটি গ্রোব-১২০ টিপির সমন্বয়ে ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়া পাঁচটি এমআই-১৭/১৭১-এর মাধ্যমে পতাকা প্রদর্শন ও একটি বেল-২১২ এর মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ প্রদর্শনীতে শেকুল মেন্যুভার প্রদর্শনের জন্য দুটি কে-৮ ডব্লিউ, ভিক্সেন ব্রেক প্রদর্শনের জন্য পাঁচটি কে-৮ ডব্লিউ ও লো লেভেল অ্যারোবেটিক্স (এলএল ডিসপ্লে) প্রদর্শনের জন্য একটি মিগ-২৯ অংশ নেয়।

১২টা ১২ মিনিট থেকে ১২টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত আকাশে বর্ণিল মহড়া দেখে পরে আবার রওনা হোন প্রধানমন্ত্রী। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে তার গাড়িবহর পৌঁছানোর পর ১২টা ৩৬ মিনিটে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানেও আকাশে রঙিন ধোঁয়া ওড়ানো হয়। মোনাজাত করা হয়। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপরই বহুল প্রতিক্ষিত স্বপ্নের পদ্ম সেতু উদ্বোধনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। যারফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আজ থেকে সেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন, ‘এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যের এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।’