‘যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল’

জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান বাইডেনের

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করে দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ রায়ের মাধ্যমে কয়েক লাখ নারী বৈধ গর্ভপাতের অধিকার হারাতে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট ৫০ বছর পুরনো ঐতিহাসিক এক রায় খারিজ করার পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ‘রয় বনাম ওয়েড’ মামলার রায়ের ফলে দেশটিতে গর্ভপাত বৈধতা পেয়েছিল। তবে, রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করতে অধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের আহ্বানও জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ রায় দেন। জাতীয় আইনটি বাতিল করে আদেশে বলা হয়েছে, এখন অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গর্ভপাতের অনুমতি প্রদান অথবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইন করতে পারে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির রাজ্য সরকার গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহের পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মার্কিন নারীরা ১৯৭৩ সাল থেকে গর্ভপাতের যে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন, তা কার্যত রোহিত হয়ে যায়।

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘১৯৭৩ সালের আইনে গর্ভধারণের পর ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ সময়কালেও গর্ভপাত করার এখতিয়ার রাখা হয়েছে। এটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, মার্কিন সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।

‘গর্ভপাতের অধিকার সংবিধানের আওতায় থাকতে পারে না ... এবং গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণের অধিকার অবশ্যই মানুষের এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করা উচিত।’ এক প্রতিবেদেন বিবিসি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এখন রক্ষণশীল বিচারকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার রোহিত করার পক্ষে মতামত দেন ছয়জন বিচারক, বিপক্ষে দেন তিনজন।

ধারণা করা হচ্ছে, এ রায়ের পর অর্ধেকের বেশি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ অথবা এটির ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হবে ইতোমধ্যে এমন আইন পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্য।

এ বিষয়ক এক বেসারকারি জরিপে বলা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানধারণে সক্ষম তিন কোটি ৬০ লাখ নারী গর্ভপাতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। অবশ্য দেশটির দক্ষিণপন্থি ও ধর্মীয় রক্ষণশীলদের জন্যে এই সিদ্ধান্ত অনেক বড় বিজয়। এই ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী ১৯৭৩ সালে গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল।

রাস্তায় নামার আহ্বান বাইডেনের

নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের রায়কে নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাশাপাশি, এই রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভঅবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করতে অধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউজে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের ইতিহাসের একটি দুঃখের দিন। আদালত মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ ‘এই রায় এতটাই নিষ্ঠুর যে এখন থেকে একজন মার্কিন নারী ও তরুণীরা ধর্ষকদের সন্তানও জন্ম দিতে বাধ্য থাকবে।’

এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলেছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীদের স্বাস্থ্য ও জীবন আজ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে; আর একটি ব্যাপার হলো, এই রায় আমাদের সমাজের মূলনীতিতে কুঠারাঘাত করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে দেশটির সরকারি দল ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন এ সিদ্ধান্তের। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুপ্রিমকোর্টের এ রায়কে মৌলিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের (প্রতিনিধি পরিষদ) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে ‘নির্মম’ উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মার্কিন নারীরা এখন তাদের মায়েদের চেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করছে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ঈশ্বরই এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’ প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, ‘সংবিধান মেনেই এটা হচ্ছে। অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা তাদের আরও অনেক আগেই ফিরিয়ে দেয়া উচিত ছিল।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নারী অধিকার সংগঠন দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এক টুইটে বলেছে, ‘আদালত কি বলেছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ কাউকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাচ্চা নিতে বাধ্য করা উচিত নয়। গর্ভপাত নারীদের অধিকার; এবং এই অধিকার আদায়ের জন্য আমরা এর জন্য লড়াই বন্ধ করব না।’

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২ , ১২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

‘যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল’

জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান বাইডেনের

image

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেন মার্কিন নারীরা -সিএনএন

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করে দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ রায়ের মাধ্যমে কয়েক লাখ নারী বৈধ গর্ভপাতের অধিকার হারাতে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট ৫০ বছর পুরনো ঐতিহাসিক এক রায় খারিজ করার পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ‘রয় বনাম ওয়েড’ মামলার রায়ের ফলে দেশটিতে গর্ভপাত বৈধতা পেয়েছিল। তবে, রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করতে অধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের আহ্বানও জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ রায় দেন। জাতীয় আইনটি বাতিল করে আদেশে বলা হয়েছে, এখন অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গর্ভপাতের অনুমতি প্রদান অথবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইন করতে পারে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির রাজ্য সরকার গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহের পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মার্কিন নারীরা ১৯৭৩ সাল থেকে গর্ভপাতের যে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন, তা কার্যত রোহিত হয়ে যায়।

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘১৯৭৩ সালের আইনে গর্ভধারণের পর ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ সময়কালেও গর্ভপাত করার এখতিয়ার রাখা হয়েছে। এটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, মার্কিন সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।

‘গর্ভপাতের অধিকার সংবিধানের আওতায় থাকতে পারে না ... এবং গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণের অধিকার অবশ্যই মানুষের এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করা উচিত।’ এক প্রতিবেদেন বিবিসি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এখন রক্ষণশীল বিচারকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার রোহিত করার পক্ষে মতামত দেন ছয়জন বিচারক, বিপক্ষে দেন তিনজন।

ধারণা করা হচ্ছে, এ রায়ের পর অর্ধেকের বেশি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ অথবা এটির ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হবে ইতোমধ্যে এমন আইন পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্য।

এ বিষয়ক এক বেসারকারি জরিপে বলা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানধারণে সক্ষম তিন কোটি ৬০ লাখ নারী গর্ভপাতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। অবশ্য দেশটির দক্ষিণপন্থি ও ধর্মীয় রক্ষণশীলদের জন্যে এই সিদ্ধান্ত অনেক বড় বিজয়। এই ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী ১৯৭৩ সালে গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল।

রাস্তায় নামার আহ্বান বাইডেনের

নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের রায়কে নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাশাপাশি, এই রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভঅবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করতে অধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউজে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের ইতিহাসের একটি দুঃখের দিন। আদালত মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ ‘এই রায় এতটাই নিষ্ঠুর যে এখন থেকে একজন মার্কিন নারী ও তরুণীরা ধর্ষকদের সন্তানও জন্ম দিতে বাধ্য থাকবে।’

এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলেছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীদের স্বাস্থ্য ও জীবন আজ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে; আর একটি ব্যাপার হলো, এই রায় আমাদের সমাজের মূলনীতিতে কুঠারাঘাত করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে দেশটির সরকারি দল ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন এ সিদ্ধান্তের। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুপ্রিমকোর্টের এ রায়কে মৌলিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের (প্রতিনিধি পরিষদ) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে ‘নির্মম’ উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মার্কিন নারীরা এখন তাদের মায়েদের চেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করছে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ঈশ্বরই এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’ প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, ‘সংবিধান মেনেই এটা হচ্ছে। অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা তাদের আরও অনেক আগেই ফিরিয়ে দেয়া উচিত ছিল।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নারী অধিকার সংগঠন দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এক টুইটে বলেছে, ‘আদালত কি বলেছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ কাউকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাচ্চা নিতে বাধ্য করা উচিত নয়। গর্ভপাত নারীদের অধিকার; এবং এই অধিকার আদায়ের জন্য আমরা এর জন্য লড়াই বন্ধ করব না।’